۴ آذر ۱۴۰۳ |۲۲ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 24, 2024
آیا آمریکا مستقیم وارد جنگ با ایران خواهد شد؟
আমেরিকা ও ইরান

হাওজা / তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

প্রতিবেদক: রাসেল আহমেদ রিজভী

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সাম্প্রতিক দিনগুলিতে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোয় সেনাবাহিনীর তৎপরতা ও ভারী সামরিক অস্ত্রের মজুদ বৃদ্ধি, নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ এবং কাতারে B-2 বোমারু বিমান স্থানান্তরের খবর দেখতে পাচ্ছি।

সম্প্রতি ইরানের রাজধানী তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। হিজবুল্লাহও হুঁশিয়ার করে বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সংঘাত নতুন ও চূড়ান্ত ধাপে প্রবেশ করেছে।

এদিকে জাতিসংঘে ইরানের মিশন ৩ আগস্টের অধিবেশনে বলেছে, তারা আশা করছে খুব শীঘ্রই, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের অনেক ভেতরে আঘাত হানবে। সেই সঙ্গে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ওপর বেপরোয়া হামলা চালাতে কোনো দ্বিধা করবে না।

এমতাবস্থায়, ইহুদিবাদী ইসরায়েল তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সমর্থক আমেরিকার নিকট সামরিক সাহায্য ও নিরাপত্তা কামনা করেছে এবং তাতে তড়িৎ সাড়াও দিয়েছে দেশটি। তাৎক্ষণিক ভাবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সাথে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করতে সক্ষম ডেস্ট্রয়ার পাঠানোর অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপনের প্রস্তুতি বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছে পেন্টাগন।

পেন্টাগন জানিয়েছে, ইরান ও তার সহযোগী বাহিনীগুলোর সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে ইসরায়েলের সুরক্ষায় সহায়তা করতেই এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। পেন্টাগন বলেছে, ইসরায়েলকে রক্ষা করার তাদের প্রতিশ্রুতি লোহার মতো অটল রয়েছে।

এই ঘটনা প্রবাহ ইঙ্গিত করছে যে, ইরান ও তাদের সহযোগী প্রতিরোধ সংগঠনগুলো যদি ইসরায়েলে হামলা করে বসে, তবে ইহুদিবাদী দখলদার অবৈধ রাষ্ট্রটির বন্ধুপ্রতিম দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দিতে পারে!

যদিও সামনে কী হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে এখনই ভবিষ্যদ্বানী করা যাচ্ছে না, দ্বন্দ্বের মাত্রা বিবাদমান পক্ষগুলির পরবর্তী অবস্থান স্পষ্ট করে দেবে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই হম্বিতম্বি, নখর এবং দাঁত দেখানোর উদ্দেশ্য একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ তৈরি করা যাতে ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না নেয়; মূলত ইরানের বিরুদ্ধে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা বা যুদ্ধে জড়ানো তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়।

কেন? তার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করছি:

প্রথম কারণ:

সরাসরি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে চালানো ইরানের ‘ট্রু প্রমিজ’ বা ‘সত্যবাদীদের ওয়াদা’ অপারেশনের অভিজ্ঞতা এবং সেই সময়ে আমেরিকানদের নিষ্ক্রিয় ও নিশ্চুপ গতিবিধি।

দ্বিতীয় কারণ:

এই অঞ্চলে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে বিগত কয়েকটি যুদ্ধে ইরানের চেয়েও তুলনামূলক কম শক্তির দেশের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের পরাজয়ের অভিজ্ঞতা!

তৃতীয় কারণ:

ইরান ও কাতারের মধ্যকার সুসম্পর্ক। তাছাড়া ইরানও ইতিপূর্বেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে- প্রতিবেশী যে কোনো দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় ঘাঁটি ব্যবহার করার অনুমতি দিবে, সে দেশকে শত্রু বিবেচনাপূর্বক আক্রমণ করা হবে। কাতার নিশ্চয়ই আমেরিকার জন্য ইরানের শত্রুতে পরিনত হওয়ার ঝুঁকি নিবে না।

তাছাড়া যে B-2 বোমারু বিমান শুধুমাত্র একবারের জ্বালানি দিয়ে ১১,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, সে বিমান খোদ ইসরায়েল বা অন্য কোথাও না রেখে- ইরানের বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশ কাতারে রাখা রাখা হয়েছে কেবলই ইরানকে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এবং নিশ্চয়ই কাতারও ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় তাদের ঘাঁটি ব্যবহার না করার শর্তেই বোমারু বিমানটি নিজ দেশে অবতরণে রাজি হয়েছে।

চতুর্থ কারণ:

এটা সুস্পষ্ট যে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে কমলা হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। কমলা হ্যারিসের বিপরীতে গিয়ে, ট্রাম্প বারংবার ইহুদিবাদী শাসকের প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন! তাছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে নেতানিয়াহুর।

এই পরিস্থিতিতে মনে হয় না যে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের অনুমতি দেবে কারণ তারা খুব ভালো করেই জানে যে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আসন্ন নির্বাচনে তার জোর প্রভাব পড়বে, কেননা এতে আমেরিকান জনগণ ট্রাম্পকেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিবে। কারণ ইহুদিবাদী শাসনের পক্ষে ট্রাম্পের সর্বাধিক সমর্থন রয়েছে। তাই এই মুহুর্তে যুদ্ধ শুরু হলে ট্রাম্পের প্রতি জনসমর্থন আরও বাড়বে কারণ তারা বিশ্বাস করে যে ট্রাম্প হ্যারিসের চেয়ে আরও ভালো যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন এবং ইহুদিবাদী শাসনকে আরও বেশি সমর্থন করবেন।

পঞ্চম কারণ:

আমেরিকা ভালো করেই জানে যে, ইরানের সাথে সংঘাত শুরু হলে এবং তারা এই ফ্রন্টে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন কমে যাবে। ফলত মার্কিনিদের প্রধান শত্রু রাশিয়া অবিলম্বে ইউক্রেনের কাজ খতম করে নিজেদের বন্ধু রাষ্ট্র ইরানের পাশে দাঁড়াবে এবং অন্যদিকে তাইওয়ানে চীনের আক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, যা আমেরিকানদের জন্য মোটেও কাম্য নয়!

সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় এই মুহূর্তে আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে- এটা যৌক্তিক মনে হয় না, তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যেকোনো ঘটনা ও সিদ্ধান্তই সম্ভব!

تبصرہ ارسال

You are replying to: .