হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সাল, ১৫ ই জুলাই! রাত আনুমানিক ৩টা বাজে তখন। ইস্তানবুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরের উদ্দেশে আকাশে উড়ছে একটি ভিআইপি পরিবহন বিমান। বিমানে রয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, তার পরিবারের সদস্য ও তার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
পাইলট জানেন, এটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণ হবে। কারণ, এটি কোনো সাধারণ ফ্লাইট ছিল না। তুরস্কের আকাশ কাঁপিয়ে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিদ্রোহী সেনাদের ফাইটার জেট। ইস্তানবুল, আঙ্কারাসহ তুরস্কের প্রায় সব শহরই তখন বিদ্রোহীদের দখলে। এমনকি কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরের দখল নিয়েও তখন এরদোয়ানের ডাকে সাড়া দেওয়া জনতা ও বিদ্রোহী সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।
বিমানবন্দরের ইন্ডিকেটর লাইট অফ ছিল, রানওয়ে ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। পাইলটের জন্য এটি ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু খোদ প্রেসিডেন্টের নির্দেশ তো তাকে মানতেই হবে।
বিদ্রোহীরা এমন একটি সময় বেছে নিয়েছিল, যখন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিমে এজিয়ান সাগর তীরের অবকাশ কেন্দ্র মারমারিসে ছিলেন। প্রথমে মনে হচ্ছিল, তুরস্কের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে। অভ্যুত্থানের শুরুতেই তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলডিরিম প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এদিকে ইস্তানবুলের বসবরাস ব্রীজ ও ফাতিহ সুলতান মাহমুদ ব্রীজ (এশিয়া-ইউরোপের সংযোগকারী) বন্ধ করেছে দিয়েছে বিদ্রোহী সেনারা। সামরিক বাহিনীর ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যানগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কগুলো। রাত ১২টার দিকে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকাকে জোরপূর্বক বিদ্রোহের ঘোষণাপত্র পাঠ করতে বলা হয়। সবমিলিয়ে অবস্থা তখন ভয়াবহ।
এদিকে এরদোয়ান তখন মারমারিসের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল তখন বিদ্রোহী সেনা কর্তৃক দখল হওয়ায় মিডিয়ায় তার বক্তব্য দিতে পারছিলেন না। অবশেষে মোবাইল ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে রাত ১২টা ২৬ মিনিট থেকে শুরু করে কয়েকটি টেলিভিশনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, যাতে জনগণকে গণতন্ত্র রক্ষায় রাস্তায় নামতে আহ্বান করেন।
★ এরদোগানের ঐতিহাসিক আহ্বানঃ
তার ওই ঐতিহাসিক আহ্বানের মূলকথাগুলো এমনই ছিল-
"আজকের এই অভ্যুত্থান সামরিক বাহিনীর একটি ছোট দলের বিদ্রোহ। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ এই ষড়যন্ত্রের যথোপযুক্ত জবাব দেবে। জনগণের টাকায় কেনা ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার নিয়ে জনগণের পর আক্রমণের খুব বড় ক্ষতিপূরণ তাদেরকে দিতে হবে। আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ও প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। দৃঢ়ভাবেই ময়দানে দাঁড়াব। ময়দান তাদের হাতে ছেড়ে দেব না।
জনগণকে একটি আহ্বান করছি। সবাইকে প্রদেশগুলোর ময়দানে আসতে আহ্বান জানাচ্ছি। বিমানবন্দরে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সংখ্যালঘু বিদ্রোহীরা ট্যাঙ্ক কিংবা অন্য যা কিছু নিয়ে আসুক, জনতা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। জনতার শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি আমি আজ অবধি দেখিনি।
আমি আবারও জনগণকে বলছি, আপনারা ময়দানে আসুন। আমরা ময়দান থেকে তাদেরকে উপযুক্ত জবাব দিব। আমিও ময়দানে আসছি।"
এরপর তিনি সেখান থেকে বিমানে করে ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা শুরু করেন।
এরদোয়ানের এই বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আপামর জনতা রাস্তায় বের হতে শুরু করে। পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি। নিরস্ত্র জনতাকে ট্যাঙ্কের সামনে শুয়ে পড়তে দেখা যায়। একের পর এক বিদ্রোহীদের হঠিয়ে বিভিন্ন জায়গা দখলে নিতে থাকে জনতা।
রাত ১:৩০-এ তুরস্কের পার্লামেন্টে এক জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়। এরদোয়ানের অনুপস্থিতিতেই অধিবেশন শুরু হয়, যেখানে তুরস্কের সব রাজনৈতিক দলই দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একাত্মতা পোষণ করেন এবং এরদোয়ানকে সমর্থন করেন।
রাত ৩:২০ মিনিটে প্রেসিডেন্ট এরোদায়ান ইস্তানবুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে নামেন। তখন রানওয়ে ছিল পুরোই অন্ধকার এবং বিমানবন্দরের দখল নিয়ে বিদ্রোহীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনতার সংঘর্ষ চলছিল। আকাশে উড়ছিল বিদ্রোহীদের যুদ্ধবিমান।
বিমানবন্দরেই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একটি সংক্ষিপ্ত প্রেস কনফারেন্স করেন। তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা ব্যর্থ হয়েছে। তখনও যারা ব্যারাকের বাইরে ছিল, তাদেরকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। প্রথমবারের মতো এরদোয়ান তখন ঘোষণা করেন যে, এই ঘটনা ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে।
এরদোয়ান মারমারিসের যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন, সেখানে বিদ্রোহীরা রাত ৪ টার দিকে হেলিকপ্টার থেকে ওপেন ফায়ার করতে থাকে এবং সৈন্যরা মুখে মাস্ক পরে নিচে থেকে সরাসরি আক্রমণ করতে থাকে। এই ঘটনার ঠিক ঘণ্টাখানেক আগেই এরদোয়ান হোটেল ত্যাগ করেছিল বলে প্রাণে রক্ষা পান।
তুরস্কের মসজিদগুলো থেকে মাইকে জনগণকে রাস্তায় নামার জন্য বলা হচ্ছিল, আর এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয় (দিয়ানাত ফাউন্ডেশন) থেকে।
এদিকে এশিয়া-ইউরোপের সংযোগকারী ব্রিজসহ বিভিন্ন জায়গাতে জনতার সাথে বিদ্রোহীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছিল। সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে বসবরাস ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়া সৈন্যরা জনতার কাছে আত্মসমর্পণ করে।
★ বিদ্রোহের অবসানঃ
একের পর এক বিদ্রোহী সৈন্য গ্রেফতার হতে থাকে এবং জনতার কাছে বিদ্রোহীদের পরাজয় ঘটতে থাকে। সকাল সাড়ে ৮টার সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে জনদারমার সদর দপ্তর (প্যারামিলিটারি বাহিনী) বিদ্রোহমুক্ত করেন।
শেষমেশ বিদ্রোহীরা যখন বুঝতে পারে যে, এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হতে চলেছে, তখন তারা বিভিন্ন জায়গায় আত্মমর্পণ করতে থাকে। সকাল ১১:২৭ মিনিটে জেনারেল স্টাফ কোয়ার্টারে অবস্থানরত সেনারা সমঝোতার জন্য আহ্বান জানান এবং বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে।
এই সেনা অভ্যুত্থানে প্রায় ২৬৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও ছিলেন। আহত হন প্রায় ২ হাজারের অধিক মানুষ।
★ এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যূত করার এই অভ্যুত্থানের সাথে কারা জড়িত ছিল?
সেনাবাহিনীর একটি অংশ এই অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করে। ইস্তাম্বুলেই মূলত তাদের ঘাঁটি। আর এই সেনাবাহিনীর পেছনে
ফেতুল্লা গুলেন আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং তার দল একেপি'র নেতারা। আর কেবল এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যূত করতে ফেতুল্লা গুলেনকে সমস্ত আর্থিক সমর্থন দিয়েছিল আরব আমিরাত।
অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত বলে যে ফেতুল্লা গুলেনের দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তিনি একজন ধর্মীয় নেতা যিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তার হিজমেত আন্দোলনের বিরাট সমর্থন আছে তুরস্কে। এরা নানা ধরণের স্কুল, কলেজ, এনজিও এবং ব্যবসা পরিচালনা করে। তাদের আছে অনেক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু ফেতুল্লা গুলেনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে কয়েক বছর আগে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কঠোর সব ব্যবস্থা নেন হিজমেত আন্দোলনের বিরুদ্ধে। সেই থেকেই এরদোগান-গুলেনের মিত্রতা শত্রুতায় রুপ নেয়।
আর সেই শত্রুতার সুযোগকে কাজে লাগিয়েই নিজেদের শত্রুকে তুরস্কের ক্ষমতা থেকে সরাতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটোনোর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্তত ৩০০ কোটি ডলার অর্থ ব্যয় করেছিল। তুরস্কের দৈনিক ‘ইয়েনি সাফাক’ পত্রিকায় কলামিস্ট মেহমেত আসেত ২০১৭ সালের ১২ জুন তার নিজের কলামে এ তথ্য প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসওগ্লু সম্প্রতি বলেছেন যে, “২০১৬ সালের জুলাই মাসে একটি মুসলিম দেশ কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে তুরস্কের সরকার উৎখাতের জন্য। এ কথা দিয়ে তিনি আসলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কথা বলেছেন।”
পরে তুরস্কের গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আসেত তার দাবিকে সম্পর্কে আরো বিস্তৃত বলেছেন, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পেছনে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। দৈনিক সাবাহ পত্রিকাকে তিনি বলেন, “মন্ত্রী কোনো দেশের নাম বলেননি তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটি ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।”
আরো কয়েকটি সূত্র বলেছে, ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে আবুধাবি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক ‘মিডিয়া ম্যাগনেট’ ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ তুরস্কে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সূত্রগুলো বলেছে, ফতেহউল্লাহ গুলেনের অনুসারিদের কাছে এ অর্থ পাঠানো হয়।
ওই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুর্কি সরকার সরাসরি কোনো দেশকে দায়ী করেনি তবে চাভুসওগ্লু একাধিকবার আমিরাতের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে তুরস্কের সাথে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে মারাত্মক কূটনৈতিক সংকট চলছে।
তুরস্কের প্রধান দলগুলো শুরুতেই জানিয়ে দেয়, তারা এর সঙ্গে নেই। ধর্মনিরপেক্ষ সিএইচপি, জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপি সবাই সরকারকে সমর্থন জানায়।
★ কেন এই অভ্যত্থান ব্যর্থ হয়েছিল?
লন্ডন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক সংস্থা চ্যাটাম হাউসের বিশ্লেষক ফাদি হাকুরা মনে করেন, অভ্যুত্থানের সাথে জড়িতরা সেনা বাহিনীর বিরাট অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের ব্যর্থতা এটাও প্রমাণ করে যে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে বিরোধী দলগুলো ও সমাজের বেশিরভাগ অংশের কোনো সমর্থন নেই।
এরদোগান এর আগে বহুবার সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার সরকার সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেক শুদ্ধি অভিযানও চালিয়েছে।
যে মূল ৫ কারণে ব্যর্থ হয়েছিল তুরস্কের অভ্যুত্থানঃ
১. এরদোগানকে আটকাতে না পারাঃ
অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যই ছিল রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করা৷ এ লক্ষ্য পূরণের জন্য এরদোগানকে অবরুদ্ধ করাই ছিল প্রথম কাজ৷ সে কাজে ব্যর্থ হয়েছে অভ্যুত্থান প্রয়াসের সঙ্গে জড়িত সেনাসদস্যরা৷ তাঁকে ধরার চেষ্টা করেছিল বিমান বাহিনীর একটি অংশ৷ কিন্তু এরদোগান সে চেষ্টা ব্যর্থ করে অভ্যুত্থানকেও ব্যর্থ করে দেন৷
২. প্রেসিডেন্ট ভবনে তীব্র প্রতিরোধঃ
আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট ভবনের ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল সেনাবাহিনী৷ কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, সেনাসদস্যরা প্রেসিডেন্ট ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কিছুটা খাটো করেই দেখেছিলেন৷ সে কারণে এক রকমের সমন্বয়হীনতা দেখা যায় প্রেসিডেন্ট ভবন আক্রমণে৷ ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ শেষ পর্যন্ত সেখানেও ব্যর্থ হয় সেনাবাহিনী৷
৩. পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাঃ
পুলিশের ওপরও শুরুতে সেনা সদস্যদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না৷ পুলিশ বুঝে উঠতে পারছিল না অভ্যুত্থানের প্রয়াসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, নাকি সমর্থন দেবে৷ তাই শুরুতে প্রায় নিষ্ক্রিয়ই ছিল তারা৷ কিন্তু এরদোগান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার পর পুলিশও রুখে দাঁড়ায়৷
৪. ধর্মীয় নেতাদের আস্থা অর্জন করতে না পারাঃ
ধর্মীয় নেতাদের আস্থায় নেয়ার চেষ্টা করেনি সেনাবাহিনী৷ ফলে এরদোগান স্মার্ট ফোনে ভাষণ দেয়ার পর মসজিদগুলো থেকেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়৷ ফলে পরিস্থিতি দ্রুত চলে আসে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অনুকূলে৷ এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এফকান আলাকে গ্রেপ্তার করতে না পারা এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর দখল নিতে কালক্ষেপণ করার বিষয়টিও অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করায় ভূমিকা রেখেছে৷
৫. সমাজের ‘উঁচুমহলের’ সমর্থন না পাওয়াঃ
অভ্যুত্থানের চেষ্টার সঙ্গে জড়িতরা জনমত একেবারেই বুঝতে পারেনি৷ তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানের প্রয়াস নতুন কিছু নয়৷ তবে বর্তমানে তুর্কি সমাজ একেবারেই সামরিক অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানানোর অবস্থায় নেই৷ তাছাড়া ব্যবসায়ী সমাজ এবং অভিজাত শ্রেণির সমর্থন আদায়েও ব্যর্থ হয়েছে সেনাবাহিনী৷
গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। অতীতেও বেশ কিছু দেশে এ ধরনের সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু, তুরস্কের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, সেটা হলো সামরিক বাহিনীর মোকাবেলায় সাধারণ জনতার বিজয়। বিশ্ববাসী সম্ভবত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে এ ধরনের বিজয় খুব কমই দেখেছে! ২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ের এই ঐতিহাসিক বিজয় হয়তো হাজার বছরের ইতিহাসে কালজয়ী এক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
লেখা: রাসেল আহমেদ রিজভী