۲۶ شهریور ۱۴۰۳ |۱۲ ربیع‌الاول ۱۴۴۶ | Sep 16, 2024
'আল কুরআনের দৃষ্টিতে সিয়াসাত!'
'আল কুরআনের দৃষ্টিতে সিয়াসাত!'

হাওজা / পবিত্র কুরআনে কি রাজনীতি সম্পর্কে কোনো কথা এসেছে? ধর্ম ও রাজনীতির বন্ধন না কি ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা-এ প্রশ্নে কুরআনের মতামত কী?

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, কুরআনে সিয়াসাত (سیاست) কথাটি নেই। কিন্তু সিয়াসাতের আসল তাৎপর্য কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এবং বিভিন্ন কাহিনীতে স্পষ্টরূপে ও বিক্ষিপ্তভাবে এবং ব্যাপক পরিসরে উত্থাপিত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ: কুরআনে নবীদের হুকুমত ও বিচার আদালত সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত এসেছে। অনুরূপভাবে যুগ যুগান্তরের তাগূতী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে নবীদের অবিরাম সংগ্রামের কথা, যেমন নমরুদের বিরুদ্ধে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সংগ্রাম, ফিরআউন ও কারূনের বিরুদ্ধে হযরত মূসা (আঃ)-এর সংগ্রাম, হযরত মূসা (আঃ)-এর হুকুমত গঠন এবং বিভিন্ন ব্যাপারে তার বিচারকার্য পরিচালনা অথবা হযরত সুলায়মান (আঃ) ও তার পিতা হযরত দাউদ (আঃ)-এর বিশাল হুকুমত, হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর স্ব স্ব যুগের কুফর ও শিরকের প্রতিভূদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-এ সবই প্রমাণ করে যে, নবীরা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতেন এবং আসল অর্থে সিয়াসাত তথা রাজনীতিকে তাদের একত্ববাদী দীনি আদর্শের অংশ বলে মনে করতেন।

আরও কিছু বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য অগণিত আয়াতের মধ্যে থেকে মাত্র কয়েকটি আয়াতের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যে আয়াতগুলো কুরআনের দৃষ্টিতে ধর্ম ও আসল অর্থে রাজনীতির মধ্যকার অবিচ্ছিন্ন বন্ধনকে তুলে ধরে-

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

‘আমরা প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন রাসূলকে প্রেরণ করেছি এ ভিত্তিতে যে, (জনগণকে বলবে) এক আল্লাহকে উপাসনা কর, আর তাগূতকে পরিহার করে চল।’ (সূরা নাহল- ৩৬)

يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ

‘পথভ্রষ্ট কাফেররা চায় বিচারের জন্য তাগূত ও মিথ্যা শাসকদের কাছে যাবে? অথচ তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাগূতদের প্রতি কুফরী (অস্বীকার) করতে।’ (সূরা নিসা- ৬০)

يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ

‘হে দাউদ! আমরা তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি নির্ধারিত করেছি। সুতরাং জনগণের মধ্যে সত্য-সঠিক বিচার কর।’ (সূরা সাদ : ২৬)

فَهَزَمُوهُمْ بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ

‘বনি ইসরাইল তালুতের নেতৃত্বে জালুতকে (যে ছিল একজন তাগূত) হত্যা করল। আর আল্লাহ রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন দাউদকে।’ (সূরা বাকারা- ২৫১)

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

‘কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাস করবে না যতক্ষণ না তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদ বিচারের ভার তোমার ওপর অর্পণ করে। অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।’ (সূরা নিসা- ৬৫)

এ আয়াতগুলোসহ কুরআনের আরও অগণিত আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম হুকুমত ও রাজনীতি থেকে আলাদা নয়। আর সমাজের বিধান ব্যবস্থাকে পরিচালনা করার অর্থে যে হুকুমত ও রাজনীতি, তা কুরআনের শিক্ষার পরতে পরতে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, যদি আমরা চাই এ দু’টির একটিকে অপরটি থেকে পৃথক করতে, তাহলে আসলে যেন আমরা ইসলামকেই ইসলাম থেকে পৃথক এবং কুরআনকেই কুরআন থেকে পৃথক করতে চাইলাম। আর কুরআনবিহীন কুরআন হল স্পষ্ট স্ববিরোধিতা।

কিসাস, আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার (সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ), গনীমত ও বাইতুল মাল, জিহাদ, প্রতিরক্ষা, খুমস, যাকাত, বিচারাদালত ইত্যাদি যেগুলো কুরআনে সবিস্তারে উত্থাপিত হয়েছে, এর সমস্তই হুকুমাত (শাসনকর্তৃত্ব) ব্যতীত বাস্তবায়নযোগ্য নয়; বরং হুকুমত ও সিয়াসাতের অংশবিশেষ এগুলো দ্বারাই গঠিত হয়। পরিশেষে আমরা এ মর্মে আমীরুল মুমিনীন আলী (আঃ)-এর একটি চমৎকার বক্তব্যের উদ্ধৃতি তুলে ধরতে চাই।

তিনি পবিত্র কুরআনের কতিপয় আয়াত, যেমন সূরা আনফালের ২৪ নম্বর আয়াত, সূরা বাকারার ১৭৯ নম্বর আয়াত এবং অনুরূপ কয়েকটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। অতঃপর এরূপ বললেন, “আর এর মধ্যেই রয়েছে স্পষ্ট প্রমাণ যে, উম্মতের ইমাম তথা নেতা থাকা চাই যে উম্মতের বিষয়গুলো সুরাহা করবে এবং তাদেরকে আদেশ ও নিষেধ করবে, আল্লাহর সীমারেখাগুলো তাদের মাঝে প্রতিষ্ঠা করবে, শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে, গনীমতকে ন্যায্যভাবে বণ্টন করবে এবং উত্তরাধিকারের অংশকে উত্তরাধিকারীর হাতে তুলে দেবে এবং সংশোধন ও কল্যাণের দরজাগুলো তাদেরকে দেখিয়ে দেবে। আর যা কিছু তাদের জন্য অনিষ্টকর, তা থেকে তাদেরকে বিরত রাখবে...।”

(তাফসীরে নো’মানী, বিহারুল আনওয়ারের বর্ণনা মোতাবেক, ৯৩তম খণ্ড, পৃ. ৪১)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .