রিপোর্ট: মুহাম্মদ আব্দুর রহমান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউরোপীয়দের দৃষ্টিতে বর্ণমালার সাথে ধর্মের সম্পর্ক বিদ্যমান বা বর্ণমালা ধর্মেরও প্রতীক :
পোলিশরা ক্যাথোলিক খ্রিষ্টান হওয়ার জন্য যদি সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহার না করে ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে এবং রুশরা অর্থোডক্স খ্রিষ্টান হওয়ার জন্য যদি ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার না করে সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহার করে ( কারণ ল্যাটিন বর্ণমালা ক্যাথোলিক খ্রিষ্টানদের কাছে ধর্মীয় ভাবে পছন্দনীয় ও পবিত্র অথবা ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক এবং সিরিলিক বর্ণমালা অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের কাছে ধর্মীয় ভাবে পছন্দনীয় ও পবিত্র বা ধর্মীয়ভাবে সংস্কৃতির প্রতীক । বিস্তারিত জানতে দেখুন : (বর্ণমালা ধর্মেরও প্রতীক)
তাহলে মুসলমানরা তাদের ভাষা সমূহ লিখতে অন্যান্য বর্ণমালা ব্যবহার না করে আরবী বর্ণমালা কেন ব্যবহার করবে না ? আরবী বর্ণমালা মুসলমানদের জন্য
ধর্মীয় ভাবে কাম্য পছন্দনীয় ও পবিত্র অথবা ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক এবং এ কারণে তাদের ভাষাগুলো আরবী হরফে লেখা উচিত। কিন্তু এ কথা বললে বাংলাদেশ ও অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহে তা সংকীর্ণতা, সাম্প্রদায়িকতা , অনগ্রসরতা এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের পরিপন্থী হওয়া ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। তাই দেখা যায় যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে শিল্পপতি সালমান এফ রহমানের পিতা ফযলুর রহমান যিনি ছিলেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী তিনি বাংলা ভাষা উর্দু , পোশতু , বালুচী , সিন্ধী , মারওয়ারী ,পাঞ্জাবী , সারায়েকী ইত্যাদি ভাষার মতো আরবী হরফে লেখার প্রস্তাব দিলে এবং পূর্ব বাংলার ( বর্তমান বাংলাদেশ) সেক্যুলার মনা সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা তীব্র বিরোধিতা ও আন্দোলন করে এ উদ্যোগ বাঞ্চাল ও ব্যর্থ করে দেয় এ যুক্তি দেখিয়ে যে এতে নাকি বাংলা ভাষায় বিকৃতি সাধিত ও বাংগালী সংস্কৃতি নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে !!! অন্য সব উপকারের কথা বাদ দিলেও আজ যদি আরবী হরফে বাংলা ভাষার পঠনপাঠন ও লিখন হত তাহলে সাক্ষর বাংলাদেশী জনগণ অতি অনায়াসে পবিত্র কুরআন রূখানী ও রাওয়ানখানী করতে অর্থাৎ শুধু রিডিং পড়তে পারত ( তাজবীদ নয় কারণ তা[ তাজভীদ]আলাদা ভাবে শিখতে হয় ) । কিন্তু এখন বহু শিক্ষিত বাংলাদেশী মুসলমান পবিত্র কুরআনের সাধারণ রূখানী ও রাওয়ানখানী করতে অর্থাৎ সাধারণ রিডিং পড়তেই জানে না বা পারে না । আর আরবী হরফে বাংলা লেখা হলে যারা এ বাংলায় শিক্ষিত হত তাদের ১০০%ই অন্তত : পবিত্র কুরআন রূখানী ও রাওয়ানখানী করতে ( প্লেন রিডিং পড়তে ) পারত যা হত নাই মামার চেয়ে কানা মামার ভালো -- এ প্রবাদের মতো। অথচ সুলতানী ও মুঘল আমলে বর্তমান বাংলা হরফ ছাড়াও আরবী হরফ ও বর্ণমালায়ও বাংলা ভাষা লেখার প্রচলন ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা এসে আরবী হরফে বাংলা লেখার পদ্ধতি ও রীতি সম্পূর্ণ বন্ধ (ও বিলুপ্ত) করে দিয়ে বর্তমান বাংলা হরফে বাংলা লেখার পদ্ধতি ও রীতিটাকেই শুধু আনুষ্ঠানিক ও সরকারী ভাবে স্বীকৃতি দেয় , পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং কেবল সেটাই প্রচলন করে শক্ত হাতে ও জোর করে এবং এ ক্ষেত্রে বাংগালী উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অকুণ্ঠ সহায়তায় ও সমর্থনও পেয়ে যায় ব্রিটিশরা। ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা মুসলিম বিশ্বের যেখানেই গিয়েছে ও আধিপত্য বিস্তার করেছে সেখানেই তারা মুসলমানদের স্থানীয় ভাষাসমূহের হরফ ও বর্ণমালা যা ছিল আরবী বর্ণমালা ভিত্তিক তা পরিবর্তন করে ল্যাটিন , সিরিলিক বা প্রাচীন অনারবীয় বর্ণমালার প্রচলন করেছে জোর করে ও বলপ্রয়োগ করে যাতে মুসলমান জাতি সমূহ ইসলাম, কুরআন, আরবী ভাষা ও ইসলামী সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যায় এবং ইউরোপীয় ভাষা , সংস্কৃতি ও মতাদর্শের নিকটবর্তী হয় । এসব সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী মুসলিম দেশ ও জাতি সমূহের কাছে দেখিয়েছে যে আরবী হরফে সাম্প্রদায়িকতা , সংকীর্ণতা , অবৈজ্ঞানিকতা ও অনগ্রসরতার গন্ধ ও বিষ বাষ্প রয়েছে পক্ষান্তরে ল্যাটিন , সিরিলিক ও অন্যান্য অনারবীয় হরফ ও বর্ণমালায় রয়েছে প্রগতি, উদারতা মুক্তমন , অসাম্প্রদায়িকতা ও বৈজ্ঞানিকতা ! ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা শিখিয়ে দিয়ে গেছে যে বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার হচ্ছে শুদ্ধ রীতি এবং আরবী ফার্সী শব্দ ব্যবহার হচ্ছে অশুদ্ধ রীতি যা এখনও বজায় ও বহাল আছে। লক্ষ্যণীয় যে ব্রিটিশ শাসনের আগে বাংলা ভাষা ছিল আরবী -
ফার্সী শব্দ বহুল ভাষা । আর এই একই কথা ও বিষয় অন্যান্য মুসলিম জাতির ভাষাসমুহের ভাগ্যেও ঘটিয়েছে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা । অথচ এরাই ( ব্রিটিশ ও ইউরোপীয়রা ) ল্যাটিন বর্ণমালাকে ক্যাথোলিক খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতীক এবং সিরিলিক বর্ণমালাকে অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্মের প্রতীক বলছে। আর এতে করে তখন ঘৃণ্য ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িকতার উদয় হয় না । এটাই হলো পশ্চিমাদের , ইউরোপীয়দের এবং পাশ্চাত্য শিক্ষিতদের স্ববিরোধিতা (তানাকুয ) । আরবী কিছু হলেই ব্যস অমনি বাংগালী শিক্ষিতদের অধিকাংশের মনে খুঁতখুঁতানি ও জ্বালা শুরু হয়ে যায় । তাই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাংলা ভাষা আরবী হরফে লেখার উদ্যোগ নেওয়া হলে তা এই পাশ্চাত্য শিক্ষিত বাংগালীদের অধিকাংশের ( না সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যারা ছিল অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত এবং এতে তাদের কোন ভূমিকাই ছিল না ) প্রবল বিরোধিতায় পরিত্যক্ত ও বাদ দেওয়া হয় । আজও উচ্চ আদালতের বিচারের রায় বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইংরেজিতে দেওয়া হয় যা অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত গ্রাম গঞ্জ ও মফস্বলের মানুষরা বুঝতেই পারে না এবং নানা রকম ভোগান্তির শিকার হয় তা বাংলায় তরজমা করাতে গিয়ে এবং রায় শোনার সময় !!! আর ইংরেজদের বাংলা ভাষায় আরবী ফার্সী শব্দের শুদ্ধি অভিযান ও নিধন যজ্ঞের অবতারণা করার পর আজও কোর্ট - কাচারিতে ব্যবহৃত বাংলায় সাধারণ প্রচলিত ও সাধু বাংলার চেয়েও আরবী ফার্সী শব্দের আধিক্য বিদ্যমান যদিও ইংরেজদের প্রবর্তিত সূত্র ( বাংলায় আরবী ফার্সী শব্দ প্রয়োগ ও ব্যবহার অশুদ্ধ অশালীন, অমার্জিত, অভদ্র , অশোভন ও চাষাভুসা জাতের ছোট লোকদের রীতি এবং সংস্কৃত তৎসম শব্দের ব্যবহার হচ্ছে শুদ্ধ, সাধু , মার্জিত, শোভন , শালীন, ভদ্র ও সুধী সজ্জনদের রীতি ) অনুযায়ী কোর্ট - কাচারিতে ব্যবহৃত বাংলা ভাষায়ও এখন আরবী ফার্সী শব্দ তাড়ানোর শুদ্ধি অভিযান ও নিধনযজ্ঞ চলছে এবং এ ভাবে চললে এক সময় এই ঐতিহ্যবাহী ভাষাও হারিয়ে ও বিলীন হয়ে যাবে । ইসলাম ও মুসলমানদের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুশমন বেনিয়া লুচ্চা লম্পট বাটপার ঠগ ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীরা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষিত বাঙালীদের মন ও মননকে আরবী ভাষা এবং ইসলামী সংস্কৃতির সাথে যা কিছুর সংস্রব ও সংশ্লিষ্টতা আছে সেগুলো থেকে যেমন: ফার্সী ও উর্দুর প্রতি মারাত্মক ভাবে বিষিয়ে ও সংবেদনশীল (এ্যালার্জিক) করে দিয়েছে যার ফল হয়েছে এই যে বাংগালীরা বিশেষ করে শিক্ষিতরা ইংরেজি ভাষা এবং শিক্ষিত , অল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সহ আপামর জনগণ হিন্দী ভাষা ও সংস্কৃতি এবং হাবিজাবি হিন্দুয়ানী ও বিজাতীয় ভাষা ও সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে ভারতীয় ও অন্যান্য স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের বদৌলতে । এতে ইসলাম , ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলমানদের কী লাভ ? এভাবে দিনের পর দিন বাংগালীরা বিজাতীয় বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির নিকটবর্তী হবে এবং তা দিয়ে বেশি বেশি প্রভাবিত হতে থাকবে। ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ভাষা ও ভাষা সংস্কৃতির মাধ্যমে চিন্তা , চেতনা , আদর্শ ও মতবাদ বিকশিত , প্রচারিত হয় এবং মনের চিন্তা ও ভাবের আদান প্রদান হয় । তাই কাফির মুশরিকদের ভাষা ও ভাষা সংস্কৃতি ওদের বস্তাপচা মতবাদ, চিন্তাধারা , আদর্শ এবং শিরকী - কুফরী কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রচলন , প্রচার ও প্রসার ঘটাবে নি:সন্দেহে ও নিশ্চয়ই ।