মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ ও লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ : শুধু লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এ মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত নাকি ব্রিটেনের গোটা পুলিশ ব্যবস্থা নাকি গোটা ব্রিটেন ই ( সরকার ও জাতিটাই) এ রোগে আক্রান্ত অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে বর্ণবাদী ?!! আসলে যে সব অভিযোগ উঠেছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে সে গুলোতে গোটা ব্রিটিশ সরকার ও প্রশাসনই আক্রান্ত যার প্রতিচ্ছবি হচ্ছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুলিশের মতো সরকার ও প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শ কাতর অংশই যদি প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদে দুষ্ট ও আক্রান্ত হয় তাহলে প্রশাসন ও সরকারের বাদবাকি অংশের কী অবস্থা হবে (বর্ণবাদী) ?!!
পুলিশ নাকি ফুলিশ !! বিশ্ব বিখ্যাত ডিটেকটিভ স্কট ল্যান্ড ইয়ার্ড কী করে ? ঘাস কাটে ও নাকে নস্যি দিয়ে ঘুমায় কীংবদন্তির দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা ও ডিটেকটিভ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ?!! পুলিশের বিরুদ্ধে জনগণের এত সব অভিযোগ তার মানে কী ? লন্ডন পুলিশ তো বহু দোষে দুষ্ট ও বহু অপরাধে অপরাধী । তখন স্কট ল্যান্ড ইয়ার্ডের অপরাধী শনাক্ত ও ধরার পেশাদার মান কোথায় উবে গেল ? নাকি স্কট ল্যান্ড ইয়ার্ডও একই দোষে দুষ্ট ? যে সর্ষে দিয়ে ভুত তাড়াতে হবে সেই সর্ষের মধ্যেই তো ভুত বসে আছে দেখি !! বিষয়টা এতই প্রকট ও মারাত্মক যে তদন্ত করে লন্ডন ফুলিশের ( পুলিশ ) অপরাধী পার্সোনেলদের বের করার আগেই অর্ধেক জনগণের আস্থাই নেই এ বাহিনীর ওপর ! দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন -- এ মূলমন্ত্র নিয়ে গঠিত পুলিশ বাহিনীর পেশাদার দায়িত্ব যে লন্ডন পুলিশ পালন করতে পারছে না সে পুলিশ বাহিনী তো আসলেই বড় ধরণের ফুলিশ !! প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ তো শুধু লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের মধ্যেই ডেরা বাঁধে নি সমগ্র ব্রিটিশ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামো আজ কয়েক শতাব্দী ধরেই এ দোষে দুষ্ট । এক কালের সূর্য অস্ত না যাওয়ার ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও এর পরবর্তী উত্তরসূরী পৃথিবীর পঞ্চ বৃহৎ পরাশক্তির অন্যতম যুক্ত রাজ্য ( বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতি ) একই ক্ষয় ও ঘুন রোগে আক্রান্ত বহুদিন যাবৎ । গত বছর ইসলামী হিজাব প্রকাশ্যে লঙ্ঘনে ইরানের নীতি নৈতিকতা রক্ষাকারী পুলিশ তাহসান আমিনীকে হিজাব ও ইসলামী শালীনতা সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতির ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আনলে কুর্দী তরুণী মাহসা আমীনী তার পূর্বেকার মস্তিষ্কের রোগে ( ব্রেণ হাইপোক্সি ) আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয় এবং সেখানে উক্ত রোগ জনিত M.O.F ( Multi organ failure ) এর কারণে মৃত্যু বরণ করে। অথচ এ বিষয় নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন , কানাডা , ফ্রান্স , জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে এবং প্রত্যক্ষ উস্কানি দিয়ে "নারী , জীবন ও স্বাধীনতা"- এ ধরণের নারীবাদী শ্লোগানে বিভিন্ন প্রতিবিপ্লবী এবং ইরান সরকার ও বিপ্লব বিরোধী দল ও গোষ্ঠীকে দিয়ে ইরানে গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় । কিন্তু ইরানী জনগণ এ সব গণ বিচ্ছিন্ন ও গণ ধিকৃত দল ও গোষ্ঠীর গোলযোগ, বিশৃঙ্খলা ও তাণ্ডবলীলার বিরুদ্ধে পুরো ইরানে পাল্টা প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও মিছিল করে এবং ময়দানে এসে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন পুষ্ট গণ বিচ্ছিন্ন এ সব গোষ্ঠী ও দলের সম্মিলিত চক্রান্ত ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ব্যর্থ করে দেয় । অথচ ব্রিটিশ পুলিশে যে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাপক উৎপীড়ন , প্রাতিষ্ঠানিক সমকামীতা ,বর্ণবাদ , বৈষম্য , নারী বিদ্বেষ এবং অন্যান্য অগ্রহণযোগ্য আচরণ প্রকট ভাবে বিদ্যমান রয়েছে সেজন্য পুলিশের প্রতি জনগণের শুধু আস্থা হারানোর বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এবং পুলিশের দীর্ঘ দিনের এ প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদারী জোরজুলুম , অন্যায় , অত্যাচার নির্যাতন ,উৎপীড়ন নারী ধর্ষণ , হত্যা ও অপরাধের বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানোর সাহস ও ক্ষমতা নেই ভুক্তভোগী ব্রিটিশ জনগণের !!! সমগ্র ব্রিটিশ জনগণকে মনিটর করার জন্য সমগ্র ব্রিটেন জুড়ে অগণিত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে ব্রিটিশ সরকার ! এ সব টিভি ক্যামেরায় ঠিকই প্রত্যেক ব্রিটিশ নাগরিক দিনে বহুবার মনিটর হয়ে থাকে অথচ অপরাধী , নারী নির্যাতনকারী , ধর্ষক , নিষ্ঠুর দমন ও উৎপীড়নকারী ব্রিটিশ পুলিশ এ সব সিসিটিভি ক্যামেরায় অপরাধ করা সহ যে মনিটর হয় না তা সত্যি খুবই আশ্চর্য জনক !!! তা হলে এ সব সিসিটিভি ক্যামেরা ও মনিটরিং এর ফায়দা কী ? এত সব অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা আসলে ব্রিটিশ জনগণকে কঠোর পুলিশী নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার এবং ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন প্রতিষ্ঠিত ধন - সামন্ত - রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে জনগণ প্রতিবাদ , বিক্ষোভ ও আন্দোলন করলে যেন তা অঙ্কুরে বিনাশ , দমন ও নিশ্চিহ্ন এবং আন্দোলনের নেতা ও সক্রিয় কর্মীদের ধরপাকড়ের জন্যই এ ধরনের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা মূলক সিসিটিভি ক্যামেরা সমগ্র ব্রিটেন জুড়ে বসানো হয়েছে যা নিয়ন্ত্রণ করে ব্রিটিশ নিরাপত্তা গোয়েন্দা বাহিনী ও সিক্রেট সার্ভিস। তাই ব্রিটেন হচ্ছে আসলে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নজরদারির নিয়ন্ত্রণাধীন দেশ ও রাষ্ট্র এবং এ ধরনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং এর জন্য কেউ সাহস করে না প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল ও আন্দোলনের যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহিংসতার রূপ পরিগ্রহ করে । কারণ এতে করে কোন ব্রিটিশ নাগরিক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর খপ্পড়ে পড়লে তার দফা রফা হয়ে যাবে। আর কুখ্যাত ব্রিটিশ এম আই ফাইভ ও এম আই সিক্স ধরপাকড়, গুম , উধাও করার ক্ষেত্রে খুবই নিপুণ ও সিদ্ধহস্ত । তাই ভুক্তভোগী ব্রিটিশ জনগণ পুলিশের দীর্ঘদিনের ব্যাপক দুর্নীতি , অপরাধ , অন্যায় , উৎপীড়ন , নির্যাতন , অত্যাচার , ধর্ষণ , নারী ও শিশু নির্যাতন , বর্ণবাদ , বৈষম্যের বিরুদ্ধে কেবল অসন্তোষ নিয়ে বসে বসে মৌন প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কী করবে ?!!! আর এ সব বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্রিটিশ ও লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশকে বিশ্ব ঠোলা উপাধি দিয়ে ভূষিত করা না হলে ব্রিটিশ পুলিশের দারুন মর্যাদাহানি ও চরম অসম্মানই করা হবে !!! এখন ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর নারীবাদীরা নীরব কেন ?
ইরানী নারীদের জন্য কথিত নারী , জীবন ও স্বাধীনতার শ্লোগান দিয়েছিল এ সব ব্রিটিশ ও পশ্চিমা নারীবাদী গত কয়েক মাস ধরে । এখন তারা নারী ধর্ষক , নারী হত্যাকারী এবং নারী ও শিশু উৎপীড়ন ও নির্যাতনকারী ব্রিটিশ পুলিশ ও লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে নারী, জীবন ও স্বাধীনতার শ্লোগান দিয়ে আন্দোলনে কেন নামছে না , কেন প্রতিবাদ করছে না, নারী ধর্ষক ও নারী হত্যা কারী পুলিশ পার্সোনেল ও কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক ও উপযুক্ত সাজা ও শাস্তির দাবি কেন করছে না ?!! এখন কোথায় তারা ? কোথায় ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশগুলোয় নারী , জীবন ও স্বাধীনতা ? স্মর্তব্য ও উল্লেখ্য যে ব্রিটেনের পুলিশের মতোই অন্য সকল পশ্চিমা দেশগুলোর পুলিশের অবস্থা । এই উন্নিশ আর বিশ মাত্র । তৃতীয় বিশ্বের দেশ অর্থাৎ উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোয় কেন পুলিশী নির্যাতন হয় তা এখন পরিস্কার হয়ে যাবে । কারণ এ সব দেশের পুলিশ আসলে ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশের পুলিশের মাধ্যমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকে এবং তাদের মাঝে গভীর সহযোগিতামূলক ও কারিগরী সম্পর্ক বিদ্যমান । ব্রিটিশ তথা পশ্চিমা পুলিশের সাথে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর পুলিশের মধ্যে ওস্তাদ - শাগরেদ ( গুরু - শিষ্য) সম্পর্ক বিদ্যমান। সুতরাং ওস্তাদের দোষ , ত্রুটি ও গুণ শাগরেদদের মধ্যে সঞ্চালিত হবেই । অতএব তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর পুলিশের মধ্যে দুর্নীতি ও অপরাধের যে অভিযোগ রয়েছে তা আসলে ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া । আধুনিক পুলিশী কাঠামো ও ব্যবস্থা পশ্চিমা বিশেষ করে ব্রিটিশ পুলিশের আদলে ও কাঠামোতেই গড়ে উঠেছে । অতএব যে সব দোষ , ত্রুটি ও গুণ এ সব দেশের পুলিশের মধ্যে রয়েছে সেগুলো ঐ সব পশ্চিমা দেশীয় পুলিশদের মধ্যেও বিদ্যমান তবে আরো উন্নত ও সফিস্টিকেটেড ফর্মে!!! এ সব তৃতীয় বিশ্বের পুলিশরা যদি ঠোলা, বেগুন ও ফুলিশ হয় তাহলে ব্রিটিশ বা পশ্চিমা পুলিশ হবে আরো বড় ঠোলা, বেগুন ও ফুলিশ!! এটা শুধু পুলিশ প্রশাসনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় । অন্য সকল ক্ষেত্রেও বিদ্যমান। যেমন : মনি লন্ডারিং , অর্থ পাচার ও কেলেঙ্কারিতেও ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওস্তাদ ও গুরু । লন্ডন তো বিশ্বের মানি লন্ডারিং এর রাজধানী !! বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তা , রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ , ব্যবসায়ী ও এলিট শ্রেণী তাদের দুর্নীতি লব্ধ অবৈধ কালো টাকা ও অর্থ সম্পদ ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা , সুইজারল্যান্ড ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাংকসমূহে জমা ও অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করে সাদা , হালাল ও বৈধ টাকায় রূপান্তরিত করে এবং সেই সাথে এ সব চোর গুলো প্রতিনিয়ত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে পশ্চিমা দেশগুলোয় সাধু সজ্জন নাগরিকের তকমাও পায় এবং সেখানে বহাল তবিয়তে ও সুখ - স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করে ! ব্রিটিশ ও পশ্চিমা ব্যাংক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দুর্নীতি গ্রস্ত না হলে বরং বড় ধরনের দুর্নীতি পরায়ণ না হলে তৃতীয় বিশ্বের এ সব চোর কি পশ্চিমা দেশগুলোয় অর্থ পাচার করতে পারে ?!! চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। তবে তৃতীয় বিশ্বের চোরগুলো বড় জোর পুকুর চোর এবং ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর চোরেরা হচ্ছে বিশ্ব চোর বা সাগর মহাসাগর চোর । তৃতীয় বিশ্বের চোরেরা যদি করে পুকুর চুরি তবে ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর চোরেরা করে সাগর মহাসাগর চুরি বা বিশ্ব চুরি ।
আমাদের সবার উচিত পাশ্চাত্যকে খুব ভালোভাবে চেনা ও মূল্যায়ন করা।