পর্ব ২- আবু হুরায়রা থেকে বর্নিতঃএক ব্যক্তি মহানবীর(সাঃ) কাছে এসে ক্ষুধার বিষয়ে অভিযোগ করলেন।রাসুলুল্লাহ(সাঃ) একজনকে তাঁর স্ত্রীদের ঘরসমুহে পাঠালেন(খাবার সংগ্রহের জন্য),কিন্তু তাঁরা সকলেই বললেন বাড়িতে পানি ছাড়া আর কোন কিছু নেই।রাসুলুল্লাহ(সাঃ) আহবান করলেনঃ কে আজ রাতে এ ব্যক্তিকে মেহমান হিসাবে গ্রহন করবে?আলী ইবনে আবি তালিব(আঃ) বললেনঃতার জন্য আমি আছি,হে রাসুলুল্লাহ!এরপর তিনি ফাতিমার(সাআ) কাছে গেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃহে রাসুলুল্লাহের(সাঃ) কন্যা,তোমার কাছে কি আছে?তিনি(সাআ) উত্তর দিলেনঃবাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমার কাছে আর কিছু নেই,তবে আমরা মেহমানকে প্রাধান্য দেব।আলী(আঃ) বললেনঃহে মুহাম্মাদের কন্যা,বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও এবং বাতি নিভিয়ে দাও।সকাল হলে আলী(আঃ) রাসুলুল্লাহের(সাঃ) কাছে এলেন এবং তাঁকে ঘটনাটি বর্ননা করলেন।আর একটু পরেই মহান আল্লাহ পাক এই আয়াতটি নাজিল করেনঃ “ বরং(তারা) অন্যদের অগ্রাধিকার দেয় নিজেদের চাইতে,যদিও তাঁরা নিজেরাই দরিদ্র।আর যারা তাদের নিজেদের লোভ থেকে রক্ষা পেয়েছে-তারাই হল সফলকাম”।(সুরা হাশর-০৯;আমালী আত-তুসীঃ১৮৫/৩০৯;তাওয়িয়ুল আয়াতে যাহিরাহঃ৬৫৩;শাওয়াহেদুত তানজিলঃ২/৩৩১/৯৭২)।
তাফসীরকারক আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহিম আল-সা’লাবী থেকে বর্নিতঃআমি একটি বইতে এ বর্ননা পেয়েছি যে,রাসুলুল্লাহ(সাঃ) যখন হিজরতের সিদ্বান্ত নিলেন,তখন আলী ইবনে আবি তালিব(আঃ)-কে মক্কায় তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ করেন তার(সাঃ) ঋণ সমুহ ও তাঁর কাছে রাখা গচ্ছিত সম্পদসমুহ মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।মুশরিকরা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করার পর যে রাতে তিনি(সা) গুহায় যান-(ঐ রাতে) তিনি আলী(আঃ)কে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকতে আদেশ দেন এবং বলেনঃতুমি আমার ডোরা-কাটা হাদরামী জামা দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখবে-তাদের ষড়যন্ত্রে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তোমার কোন ক্ষতি হবে না।আলী(আঃ) তাই করলেন।আল্লাহ জিব্রাইল ও মিকাঈল(আঃ)-এর কাছে ওহী করলেন যে, ‘আমি তোমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্টা করেছি একজনের জীবনকালকে অন্যজনের জীবনের চেয়ে দীর্ঘ করেছি ,এখন তোমাদের মধ্যে কে তাঁর ভাইয়ের জন্য নিজের জীবনকে ত্যাগ করবে’? কিন্তু উভয়েই নিজের জীবনকে বেছে নিলেন।মহান আল্লাহ তখন তাদের কাছে ওহী করলেনঃ ’তোমরা কি আলী ইবনে আবি তালিবের মত নো?!আমি তাঁর ও আমার নবী মুহাম্মাদের(সাঃ) মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্টা করেছি এবং আলী(আঃ) তার (রাসুলুল্লাহর-সাঃ) বিছানায় শুয়ে আছে,তার(সাঃ) জন্য নিজের জীবনকে উতসর্গ করেছে এবং নিজের জীবনের চেয়ে তাকে(রাসুলুল্লাহকে-সাঃ) প্রাধান্য দিয়েছে?!এখন পৃথিবীতে নেমে যাও এবং তাকে(আঃ) তাঁর শত্রুর কাছ থেকে রক্ষা কর’;তারা অবতীর্ন হলেন এবং জিব্রাঈল আলী(আঃ)-এর মাথার কাছে দাড়ালেন ও মিকাঈল তাঁর পায়ের কাছে দাড়ালেন।জিব্রাইল ডাক দিয়ে বললেনঃশাবাশ! শাবাশ! হে আলী ইবনে আবি তালিব!কে আপনার মত যাকে নিয়ে মহান আল্লাহ তাঁর ফেরেস্তাদের ঊপর গর্ব করেন?!যখন রাসুলুল্লাহ(সাঃ) মদিনার পথে ছিলেন মহান আল্লাহ তাঁর কাছে(আলী আঃ সম্পর্কে) এই আয়াতটি নাজিল করেনঃ “ এবং জনগনের মাঝে ঐ ব্যক্তি আছে যে নিজের সত্তাকে বিক্রয় করে দেয় আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এবং আল্লাহ সবচেয়ে করুনাময়(তার প্রতি নিবেদিত) দাসদের প্রতি”(সুরা বাকারাহ-২০৭;উসুদল গাবাহঃ৪/৯৮;আল-উমদাহঃ২৩৯/৩৬৭;তাযকিরাত আল-খাওয়াসঃ৩৫;শাওয়াহেদুত তানজিলঃ১/১২৩)। সমাপ্ত
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ।
নিবেদক- মোহাম্মদ হোসাইন, বাংলাদেশ।