হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কেয়ামত দিবসের ভয় - ভীতি থেকে নিরাপদ ব্যক্তি!!
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন:
مَنْ تَوَلّی أمْراً مِن اُمُورِ النّاسِ فَعَدَلَ وَ فَتَحَ بابَهُ وَ رَفَعَ شَرَّهُ وَ نَظَرَ فی اُمُورِ النّاسِ کانَ حَقّاً عَلَی اللّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَن یُؤَمِّنَ رَوْعَتَهُ یَومَ القِیامَةِ وَ یُدْخِلَهُ الجَنَّهًْ۔
যে ব্যক্তি জনগণের কোনো বিষয় বা কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে কাজ করে , মানুষের জন্য তার নিজ ঘরের দরজা খোলা রাখে , (জনগণের কাছ থেকে) নিজের অনিষ্ট ও মন্দ দূর করে ( অর্থাৎ জনগণের মন্দ ও অনিষ্ট সাধন করে না যারফলে সমাজ ও জনগণ নিরাপদ হয় ) এবং জনগণের যাবতীয় কাজকর্ম ও বিষয় পরিচালনা ও দেখভাল করার ব্যাপারে চিন্তা - ভাবনা করে সুমহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর অধিকার হচ্ছে কেয়ামতের দিন তাকে (সকল প্রকার) ভয়ভীতি থেকে রক্ষা ও নিরাপদ করা এবং তাকে তাঁর জান্নাতে প্রবেশ করানো।
(বিহারুল-আনওয়ার :৭৫,পৃ.৩৪০)
এ হাদীসের আলোকে কিছু কথা :
এ হাদীস শাসনকর্তা ( প্রেসিডেন্ট , প্রধান মন্ত্রী) এবং সকল মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যে কেমন হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করে দেয় । তাই এ হাদীস -ই শরীফ শাসকশ্রেণীর পথনির্দেশনা ( রাহনুমা ) স্বরূপ। কিভাবে প্রশাসন সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে হয় তা আমরা এ হাদীস থেকে জানতে পারি । আর শাসনকর্তা ও প্রশাসকগণ যদি তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেন তাহলে তারা কিয়ামত দিবসের ভয়ভীতি ও বিভীষিকা থেকে নিরাপদ থাকবেন এবং মহান আল্লাহ তাদেরকে যথার্থ ভাবে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের জন্য পুরস্কৃত করবেন অর্থাৎ তাদেরকে স্বীয় জান্নাতে প্রবেশ করাবেন ।
অথচ ইসলামী দেশসমূহের শাসক শ্রেণী কি এ হাদীস মোতাবেক আমল করছেন ? এ হাদীসে আদর্শ ইসলামী প্রশাসক ও প্রশাসনের চিত্র , স্বরূপ ও প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়েছে ।মুসলিম দেশসমূহের শাসনকর্তাদের উচিত ঠিক এ হাদীস মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা ও দায়িত্ব পালন যাতে জনগণ নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে। জননিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টি হচ্ছে এ হাদীসের মূল উপজীব্য।
নিরাপত্তা না থাকলে ব্যক্তিও সমাজের জীবন আসলেই সম্পূর্ণ রূপে তিক্ত হয়ে যাবে।
নি: সন্দেহে এ হাদীস থেকে আমরা ইসলামী সমাজকল্যাণ মূলক রাষ্ট্রের স্বচ্ছ রূপরেখা ও ধারণা লাভ করতে পারি । তাই রাজনীতি এবং প্রশাসন ও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এ হাদীস অপরিসীম গুরুত্বের অধিকারী । সিয়াসত ( রাজনীতি) দেশ ও জনগণের মাঝে আদালত ( ন্যায়পরায়ণতা) প্রতিষ্ঠা , জনসেবার
( খেদমতে খালক ) জন্য শাসনকর্তাদের নিজ জীবন উৎসর্গ করা ( যা তাদের গৃহ দ্বার জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ) ,জনজীবনে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত এবং জনগণের যাবতীয় বিষয় ও সমস্যার সমাধান নিয়ে গভীর ও ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা করে উত্তম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কর্মসূচি গ্রহণ ব্যতীত অন্য কিছু কী ?!!!
ইসলামের এ সব সুমহান শিক্ষা ও নীতিমালা বাদ দিয়ে ইসলামী দেশগুলোর শাসকশ্রেণী পশ্চিমা শাসনব্যবস্থার ধাঁচে ও আদলে মুসলিম দেশসমূহের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে ও গড়ে তুলেছে যা কখনোই প্রকৃত নিরাপত্তা বিধান করবে না এবং জনগণের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি আনয়ন করতে পারবে না। আর বাস্তবেও হয়েছে ঠিক তাই ।
শাসকশ্রেণী ও রাজনীতিকরা যেন এ হাদীসের আলোকে কাজ করেন । অর্থাৎ আদর্শ ইসলামী শাসনকর্তা ও প্রশাসককে ন্যায়পরায়ণ , খাঁটি খাদেমে জুমহূর ( জনগণের প্রকৃত সেবক ) হতে হবে । হাদীসে বর্ণিত হয়েছে সাইয়েদুল ক্বওমি খাদিমুহুম ( ক্বওম , রাষ্ট্র ও সমাজের সাইয়েদ বা নেতা তাদের খাদেম ও চাকর ) । তিনি সবসময় জনগণের যাবতীয় বিষয় ও সমস্যার সমাধান নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করবেন । জনগণ যেন তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ হয় ।
যদি শাসকবর্গ আদালত ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনা না করে এবং জনগণ থেকে নিজেদের অনিষ্ট ও অকল্যাণ দূর করতে না পারে ( অর্থাৎ জনগণ যদি শাসকবর্গের অনিষ্ট ও মন্দ থেকে নিরাপদ না হয় ) তাহলে শাসকশ্রেণীর উচিত ক্ষমতা ত্যাগ করা এবং ক্ষমতা ত্যাগ না করলে তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত ও ইস্তফা দিতে বাধ্য করতে হবে । আর এ ধরনের ব্যর্থ শাসকশ্রেণী কিয়ামত দিবসের ভয়ভীতি থেকেও নিরাপদ হবে না এবং তাদের পুরস্কার, গন্তব্য স্থল ও ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম ও আযাব ।
এ হাদীস যেমন একদিকে শাসকশ্রেণীর সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিক তেমনি প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথেও সংশ্লিষ্ট। নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে কিয়ামত দিবসে তার দায়িত্ব সম্পর্কে এবং যাদের বা যে বিষয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছিল তাদের বা সেই ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
رسول اللّه صلي الله عليه و آله : ألا كُلُّكُم راعٍ و كُلُّكُم مَسؤولٌ عَن رَعِيَّتِه ؛ فَالأَميرُ الَّذي عَلَى النّاسِ راعٍ و هُوَ مَسؤولٌ عَن رَعِيَّتِهِ ، وَالرَّجُلُ راعٍ عَلى أَهلِ بَيتِهِ و هُوَ مَسؤولٌ عَنهُم ، وَ المرأةُ راعِيةٌ عَلى بَيتِ بَعلِها و وُلدِهِ و هِيَ مَسؤولَةٌ عَنهُم ، وَ العَبدُ راعٍ عَلى مالِ سَيِّدِهِ و هُو مَسؤولٌ عَنهُ ، ألا فَكُلُّكُم راعٍ و كُلُّكُم مَسؤولٌ عَن رَعِيَّتِهِ .
মহানবী (সা) বলেছেন : " তোমরা জেনে রাখ ( সতর্ক ও সাবধান হও) যে তোমাদের প্রত্যেকেই হিফাযতকারী ও দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই যে ব্যাপারে দায়িত্ব প্রাপ্ত সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে ; তাই জনগণের ওপর কর্তৃত্বশীল আমীর দায়িত্বশীল তাই তাকে তার প্রজাদের ( রায়ত ) ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে (এবং তাকে জবাবদিহি করতে হবে) ; স্ত্রী তার স্বামীর গৃহ এবং তার সন্তান - সন্ততির ব্যাপারে দায়িত্বশীল এবং তাকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে (এবং তাকে জবাবদিহি করতে হবে ) ; আর দাস তার মালিকের সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল এবং তাকে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে ; অতএব সাবধান ! সাবধান ! তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।"
তাই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলা একদম অনুচিত এবং পরকালে তা শাস্তির কারণ হবে।
অনুবাদ: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান