হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামি ইতিহাসের মহা গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিবস গাদীর খুম তথা ঈদে গাদীর উপলক্ষ্যে রাজশাহীর শাহ ডাইন কমিউনিটি সেন্টারে সেমিনার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৫ জুন) ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, রাজশাহী শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের সম্মানিত পরিচালক ও বাংলাদেশ ইমামিয়া উলামা সোসাইটির সভাপতি জনাব হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সৈয়দ ইব্রাহিম খলিল রাযাভি। প্রধান বক্তা ছিলেন ইরানের আল-মুস্তফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ শাখা রাসূল-এ-আকরাম ইসলামিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা'র সম্মানিত বিভাগীয় প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মাদ আলী মোর্তজা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমামিয়া ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জনাব আবু জাফর মন্ডল।
অনুষ্ঠানে বক্তারা ঐতিহাসিক গাদীরের দিবসের প্রেক্ষাপট ও ইসলামের ইতিহাসে দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, মহানবী (সা.) এর পরে যেহেতু আর কোনো নবী আসবেন না, তাই বিদায় হজের ভাষণে আমাদের প্রিয় নবী তাঁর উম্মতদের জন্য নেতৃত্ব বিষয়ক বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়ে যান। মহানবী (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণে বলেন, তোমরা যতদিন পবিত্র কুরআন ও আমার আহলে বায়েতকে অনুসরণ করবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। (রাজশাহীতে ঐতিহাসিক গাদীর দিবস উপলক্ষ্যে সেমিনার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত+ছবি)
বিদায় হজের পর রাসূল (সা.) মদিনায় ফেরার পথে গাদীর-এ খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হযরত আলীকে (আ.) সকল মুমিনদের নেতা বা মাওলা হিসেবে মনোনীত করেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার ৮০ মতান্তরে ৮৪ দিন পর আল্লাহর রাসূল (সা.) মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। বিদায় হজ সমাপনের পর তিনি মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন এহরাম পরা অবস্থায়। সঙ্গে ছিল সোয়া লাখ সাহাবি। পথে ১৮ জিলহজ মদিনার নিকটবর্তী গাদির-এ খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াতের আগের আয়াত তথা সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তার পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না।'
আল্লাহর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ নাজিলের পর, রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর ওই ঘোষণাটি উম্মতকে জানিয়ে দেন অভিষেক উৎসবের আয়োজন করে। যখন রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক এলাকায় এসে থামলেন, তখন তিনি সবাইকে একত্রিত করলেন, হযরত আলীর (আ.) হাত ধরে উপরে তুললেন এবং জনতার উদ্দেশে বললেন, তোমরা কি জান, আমি মুমিনদের নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি আওলা বা প্রিয়? লোকেরা বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি যাঁর মাওলা এই আলীও তাঁর মাওলা। হে আল্লাহ যে তাঁকে বন্ধু বানায় তুমিও তাঁকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর, আর যে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে তুমিও তাঁকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর।
আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ওসমান গনী, রাজশাহী সুগার মিলস লি.'র সাবেক জিএম (কৃষি) জনাব মীর সিদ্দিকুর রহমান, রাজশাহী কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর আ.জ.ম. মনিরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজশাহী মহানগর ইউনিটের প্রাক্তন কমান্ডার ডা. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ সুফি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, হুজ্জাতুল ইসলাম মো. মোজাফফর হুসাইন, হুজ্জাতুল ইসলাম ড. আবদুল্লাহ, ড. আব্দুল হান্নান ইমামি, হুজ্জাতুল ইসলাম শেখ আলী আকবর, হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মাদ মাজিদুল ইসলাম ও অন্যান্যরা।