রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সাল থেকে ইরানের কাছ থেকে টন টন হেভি ওয়াটার ( অবে সাঙ্গীন বা ভারী পানি D2O ) কিনছে এবং ১০-১২ - ২০২৩ মধ্যস্থতাকারী অর্থাৎ intermediary - এর মাধ্যমে হেভি ওয়াটার বা অবে সাঙ্গীন কিনেছে ।
এ কথা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমীর আব্দুল্লাহীয়ান বলেছেন। ইরানের উৎপাদিত বা তৈরি হেভি ওয়াটার পৃথিবীতে সবচেয়ে উত্তম । ২০১৬ সালে তদানীন্তন মার্কিন এনার্জি মন্ত্রী আর্নেস্ট মোনিয্ বলেছিল : মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ইরানের হেভি ওয়াটার পরীক্ষা করেছে এবং এটা ( ইরানের হেভি ওয়াটার) পূর্ণাঙ্গ রূপে ভালো ( It's perfectly good ) ! (হেভি ওয়াটার উৎপাদন করে না)
মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) আভ্যন্তরীন ভাবে হেভি ওয়াটার (অবে সাঙ্গীন) উৎপাদন করে না ।
( The United States does not produce heavy water domestically ! )
ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমীর আব্দুল্লাহীয়ন বলেন : একজন ইউরোপীয় কর্মকর্তা তাঁকে বলেছে যে পরীক্ষা করার পর তারা ( ইউরোপীয়রা ) ইরানের তৈরি হেভি ওয়াটারকে পৃথিবীতে সবচেয়ে উচ্চ গুণগত মানের অধিকারী হিসেবে পেয়েছে !
ইরানের তৈরি হেভি ওয়াটার ( অবে সাঙ্গীন) গুণগত মানের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম স্থানের অধিকারী হওয়ার কারণে ইউরোপীয়রা ইরানের উৎপাদিত হেভি ওয়াটারে ( অবে সাঙ্গীন ) তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছে ।
ইরানের তৈরি ১ লিটার হেভি ওয়াটারের দাম ১০০০ ডলার ।
উল্লেখ্য যে , ইউরেনিয়ামের পর হেভি ওয়াটার হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় পারমাণবিক সামগ্রী ( nuclear material ) ।
হেভি ওয়াটার বা অবে সাঙ্গীনের ব্যবহার :
১. ইরানের তৈরি হেভি ওয়াটার ( অবে সাঙ্গীন) সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশুদ্ধতার অধিকারী হওয়ার কারণে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ সমূহ নির্ণয় ( ডায়াগ্নোসিস ) ও চিকিৎসায় ইন্স্ট্রুমেন্টাল ।
২. বিভিন্ন উচ্চতর চিকিৎসা ও পারমাণবিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই হেভি ওয়াটার বা অবে সাঙ্গীন বহুল ব্যবহৃত হয় ।
৩. বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপ্লিকেশনে ( এস্তেফদেহ হয়ে সান'আতী ) এই হেভি ওয়াটার বা অবে সাঙ্গীন ব্যবহৃত হয়।
৪.হেভি ওয়াটার (অবে সাঙ্গীন )ঐ সব নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের ( পারমাণবিক চুল্লি ) মোডারেটর ( moderator ) হিসেবে ব্যবহৃত হয় যেগুলো উইপোন - গ্রেড ( পারমাণবিক অস্ত্রের গ্রেডের ) প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের জন্য ভালো ভাবে স্থাপিত করা হয়েছে।
আমি এর আগে লিখেছিলাম যে ইরান বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক জ্বালানির পূর্ণাঙ্গ চক্র এবং অন্য সকল শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পারমাণবিক ব্যবহার ও পরিষেবা আয়ত্ত করে নিয়েছে। তো আমার এ কথার প্রমাণ হিসাবে ইরানের হেভি ওয়াটার যে বিশ্বে সর্বোত্তম হেভি ওয়াটার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে এমনকি মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও ইউরোপেও তা উত্থাপন করা হল এখানে। আর উল্লেখ্য যে স্বয়ং মাযুরাও (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) নিজেই এই অতি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক সামগ্রী ( nuclear material ) যা পারমাণবিক অস্ত্র সহ বিভিন্ন পারমাণবিক কাজে ও শিল্পে ব্যবহৃত হয় নিজে উৎপাদন না করে বিদেশ থেকে আমদানি করে । অথচ ইরানকে মাযুরা এই পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র খাতেই সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যাতে ইরান যেন কোনো ধরনের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র আমদানি রফতানি প্রক্রিয়া আঞ্জাম দিতে না পারে । অথচ এই মাযুরাই ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ইউরেনিয়ামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় পারমাণবিক সামগ্রী হেভি ওয়াটার পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা কবলিত ইরানের কাছ থেকেই কিনছে এবং এই গত বছরের ডিসেম্বরেও তা কিনেছে !!!
পারমাণবিক বোমা ও অস্ত্রের অধিকারী ১নং পরাশক্তি মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) যদি ইউরেনিয়ামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবচেয়ে চাহিদার পারমাণবিক সামগ্রী ( হেভি ওয়াটার ) ইরানের কাছ থেকে কিনছে ২০১৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এবং শুধু মাযুরা নয় বিশ্বের ২য় পারমাণবিক পরাশক্তি রাশিয়াও হেভি ওয়াটার ইরানের কাছ থেকে কিনেছে তাহলে বুঝতে হবে যে ইরান এই পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কত বিরাট উন্নতি করেছে! যদি পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় তাহলে ইরান পারমাণবিক প্রযুক্তি ও পরিষেবা রফতানি করে জ্বালানি তেল ও গ্যাস রফতানির আয়ের চেয়েও বেশি আয় করতে পারবে এবং সফিস্টিকেটেড প্রযুক্তির বাণিজ্যে পশ্চিমাদের ও প্রাচ্যওয়ালাদের মনোপোলি ভেঙে দেবে। আর ইরান এ সব কিছু অর্জন করেছে ইসলামী ও বিপ্লবী আদর্শে বলীয়ান হয়ে এবং এর জন্য বহু বুকের রক্ত দিতে হয়েছে ইরানীদের। ইরানের ৫ জন খ্যাতনামা পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে ইসরাইল ও মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) গত ১৫ বছরে আততায়ী দিয়ে হামলা চালিয়ে হত্যা ও শহীদ করেছে যারা ইরানে nuclear martyrs ( পারমাণবিক শহীদ : শুহাদায়ে হাস্থেঈ ) নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন । এ সব শহীদের নিরলস প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অথচ পাকিস্তান ও ভারত গুটিকয়েক পারমাণবিক বোমা বানিয়ে বসে রয়েছে এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও পরিষেবার ক্ষেত্রে তেমন এগুতে পারেনি। এগুতে পারলে ঐ দুই দেশ তাদের বৈদ্যুতিক চাহিদা ও প্রয়োজন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রযুক্তি দিয়েই পূরণ করতে পারত । কিন্তু মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সহজে সেটা হতে দিচ্ছে না চোখ রাঙানি দিয়ে ও মূলা ঝুলিয়ে ঐ দুই দেশকে নাচাচ্ছে ও ঘুরাচ্ছে গত দুই তিন দশক ধরে ! ভারত হয়তো কিছুটা আদায় করতে পারবে । তবে ভবিষ্যতে তা দেখা যাবে ।