۳ آذر ۱۴۰۳ |۲۱ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 23, 2024
পড়ন্ত বিকেলে কারবালা প্রান্তরে
পড়ন্ত বিকেলে কারবালা প্রান্তরে

হাওজা / "হে শীয়ানে মূয়াবীয়া ! তোমাদের মাঝে কি একজনও মুসলমান নাই ----- ?"

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, আশুরার দিনে মজলুম ইমাম হোসেনের (আঃ) খোৎবা । আশুরা অর্থাৎ ১০ই মহরমের পড়ন্ত বিকেল।

সকাল থেকে মাত্র কয়েকটি ঘন্টার ব্যবধানে একে একে ৭১ জন সঙ্গী-সাথীকে হারিয়ে মজলুম ইমাম হোসেন (আঃ) এখন বড় একাকী ।

কারবালার মরু প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৭১ জনের ক্ষতবিক্ষত পবিত্র লাশের উপর দাঁড়িয়ে জীবনের শেষ মুহূর্তে ইমাম হোসেন (আঃ) সাধ্যমত চেষ্টা করছেন যে , এরপরেও যদি কিছু মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয় !

নরাধম পাষন্ড ঈয়াযীদের ত্রিশ হাজার সৈন্যবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে মজলুম ইমাম হোসেন (আঃ) তাঁর জীবনের সর্বশেষ আহবান জানালেন ।

"হে শীয়ানে মূয়াবীয়া !

বিবেচনা কর , আমার পরিবার সম্পর্কে এবং গভীরভাবে ভেবে দেখ যে , আমি কে ? এরপর নিজেদের তিরস্কার কর । তোমরা কি মনে কর আমাকে হত্যা করা এবং আমার পবিত্রতা ও সম্মান লুট করা তোমাদের জন্য বৈধ ?

আমি কি তোমাদের নবীজীর (সাঃ) নাতি , তার ওয়াসী ও তার চাচাত ভাইয়ের সন্তান নই ?

যিনি ছিলেন বিশ্বাস গ্রহনে সবার আগে এবং সাক্ষী ছিলেন সেসব কিছুর উপরে যা নবী (সাঃ) আল্লাহর কাছ থেকে এনেছেন ।

শহীদদের সর্দার হামযা (রাঃ) কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না ? জাফর , যিনি বেহেশতে দুই পাখা নিয়ে ওড়েন , তিনি কি আমার চাচা নন ?

নবীর (সাঃ) হাদিস কি তোমাদের কাছে পৌঁছে নাই যেখানে তিনি আমার সম্পর্কে ও আমার ভাই সম্পর্কে বলেছেন যে , আমরা দুজন জান্নাতের যুবকদের সর্দার ?

তাই যদি আমি যা বলছি তার সাথে একমত হও , এবং নিশ্চয়ই আমি যা বলেছি তা সত্য ছাড়া কিছু নয় । তাহলে তা উত্তম , কারন আল্লাহর শপথ , যে সময় থেকে আমি যা বুঝেছি যে আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের অপছন্দ করেন তখন থেকে আমি কখনই মিথ্যা বলি নাই ।

আর যদি তোমরা আমি যা বলেছি তা বিশ্বাস না কর তাহলে তোমাদের মাঝে এখনও নবীর (সাঃ) জীবিত সাহাবাগন আছে , তাদের কাছে যাও এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর এবং তারা আমার বক্তব্যের সত্যতার সাক্ষী দিবে ।

জাবির বিন আবদুল্লাহ আনসারি , আবু সাঈদ খুদরি , সাহল বিন সাদ সায়েদি , যায়েদ বিন আরকাম এবং আনাস বিন মালিককে জিজ্ঞেস কর , তারা তোমাদের বলবে যে , তারা আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছ থেকে আমার ও আমার ভাই সম্পর্কে এই হাদিস শুনেছে । এটি কি তোমাদের জন্য আমার রক্ত ঝরানোর চাইতে যথেষ্ট নয়" ?

তখন অভিশপ্ত শিমর বিন যিলজাওশান বলল , "আমি আল্লাহর ইবাদত করি ঠোট দিয়ে এবং তুমি যা বলছো তা আমি বুঝি না"।

এ কথা শুনে হাবীব বিন মুজাহির বললেন , "আমি দেখছি তুমি সত্তুর ধরনের সন্দেহ নিয়ে আল্লাহর ইবাদত কর এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , তুমি সত্য বলেছ , তুমি ইমাম (আঃ) যা বলেছেন তা বুঝতে পার নাই কারন তোমার অন্তরে মোহর (মূর্খতার) সীলমোহর মারা হয়েছে"।

ইমাম (আঃ) পুনরায় বললেন , "যদি তোমরা এতে সন্দেহ পোষন কর , তোমরা কি এতেও সন্দেহ কর যে আমি রাসুলুল্লাহর (সাঃ) নাতি নই ?

আল্লাহর শপথ ! পূর্বে ও পশ্চিমে , আমি ছাড়া নবীর (সাঃ) কোন নাতি নাই তোমাদের মধ্যে অথবা অন্যদের মধ্যে । দুর্ভোগ তোমাদের জন্য , আমি কি তোমাদের মধ্যে থেকে কাউকে হত্যা করেছি যে তোমরা তার প্রতিশোধ নিতে চাও ? অথবা আমি কি কারও সম্পদ বেদখল করেছি অথবা কাউকে আহত করেছি যার প্রতিশোধ তোমরা আমার উপর নিতে চাও"?

ঈয়াযীদ বাহিনীর যখন কেউ তাকে উত্তর দিল না

তিনি উচ্চ কন্ঠে বললেন , "হে শাবাস বিন রাবঈ , হে হাজ্জার বিন আবজার , হে ক্বায়েস বিন আল আশআস , হে ঈয়াযীদ বিন হুরেইস , তোমরা কি আমার কাছে চিঠি লেখো নাই যে , ফল পেকেছে এবং আশেপাশের ভূমিতে ফুল ফুটেছে এবং একটি বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে আসুন , যা আমার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে" ?

তারা উত্তর দিল যে , তারা এ ধরনের কোন চিঠি লিখে নাই

ইমাম (আঃ) তখন বললেন , "সুবহান আল্লাহ ,আল্লাহর শপথ অবশ্যই তোমরা তা লিখেছিলে ।"

এরপর ইমাম (আঃ) বললেন , "হে জনতা , এখন যদি তোমরা আমার আগমনকে পছন্দ না কর তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও যেন আমি কোন আশ্রয়ের জায়গায় চলে যেতে পারি" ।

ক্বায়েস বিন আশআস বলল , "তুমি যা বলছ তা আমরা জানি না , আমার চাচাতো ভাইদের (বনি উমাইয়ার) কাছে আত্মসমর্পন কর , তারা তোমার সাথে সেভাবে আচরন করবে যেভাবে তুমি চাও"।

ইমাম (আঃ) বললেন , "আল্লাহর শপথ , নিকৃষ্ট মানুষের মত আমি তোমাদের হাতে হাত দিব না , না আমি পালিয়ে যাব কোন দাসের মত" ।

এরপর ইমাম (আঃ) উচ্চকন্ঠে বললেন , "---- আমি আমার ও তোমাদের রবের কাছে আশ্রয় নিচ্ছি , পাছে তোমরা আমাকে পাথর নিক্ষেপ কর ( হত্যা কর ) ---" ।

সুরা - দুখান /২০ ।

"----মুসা বলেছিল , নিশ্চয়ই আমি নিরাপত্তা চাই আমার প্রভুর কাছে এবং তোমাদের প্রভুর কাছে , প্রত্যেক দাম্ভিক থেকে , যে হিসাব দিনে বিশ্বাস করে না ----" ।

সুরা - মুমিন /২৭ ।

কুলাঙ্গার ঈয়াযীদের বিশাল সৈন্যবাহিনী বোবার মত দাঁড়িয়ে রইল ।

এবারে ইমাম হোসেন (আঃ) শেষের এই কথাগুলি বললেন -

" -- হে শীয়ানে মূয়াবীয়া ! তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে চাও ?

আমি কি কোন পাপ অথবা অপরাধ করেছি ?”

পুনরায় মজলুম ইমাম হোসেন (আঃ) বললেন , "আমাকে শহীদ করলে আল্লাহর কাছে তোমরা কি জবাব দেবে ? কি জবাব দেবে বিচার দিবসে মহানবীর (সাঃ) কাছে ?"

ঈয়াযীদের সৈন্যবাহিনী পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে ।

এবারে ইমাম হোসেন (আঃ) বললেন -

‘হাল্ মিন্ নাস্রিন ইয়ানসুরুনা ?”

অর্থাৎ - ‘আমাদের সাহায্য করার মত কি তোমাদের মাঝে একজনও নাই ?

এরপরের আহ্বানটি ছিল মারাত্মক অশ্রুসিক্ত ।

ঐতিহাসিকদের মতে এটাই ছিল মজলুম ইমাম হোসেনের (আঃ) শেষ আহ্ববান ।

হায় আমার মজলুম ইমাম !

শেষ এই একটি কথাটিতে মজলুম ইমাম হোসেন (আঃ) কেয়ামত পর্যন্ত পুরো জগতবাসীকে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে , কারবালার মাঠে ঈয়াযীদের বিশাল দলটি আদৌ মুসলমানের কোন দলই ছিল না !

জেনে নিন , ইমাম হোসেনের (আঃ) নিজের স্বীকারোক্তি ।

ইমাম হোসেন (আঃ) বিশাল ঈয়াযীদের বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে জীবনের সর্বশেষ কথাটি বলছেন - "আলাম্ তাস্মাও ? আলাইসা ফিকুম্ মুসলিমু ?

অর্থাৎ - ‘আমার কথা কি শুনতে পাও না ...

তোমাদের মাঝে কি একজনও মুসলমান নেই ?"

তথাকথিত নামধারী মুসলমানের এই অপদার্থ কুলাঙ্গারের দল মজলুম শহীদ ইমাম হোসেনের (আঃ) খুতবার কোন জবাব দিতে পারল না ।

কিছুক্ষনের জন্য সমস্ত কারবালা নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে গেল !

ইমাম হোসেন (আঃ) নিজের জীবন দিয়ে জগতবাসীকে চিনিয়ে দিয়ে গেলেন যে , কারবালা প্রান্তরে ঈয়াযীদের বাহিনীতে একজনও মুসলমান ছিল না ।

অতীতের মত কেয়ামত পর্যন্ত অনেক দলীয় মুসলমানের আবির্ভাব হবে ।

একমাত্র সত্য সঠিক মুমিন মুসলমানের দল হচ্ছে - হোসেইনী মুসলমান ।

মহান আল্লাহর কঠিন লানত বর্ষিত হোক সেই কুলাঙ্গারের উপর যে কুলাঙ্গার , নরপিশাচ ঈয়াযীদকে প্রকাশ্যে রাঃআনহু বলে ঘোষনা করে ।

আসুন আমরা সকলে মিলে ঈয়াযীদসহ তাদের সকল পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি চরম ঘৃনা করতে শিখি ও তাদের উপর আল্লাহর লানত কামনা করি । ঈলাহী আমিন ।

সূত্র - ইবনে আসীর, ৪খন্ড, পৃ. ২৫ / ত্বাবারী, ৬খন্ড, পৃ. ২৪৩ / হাসান ও হুসাইনের কারবালার কাহিনী ও এজিদ বধ পর্ব, পৃষ্ঠা-৬৭-৭০ / দুই ইমাম দুই ফুল, পৃ.১২৩-১২৫ / শামে কারবালা, পৃ. ১২৫-১২৭ / আহলে বাইত ও কারবালা, পৃ. ৪৪-৪৫ / কিতাবুল ইরশাদ : শেখ মুফিদ, ২য় খন্ড, পৃ. ৯৭ / মাকতালুল হুসাইন : খারাযমী, ২য় খন্ড, পৃ. ৬ / শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস ,

(১ম খন্ড) , মূল লেখক - শেইখ আব্বাস কুম্মি , বাংলা অনুবাদ - মুহাম্মাদ ইরফানুল হক ,পৃ-১৯৪ , ১৯৫ , ১৯৬ ছায়া অবলম্বনে লিখিত ।

লেখা: শাকিল আহমেদ

تبصرہ ارسال

You are replying to: .