۲۹ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱۰ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 18, 2024
হযরত আলীকে (আঃ)
হযরত আলীকে (আঃ)

হাওজা / শিরোনাম দেখে বুঝতেই পারছেন যে , আজকের লেখার মূল বিষয়বস্ত হচ্ছে যে , আমরা কেন হযরত আলীকে (আঃ) "মাওলা" হিসাবে মানব ?

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, সংক্ষিপ্তভাবে কিছু কথামালা পেশ করছি ।

সৃষ্টিজগতের আমরা সকলেই বিনাঃশর্তে এবং পরিপূর্ন আনুগত্য এবং সন্তষ্টচিত্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর যে কোনও আদেশ-নির্দেশ মানতে বাধ্য । মহান আল্লাহ নিজেও আমাদের পক্ষ থেকে এরকম আনুগত্য আশা করেন । যদিও আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে কোন প্রকার জোর-জবরদস্তি নাই । ইহকালীন জীবনে প্রচুর স্বাধীনতা দিয়েছেন । জবাবদিহি বা কৈফিয়ত তলব বা হিসাব-নিকাশের পালা শুরু হবে রুহ কবজের পর থেকে ।

আলোচনার  মূল বিষয়বস্ত হচ্ছে যে , কেন হযরত আলীকে (আঃ) "মাওলা" হিসাবে মানতে হবে ?

এই ফাঁকে চট করে দেখে নেই যে , "মাওলা" বা "ওয়ালী" কথাটির বাংলা অর্থ কি ?

"ওয়ালী" বা "মাওলা" কথাটির বাংলা অর্থ হচ্ছে - প্রভু , অভিভাবক , নেতা , বন্ধু , পথপ্রদর্শক , হেদায়েতকারী ইত্যাদি । উল্লেখ্য যে , পবিত্র কোরআনে বর্নিত আয়াতের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী "ওয়ালী" বা "মাওলা" কথাটির প্রায়োগিক অর্থ এবং অবস্থা বুঝে নিতে হবে ।

কেন হযরত আলীকে (আঃ) "মাওলা" হিসাবে মানতে হবে ?

প্রশ্নটির জবাব দানের পূর্বে মহান আল্লাহর প্রধানতম একটি নীতি বা আদেশ দেখে নিন ।

" ---- এবং কোন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর এই অধিকার নেই যে , যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন বিষয় ফয়সালা দান করেন তখন তারা সে ব্যাপারে ভিন্ন সিদ্বান্ত গ্রহন করে এবং যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের হুকুম অমান্য করবে নিঃসন্দেহে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হয়েছে ---- " । সুরা - আহযাব / ৩৬ ।

অত্যন্ত পরিস্কার করে বলা হচ্ছে যে , নিজেকে যদি একজন মুমিন মুসলমান হিসাবে মনে করতে চান তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের (সাঃ) যে কোনও আদেশ-নির্দেশ মানতে আপনি বাধ্য ।

আর যদি মানতে কষ্ট হয় অথবা আদেশটি অস্বীকার করেন , সেক্ষেত্রে আপনার পরবর্তী গন্তব্যস্থল কোথায় হবে সেটাও আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন ।

" --- এবং যেই অমান্য করে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে (নির্দেশ) নিশ্চয়ই তার জন্য থাকবে জাহান্নামের আগুন , সেখানেই থাকার জন্য চিরকাল --- " । সুরা - জ্বীন / ২৩ ।

" ----- আর যে ব্যক্তি রাসুলের বিরোধীতা করবে তার কাছে সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মুমিনদের পথ ছেড়ে অন্যপথ অনুসরন করবে , অবশ্যই আমি তাকে সেদিকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে যায় । আর তাকে জাহান্নামে জ্বালাব । আর তা কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল ---- " । সুরা - নিসা / ১১৫ ।

ইহকালীন জীবনে আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে প্রচুর স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এবং কোন প্রকার জোর-জবরদস্তি নাই ।

" -- নিশ্চয়ই আমরা তাকে পথ দেখিয়েছি , হয় সে কৃতজ্ঞ হইবে , নাহয় সে অকৃতজ্ঞ হইবে ---- "। সুরা - দাহর / ৩ ।

" --- তুমি বল , "সত্য কেবল তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতেই অবতীর্ন হয় । যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক এবং যার ইচ্ছা অস্বীকার করুক । নিশ্চয়ই আমরা অবিচারকদের জন্য আগুন প্রস্তত রেখেছি যার আবরন তাদের সম্পূর্নরুপে পরিবেষ্টন করবে ---- "। সুরা - কাহফ / ২৯ ।

" --- ধর্ম সম্পর্কে কোন জোর-জবরদস্তি নাই । সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হইতে সুস্পষ্ট হইয়াছে ------" । সুরা - বাকারা / ২৫৬ ।

সুপ্রিয় পাঠক,

উপরে বর্নিত লেখাতে মহান আল্লাহ কতৃক ঘোষিত নীতিমালা দেখে নিয়েছেন । এবারে চলুন মূল প্রসঙ্গে ।

কেন হযরত আলীকে (আঃ) "মাওলা" হিসাবে মানতে হবে ?

প্রথমে দেখে নেই যে , পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ কি বলছেন !

স্বয়ং আল্লাহ নিজেই হযরত আলীকে (আঃ) "ওয়ালী" বা "মাওলা" বা "অভিভাবক" হিসাবে নির্বাচিত এবং ঘোষনা দিয়েছেন ।

" --- তোমাদের অভিভাবক শুধু আল্লাহ , তাঁর রাসুল এবং সেই বিশ্বাসী যে নামাজ বজায় রাখে এবং যাকাত আদায় করে রুকুরত অবস্থায় । কেহ আল্লাহ , তার রাসুল এবং মুমিনগনকে বন্ধুরুপে গ্রহন করিলে আল্লাহর দলই তো বিজয়ী হইবে --- “ । সুরা – মাইদা / ৫৫ , ৫৬ ।

উপরে উল্লেখিত আয়াতে তিনজনকে অভিভাবক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।

১) - সর্বশক্তিমান আল্লাহ , ২) - মুহাম্মাদ (সাঃ) , ৩) - হযরত আলী (আঃ) ।

শীয়া-সুন্নি সকলেই একমত যে , আয়াতে উল্লেখিত সর্বশেষ তৃতীয় অভিভাবক হিসাবে ঘোষিত রুকুরত অবস্থায় যাকাত আদায়কারী ব্যক্তিটি হলেন হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) ।

মহান আল্লহ স্বয়ং নিজে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে হযরত আলী ইবনে আবু তালিবকে (আঃ) "ওয়ালী" বা "মাওলা" বা "অভিভাবক" হিসাবে ঘোষনা দিচ্ছেন ।

এবারে যারা নিজেদেরকে মুমিন মুসলমান হিসাবে মনে করেন তারা চরম সত্য এই কলেমাটি বা বানীটি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন । অর্থাৎ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে (সাঃ) যেভাবে "ওয়ালী" বা "মাওলা" বা "অভিভাবক" হিসাবে মানবে একইভাবে হযরত আলীকে (আঃ) বিনাসংকোচে এবং বিনাসন্দেহে এবং সন্তষ্টচিত্তে "ওয়ালী" বা "মাওলা" বা "অভিভাবক" হিসাবে মেনে নেবে ।

কেননা আদেশটি দিচ্ছেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ ।

সুরা মাইদার ৫৫নং আয়াতের ঘোষনা মোতাবেক আল্লাহ কতৃক অনুমোদিত পূর্নাঙ্গ কলেমা বা বানী হচ্ছে এটা ---

"লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাাদুর রাসুল্লাল্লাহ আলী উন অলী উল্লাহ ।"

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ = আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই ,

মুহাম্মাদুর রাসুল্লাল্লাহ = হযরতমুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ কতৃক প্রেরিত একজন রাসুল ,

আলী উন অলি উল্লাহ = হযরত আলী (আঃ) আল্লাহ কতৃক প্রেরিত একজন অলী ।

এবারে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটির সাথে সম্পর্কিত একটি হাদিস দেখে নিন ।

বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে লক্ষাধিক হজ্ব ফেরৎ হাজী সাহাবাগনের সম্মুখে গাদীর এ খুম নামক স্থানে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজেই হযরত আলী (আঃ) সম্পর্কে যে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন যে , "আমি যার মাওলা এই আলীও তার মাওলা বা অভিভাবক”।

তথ্যসূ্ত্র - তাফসীরে দুররে মানসুর , খন্ড - ৩, পৃ- ১১৭ / তাফসীরে কাবির , খন্ড - ১২ , পৃ- ৫০ / তাফসীরে মানারিজ , খন্ড - ২, পৃ-৮৬ / তাফসীরে আলুসি , খন্ড - ২, পৃ- ৩৮৪ / আসবাবুন নুযুল, পৃ- ১৩৫ / শাওয়াহেদুত তানযিল, খন্ড - ১, পৃ- ১৯২ / তারিখে দামেস্ক , খন্ড - ২ , পৃ- ৮৬ / ফাতহুল কাদীর, খন্ড - ২ , পৃ- ৬০ / মাতালেবাস সাউল, খন্ড- ১ , পৃ- ৪৪ / আরজাহুল মাতালেব, পৃ- ১১৯ (উর্দ্দু) / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া , খন্ড - ৩, পৃ- ২১৩ / মুসনাদে হাম্বল , খন্ড - ৪ , পৃ- ২৪ / তারিখ আল খাতিব, খন্ড - ৮ , পৃ- ২৯০ / কানজুল উম্মাাল, খন্ড - ৬, পৃ- ৩৯৭ / আর রিয়াযুন নাজরা , খন্ড - ২, পৃ- ১৬৯ / মিসকাত আল মাসাবিহ, পৃ- ৫৫৭ / মুসতাদরাক হাকেম, খন্ড - ৩, পৃ- ১০৯ / সিবরুল আলামীন, পৃ- ৯ (ইমাম গাজ্জালী ) / আরজাহুল মাতালেব , পৃ- ৯০৭ - ৯৬৪ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ১২০ / দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা (বাংলাদেশ) , ৪ঠা মার্চ ২০০২ , ২৩শে জানুয়ারী ২০০৬ , ২৮শে জানুয়ারী ২০০৫ / আশারা মোবাশশারা , পৃ- ১৬৩ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / মাসিক মদীনা , পৃ- ১৫ , জুন ২০০৫(বাংলাদেশ) / ঐতিহাসিক আল গাদীর , পৃ- ৫ - ১২৮, মীর রেজা হোসাইন শহীদ / ইসলামী বিশ্বকোষ , খন্ড - ১০ , পৃ- ৩০৭ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল বুখারী , খন্ড - ৫ , পৃ- ২৮০ (হামিদীয়া লাইব্রেরী) / সীরাতুন নবী , খন্ড- ২ , পৃ- ৬০৫ (তাজ কোং) / তাফসীরে মাযহারী , খন্ড - ৩ , পৃ- ৭৩৩ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সুনানে ইবনে মাজা , খন্ড - ১ , পৃ- ৪৩ , হাদিস নং - ১১৬ / তারিখে ইবনে কাসির , খন্ড - ৪ , পৃ- ২৮১ ।

ঐতিহাসিক এই ঘটনাটি কমপক্ষে ১১০ জন সাহাবা, ৮৪ জন তাবেঈন , ৩৫৫ জন ওলামা , ২৫ জন ঐতিহাসিক, ২৭ জন হাদিস সংগ্রহকারী , ১১ জন ফিকহাবিদ, ১৮ জন ধর্মতাত্বিক , ৫ জন ভাষাতাত্বিক বর্ননা করেছেন ।

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসুলগন এবং সমগ্র মানবজাতি এবং সমগ্র জ্বীনজাতি তথা সমগ্র সৃষ্টিকুলের  "ওয়ালী" বা "মাওলা" বা "অভিভাবক" বা "মহাসম্রাট" বা "মহাওস্তাদ" হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ।

হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন যে , রাসুলকে (সাঃ) জিজ্ঞাসা করা হল , আপনি কখন নবুয়ত লাভ করেছেন ? রাসুল (সাঃ) বলেন , যখন আদম মাটি ও পানির মাঝে ছিলেন । অর্থাৎ যখন আদমের অস্তিত্ব ছিল না । সূত্র - তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড - ৩ , পৃষ্ঠা - ৩০৫ / নুরে নবী , মাওলানা আমিনুল ইসলাম , খন্ড - ১, পৃষ্ঠা -৫ / সহীহ তিরমিযি , (ইসলামিক সেন্টার) , খন্ড - ৬ , হাদিস নং - ৩৫৪৮ ।

হযরত সালমান ফার্সী (আঃ) হতে বর্ণিত , রাসুল (সাঃ) বলেন ,আমি এবং হযরত আলী (আঃ) মহান আল্লাহর নিকট “নূর“ হিসেবেই অবস্থান করছিলাম । উক্ত “নূর মুবারক” হযরত আদমের (আঃ) সৃষ্টি হওয়ার চৌদ্দ হাজার বৎসর পূর্বে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছিলেন । যখন হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করা হইল তখন উক্ত “নূর মুবারক” দুইভাগে ভাগ করা হইল।” সূত্র - ফাদ্বায়েলুছ সাহাবা , লেখক: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) , পৃ-৬৬৩ , হাদিস নং - ১১৩০ / ফেরদাউস খন্ড-৩ , পৃ- ২৮৩ / মুখতাছারু তারিখুত দিমাষ্ক ৫/৩৭৭ / মানাকিবে আলী ইবনে আবী তালিব ১/১৪৫ ।

বিষয় তাহলে জলে মত পরিস্কার যে , পবিত্র কোরআন এবং রাসুলের (সাঃ) হাদিস মোতাবেক হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যাদের "ওয়ালী" বা "মাওলা" বা "অভিভাবক" । একইভাবে হযরত আলীও (আঃ) তাদের "ওয়ালী" বা "মাওলা" বা "অভিভাবক" ।

এবারে আপনি মানবেন বা অস্বীকার করবেন - সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিচার-বিবেচনা । মরনের পরে জান্নাত এবং জাহান্নাম দুটোই আপনাকে স্বাগতম জানানোর জন্য অপেক্ষামান আছে ।

বিদায় নেওয়ার পূর্বে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতগুলি গভীর মনযোগ সহকারে পড়ুন ।

“ --- আল্লাহর শপথ , তোমাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে --- " সুরা - নাহল / ৫৬ ।

" --- এবং তোমাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে ঐ বিষয় যা তোমরা করতে --- " । সুরা - নাহল / ৯৩ । "

" --- মানুষেরা কি মনে করে যে , তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে । যেহেতু তারা বলে , "আমাদের বিশ্বাস আছে" এবং তাদের পরীক্ষা করা হবে না --- " । সুরা - আনকাবুত / ২ ।

"--- থামাও তাদের , কারন তাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে --- " । সুরা - সাফফাত , আয়াত - ২৪।

সকলেই সুস্থ এবং সদা হাসিখুশী থাকুন ।

ধন্যবাদে - সাকিল আহমেদ ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .