রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মাযুরার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এ সংবাদ মাধ্যমটি ( ন্যাশনাল রিভিউ) বলতে চাচ্ছে যে ইরান তার আক্রমণকারী ড্রোন ( বিশেষ করে মোহাজের - ৬ ড্রোন) সুদানী সশস্ত্র বাহিনীর কাছে প্রেরণ ও সরবরাহ করছে যারা র্্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস ( RSF ) নামের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে। এই সংবাদ মাধ্যমের দাবি যে ইরান নাকি সুদানে নিজ প্রোক্সিদের কাছে এ ধরনের ড্রোন মোতায়েন করে বাবুল মান্দাব প্রণালী - লোহিত সাগর - সুয়েজ ক্যানাল - ভূমধ্য সাগর - ইউরোপ - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত বাণিজ্যিক জলপথ আরও অনিরাপদ করার উদ্যোগ নিয়েছে ও চেষ্টা করছে। ঐ সংবাদ মাধ্যম বলতে চাচ্ছে যে ইরানের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য সুদানীরাও হুথীদের অনুরূপ কাজ করবে। (ড্রোন )
এগুলো সব মাযুরার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ইরান বিরোধী অপপ্রচার ও ক্যাম্পেইন। কারণ , বর্তমান সুদানী সরকার ও সেদেশের সশস্ত্র বাহিনী মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , সৌদি আরব ও ইসরাইলের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল । আর ঐ তিন দেশ প্রথমে সুদানকে বিভক্ত করে দক্ষিণ সুদান নামের একটি পৃথক দেশের জন্ম দেয় । এরপর বিশেষ করে ইসরাইল সুদানে অনুপ্রবেশের সুযোগে সেদেশে কেন্দ্রীয় (খার্তুম ) সরকারের সাথে বিদ্রোহী র্্যপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দিলে তা দীর্ঘ দিন ধরে চলছে এবং বহু বেসামরিক সুদানী নাগরিক হতাহত হয়েছে এমনকি স্বয়ং সুদানী রাজধানী খার্তুমেও। আর বহুদিন আগেই সুদানী সরকার সৌদি - মার্কিন চাপে ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি , পাশ্চাত্য ও ইসরাইলের নিকটবর্তী হয়েছিল । আর ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং সৌদি , পাশ্চাত্য ও ইসরাইলের নিকটবর্তী হওয়ার প্রথম পুরস্কার ছিল সুদানকে বিভক্ত করণ এবং দক্ষিণ সুদানকে সুদান থেকে বিচ্ছিন্ন করা । এরপর দ্বিতীয় পুরস্কার হচ্ছে বাদবাকি সুদানে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়া । ইসরাইল ও মাযুরাই (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সুদানে রক্তক্ষয়ী এ গৃহযুদ্ধে ইন্ধন যোগাচ্ছে এবং গৃহযুদ্ধ রাজধানী খার্তুম পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছে। এখন খোদ রাজধানীতেই সুদানী সরকার ও সেদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিদ্রোহী র্্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের সাথে দীর্ঘ সংঘর্ষে লিপ্ত। পাশ্চাত্য বিশেষ করে মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , ইসরাইল এবং সৌদি আরব কেন্দ্রীয় সুদানী সরকারকে এ সংঘর্ষে ও গৃহযুদ্ধে সহায়তা করছে না উল্টে এই গৃহযুদ্ধ ও সংঘর্ষের সুযোগে আল-কায়েদা ও আইসিসের মতো বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী তাকফীরী গোষ্ঠীর অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে সুদান। তাই অগত্যা সুদানী সরকার ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সহযোগিতা জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে তাদের নিজ জাতীয় স্বার্থেই । এখানে একটা বিষয় সুস্পষ্ট হওয়া দরকার। আর তা হলো যে ইরানের সাথে দেশ সমূহের সুসম্পর্ক ও সহযোগিতা সে দেশ সমূহের জাতীয় ঐক্য ও ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষার জন্য সহায়ক। আর ইরান শ্রীলংকা, ইরাক , সিরিয়া, ইথিওপিয়ার ভৌগলিক অখন্ডত্ব রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। পক্ষান্তরে পাশ্চাত্য বিশেষ করে মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) দেশসমূহের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে বিচ্ছিন্নতাবাদ বিভিন্ন দেশে উস্কে দিয়েছে ও দিচ্ছে যার প্রমাণ সুদান ও লিবিয়া । এ দেশগুলোকে গৃহযুদ্ধ ও গোলযোগ বাঁধিয়ে কার্যত বিভক্ত করে ফেলেছে। সুদানী কর্তৃপক্ষ ও সে দেশের সশস্ত্র বাহিনী ইরানের প্রোক্সি হয়ে গেল কীভাবে? অথচ সুদানের বর্তমান সামরিক জান্তা সরকার মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , সৌদি ও ইসরাইলের সহায়তায় ও সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছিল! কিন্তু মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও ইসরাইল উল্টে দেশটাকে বিভক্ত করে ও গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে সুদানের অবস্থা শোচনীয় করে দিয়েছে। ইসরাইল সুদানের কেন্দ্রীয় খার্তুম সরকার ও বিদ্রোহী র্্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে! এখন মাযুরা ইরানকে দুষছে যে ইরান নাকি সুদানী সশস্ত্র বাহিনীকে অ্যাটাকিং ড্রোন বিশেষ করে মোহাজের - ৬ সরবরাহ করছে এবং এটা করছে লোহিত সাগরকে অনিরাপদ করার জন্য । এ ধরনের ডাহা মিথ্যা ও উদ্ভট কথা বলছে মাযুরার এ সংবাদ মাধ্যমটি ( ন্যাশনাল রিভিউ) । আর সুদানী সরকার ও কর্তৃপক্ষ ইরানের হাইটেক যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তির কার্যকারিতা ও স্বল্প মূল্যের হওয়ার জন্য ইরানী অস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তি কিনতে ও ব্যবহার করতে আগ্রহী হয় তাহলে কি এতে করে ইরানের দোষ ?!! এই অঞ্চলে ইরান অশান্তির বীজ বপন ও বুনিয়াদ স্থাপন করেছে নাকি অত্র অঞ্চলের অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার মূলকারণই হচ্ছে মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , যুরা (যুক্তরাজ্য) ও ইসরাইল ?
বাবুল মান্দাব প্রণালীর সংকটটাও মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , যুরা ( যুক্তরাজ্য) ও ইসরাইলই সৃষ্টি করেছে গাযায় বর্বর আগ্রাসন , গণহত্যা ও প্রজন্ম হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ও সব ধরণের যুদ্ধাপরাধ করে। এর জন্য হুথীরা দায়ী নয় । হুথীরা যদি দায়ী হয় তাহলে তারা কেন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘ ৭ বছরের যুদ্ধে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বাবুল মান্দাব প্রণালী - লোহিত সাগরে সৌদি সামুদ্রিক জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় নি । যদি এখন তারা মযলূম গাযাবাসীদের স্বার্থে ইসরাইলের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে তাহলে নিজেদের স্বার্থে ঐ ৭ বছর যুদ্ধ চলাকালে সৌদিদের ওপর এমন অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের সামর্থ্য তাদের (হুথীদের) ছিল। কিন্তু তারা তা ব্যবহার করে নি । এখানেই হুথীদের ও ইয়ামানের মহত্ত্ব ও উদারতা প্রমাণিত হয় । হুথীরা কেবল ইসরাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট জাহাজসমূহের ওপরই অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও যুরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরাইলের পক্ষে ইয়ামানের বিরুদ্ধে গায়ে পড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পুরো বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত ও অনিরাপদ করে ফেলেছে। এ জন্য হুথীরা ও ইয়ামান মোটেও দায়ী নয় বরং মূলতঃ মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , যুরা (যুক্তরাজ্য) , ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইসরাইল দায়ী তাদের আগ্রাসন , দুষ্কর্ম ও যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ।