۳۱ فروردین ۱۴۰۳ |۱۰ شوال ۱۴۴۵ | Apr 19, 2024
সৈয়দ ইব্রাহীম খলীল রাজাভী
হাওজা / প্রকৃত স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জন করতে হলে অনৈক্য ও বিভেদের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, হোসাইনী চিন্তা চেতনার সাথে সম্পৃক্ততা সৃষ্টি করতে হবে, ঐক্য ও সংহতির প্রদর্শন ঘটাতে হবে।

হাওজা / প্রকৃত স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জন করতে হলে অনৈক্য ও বিভেদের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, হোসাইনী চিন্তা চেতনার সাথে সম্পৃক্ততা সৃষ্টি করতে হবে, ঐক্য ও সংহতির প্রদর্শন ঘটাতে হবে।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, আজও রাজতন্ত্র, ইসলামকে মসজিদের অভ্যন্তরে বন্দী করে রাখার চক্রান্ত, স্বাধীনতার কণ্ঠকে দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টা আর কতদিন রাজতান্ত্রিক জুলুমের মাধ্যমে চাপা থাকবে? মুয়াবিয়া ও এজিদকর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সময় কি এখনো আসেনি?

মানব বিবেক ও উপলব্ধি যদি অত্যাচারীদের সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক না হয় তাহলে অত্যাচারের ধারা অব্যাহত থাকবে। আরব বিশ্বে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জাগরণ, অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে উচ্চকিত প্রতিবাদ সকল নির্যাতিত ও অত্যাচারিত মানুষের জন্য একটি সুসংবাদ, সকল মুসলমানদের জন্য তাদের হারিয়ে যাওয়া মান-মর্যাদা ফিরে পাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ।

তবে প্রকৃত স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জন করতে হলে অনৈক্য ও বিভেদের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, হোসাইনী চিন্তা চেতনার সাথে সম্পৃক্ততা সৃষ্টি করতে হবে, ঐক্য ও সংহতির প্রদর্শন ঘটাতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলিম শাসকবর্গ, ওলামা মাশায়েখ, মানবাধিকার সংস্থাসমূহ এবং গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক ও দাবীদার রাষ্ট্র ও শক্তিসমূহের দ্বি-মুখী ও বিভেদ সৃষ্টিকারী নীতি বিশ্বের মুসলমানদেরকে হতাশ করেছে।

তিউনিশিয়ার ঘটনায় আমরা দেখতে পাই যে, কেবলমাত্র রাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী বাদশাহ যারা অধিকাংশ আরব রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন এবং দাম্ভীক আধিপত্যবাদী শক্তি ছাড়া বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব ঐক্যের সৃষ্টি হয় এবং তারা তিউনিশিয়ার মুসলমানদের সাথে নিজেদেরকে একীভূত করে ফেলে। ফলে তিউনিশিয়ার মুসলমানরা বিলীন হয়ে যাওয়া তাদের মর্যাদা এবং ছিনিয়ে নেয়া হিজাব ফিরে পায়।

মিশরে অত্যাচারিত মুসলমানদের জাগরণ, ধৈর্য ও দৃঢ়সংকল্প এবং তাদের প্রতি মুসলিম বিশ্বের নিরঙ্কুশ সমর্থন মিশরবাসীকে জালিম ও স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে। “আস্ সুলতানু যিললাহা” ভ্রান্তিপূর্ণ এই নীতি হোসনী মোবারককে রক্ষা করতে পারেনি।

নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের অপ্রতিরোধী শক্তিই শেষ পর্যন্ত সফলকাম হয়। আর এ ধরনের ঘটনাই এখন লিবিয়াতে ঘটছে। সেদিন দূরে না কর্ণেল গাদ্দাফীর মত অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী শাসকের শাসনব্যবস্থারও অবসান হবে।

গণজাগরণের ক্ষেত্রে তিনটি দেশের মুসলমানরা অন্যান্য দেশের মুসলমানদের সমর্থন ও সহানুভুতি লাভ করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো ইয়েমেন বাসীর উত্থান কী গণজাগরণ নয়? বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তাদের অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে পড়েছে। অথচ মুসলিম বিশ্ব ইয়েমেন ও বাহরাইনের জনগণের সমর্থনে কেন এগিয়ে আসছেনা? তারা কেন নিশ্চুপ বসে আছেন? আবারও কি আলেম ওলেমারা এজিদের অনুগামী ও সাহায্যকারী হলেন?

হ্যাঁ, এটাই হচ্ছে অপরাধ যে তিউনিসিয়া, মিশর ও লিবিয়ার জাগরণ ছিল সুন্নি মুসলমানদের তাই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য ছিল। আর ইয়েমেন ও বাহরাইনের গণবিক্ষোভ ও গণ উত্থানের সাথে শিয়া মুসলমানরা সম্পৃক্ত তাই নিন্দনীয়।

সৌদি আরবে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। জনগণের এ বিক্ষোভকে হারাম বলে ফতোয়া দেয়া হচ্ছে। এ কেমন নির্লজ্জতা? আল্লাহ্‌র কি ভয় নেই? আজ সৌদি মুফতি সাহেবদের ফতোয়া আসছে যে, শাসকের বিরুদ্ধে কেয়াম করা হারাম। আবারও সেই একই শ্লোগান “আস্ সুলতানু যিল্লুলাহ”।

সৌদি শাসকের বিরুদ্ধে  বিক্ষোভ করা উপর নিষেধাজ্ঞা জারী কি ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ নয়, মানবাধিকার বিরোধী নয়? আজ সেসব মানবাধিকার সংগঠনগুলো যারা কথায় কথায় “মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে”, “মানবাধিকার পরিপন্থী”.......ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে বেড়ান তারা আজ নিশ্চুপ কেন? এজিদী চিন্তা-চেতনার ধারকরা ফতোয়ার পর ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে অথচ মুসলিম বিশ্ব নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে।

গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা নিশ্চুপ। কিন্তু জেনে নেয়া দরকার শীয়া মাযহাবের ইতিহাস কেবলমাত্র অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে উত্থানের ইতিহাস নয় বরং ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসও বটে। সর্বদা নির্যাতিত নিপিড়িতদের সমর্থনকারী ও সাহায্যকারী একটি রাষ্ট্রে ইসলামী বিপ্লব এবং ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, যে জাতি ইমাম হোসাইন (আঃ) এর সেই কালজয়ী বিপ্লব ও মহান শাহাদাত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে সে জাতিকে কখনো কেউ বশীভুত ও পরাজিত করতে পারবে না।

মুসলিম বিশ্ব নিশ্চিত থাকতে পারেন ইয়েমেনের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ ও বাহরাইনের শতকরা আশি ভাগ মানুষ শিয়া তাদের জন্য বিক্রিত ফতোয়ার সমর্থন যেমন প্রয়োজন নেই তেমনি বিরুদ্ধোচারিতাতেও কিছু যায় আসে না। বরং তাদের জন্য শাহাদাতের জযবা ও শিক্ষা যা ইমাম হোসাইন (আঃ) এর নিকট থেকে লাভ করেছে সেটাই যথেষ্ট।

আল্লাহর সাহায্য ও যুগের ইমামের (আঃ ফাঃ) সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা চাওয়া মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব এবং মজলুমদের সাহায্যে এগিয়ে আসা প্রকৃত ঈমানের দলিল। এ জন্যই আমরা যিয়ারতে ইমাম হোসাইন (আঃ) এ উচ্চারণ করি “মায়াকুম, মায়াকুম লা মা আদরাকুম”, অর্থাৎ, হে হোসাইন (আঃ) আমি আপনার সাথে, আপনার সাথে আছি, আপনার শত্রুর সাথে নই। আর নীরব এ বাক্যটি সাক্ষী যা আমরা যিয়ারতে ইমাম হোসাইন (আঃ) এ পাঠ করি, “আল্লাহ হুম্মা লায়ানালাহ মান ক্বাতালাতকা ওয়া লায়ানালাহা মান যালামাতকা ওয়া লায়ানালাহা মান সামেয়াত বেযালিকা ফারজি।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ লানত বর্ষিত হোক তাদের উপর যারা আপনাকে (ইমাম হোসাইন (আঃ)) হত্যা করেছে, এবং লানত বর্ষিত হোক তাদের উপর যারা আপনার উপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং লানত বর্ষিত হোক তাদের উপর যারা হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা শ্রবণ করার পরও নিশ্চুপ থেকেছে আর ঘৃণা ও তিরস্কার পর্যন্ত করেনি।###

লেখা : সৈয়দ ইব্রাহীম খলীল রাজাভী

تبصرہ ارسال

You are replying to: .