রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আসল কারণ : বিশ্বজুড়ে প্রচণ্ড গরম ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির মতো এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে পাশ্চাত্যের শিল্প ও প্রযুক্তি বিপ্লবের মহাদান ! পশ্চিমাদের লাগামহীন বল্গাহীন শিল্প ও প্রযুক্তি বিপ্লব প্রকৃতি ও পরিবেশের মারাত্মক দূষণ ঘটিয়ে প্রকৃতি - পরিবেশের ধ্বংস সাধন করেছে ও করছে।
আসলে ভিন্নভাবে শিল্প ও প্রযুক্তি বিপ্লব হওয়াটা ছিল একান্ত জরুরী ও বাঞ্ছনীয় ঠিক যেভাবে শিল্প ও প্রযুক্তি মুসলিম বিশ্বে মধ্যযুগে ( গত ১২০০ - ১৩০০ বছর ধরে )গড়ে উঠেছিল ঠিক সেভাবে এবং সেটার ধারাবাহিকতা দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মুসলিম বিশ্বে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সমূহ আক্রমণ ও আধিপত্য বিস্তার করলে ঐ শিল্প ও প্রযুক্তি সমূলে ধ্বংস হয় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলোর হাতে । (বিশ্বজুড়ে প্রচণ্ড গরম ও তাপমাত্রা)
আসলে শিল্প ও প্রযুক্তির ইতিহাস নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। পাশ্চাত্যের পাশাপাশি প্রাচ্যের শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রকৃতি - পরিবেশ দূষণ ও ধ্বংসে ঘৃতাহুতি করেছে। শিল্পায়িত পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য মূল দায়ী । আর এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১০০০ বছর বা ১০০ বছর বা ২-৩ দশকের মধ্যেই মানবজাতি এ ধরণী থেকে চিরবিদায় নিবে ও বিলুপ্ত হয়ে যাবে ( মরহুম হবে ) !!! কত বড় শোচনীয় (প্যাথেটিক ) ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে মানবজাতি পাশ্চাত্যের তথাকথিত শিল্প ও প্রযুক্তি বিপ্লবের কল্যাণে ও বরকতে !!!!! কিন্তু এরপরও এই হতচ্ছাড়া ধ্বংসাত্মক শিল্প ও প্রযুক্তি বিপ্লব নিয়ে দেমাগে
মাটিতে পশ্চিমাদের পাই পড়ে না এবং তাদের গর্ব ও অহংকারেরও যেন অন্ত নেই। পশ্চিমাদের রেনেসাঁ - বেনেসাঁ এবং প্রকৃতি - পরিবেশ ধ্বংসকারী তথাকথিত শিল্প ও প্রযুক্তি বিপ্লব তথাকথিত বস্তুবাদ ও ভোগবাদের উত্থান ঘটিয়েছে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে । এখন ঘোড়ার ডিম
সর্বস্ব পশ্চিমাদের এই শিল্প , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিপ্লব , প্রগতি ও উন্নয়ন মানবজাতি ও জীব জগতকে কোন্ ক্রান্তিকালের মধ্যে প্রবিষ্ট করে দিয়েছে ?!!!! শুধু বাংলাদেশে ১৭০০০ প্রজাতির ধান ছিল যা থেকে আজ মাত্র তিন হাজার প্রজাতি বিদ্যমান আছে এবং ১৫০০০ প্রজাতির ধান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মনস্ক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনামলেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে! ১৭০০০ প্রজাতির ধান্য কী প্রমাণ করে ? প্রমাণ করে বাংলার কৃষকদের কৃষিবিজ্ঞান সংক্রান্ত জ্ঞানের কথা যা পশ্চিমা ব্রিটিশ কৃষি বিজ্ঞানের আক্রমণ , আধিপত্য ও প্রভাবে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অতি সুক্ষ্ম সুতী মসলিন বস্ত্র আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মনস্ক ব্রিটিশরা মসলিন তাঁতীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে দিলে সম্পূর্ণ বিলুপ্তি হয়ে যায় ( অথচ আজ পর্যন্ত এত সুক্ষ্ম ও মিহি বস্ত্র আধুনিক বস্ত্র শিল্প বিশ্বে তৈরি করতে পারে নি ) । শিল্পবিপ্লবকারী ব্রিটিশরা এই সুক্ষ্ম মিহি মসলিন বস্ত্র শিল্প ধ্বংস করেছিল তাদের নব্য প্রতিষ্ঠিত আধুনিক বস্ত্র কলে উৎপাদিত বস্ত্র ও কাপড়ের বিক্রি ও বাজার পাওয়ার জন্য । বাংলা - বিহার - উড়িষ্যার নদ - নদী এবং পানি সম্পদ উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান দাফতারে পোলবান্দী ( পুলবন্দী দফতর ) যা ৫৫৭ বছর ধরে অত্র অঞ্চলে সুষ্ঠু ভাবে পানি সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন করে এ অঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে ভারত বিশেষ করে বাংলাকে বিশ্বের শস্য ভাণ্ডারে রূপান্তরিত করেছিল সেই দফতর আধুনিক বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তি মনস্ক ব্রিটিশরা ১৭৫৭ সালে বাংলা জবরদখল করে বিলুপ্ত করে দেয় এবং এর ফলে বাংলার নদ-নদী , হাওর - বাওর , খাল - বিল , পুকুর , ডোবা ও দিঘি সবকিছু ১৯০ বছরের ব্রিটিশ স্বৈরাচারী সাম্রাজ্যবাদী কুশাসনের অব্যবস্থাপনায় হেজে মজে ভরাট হয়ে গেলে পানি ধারণ ক্ষমতা মারাত্মক ভাবে লোপ পায় যার ফলে বাংলা ও অত্র অঞ্চল মুহুর্মুহু বন্যা , খরা ও দুর্ভিক্ষ কবলিত হলে কোটি কোটি লোকের মৃত্যু হয়েছিল। এ সমস্যা আরো তীব্র ও প্রকট আকার ধারণ করে ব্রিটিশদের অপরিকল্পিত রেল লাইন স্থাপনের কারণে । ফলে বাংলায় নদ - নদী ও প্রাকৃতিক জল প্রবাহ তীব্র ভাবে ব্যাহত হয় এই অপরিকল্পিত রেল লাইন টানার কারণে। ফলে বাংলার আরো বেশি প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয় হয় । নদ - নদী ভরাট সমস্যা নদ - নদীর ভাঙ্গন সমস্যাকেও আরো বেশি তীব্র করে দিয়েছে। আজও এই সমস্যার আদৌ সমাধান হয় নি । এমন বহু দৃষ্টান্ত ও নজির দেখানো যাবে শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর বহু দেশ ও অঞ্চলে !!! অথচ অতি অল্প সংখ্যক ব্যতীত আমাদের দেশের জনগণ এগুলো জানে না। আমিও এগুলো জানতাম না মাত্র ১৩-১৪ বছর আগে জেনেছি। স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে এগুলোর উল্লেখ নেই। তবে মসলিন শিল্প ধ্বংসের কাহিনী স্কুলের পাঠ্য বইতে পড়ার আগে আমার নানা নানীর কাছে শুনেছিলাম। কিন্তু স্কুলের পাঠ্য বইতে মসলিন বস্ত্র শিল্প ধ্বংস সম্বন্ধে যা লেখা হয়েছিল তা ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইংরেজদেরকে এ অভিযোগ থেকে রেহাই ও খালাস করার উদ্দেশ্যে। বোঝাই যায় যে স্কুলে ইতিহাসের পাঠ্য পুস্তক ইংরেজরা প্রণয়ন করেছিল বিধায় এ সব জিনিস স্থান পায় নি অথবা ইতিহাস ও সত্য বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছিল। অতএব সব কিছু নতুন করে গবেষণা করে ঢেলে সাজাতে ও প্রণয়ন করতে হবে। শিল্প , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নতুন করে প্রবর্তন করতে হবে যা হবে নাফে ( উপকারী ) না মুযের্ ( ক্ষতিকারী ) । শিল্প , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যা কিছু মুযের ( অপকারী ) তা পরিহার ও বর্জন করতে হবে। এখন সময় এসেছে শিল্প , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সবুজ - সাদা ( উপকারী নাফে ) এবং কালো ( অপকারী ও মুযের ) শিল্প , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভাগ করার । নিজের চোখে সব কিছু দেখতে হবে তবে পাশ্চাত্যের রঙিন চশমা দিয়ে নয় ।