۲ آذر ۱۴۰۳ |۲۰ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 22, 2024
ঐতিহাসিক মুবাহালা ও মহানবীর (সা.) প্রকৃত আহলে বাইতের পরিচয়
ঐতিহাসিক মুবাহালা ও মহানবীর (সা.) প্রকৃত আহলে বাইতের পরিচয়

হাওজা / ২৪ যিলহজ্জ্ব মুবাহালার দিবস যা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোর অন্তর্ভুক্ত। মুবাহালাহ শব্দটি আরবি ‘বাহল’ তথা ‘অভিশাপ দেয়া’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ হচ্ছে একে অপরকে অভিশাপ দেয়া।

হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মশহুর অভিমত অনুসারে ২৪ যিলহজ্জ্ব মুবাহালার দিবস যা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোর অন্তর্ভুক্ত। মুবাহালাহ শব্দটি আরবি ‘বাহল’ তথা ‘অভিশাপ দেয়া’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ হচ্ছে একে অপরকে অভিশাপ দেয়া।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোর পরিচালক বা প্রধানদের কাছে মহানবী (সা.) চিঠি-পত্র পাঠানোর পাশাপাশি নাজরানের আর্চবিশপ আবু হারেসার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর নাজরানের খ্রীষ্টানবাসীদের পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধিদল মহানবীর (সা.) সাথে আলোচনার জন্য মদীনায় আসে। মহানবী (সা.) তাদেরকে এক-অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর ইবাদত করার এবং হযরত ঈসাকে (আ.) আল্লাহ বা খোদার পুত্র বলে যে বিশ্বাস তাদের রয়েছে তা ত্যাগ ও বর্জন করে খাঁটি তৌহীদে বিশ্বাসী হওয়ার আহ্বান জানান।

কিন্তু খ্রীষ্টানদের ঐ প্রতিনিধিদল মহানবীর (সা.) সাথে অযথা বিতর্কে লিপ্ত হয়। তারা অচলাবস্থা থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হিসাবে তাঁর (সা.) কাছে পরস্পর মুবাহালা এবং যে পক্ষ মিথ্যাবাদী তাদের উপর লানত (অভিশাপ) দেয়া ও মহান আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য প্রার্থনার প্রস্তাব দেয়।

তখন ওহীর ফেরেশতা মুবাহালার আয়াত নিয়ে অবতরণ করে মহানবীকে (সা.) জানান, যারা তাঁর ( সা.) সাথে অযথা বিতর্কে লিপ্ত হবে এবং সত্য মেনে নেবে না, তাদেরকে মুবাহালা করতে আহ্বান জানাবেন এবং উভয় পক্ষ যেন মহান আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করে যে, তিনি মিথ্যাবাদীকে নিজ দয়া (রহমত) থেকে দূরে সরিয়ে দেন। পবিত্র কুরআনের মুবাহালাহ সংক্রান্ত আয়াতটি হল:

আপনার কাছে (হযরত ঈসা বা তৌহীদ) সংক্রান্ত জ্ঞান আসার পর যে কেউ আপনার সাথে বিতর্ক করে এবং (সত্য মেনে নিতে চায় না) তাকে বলে দিন: এসো, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে এবং তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে, আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে, আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে, এরপর আমরা (মহান আল্লাহর কাছে) বিনীতভাবে প্রার্থনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ (লানত) দেই (আলে ইমরান: ৬১)

এরপর মুবাহালার তারিখ ও স্থান নির্দিষ্ট করা হয়। মুবাহালার দিবস ও মূহুর্ত ঘনিয়ে আসলে মহানবী (সা.) নাজরানের খ্রীষ্টানদের সাথে মুবাহালাহ করার জন্য সাধারণ মুসলিম জনতা ও নিজ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্য থেকে কেবল তাঁর আহলুল বাইতকে (আ.) তথা হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (আ.), ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হুসাইনকে (আ.) সাথে নিয়ে মদীনা নগরীর বাইরে উন্মুক্ত মরু-প্রান্তরে নির্দিষ্ট স্থানের দিকে বের হন যা মুবাহালার জন্য আগেই ঠিক করা হয়েছিল। কারণ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তখন এ চার জনের ঈমান ও পবিত্রতার চেয়ে পবিত্রতর ও দৃঢ়তর ঈমানের অধিকারী আর কোন মুসলমান ছিল না।

মহানবী (সা.) শিশু ইমাম হুসাইনকে (আ.) কোলে নিয়েছিলেন এবং ইমাম হাসানের (আ.) হাত নিজের হাতের মুঠোয় রেখেছিলেন। এ অবস্থায় হযরত আলী (আ.) এবং হযরত ফাতিমা (আ.) তাঁর (সা.) পিছে পিছে হাঁটছিলেন। মুবাহালার ময়দানে প্রবেশের আগেই তিনি (সা.) তাঁর সাথে মুবাহালায় অংশগ্রহণকারী সঙ্গীদেরকে বলেছিলেন: যখনই আমি দোয়া করব, তখন তোমরাও আমার দোয়ার সাথে সাথে আমীন বলবে। (দ্র: আয়াতুল্লাহ জাফার সুবহানী প্রণীত ‘চিরভাস্বর মহানবী ( সা.), খ: ২, পৃ: ৩৬৯)

মহানবীর (সা.) মুখোমুখি হওয়ার আগেই নাজরানের প্রতিনিধি দলের নেতারা একে অপরকে বলতে লাগল: যখনই আপনারা প্রত্যক্ষ করবেন যে মুহাম্মাদ (আ.) লোক-লস্কর ও সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মুবাহালার ময়দানে আসছেন এবং আমাদের সামনে তাঁর পার্থিব জৌলুস ও বাহ্যিক শক্তি প্রদর্শন করছেন, তখন তিনি ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী হবেন এবং তাঁর নুবুওয়াতের কোন নির্ভরযোগ্যতাই থাকবে না। আর তিনি যদি নিজ সন্তান-সন্ততি এবং আপনজনদের সাথে নিয়ে মুবাহালা করতে আসেন এবং সব ধরনের বস্তুগত ও পার্থিব জৌলুস থেকে মুক্ত হয়ে এক বিশেষ অবস্থায় মহান আল্লাহর দরগাহে প্রার্থনার জন্য হাত তোলেন, তাহলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, তিনি কেবল নিজেকেই সম্ভাব্য যে কোন ধ্বংসের মুখোমুখি করতে প্রস্তুত নন, বরং তিনি তাঁর সবচেয়ে সম্মানিত (ও প্রিয় আপন) ব্যক্তিদেরকেও ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ।

নাজরানের প্রতিনিধি দল যখন দেখতে পেল যে, মহানবী (সা.) নিজের সাথে তাঁর কলিজার টুকরা নিষ্পাপ আপনজনদের এবং নিজের একমাত্র কন্যা সন্তানকে মুবাহালার ময়দানে নিয়ে এসেছেন তখন তারা মহা-বিস্ময়ে হতবিহবল হয়ে নিজেদের হাতের আঙ্গুল কামড়াতে লাগল। তারা স্পষ্ট বুঝতে পারল যে, মহানবী (সা.) তাঁর আহ্বান ও দুআর ব্যাপারে দৃঢ় আস্থাশীল। আর তা না হলে একজন দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তি নিজের আপনজনদেরকে কখনোই আসমানী বালা-মুসিবত এবং মহান আল্লাহর শক্তি ও গজবের মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না।

নাজরানের প্রধান ধর্মযাজক তখন বললেন: আমি এমন সব পবিত্র মুখমণ্ডল দেখতে পাচ্ছি যে, যখনই তাঁরা হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে সবচেয়ে বড় পাহাড়কে উপড়ে ফেলার জন্য দুআ করবেন, তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের দোয়ায় সাড়া (জবাব) দেয়া হবে। সুতরাং এসব আলোকিত (নূরানী) মুখমণ্ডল এবং সুমহান মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির সাথে আমাদের মুবাহালা করা কখনও ঠিক হবে না। কারণ এতে করে আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয় এবং স্রষ্টার শাস্তি ব্যাপকতা লাভ করে বিশ্বের সব খ্রীস্টানকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারে। তখন পৃথিবীর বুকে একজন খ্রীষ্টানও আর থাকবে না।

নাজরানের প্রতিনিধি দল পরস্পর পরামর্শ করে সম্মিলিতভাবে মুবাহালায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তারা জিযিয়া কর প্রদান করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ভিত্তিতে মহানবীর (সা.) সাথে সন্ধিচুক্তি করে। চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর মহানবী (সা.) বলেন: মহান আল্লাহর শাস্তি নাজরানবাসীদের মাথার ওপর ছায়া বিস্তার করেছিল। আর তারা যদি মুবাহালা ও পারস্পরিক অভিসম্পাত (মুলাআনাহ) প্রদানের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করত, তাহলে তারা তাদের মনুষ্যাকৃতি হারিয়ে ফেলত এবং মরু-প্রান্তরে যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয় তাতে তারা দগ্ধ হতো। আর খোদায়ি শাস্তিও নাজরান অঞ্চলকে গ্রাস করত এমনকি উক্ত অঞ্চলের গাছ-পালায় বিদ্যমান পাখীগুলোও মারা যেত। (দ্র. আয়াতুল্লাহ জাফার সুবহানী প্রণীত ‘চিরভাস্বর মহানবী (সা.)’, খ: ২, পৃ়: ৩৬৮-৩৭০ এবং আল্লামাহ জারুল্লাহ যামাখশারী প্রণীত তাফসীর আল-কাশশাফ, পৃ: ১৭৫, ২য় সংস্করণ, ২০০৫, দারুল মারেফাহ, বৈরুত, লেবানন)

মুবাহালার মহাঘটনা মহানবীর (সা.) আহলুল বাইতের (আ:) পরিচয় সুস্পষ্ট করে দেয়। এ ঘটনা প্রমাণ করে যে মহানবীর (সা.) আহলুল বাইত হচ্ছেন হাতে গোণা নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি যাঁরা হচ্ছেন সুরা-ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লিখিত ‘আহলুল বাইত’। এই মহান ব্যক্তিদেরকে মহান আল্লাহ পাক সব পাপ-পঙ্কিলতা (রিজস) থেকে পুরোপুরি পবিত্র করার ইচ্ছা করেন। আর এ আয়াতের শানে নুযূলে নবীপত্নী উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামাহ এবং আরও কতিপয় সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস-ই কিসা (চাদরের হাদীস) অনুসারে উক্ত আয়াতে উল্লেখিত মহানবীর (সা.) পবিত্র আহলুল বাইত যে হযরত ফাতিমা (আ.), হযরত আলী (আ.), ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) তা সুস্পষ্ট এবং অন্যরা এমনকি নবী-পত্নীগণও যে আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন তাও প্রমাণ হয়।

মহানবীর (সা.) স্ত্রী আয়েশা বিনতে আবুবকর থেকে বর্ণিত হয়েছে: মুবাহালার দিবসে কালো পশমের একটি চাদর দিয়ে দেহ আবৃত করে মহানবী (সা.)বের হলেন , এরপর হাসান আসলে তাঁকে উক্ত চাদব়ে প্রবেশ করালেন, এরপর হুসাইন এলে তাঁকেও ঐ চাদব়ে প্রবেশ করালেন, এরপর ফাতিমা এলে তাঁকেও এবং এরপর আলী এলে তাঁকেও ঐ চাদরে প্রবেশ করালেন। এরপর তিনি ( সা.) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন:

হে আহলুল বাইত! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ চান তোমাদের থেকে সব ধরনের পাপ–পঙ্কিলতা দূর করতে এবং পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সুরা-ই আহযাব: ৩৩) (দ্র: আল্লামাহ জারুল্লাহ যামাখশারী প্রণীত তাফসীর আল-কাশশাফ, পৃ: ১৭৫, দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০০৫, দারুল মারেফাহ, বৈরুত, লেবানন এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ৬২৮৮, পৃ: ৯১৫, দার সাদির, বৈরুত, লেবানন, ১ম সংস্করণ, ২০০৪ )

আমের ইবনে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস নিজ পিতা সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস থেকে বর্ণনা করে বলেন: মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান সাদকে আদেশ করে বলল: আবু তুরাবকে তথা হযরত আলীকে(আ.) গালি দেয়া থেকে কোন্ জিনিস তোমাকে বিরত রেখেছে? (অর্থাৎ তুমি কেন আলীকে গালি দাও না?) তখন তিনি (সাদ) বললেন: তাঁর (আলীর) ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ যে তিন ফযিলত বলেছেন সেগুলো আমার স্মরণে আছে বলে আমি আবু তুরাবকে কখনোই গালি দেব না। কারণ সেগুলোর যে কোন একটিও যদি আমার হত তাহলে তা আমার কাছে লালবর্ণবিশিষ্ট উটের চেয়েও বেশি প্রিয় হত। ঐ ফযিলত তিনটি হচ্ছে:

ক. রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন আলীকে কোন এক যুদ্ধে (মদীনায়) রেখে যাচ্ছিলেন তখন আলী তাঁকে (সা.) বলেছিলেন: হে রাসূলুল্লাহ,আপনি কি আমাকে নারী ও শিশুদের সাথে রেখে যাচ্ছেন ? তখন রাসূলুল্লাহ ( সা.) তাঁকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন: মূসার কাছে হারূন যে অবস্থান,মর্যাদা ও মাকামের অধিকারী ছিলেন তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে আমার পরে কেবল নুবুওয়াত ছাড়া আমার কাছে তোমারও অনুরূপ অবস্থান, মর্যাদা এবং মাকাম হোক ?

খ. আমি মহানবীকে (সা.) খায়বর বিজয়ের দিন বলতে শুনেছি: আমি অবশ্যই এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা অর্পণ করব যে মহান আল্লাহকে এবং তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে। তখন আমরা সবাই সেটার জন্য আশা করেছিলাম।এরপর তিনি (সা.) বললেন: আলীকে ডাক। এরপর তাঁকে চোখ-উঠা অবস্থায় আনা হলে তিনি (সা.) তাঁর (আলীর) চোখে নিজের (সা.) মুখের লালা লাগিয়ে তাঁর হাতে পতাকা তুলে দিলেন। আর আল্লাহ পাক তাঁর তথা আলীর (আ.) হাতে বিজয় দেন (অর্থাৎ খায়বর বিজিত হয়)।

গ. আর এ আয়াতটি- ‘তাকে বলে দিন: এসো, আমরা আহবান করি আমাদের পুত্রসন্তানদেরকে এবং তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে, আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে, আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে…’ –নাজিল হলে রাসূলুল্লাহ (সা.)হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হাসান এবং হুসাইনকে আহ্বান করলেন এবং বললেন: হে আল্লাহ , এরাই হচ্ছে আমার আহলুল বাইত। (দ্র. সহীহ মুসলিম, সাহাবাদের ফযিলত সংক্রান্ত অধ্যায়: হযরত আলীর ফযিলত সংক্রান্ত অধ্যায়, পৃ:৯০৮–৯০৯, হাদীস নং ৬৪২৬, দার সাদির, বৈরুত, লেবানন, ১ম সংস্করণ,২০০৪, আর সহীহ তিরমিযীতেও সাদ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, দ্র: আল–জামে আস–সহীহ সুনান আত–তিরমিযী, কুরআনের তাফসীর সংক্রান্ত অধ্যায়, সূরা–ই আলে ইমরানের তাফসীর, হাদীস নং ২৯৯৯, পৃ:৭৯৮, দার ইহইয়াইত তুরাসিলআরাবী, বৈরুত, লেবানন, ১ম সংস্করণ)

.حَدَّثَنَا قُتَيبَةُ بنُ سَعِيدٍ وَ مُحَمَّدُ بنُ عَبَّادٍ ، وَ تَقَارَبَا فِي اللَّفظِ ، قَالَا : حَدَّثَنَا … بُکَيرِ بنِ مِسمَارٍ عَن عَامِرِ بنِ سَعدِ بنِ أَبِي وَقَّاصٍ ، عَن أَبِيهِ ، قَالَ : أَمَرَ مُعَاوِيَةُبنُ أَبِي سُفيَانَ سَعدَاً فَقَالَ : مَا مَنَعَکَ أَن تَسُبَّ أَبَا تُرَابٍ ؟ فَقَالَ : أَمَّا مَا ذَکَرتُ ثَلَاثَآً قَالَهُنَّ لَهُ رَسُولُ اللهِ فَلَن أَسُبَّهُ لِأَن تَکُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنهُنَّ أَحَبَّ إِلَيَّ مِن حُمرِ النّعَمِ. سَمِعتُ رَسُول اللهِ يَقُولُ لَهُ ، خَلَّفَهُ فِي بَعضِ مَغَازِيهِ ، فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ : يَا رَسُولَ اللهِ خَلَّفتَنِي مَعَ النِّسَاءِ وَ الصِّبيَانِ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ: أَمَا تَرضَی أَن تَکُونَ مِنِّي بِمَنزِلَةِ هَارُونَ مِن مُوسَی إِلَّا أَنَّهُ لَا نُبُوَّةَ بَعدِي؟ وَ سَمِعتُهُ يَقُولُ يَومَ خَيبَرَ: لَأُعطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلَاً يُحِبُّ اللهَ وَ رَسُولَهُ قَالَ: فَتَطَاوَلنَا لَهَا فَقَالَ: ادعُوا عَلِيَّاً فَأُتِيَ بِهِ أَرمَدَ. فَبَصَقَ فِي عَينَيهِ وَ دَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيهِ فَفَتَحَ اللهُ عَلَيهِ. وَ لَمَّا نَزَلَت هذِهِ الآيَةُ : فَقُل تَعَالَوا نَدعُ أَبنَائَنَا وَ أَبنَائَکُم… آل عِمرانَ :61) دَعَا رَسُولُ اللهِ عَلِيَّاً وَ فَاطِمَةَ وَ حَسَنَاً وَ حُسَينَاً فَقَالَ : اللهُمَّ هؤُلَاءِ أَهلِي.

তাই মুবাহালার ঘটনায় বর্ণিত রেওয়ায়তগুলো এবং সুরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতের শানে নুযুলে বর্ণিত রেওয়ায়তগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে মহানবীর (সা.) আহলুল বাইত হলেন: হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (আ.), ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হাসান (আ.) নিষ্পাপ (মাসূম) এবং মাসূম হওয়ার কারণে মহানবী (সা.) কেবল তাঁদেরকেই সেদিন তথা মুবাহালার দিবসে নিজের সাথে নিয়ে ইসলাম ধর্ম এবং নিজ রিসালাত ও নুবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করার জন্য নাজরানের খ্রীষ্টান প্রতিনিধিদলের সাথে মুবাহালা করতে বের হয়েছিলেন।

আর মুবাহালার আয়াত (সূরা-ই আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াত) থেকে প্রমাণিত হয় যে মহানবীর (সা.) নিষ্পাপ আহলুল বাইত (আ.) হিসাবে হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (আ.), ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইনই (আ.) হচ্ছেন মহানবীর (সা.) নুবুওয়াত ও রিসালাতের সত্যতার সাক্ষী। ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইন (আ.) মহানবীর (সা.) পুত্রসন্তান (বংশধর) এবং মানবজাতির হেদায়েতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত মহানবীর (সা.) পবিত্র বংশধারার বিস্তৃতি হবে এ দুই ইমাম ভ্রাতৃদ্বয়ের মাধ্যমে।

অন্যদিকে এই আয়াত থেকে এটাও স্পষ্ট হযরত ফাতিমা (আ.) মহানবীর (সা.) উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী। আর পবিত্র কুরআনের ভাষায় এ উম্মতই হচ্ছ সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত خَیرُ أُمَّةٍ ’ এবং হযরত আলী (আ.) মহানবীর (সা.) সত্ত্বা- প্রাণ ও একান্ত ঘনিষ্ঠ আপনজন (নাফসুন্নবী) হওয়ায় মহানবীর উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং সমগ্র সৃষ্টি জগতে ও মানবকুলে মহানবীর (সা.) পরে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। আর এখান থেকেই সুস্পষ্ট যে হযরত আলী হচ্ছেন সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তথা গোটা মানবজাতির মধ্যে হযরত ফাতিমার (আ.) স্বামী হওয়ার জন্য একমাত্র উপযুক্ত ব্যক্তি বা কুফু এবং হযরত ফাতিমাই হচ্ছেন এ উম্মত এবং পূর্ববর্তী সকল উম্মতের নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী।

আর ওই একই আয়াত থেকে এটাও স্পষ্ট হযরত ফাতিমাই (আ.) হবেন বিশ্বের সকল নারীর এমনকি হযরত মারিয়ামের (আ.) নেত্রী, এ উম্মতের নারীদের নেত্রী এবং বেহেশতবাসী সকল নারীর নেত্রী (سَیِّدَةُ نِساءِ العَالَمِینَ حَتَّی مَریَمَ و سَیِّدَةُ نِسَاءِ هذه الأُمَّةِ وَ سَیِّدَةُ نِسَاءِ أَهلِا لجَنَّةِ) এবং তাঁর স্বামী হযরত আলী (আ.) মহানবীর পরে এ উম্মতের ইমাম, নেতা, হাদী, খলিফা, ওয়ালী তথা কর্তৃত্বশীল অভিভাবক, কর্তৃপক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালক এবং তাঁদের পবিত্র বংশধর ইমামগণই হবেন কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ তথা সমগ্র মানবজাতির হাদী বা পথপ্রদর্শক। আর এতদসংক্রান্ত দৃঢ় ও অকাট্য সূত্রে প্রতিষ্ঠিত, শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত সহীহ এবং মুতাওয়াতির হাদীসও বিদ্যমান রয়েছে।

তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় সূরা-ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত আহলুল বাইত এবং এ আয়াতের শানে নুযুলে আহলুস সুন্নাহর সনদ-সূত্রগুলোতে বর্ণিত ৭০-এরও বেশি রেওয়ায়াত এবং মুবাহালার ঘটনার রেওয়ায়াতে উল্লেখিত আহলুল বাইত, শাব্দিক (আভিধানিক) ও ফিকাহগত পারিভাষিক অর্থে আহলুল বাইত হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, শাব্দিক (আভিধানিক) এবং ফিকাহগত পারিভাষিক অর্থে আহলুল বাইত হচ্ছে: গৃহবাসীরা যাদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, চাকর-বাকর, দাস-দাসী এমনকি গৃহপালিত পশু ও পাখী যেমন:বিড়াল , কবুতর ইত্যাদি যাদের ভরণ-পোষণের ভার গৃহস্বামী বা গৃহকর্তার ওপর ন্যস্ত (দ্র: লিসানুল আরাব, খ:১, পৃ: ২৫৩, বৈরুত, লেবানন)

কোন ব্যক্তির আহল হচ্ছে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ (আখাসসুন্নাসে বিহিأَخَصُّ النّاسِ بِهِ ) ‘এবং সম্ভবত: এ কথার ভিত্তিতে মহানবী বলেছেন: সালমান আমাদের অর্থাৎ আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত (سَلمَانُ مِنَّا أَهلِ البَیتِ)’, কিন্তু আখাসসুন্নাসে বিহি বলতে আরবদের কাছে প্রধানত সবচেয়ে রক্ত সম্পর্কের নিকটাত্মীয়দেরকে যেমন: পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, পিতৃব্য, পিতৃব্য-পুত্র ইত্যাদিকে বোঝায় অর্থাৎ নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর। আর তখন সালমান এতদর্থে কখনোই আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। [দ্র: জাওয়াহিরুল কালাম (খ: ২৮, পৃ: ৩৮৬ – ৩৮৭)]

(ফিকাহগত পারিভাষিক অর্থে) কোন ব্যক্তির আহলুল বাইত কারা তা নির্ধারণ করার জন্য ঐ ব্যক্তির দেশ, অঞ্চল বা জনপদের উরফ (عُرف) অর্থাৎ রীতিনীতি ও প্রথায় প্রচলিত পরিভাষার দিকে লক্ষ্য করতে হবে। আর যদি সাধারণ জনগণের মধ্যে এতদসংক্রান্ত প্রচলিত কোন অর্থ না থেকে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির আহলুল বাইত হবে তার সকল আত্মীয়স্বজন। তাই যে সব ব্যক্তি কোন ব্যক্তির সাথে রক্ত সম্পর্কের তারা হল তার আহলুল বাইত। আর এ কথার ভিত্তিতে মহানবীর (সা.) উক্তিতে এসেছে: আমাদের অর্থাৎ আহলুল বাইতের ওপর সদকা হালাল নয় (إِنَّا أَهل البَیتِ لا تَحِلُّ لَنَا الصّدَقَةِ ) এবং এ কারণেই পৈতৃক সূত্রে যারা আব্দুল মুত্তালিবের বংশধরদের তাদের সকলের উপর সদকা ও যাকাত হারাম হয়েছে।

মহানবীর আহলুল বাইত কারা ? তাঁর স্ত্রীরা কি তাঁর আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন ? – এ বিষয়ে যাইদ ইবনে আরকামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‌‘মহানবীর আহলুল বাইত হচ্ছেন তার স্ত্রীরা। তবে তাঁর আহলুল বাইত হচ্ছেন তারা যাদের ওপর তাঁর পরে সদকা হারাম হয়েছে।’ তখন যাইদকে জিজ্ঞেস করা হল: তারা কারা ? তিনি (যাইদ) বললেন: তারা আল-ই আলী তথা আলীর বংশধর , আল-ই আকীল তথা আকীলের বংশধর, আল-ই জাফার বা জাফারের বংশধর এবং আল-ই আব্বাস বা আব্বাসের বংশধর। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬২৫১, পৃ: ৯১০)

আবার যাইদ ইবনে আরকাম থেকে সহীহ মুসলিম ভিন্ন অন্যান্য রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: ‘তাঁর ( সা.) স্ত্রীরা তাঁর আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন।’এ দুই ধরনের রেওয়ায়াত থেকে যদিও মনে হয় যাইদ ইবনে আরকামের কথায় স্ববিরোধিতা রয়েছে তবে এভাবে তার সমাধান করা হয়েছে যে মহানবীর (সা.) স্ত্রীরা শাব্দিক ও আভিধানিক অর্থে তাঁর আহলুল বাইত অর্থাৎ যেহেতু তারা তাঁর (সা.) গৃহে তাঁর সাথে বসবাস ও জীবন-যাপন করতেন সেহেতু এ অর্থে তারা তাঁর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু তারা (মহানবীর স্ত্রীরা) ঐ আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন যাদের ওপর সদকা হারাম হয়েছে। (দ্র: সহীহ মুসলিমের ৬২৫১ নং হাদীসটির পাদটীকা, পৃ: ৯১০)

আর ঠিক একইভাবে বলা যায় মহানবীর (সা.) স্ত্রীরা, আব্দুল মুত্তালিবের বংশধরেরা এবং সালমান (রা.) ঐ অর্থে মহানবীর আহলুল বাইত নন যে অর্থে আহলুল বাইত শব্দটি সূরা-ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে অর্থাৎ আয়াতে তাতহীরে উল্লেখিত হয়েছে। অর্থাৎ উক্ত আয়াতে আহলুল বাইত হচ্ছেন এমন নিষ্পাপ (মাসূম) ব্যক্তিবর্গ মহান আল্লাহ যাদের থেকে সকল পাপ-পঙ্কিলতা (রিজস) দূর করে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।

এ আয়াতের শানে নুযূল সংক্রান্ত হাদীসসমুহে (যেগুলো হাদীস-ই কিসা বা চাদরের হাদীস বলে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে) এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন মুতাওয়াতির হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা.) তাঁদেরকে কিসা বা চাদরের ভিতর প্রবেশ করিয়ে মহান আল্লাহর কাছে তাঁদের থেকে সব ধরণের পাপ-পঙ্কিলতা দূর করে তাঁদেরকে পুরোপুরি পবিত্র করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করেছেন। উল্লিখিত হাদিসগুলোতে তিনি তাঁদেরকে তাঁর সকল স্ত্রী এবং অন্য সকল আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি থেকে আলাদা ও সুনির্দিষ্ট করেছেন উম্মত যেন তাঁদেরকে চিনতে ভুল না করে।

৭০-এরও বেশি রেওয়ায়াত যেগুলোর বেশিরভাগই আহলুস সুন্নাহ বর্ণনা করেছে সেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে সূরা-ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতটি পবিত্র পাঁচ জনের তথা মহানবী (সা.), ফাতিমা, আলী, হাসান ও হুসাইনের শানে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই সূরা-ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতের আহলুল বাইত শব্দটি বিশেষ অর্থ বিশিষ্ট কুরআনী পরিভাষা যা আহলুল বাইতের শাব্দিক, আভিধানিক এবং ফিকাহগত পারিভাষিক অর্থ হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এই বিশেষ অর্থেই আহলুল বাইত শব্দটি বিশুদ্ধ, দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত মুতাওয়াতির হাদীস ‘হাদীস-ই সাকালাইনে’ও ব্যবহৃত হয়েছে।

হাবীব ইবনে সাবিত এবং যাইদ ইবনে আরকাম বলেন যে, মহানবী (সা.) বলেছেন: আমি তোমাদের মধ্যে যে দুই জিনিস রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা এ দুটো দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর তাহলে আমার পরে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না, এগুলোর একটি অপরটি হতে বড়:কিতাবুল্লাহ অর্থাৎ কুরআন যা হচ্ছে আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত রজ্জু এবং আমার ইতরাত(অতি নিকটাত্মীয় রক্তজ বংশধর) আমার আহলুল বাইত এবং এ দুটি (কিতাবুল্লাহ এবং আমার ইতরাত আহলুল বাইত) কিয়ামত দিবসে আমার কাছে হাউয–ই কাওসারে উপনীত হওয়া পর্যন্ত কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। অতএব, সাবধান! তোমরা এতদুভয়ের ক্ষেত্রে আমার কেমন প্রতিনিধিত্ব করবে(অর্থাৎ আমার পরে তোমরা এ দুয়ের সাথেকেমন আচরণ করবে)। (দ্র: তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৯৭, পৃ: ৯৯২, দার ইহইয়াইত তুরাস আল-আরাবী, বৈরুত, লেবানন, প্রথম সংস্করণ)।

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর আলোচনা থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ হয় যে মুবাহিলা ও তাতহিরের আয়াত এবং হাদিসে সাকালাইনে বর্ণিত আহলে বাইত বিশেষ এক পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং তা ফিকাহগত ও আভিধানিক অর্থ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর এ অর্থে আহলে বাইতকে অবশ্যই নিষ্পাপ ও নির্ভুল হতে হবে। কেননা তারা নির্ভুল ও অবিকৃত কুরআন থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হবেন না এবং তাঁরা পুরোপুরি পবিত্র ও নিষ্পাপ। হাদিসে সাকালাইন থেকে এটাও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় যে কিয়ামত পর্যন্ত আহলে বাইতের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। ওই উল্লেখিত আহলে বাইত হলেন হযরত ফাতিমা, হযরত আলী, হযরত হাসান ও হুসাইন এবং ইমাম হুসাইনের বংশে জন্ম-নেয়া নিষ্পাপ ৯ জন ইমাম। (তাঁদের ওপর চিরকাল ধরে নাজিল হোক মহান আল্লাহর দরুদ ও রহমত)। আর আহলে বাইতের এই অর্থ ছাড়া ভিন্ন অর্থ করা হলে অর্থাৎ শাব্দিক আভিধানিক বা ফিকাহগত পারিভাষিক অর্থ করা হলে তা হবে সত্যের অপলাপ ও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং রাসূলকে (সা.) অবমাননা করার শামিল। এমনকি তা হবে স্বয়ং আল্লাহর সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করার শামিল যা সব বিচ্যুতি ও বিদআতের উৎস। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করুন।

আর যেহেতু আহলুল বাইত (আ.) উম্মতের মধ্যে মাসূম হওয়ার কারণে মুবাহালার দিবসে ইসলাম এবং মহানবীর নুবুওয়াত ও রিসালাতের সত্যতার সাক্ষ্য দেয়ার জন্য মহানবীর (সা.) সাথী হয়েছিলেন কেবল তাঁরাই হবেন মহানবীর পরে তাঁর উম্মতের ইমাম, নেতা, ওয়ালী (অভিভাবক) এবং তাদের যাবতীয় বিষয় পরিচালনার বৈধ কর্তৃপক্ষ এবং তাদের মাঝে মহানবীর খলিফা ও উত্তরসূরি হওয়ার জন্য সর্বাধিক যোগ্য ও উপযুক্ত ( أحَقّ و أَولَی )। কারণ তাঁরা নিষ্পাপ ও মাসূম বলেই সমগ্র উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ (أَفضَل)। মুতাওয়াতির হাদীস-ই সাকালাইন থেকে প্রমাণিত হয় যে মহানবী (সা.) মহান আল্লাহর নির্দেশে এই নিষ্পাপ (মাসূম) আহলুল বাইতকে (আ.) তাঁর পরে কিয়ামত পর্যন্ত উম্মাহর হাদী, ইমাম, উলুল আমর এবং তাদের মাঝে তাঁর খলিফা নিযুক্ত করেছেন। কারণ মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতকে বিচ্যুতি থেকে বাঁচার জন্য পবিত্র কুরআন ও মাসূম আহলুল বাইতকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন এবং পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের চিরন্তন ঐক্য ও সহবিদ্যমানতা এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হওয়ার কথা উম্মতকে জানিয়েছেন।

অন্য কথায় মহানবীর (সা.) জীবদ্দশায় হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (আ.), ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.)তাঁর নিষ্পাপ ও মাসূম ইতরাত (অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর) ছিলেন বিধায় এই চারজন ছিলেন বিশেষ অর্থে মহানবীর আহলুল বাইত। কিন্তু বিশেষ অর্থে এই আহলুল বাইত কেবল এই চারজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন বরং তাঁদের পরে ইমাম হুসাইনের (আ.) পরপর ৯ জন মাসূম বংশধর তথা ইমাম যইনুল আবেদীন, ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকির, ইমাম জাফার আস-সাদিক, ইমাম মূসা আল-কাযিম, ইমাম আলী আর-রিযা, ইমাম মুহাম্মাদ আত-তাকী আল-জাওয়াদ, ইমাম আলী আন-নাকী আল-হাদী, ইমাম হাসান আল-আস্কারী এবং ইমাম মুহাম্মাদ আল-মাহদী আলাইহিমুস সালামও হবেন কিয়ামত পর্যন্ত বিশেষ অর্থে আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত। বারো ইমামের হাদীস, প্রতি যুগে মাসূম ইমামের বিদ্যমান থাকার হাদীস, যুগের মাসূম ইমামকে না চিনে এবং তাঁর আনুগত্য না করে মৃত্যু বরণ করা যে জাহেলিয়াতের মৃত্যু এতদসংক্রান্ত হাদীস এবং হাদীসে সাকালাইন থেকেও উপরোক্ত বিষয়টি প্রমাণ হয়।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .