রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের শাহাদাতের কথার কোনো উল্লেখ নেই এ লেখায় ( আশুরার রোযা কবে ) যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে আশুরার দিনে মানবজাতির ইতিহাসে যে জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ইয়াযীদীরা গোটা মুসলিম উম্মাহর চোখের সামনে তা একদম চেপে যাওয়া হয়েছে যেন এ দিন কিছুই ঘটে নি কারবালায়।
বেহেশতের যুবকদের নেতাকে হত্যা করা হয়েছে এদিন অথচ তা এই তথাকথিত আলেমের লেখায় একটুও স্থান পায় নি যেন এর কোনো গুরুত্ব নেই! ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং নবী পরিবারের ওপর যে জঘন্য অপরাধ করেছে বনী উমাইয়া তা ঢাকা দেওয়ার জন্য এবং হালকা ও গুরুত্ব হীন দেখানোর জন্য তদানীন্তন উমাইয়া খিলাফত প্রশাসন আশুরার রোযা রাখা ও আশুরার দিন মানবজাতির ইতিহাসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল বলে বানোয়াট মিথ্যা জাল হাদীস ও রেওয়ায়েত তৈরি করে খুব শক্ত ও জোরালো ভাবে সমগ্র মুসলিম সমাজে প্রচলিত করে দিয়েছে যা আজও প্রচলিত আছে। (আশুরার রোজা কবে রাখতে হবে।)
ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং শহীদানে কারবালার স্মরণে শোকপ্রকাশ ও আলোচনার পরিবর্তে অজ্ঞ জাহিল মানুষকে হাবিজাবি বিষয় ও আশুরার রোযার বানোয়াট ফযিলতের কথা দিয়ে মাতিয়ে রাখা হয়েছে এবং প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে। যে হতচ্ছাড়া নির্লিপ্ত নির্বিকার উম্মতের চোখের সামনে ও নাকের ডগায় বেহেশতের যুবকদের নেতাকে দুগ্ধপোষ্য ৬ মাসের শিশুপুত্র ( আলী আসগর ) , ভাই ভাতিজা , পিতৃব্য পুত্র এবং সঙ্গীসাথী ( ৭২ জন ) নৃশংস ভাবে হত্যা ও শহীদ করে তাদের মাথা কর্তন , পবিত্র দেহ
সমূহের ওপর ঘোড়া দাবড়ে পিষ্ট এবং ইমাম হুসাইনের বেঁচে থাকা একমাত্র পুত্র সন্তান ৪র্থ মাসূম ইমাম যাইনুল আবেদীন , ৪ বছরের শিশু পৌত্র ইমাম বাক্বির (আ ) বোন হযরত যাইনাব , স্ত্রী ও কন্যাসন্তানদের বন্দী করা হয়েছিল সেই উম্মত কোন্ বেহেশতে যাবে ? ঐ বেহেশতে যাবে তারা যেখানে বেহেশতী যুবকদের নেতা ইমাম হাসান ( আ ) ও ইমাম হুসাইন ( আ ) হবেন না ? এমন বেহেশত আছে কি ? ইসলামের দুশমন বনী উমাইয়া কর্তৃক প্রচলিত , প্রবর্তিত ও বানানো এতগুলো হাবিজাবি মিথ্যা ঘটনা ঘটার প্যাচাল পারিস তোরা এবং সেটা তোদের দৃষ্টিতে জায়েয আর ইমাম হুসাইনের (আ) স্মরণ , তার শাহাদাত ও তাঁর ও আহলে বাইতের (আ) ওপর যে মহা যুলুম, অন্যায় ও অত্যাচার করা হয়েছিল সেজন্য শোক প্রকাশ তোদের দৃষ্টিতে নাজায়েয ?!!! ঠিক এটাই তো চেয়েছে পাপিষ্ঠর নরাধম বনীউমাইয়া যাদের হাতে উম্মত ধ্বংস হবে বলে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন মহানবী ( সা ) যা সহীহ বুখারীতেও বিদ্যমান আছে ।
এখন প্রশ্ন :উম্মত কিভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং সেই ধ্বংসের মধ্যেই আজও তারা কালাতিপাত করছে অর্থাৎ তারা আজও ধ্বংস ও গোমরাহীর মধ্যেই রয়ে গেছে ও হাবুডুবু খাচ্ছে ? তার বড় প্রমাণ হলো আজও উম্মত বনী উমাইয়াদের প্রবর্তিত বিচ্যুতির মধ্যেই রয়ে গেছে যে এখনো তারা ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের শাহাদাতের আলোচনা , স্মরণ ও শোক প্রকাশকে বিদাত , হারাম ও গোমরাহী মনে করে উমাইয়াদের শিক্ষা ও অপপ্রচার চালানোর কারণে এবং বনী উমাইয়াদের প্রবর্তিত হাবিজাবি বিদাতী জিনিস ও আমল যেমন : আশুরার রোযা এবং মিথ্যা বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনী নিয়ে মেতে থাকছে । বনী উমাইয়া ইসলামের সকল সুন্নত এমনকি নামায পর্যন্ত পরিবর্তিত করে দিয়েছে ও বিকৃত করেছে । ইমাম শাফেয়ীর কিতাবুল উম্ম্ খ : ২ , পৃ : ৫৭-৫৯ বর্ণিত আছে : তিনি (ওয়াহাব ইবনে কায়সান ) বলেন : " রাসূলুল্লাহর ( সা ) সকল সুন্নাহ পরিবর্তিত ও বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে এমনকি নামাযও । "
کل سنن رسول اللہ ( ص ) قد غُیِّرت حتی الصلوة
তাহলে এমতাবস্থায় আশুরার রোযার দশা কী হবে ? যেখানে রাসূলুল্লাহর সকল সুন্নতের বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধন করেছে বনী উমাইয়া খিলাফত প্রশাসন সেখানে আশুরার রোযার মতো বিষয়াদি বনী উমাইয়া চালু ও প্রবর্তিত করে দিয়েছে যাতে উম্মত আসল বিষয় ( ইমাম হুসাইনের শাহাদাত) নিয়ে মাথা না ঘামায় এবং বাতিল বিদাতী বিষয়াদিতেই মত্ত থেকে গোমরাহীর অতল গহ্বরেই নিমজ্জিত থাকে ও হাবুডুবু খেতে থাকে। ইমাদুদ্দীন ( ধর্মের স্তম্ভ ও খুঁটি ) নামাযের এমন করুণ দশা ও ভাগ্য হয় তাহলে আশুরার রোযা কী ? যেই হযরত আলী ( আ ) রাসূলুল্লাহর ( সা ) সুন্নতের পাবন্দ ছিলেন সেই হযরত আলীর ( আ ) প্রতি বনী উমাইয়া বিদ্বেষ পোষণ করত এবং এই বিদ্বেষ পোষণের জন্যই বনী উমাইয়া রাসূলুল্লাহর (সা) সুন্নত ত্যাগ করেছিল ( সুনান - ই নাসাঈএর টীকায় ৫: ২৫৩ সিন্দী বলেছেন : সুন্নতের পাবন্দ হযরত আলীর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের জন্যই এরা রাসূলুল্লাহর সুন্নত ত্যাগ ও বর্জন করেছিল ।) অতএব যে সুন্নত মহানবীর (সাঃ) পবিত্র মাসূম আহলুল বাইত ( আ ) কর্তৃক স্বীকৃত ও আমল কৃত কেবল সেটাই প্রকৃত সুন্নত ; আর এর বাইরে সুন্নত বলে যা প্রচলিত সেগুলো বনী উমাইয়ার প্রচলিত ও প্রবর্তিত বিদাত ।
এ সব অপকর্মে শুধু বনী উমাইয়াই যে পারদর্শী ও ওস্তাদ ছিল তাই নয় বনী আব্বাসীয় খিলাফতও কম ছিল না । তাই যুগের পর যুগ ধরে প্রথমে বনী উমাইয়া ও তাদের উচ্ছেদের পর বনী আব্বাসীয় খিলাফত রাসূলুল্লাহর (সা) আহলুল বাইত (আ) এবং তাঁর বংশধরদের ( আওলাদে রাসূল ) হত্যা অব্যাহত রেখেছে। অতএব ইসলামী সমাজে ও উম্মতের মাঝে যা সুন্নত হিসেবে প্রচলিত আছে সেগুলোর সিংহভাগই বনী উমাইয়া ও বনী আব্বাসীয় খিলাফতের প্রবর্তিত বিকৃত প্রথা ও বিদাত যেগুলোর একটি হচ্ছে আশুরার রোযা।
আসুন আমরা সঠিক বিশুদ্ধ খাঁটি মুহাম্মাদী ইসলাম যা সাকালাইনের ( পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত ) ইসলাম তা বোঝার চেষ্টা করি । উমাইয়া ও আব্বাসীয় ইসলাম আসলে দরবারী বিকৃত ইসলাম। এই বিকৃত , পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত বিদাতী ইসলামে উম্মত হাবুডুবু খাচ্ছে বলেই মহানবী ( সা) একদল বিপথগামী কুরাইশীয় অল্পবয়স্ক যুবকের হাতে উম্মতের ধ্বংস হবে বলে জোরালো ভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু উম্মত কি তা শুনেছে ও আমল করেছে ?!!!