হাওজা নিউজ এজেন্সি বাংলাঃ ইমাম জাওয়াদ (আঃ) শাহাদত দিবস
)সূরা ইব্রাহীম (إبراهيم), আয়াত: ২৪(
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِى ٱلسَّمَآءِ
অর্থঃ আপনি কি দেখেননি, আল্লাহ্ কিভাবে দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন? পবিত্র বাক্য সে পবিত্র বৃক্ষের ন্যায়, যার শিকড় (জমিনে) সুদৃঢ় এবং এর শাখাসমূহ আকাশে বিস্তৃত।
আল-হাদিস পাকঃ-
عَنِ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِيْ اللهُ عَنْهُمَا رَفَعَهُ: أَنَا شَجَرَةٌ, وَفَاطِمَةُ حَمْلُهَا, وَعَلِيٌّ لِقَاحُهَا وَالْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ ثَمَرُهَا, وَالْمُحِبُّوْنَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَرَقُهَا, هُمْ فِيْ الْجَنَّةِ حَقًّا حَقًّا. رَوَاهُ الدَّيْلَمِيُّ .
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) মারফু হাদিসে তিনি বর্ণনা করেনঃ হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন, 'আমিই শাজারা পাক বা পবিত্র বৃক্ষ এবং মা খাতুনে আতহার ফাতিমা (সাঃআঃ) হচ্ছেন উক্ত শাজারা পাকের ফল ধারণের প্রথম দিকের অবস্থা, এবং মওলা আলী (আঃ) হচ্ছেন ফুল থেকে ফল ধারণের দিকে স্থানান্তরিত অবস্থা, আর দুই শাহজাদা পাক হযরত ইমাম হাসান (আঃ) ও ইমাম হুসাইন (আঃ) হচ্ছেন উক্ত শাজারা পাকের ফল, আর আহলে বাঈত পাকদের মুহাব্বাত পোষণকারীরা হচ্ছেন উক্ত বৃক্ষের পাতা; আর নিঃসন্দেহে, নিশ্চিতভাবে তাহারাই বেহেশতে বা জান্নাতে যাবে!' [সূত্রঃ আদ্যায়লামী ফি মুসনাদিল ফিরদাওস, ১ম খণ্ড, ৫২ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ১৩৫]
১০ ই রজব নবুওয়াতী ধারার নবম হযরত ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ) এঁর পবিত্র বিলাদাত শরীফ/জন্মদিন! ১৯৫ হিজরির ১০ রজব শুক্রবার মদীনা শরীফের ইমাম পাক জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মূল নাম পাক ছিল মুহাম্মাদ এবং উপাধি ছিল আল-জাওয়াদ ও আত-তাকী (আঃ)। পঞ্চম ইমাম হযরত ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকের (আঃ)-কে ‘আবু জাফর’ বলে ডাকা হতো এবং সে মোতাবেক ইতিহাসবিদগণ এই ইমাম পাককে ‘দ্বিতীয় আবু জাফর’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
হযরত ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ)- এঁর পিতা ছিলেন অষ্টম ইমাম আলী ইবনে মূসা আর-রিদ্বা (আঃ) এবং মাতার নাম ছিল সুকায়নাহ বা খাইজুরান (সাঃ আঃ)।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ) চার বছর পর্যন্ত তাঁর পিতার কাছে লালিত-পালিত হন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হযরত ইমাম রিদ্বা (আঃ) তাঁর শিশু পুত্রকে রেখে মদীনা শরীফ থেকে খোরাসানে (ইরান) হিজরত করেন। তিনি তদানীন্তন শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতা সম্পর্কে এই মর্মে পূর্ণ মাত্রায় সচেতন ছিলেন যে, তাঁকে আর কখনো মদীনায় ফিরতে দেয়া হবে না। তাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় পুত্র মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ)-কে তাঁর উত্তরাধিকার নিযুক্ত করে যান এবং তাঁকে তাঁর কাছে রক্ষিত সকল খোদায়ী জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক গুণ শিক্ষা দিয়ে যান। যাদের ইমামকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তাদের বর্ণনা মতে, এই মহামানবের গড়ন ছিল মাঝারী, চেহারা ছিল লালচে সাদা বর্ণের, নয়ন ছিল আকর্ষণীয় ও প্রশস্ত ভ্রু এবং তাঁর চেহারায় সর্বদা ছিল প্রফুল্ল ও মনোরম প্রকৃতির জ্যোতিময় ছাপ।
ইমাম আলী রিদ্বা (আঃ)-কে ২০৩ হিজরির ১৭ সফর বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হয় এবং সেই দিন থেকে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ) ইমামতের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। মাত্র আট বছরে এই কিশোর-ইমামের উচ্চতর জ্ঞান ও বাস্তব সাফল্য অর্জনের দৃশ্যত কোন উপায় ও সুযোগ ছিল না। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই তিনি ফিকাহ, হাদিস ও তাফসীর ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর সমসাময়িককালের আলেমদের সাথে আলোচনায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠেন এবং সকলের প্রশংসা লাভ করেন। সেই সাথে লাভ করেন শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতা অর্জনের স্বীকৃতি।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ) এঁর জীবনকাল ছিল তাঁর পূর্বসূরি ও উত্তরসূরির তুলনায় সংক্ষিপ্ত। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি ইমাম হন আর মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে তাঁকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হয়। অবশ্য তিনি অনেক সাহিত্য-কর্ম রেখে গেছেন এবং বিপুল শ্রদ্ধা ও ভক্তি লাভ করেছেন। চলবে...