শহীদ তিতুমীর কারবালা ট্রাস্ট
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, রহিমউল্লাহ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে অবিভক্ত প্রাদেশিক বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও নীলবিদ্রোহী। সুন্দরবন অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে নীলচাষ, নীলকরের বিরোধীতা ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম পুরোধা ছিলেন রহিমউল্লাহ। সুন্দরবন অঞ্চলের বারইখালী গ্রামে তিনি সর্বপ্রথম কৃষকদের মধ্যে বিপ্লবী আন্দোলন চেতনা, জাতীয়তাবাদ গোপনে প্রচার করতেন। লাঠি চালানো, তীর নিক্ষেপ, গোপনে বন্দুক, বোমার প্রশিক্ষণ প্রচলন করেন। সুন্দরবন অঞ্চলের জমিদারবাহিনীর অত্যাচার ও বৃটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে তিনি কৃষকদের নিয়ে একটি ঝটিকা বাহিনী তৈরী করে স্থানীয় জমিদারী ও বৃটিশ নীলকরদের প্রতিহত করেন। ১৮৬১ সালে নভেম্বর মাসে বারইখালী অঞ্চলে স্থানীয় জমিদার মামুন তালুকদার স্থানীয় নীলকুঠিয়াল ডেনিস হেলির সাহায্যে কৃষকদের উচ্ছেদ, জমি দখল, অবৈজ্ঞানিক ভাবে নীলচাষ করতে বাধ্য করায় বিপ্লবী রহিমউল্লাহ বাধা দেন! এর ফলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। কুঠিয়াল ডেনিস হেলির লাঠিয়াল রামধন মালো নিহত হয়; জমিদার মামুন তালুকদার কুঠিয়ালকে ছেড়ে প্রানভয়ে পালিয়ে যায়। কুঠিয়াল হেলি কর্দম মোহনায় ঝাঁপ দিয়ে প্রানরক্ষা করে। এই ঘটনার কয়েকদিন পর হেলি প্রতিশোধ নিতে ভারাটে লাঠিয়াল ও বৃটিশ বাহিনী নিয়ে রহিমউল্লাহ গ্রাম আক্রমণ করে। রহিমউল্লাহ পূর্ব থেকেই অনুমান করেছিলেন; তাই তিনি প্রস্তুতিস্বরূপ তিনি তার বাড়ির চারদিকে পরিখা কেটে প্রতিরোধের ব্যাবস্থা করেছিলেন। তিনি তার বিশ্বস্ত অনুচরকে দিয়ে কলকাতায় বিপ্লবী সংগঠন আত্মোন্নতি সমিতির সংগে যোগাযোগ করে প্রচুর বন্দুক, বারুদ, বোমা গোপনে প্রতিরক্ষার জন্য মজুদ করতে শুরু করেন। অবশেষে সুসজ্জিত বৃটিশ বাহিনী ও ভাড়াটে লাঠিয়াল দের সাথে রহিমউল্লাহ ও তার বাহিনীর প্রবল যুদ্ধ শুরু হয়। রহিমউল্লাহ নিজ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। গুলি ফুরিয়ে যেতে শুরু করলে স্থানীয় গ্রামের মেয়েরা নিজেদের রুপোর গহনা চূর্ণ করে গুলির কাজে ব্যবহৃত করেন। এই যুদ্ধে সতেরো জন শহীদ হন, বহু সংখ্যক বিদ্রোহী আহত হন। রহিমউল্লাহ যুদ্ধক্ষেত্রে গুলির আঘাতে শহীদ হন। রহিমউল্লাহ ও তার শহীদ বিপ্লবীদের মৃতদেহ জঙ্গলে পুড়িয়ে ফেলে ও গ্রামে লুঠতরাজ শুরু করে ডেনিস হেলির বাহিনী। এই ঘটনায় বিপ্লবী রহিমউল্লাহ পক্ষ অবলম্বন করে তদন্তের পূর্ণ নির্দেশ দেন তৎকালীন খুলনার ম্যাজিস্ট্রেট বিপ্লবী ও সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি নিজে সুন্দরবনে মোড়লগঞ্জে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাজে ডেনিস হেলির নামে দোষী সাব্যস্ত করে দীর্ঘ রিপোর্ট দেন। এবং হেলি কলকাতায় পালিয়ে গেলে তার নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। পনেরো বছর যশোর দায়রা আদালতে এই মামলায় একজনের ফাঁসি ও চৌত্রিশজনের দ্বীপান্তর হয়। হেলি তৎকালীন সময়ে একলক্ষ টাকা ঘুষ ও ভীতি প্রদর্শন করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে মামলা তুলে নেওয়া প্রস্তাব দেখালে বঙ্কিমচন্দ্র এই প্রস্তাব ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।