۱۴ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۴ شوال ۱۴۴۵ | May 3, 2024
কর্নেল হাবিবুর রহমান
কর্নেল হাবিবুর রহমান

হাওজা / কর্নেল হাবিবুর রহমান ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আজাদ-হিন্দ বাহিনীর কর্নেল নিযুক্ত ছিলেন।

শহীদ তিতুমীর কারবালা ট্রাস্ট

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্নেল হাবিবুর রহমান ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আজাদ-হিন্দ বাহিনীর কর্নেল নিযুক্ত ছিলেন। আজাদ-হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে ১৯৪৫ সালে ১৮ই আগষ্ট নেতাজীর পর্দায় চলে যাওয়ার আগে প্রর্যন্ত তিনি সাথী ছিলেন।

১৯১৩সালে ২২শে ডিসেম্বর জম্মু কাশ্মীরের ভিম্বার জেলার পাঞ্জেরী গ্রামে হাবিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রাজা মনসুর আহমেদ খান। তার পিতামহ সর্দার রাজা রাহমদাদ খান জম্মু কাশ্মীরের মহারাজা প্রতাপ সিংয়ের দরবারের মন্ত্রী ছিলেন।

পাঞ্জেরী গ্রামে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাবিবুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। উচ্চশিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য জম্মুতে চলে যান। কিছুদিন পর দেরাদুনের প্রিন্স অফ ওয়েলস রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারী কলেজে নাম নথিভুক্ত করান হাবিবুর রহমান।

১৯৪১সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৭ই ডিসেম্বর আমেরিকার পার্ল হারবার বন্দরে ও সিঙ্গাপুরে জাপান এয়ারস্ট্রাইক করলে আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে। এই সময়ে হাবিবুর রহমান বৃটিশ ইন্ডিয়ান রয়্যাল আর্মির সিগন্যাল অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ব্যাটালিয়নকে সঙ্গে নিয়ে তিনি থাইল্যান্ড যুদ্ধক্ষেত্রের কাছে ছাঙ্গলুনে যুদ্ধ করেছিলেন। ১৯৪১ সালে থাইল্যান্ডের পেনাং এর কাছ থেকে মিয়ামি উপকূলে তিনি বাহিনী নিয়ে আসলে প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে তিনি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ১৯৪২সালে জাপানি সেনারা থাইল্যান্ড পুনঃদখল করলে ১৫ই ফেব্রুয়ারি জাপানিদের কাছে বৃটিশ সেনারা আত্মসমর্পণ করে। এই সময়ে জাপানি সেনাপতি ফুজ্যিয়ারা জাপানে অবস্থিত বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর হাতে যুদ্ধবন্দি ভারতীয় সেনাদের তুলে দেন। রাসবিহারী বসু তখন ভারতে স্বাধীনতার লক্ষে একটি স্বশস্ত্র বাহিনী গঠনের লক্ষে ছিলেন। রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে আজাদ-হিন্দ বাহিনীর জি.ও.সি ক্যাপ্টেন মোহন সিং এই বাহিনীকে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। কর্নেল হাবিবুর রহমান সেখান থেকে নিজ চেতনার পরিবর্তন ঘটান। বলা যায় তিনি ভারতের স্বাধীনতার দীক্ষা গ্রহন করেন। ক্যাপ্টেন মোহন সিং এর সাথে কর্নেল হাবিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী হয়। ১৯৪২ সালে ১৭ই ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে কর্নেল হাবিবুর রহমান আজাদ-হিন্দ বাহিনীতে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ছাঙ্গি শিবিরে আজাদ-হিন্দ বাহিনীকে ড্রিলের ও গেরিলা লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ দেন কর্নেল হাবিবুর রহমান। ১৯৪২সালে ক্যাপ্টেন মোহন সিং কে জাপানিরা গ্রেফতার করলে রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে কর্নেল হাবিবুর রহমান আজাদ-হিন্দ ফৌজের কাজ শুরু করেন। ১৯৪২ সালে রাসবিহারী বসুর আমন্ত্রণে ফ্রি ইন্ডিয়ান বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে নেতাজী জার্মানি থেকে জাপানে আসলে রাসবিহারী বসু এই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব তুলে দেন। নেতাজী জাপানীদের হাত থেকে মোহন সিং কে মুক্ত করে বাহিনীকে আরও আধুনিকরন ঘটান। ও ১৯৪৩ সালে মহান ২১শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে আজাদ-হিন্দ সরকার গঠন করেন। ও ইঙ্গ-মার্কিন-ইহুদী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। ১৯৪৪ সালে ১৫ই অক্টোবর কর্নেল হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে আজাদ-হিন্দ বাহিনীর পঞ্চম গেরিলা রেজিমেন্ট গড়ে উঠলে নেতাজীর সাথে হাবিবুর রহমানের সাক্ষাত হয়। নেতাজী কর্নেল হাবিবুর রহমানকে আজাদ-হিন্দ বাহিনীর পঞ্চম গেরিলা রেজিমেন্টের সেকেন্ড–ইন–কমান্ডার, নেহেরু ব্রিগেডের কমান্ডার পদে নিযুক্ত করেন। এছাড়াও বার্মার জিত্রার আলোরস্তারে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে প্রশিক্ষণ ও বার্মায় আজাদ-হিন্দ বাহিনীর হেডকোয়ার্টার সিঙ্গাপুর থেকে স্থানান্তরিত হলে আজাদ-হিন্দ ট্রেনিং স্কুলের কমান্ডার, ডেপুটি কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল, ডেপুটি অ্যাডজুট্যান্ট পদে কর্নেল হাবিবুর রহমানকে বসানো হয়।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের পর আজাদ-হিন্দ সেনাদের গ্রেফতার করে দিল্লীর লালকেল্লায় বিচার শুরু হলে সারা দেশজুড়ে গনঅভ্যুথ্বান তৈরী হয়। ক্যাপ্টেন শানওয়াজ খান, কর্নেল গুরুবক্স সিং ধীলন, কর্নেল প্রেম সায়গল, ক্যাপ্টেন রশিদ আলীর সংগে কর্নেল হাবিবুর রহমানেরও বিচার শুরু হয়। ১৯৪৫সালে আজাদ-হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করলে নেতাজী আত্মসমর্পণ থেকে বিরত থাকেন। ১৯৪৫সালে ১৮ই আগষ্ট তাইওয়ানের তাইহকু বিমানবন্দর থেকে সাইবেরিয়ায় আত্মগোপনের সময় প্রর্যন্ত নেতাজীর সঙ্গে কর্নেল হাবিবুর রহমান সর্বদা ছায়াসঙ্গী ছিলেন। এবং বৃটিশ গুপ্তচর সংস্থা M–15, আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা C.I.A ও ইহুদিদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য নেতাজীর আদেশে কর্নেল হাবিবুর রহমান তাইওয়ানের বিমান দুর্ঘটনার কথা রটিয়ে দেন। ১৯৪৫ সালে ৩১শে ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৬ সালে ১লা জানুয়ারি বিচারের নামে প্রহসনে ফাঁসির সাজা ঘোষনা হলে দেশবাসীর গনঅভ্যুথ্বান ও নৌবিদ্রোহ, পুলিশ বিদ্রোহ, বিমান বাহিনীর বিদ্রোহ শুরু হলে টলমল বৃটিশ প্রশাসন তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তখনও প্রর্যন্ত কর্নেল হাবিবুর রহমান নেতাজীর আদেশে মিথ্যা বিমান দুর্ঘটনার কথাতেই অবস্থান করছিলেন।

১৮৪৭ সালে দেশভাগের পর গান্ধী–নেহেরু ষড়যন্ত্রে আজাদ-হিন্দ সেনাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ইচ্ছাকৃত ভাবে নেওয়া হয়নি। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল নেহেরু ভালো করেই জানতো কর্নেল হাবিবুর রহমান ৪৭ পরও গোপনে নেতাজীর সংগে যোগাযোগ রেখেছিলেন। দিল্লীতে ১৯৪৭ সালে ১৬ই নভেম্বর নেহেরুর গুন্ডারা কর্নেল হাবিবুর রহমানের উপর অতর্কিতে হামলা করায়; যাতে নেতাজীর খবর জানা যায়। বাধ্য হয়ে জীবন রক্ষার তাগিদে ১৯৪৭ সালে ১০ই ডিসেম্বর পাকিস্তানে চলে যান।

১৯৪৭ সালে ইন্দো–পাক যুদ্ধের সময় জম্মু কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত জন্য মহারাজ হরি সিংয়ের ডোগরা সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে মেজর জেনারেল মুহাম্মদ জামান কিয়ানী সংগে সম্বন্বয় রেখে যুদ্ধ করেন।

১৯৫০ সালে পাকিস্তানে জনসমক্ষে তিনি মৃত্যুর আগে পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে তিনি বলেন; "নেতাজী কখনওই বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি; আমি সর্বাধিনায়কের আদেশ পালন করেছিলাম মাত্র। ১৯৭৮ সালে ২৬শে ডিসেম্বর ভিম্বারের পাঞ্জেরী গ্রামে তিনি ইন্তেকাল করেন।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .