লেখক: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
পর্ব ৩- আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন এ আলেমদের-যাঁদের গ্রন্থ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী-বর্ণনার বিপরীতে নাসিরুদ্দীন আলবানী কর্তৃক হাদীসটিকে বিভিন্ন সূত্রে দুর্বল বলার যুক্তির প্রতি কর্ণপাত করা যায় না। কারণ,হাদীসটি দু’একটি সূত্রে দুর্বল হলেও সকল সূত্রে দুর্বল নয়;বরং হাদীসটির মূল পাঠ বিভিন্ন সূত্রে হুবহু বর্ণিত হওয়ায় হাদীসটি মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হওয়াকে সত্য বলে প্রমাণ করে। এ কারণেই তিরমিযী হাদীসটিকে ‘হাসান’,‘গারীব’ ও ‘সহীহ’ বলে অভিহিত করেছেন।১০
হাদীসটি ‘গারীব’ (যে সহীহ হাদীস কোন যুগে একজন মাত্র রাবী কর্তৃক বর্ণিত) হওয়ার বিষয়টি তার সত্যতার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলে না। যেহেতু আহলে সুন্নাতের সংজ্ঞা মতো হাদীসের বর্ণনা ধারায় কোন একটি স্তরে যদি বর্ণনাকারীর সংখ্যা এক হয়ে থাকে তাও গারীব হাদীসের অন্তর্ভুক্ত,১১ সেহেতু গারীব হাদীসকে সঠিক বলে ধরতে এবং তা গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ,সহীহ ও হাসান হাদীসের ক্ষেত্রেও তা ঘটতে পারে। যেমনটি উপরিউক্ত হাদীসের ক্ষেত্রে ঘটেছে। তদুপরি যদি আমরা গারীব হওয়ার কারণে কোন হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করি,সেক্ষেত্রে সুনানে আবু দাউদ ও দারে কুতনীর মতো প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থসমূহের অধিকাংশ হাদীসকে গারীব হওয়ার কারণে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
সুতরাং আলোচ্য হাদীসের ক্ষেত্রে গারীব হওয়া কোন সমস্যা নয়। তাছাড়া আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ী সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি গাবীর নয়। স্বয়ং আলবানী তাঁর সিলসিলাতুল আহাদিসুস সাহীহা গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ২৬১-২৬২ পৃষ্ঠায় একটি সহীহ সূত্রে (২২২৪ নং) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদের গবেষক হামযা আহমাদ আযযাইনও আলোচ্য হাদীসের টীকায় এটিকে সহীহ বলেছেন।
আল্লামা মানাভী বলেন : ‘আলী আমার থেকে এবং আমি আলী থেকে’-মহানবী (সা.)-এর এ হাদীসটির অর্থ হলো আলী বিশেষ বৈশিষ্ট্য,ভালবাসা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং আমিও তার সঙ্গে ঐ সকল ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত। এ কারণেই হাদীসটিতে এই অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক ও সংযুক্তির কথা বলা হয়েছে। আরবদের ভাষায় বিষয়টি এভাবে বলা হয়ে থাকে যে,অমুক অমুকের সাথে এতটা সম্পৃক্ত যে,তারা যেন একে অপরের সাথে একীভূত হয়েছে।১২
যখন কেউ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে হযরত আলী ও হযরত ফাতেমা যাহরার মধ্যে বিদ্যমান বৈবাহিক সম্পর্কের বিষয়টিকে দৃষ্টি দেন তাহলে লক্ষ্য করবেন যে,তাঁদের মধ্যে এই সম্পর্কটি সকল দিক থেকে পূর্ণ। অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রেই তাঁদের মধ্যে মিল ও সম্পর্ক রয়েছে। যদি আমরা ‘যে আলীকে কষ্ট দিল,সে আমাকেই কষ্ট দিল’ এবং ‘আলী আমার থেকে এবং আমি আলী থেকে’ বাণী দু’টির পাশে ‘ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ;যে তাকে কষ্ট দিল,সে আমাকেই কষ্ট ছিল’ এবং ‘ফাতেমা আমার অংশ;যে তাকে ক্রোধান্বিত ও অসন্তুষ্ট করল,সে আমাকেই ক্রোধান্বিত ও অসন্তুষ্ট করল’ বাণী দু’টিকে মিলিয়ে দেখি,তবে পবিত্র কুরআনের ‘আর প্রত্যেক বস্তু আমি সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায় যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’-এ আয়াতটির সত্যতাই আমাদের সামনে স্পষ্ট হবে যে,পূর্ণতা ও আধ্যাত্মিক মর্যাদার দৃষ্টিতেও মহান আল্লাহ্ এরূপ জুড়ি সৃষ্টি করেছেন। সকল ক্ষেত্রেই আলী ও ফাতেমা পরস্পরের জুড়ি ও সমকক্ষ ছিলেন। উপরিউক্ত হাদীসগুলোর ‘আমার অংশ’ ও ‘আমার থেকে’ কথাগুলো থেকে প্রমাণিত হয়,যে বিশেষ ক্ষেত্রকে ব্যতিক্রম করা হয়েছে তা ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর সকল বৈশিষ্ট্য ও অধিকার তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই নবুওয়াতের বিষয়টিকে বাদ দিলে তাঁরা বাকী সকল বৈশিষ্ট্য ও আধ্যাত্মিক মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।...চলবে...