হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, শহীদ রাইসির স্ত্রী বলেছেন: যারা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা আসলে জনগণ এবং এর জন্য তাদের অন্তর্দৃষ্টি থাকা উচিত।
২৭ জুন বৃহস্পতিবার, তেহরানের ইমাম খোমেনি মসজিদে চল্লিশা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।এই কর্মসূচীতে, যেখানে হিজবুল্লাহ লেবাননের প্রধান, সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ, আবারও ইসলামী বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি এবং ইরানি জাতির প্রতি, রাইসি এবং তার অন্যান্য সঙ্গীদের শাহাদাতের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। সেখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি আয়াতুল্লাহ রাইসির সহধর্মিণী মিস জামিলা সাদাত আলামুল-হুদা শহীদদের চল্লিশা স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেন।
জমিলা সাদাত তার বক্তব্যে এই ৪০ দিনে ইরানের সাহসী জাতি, বিভিন্ন দল, আলেম, প্রবীণ ও শহীদদের পরিবার, ইরানের সম্মানিত নারী, মুসলিম দেশের সাহসী মানুষ, দূর-দূরান্তের মানুষ, উচ্চ রাজনৈতিক কর্মকর্তা, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী নারী, বন্ধুবান্ধব আর মিত্র দেশগুলো আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
জামিলা সাদাত বলেন: এত মহান ভালবাসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া সম্ভব নয়, তবুও আমি আপনাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া আমার কর্তব্য বলে মনে করি।
শহীদ রাইসির স্ত্রী তার ভাষণে বলেন, কান্নার সাগরে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের একটি নতুন মুখ দেখা দিয়েছে এবং একজন শহীদ শাসকের মৃত্যুতে আমরা একটি পরিবারের মতো কেঁদেছি এবং শোকাহত। তিনি বলেন যে আমরা সত্যিই একটি পরিবার; আপনারা সবাই শহীদ রাইসির ভাই-বোন এবং শহীদ রাইসির পরিবারের সদস্য।
জামিলা সাদাত বলেন: এটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের একটি সুন্দর প্রকাশ এবং বিশ্বের শাসন ব্যবস্থার সর্বোত্তম উদাহরণ যা মানুষকে একটি পরিবারে পরিণত করে। আমাদের সম্পর্ক এক পিতার সাথে, অর্থাৎ সর্বোচ্চ নেতা, যিনি আমাদের সকলের পিতার মতো, শহীদ রাইসীও একই আধ্যাত্মিক পিতার সন্তান ছিলেন এবং আপনারা সবাই শহীদ রাইসির ভাই-বোন।
শহীদ রাইসির স্ত্রী বলেন: আলেম, শিক্ষক, পিতা-মাতা, আসুন আমরা নতুন প্রজন্মকে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী শিক্ষিত করি। ইসলামী শিক্ষা জনগণ এবং শাসক এবং শাসকের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেয় এবং জনগণ সমানভাবে দায়ী এবং জনগণ আরও বেশি দায়িত্বশীল।
তিনি বলেন: পবিত্র কুরআনে দুই ধরনের স্বাধীন ব্যক্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। একজন সূর্য-উপাসক মহিলা যিনি নিষ্ঠুর নন এবং সেই দেশ ও দেশের অন্তর্গত যেখানে ফেরাউনের মতো নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী রাজা রয়েছে এবং উভয়ই মিশরের অন্তর্গত।
পরিস্থিতি বিশ্লেষণে কুরআন এ দুটিকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাড় করিয়েছে, বলকিস যখনি আল্লাহর ওয়ালীকে চিনতে পারে সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু ফেরাউন যে অত্যাচারী ও কাফের, সত্য জানার পরও সে তার নিষ্ঠুরতা ও ফাসাদ অব্যাহত রাখে এবং শেষ সময়ে যখন কোন লাভ হয়নি তখন ঈমান এনেছিল। শহীদ রাইসির স্ত্রী উল্লেখ করেছেন: তাদের উভয়ের বিশ্বাসে পার্থক্য রয়েছে। বিলকিসের ইসলাম হল সেই ইসলাম যা নিশ্চিতভাবে হজরত সুলায়মানের সাথে বিশ্বপালনকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করে, কিন্তু ফেরাউনের জন্য এমন জায়গায় বিশ্বাস করা বনী ইসরাঈলের আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
শহীদ রাইসির স্ত্রী বলেন: এই দুটি উদাহরণ দেখায় যে রাজনৈতিক শিক্ষায় পিতা-মাতা ও শিক্ষকের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ।
আলামুল হুদা বলেন: ওয়ালীকে চিনা ও তার আনুগত্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি নিজের অহংকার এবং অন্যের অহংকার জনগণ বা কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে, তবে উভয়ই অন্যায়। ইসলামি প্রজাতন্ত্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের জনপ্রিয় সরকারগুলোর মধ্যে এটাই পার্থক্য। জনগণের সেবা করা এবং আল্লাহর জন্য নেতৃত্বকে অনুসরণ করা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মূল নীতি।
শহীদ রাইসির স্ত্রী আরো বলেন: আমরা যদি আমাদের অহংকার বা মানুষের অহংকারে মনোযোগ দিই, তাহলে আমরা হয় প্রতারণা করেছি বা নিপীড়নের পথ অনুসরণ করেছি। আমি ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মীয় মাদ্রাসা, স্কুল, পিতা-মাতা, ও নারীদের প্রতি তাদের প্রজন্মকে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা এবং ইসলামী শিক্ষা অনুসারে শিক্ষিত করার জন্য অনুরোধ করছি, উভয়ের জন্য একজন ভাল নাগরিক এবং কর্মক্ষেত্রে কাজ করার জন্য। ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিশ্বের জন্য একটি মহান মডেল।
শহীদ রাইসির স্ত্রী পরিশেষে বলেন: আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের দেশের জনগণকে আন্তরিকতার সাথে যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তার প্রতিদান দেন।