লেখক: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
পর্ব ৬- উপরিউক্ত সহীহ হাদীসের আলোচনা থেকে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় :
১. হযরত ফাতেমা (আ.) যখন কোন ব্যক্তির ওপর ক্রোধান্বিত হন তখন মহান আল্লাহ্ও ঐ ব্যক্তির ওপর ক্রোধান্বিত হন।
২. যখন মহান আল্লাহ্ কোন ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হন তখন নিঃসন্দেহে সে জাহান্নামে পতিত হবে। স্বয়ং আল্লাহ্ এ সম্পর্কে বলেন : ‘যার ওপর আমার ক্রোধ বর্ষিত হয় নিশ্চয় সে জাহান্নামে পতিত হয়।’ (সূরা ত্বাহা : ৮১)
৩. উক্ত আয়াতে ‘জাহান্নাম’ ইঙ্গিত করতে ‘হাওয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। হাওয়া হলো ঐ স্থান যেখানে উত্তপ্ত অগ্নি রয়েছে। যেমন আল্লাহ্ সূরা আল-কারিআতে বলেছেন : ‘তার (পাপী ব্যক্তির) স্থান হবে ‘হাভিয়া’। এবং কী তোমাকে অবহিত করেছে যে,এটা কী? এটি অতি উত্তপ্ত অগ্নি।’
৪. সুতরাং যে হযরত ফাতেমাকে কোনভাবে ক্রোধান্বিত করবে সে অতি উত্তপ্ত অগ্নিতে প্রবেশ করবে। এখন এই ক্রোধান্বিত করা তাঁর সম্পদ ও অধিকার হরণ করার মাধ্যমেই হোক অথবা তাঁর সন্তানদের হত্যা করার মাধ্যমেই হোক (যেমনটি কারবালায় ইমাম হুসাইন ও তাঁর সন্তানদের ক্ষেত্রে ঘটেছে)।
উক্ত হাদীস থেকে অন্য যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তা হলো : প্রথমত যখন হযরত ফাতেমা (আ.) কোন ব্যক্তির ওপর সন্তুষ্ট হবেন মহান আল্লাহ্ও তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হবেন। দ্বিতীয়ত যে (হযরত ফাতেমাকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে) মহান আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করবে সে এ আয়াতের (তাদের প্রতি আল্লাহ্ সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ,আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।-সূরা মুজাদালা : ২২) ভিত্তিতে আল্লাহর দলে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং কিয়ামতের দিন ফেরেশতারা শুধু তাদের জন্যই শাফায়াত (সুপারিশ) করবেন যাদের প্রতি আল্লাহ্ সন্তুষ্ট। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন : ‘তারা (ফেরেশতাগণ) ঐ ব্যক্তি ব্যতীত,যার প্রতি তিনি (আল্লাহ্) সন্তুষ্ট,অন্য কারো জন্য সুপারিশ করবে না।’ (সূরা আম্বিয়া : ২৮)
মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের অস্তিত্বের অংশ হযরত ফাতেমা যাদের প্রতি সন্তুষ্ট আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
তথ্যসূত্র
১. সহীহ বুখারী,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ২১০,‘মানাকিবুল মুহাজিরিন ওয়া ফাযলুহুম’ অধ্যায়,দারুল ফিকর প্রকাশনী,বৈরুত,প্রকাশকাল ১৪০১ হিজরি।
২. সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,পৃ. ১৪১,দারুল ফিকর প্রকাশনা,বৈরুত।
৩. নাসায়ী,ফাযায়েলুস সাহাবা,পৃ. ৭৮,দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া,বৈরুত।
৪. মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৮,দারুল ফিকর,বৈরুত,১৩৯৮ হিজরি।
৫. আন-নিহায়া ফি গারীবিল হাদীস,১ম খণ্ড,পৃ. ১৩৩,দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া,বৈরুত,১৪২৩ হিজরি।
৬. লিসানুল আরাব,‘বাদ’ ধাতুমূল।
৭. হাদীসটি ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসদের (হাদীস বিশেষজ্ঞদের) অনেকেই বর্ণনা করেছেন। যেমন তাবারী,তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক,২য় খণ্ড,পৃ. ৫১৪;ইবনে আসীর,আল-কামিল ফিত তারিখ;ইবনে আবিল হাদীদ,শারহে নাহজুল বালাগা,১০ম খণ্ড,পৃ. ১৮২;তারিখে মাদিনাতে দামেস্ক,হযরত আলীর পরিচিতি পর্বে,১ম খণ্ড,পৃ. ১৪৮-১৫০;আল আগানী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ১৭। হাদীস গ্রন্থের মধ্যে সহীহ তিরমিযী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৬৩৬,হাদীস নং ৩৭১৯;সুনানে ইবনে মাজা,১ম খণ্ড,পৃ. ৪৪,হাদীস নং ১১৯;আল-মুসনাদ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৬৪,মুসনাদে আহমাদ, গবেষণা : হামযা আহমাদ আযযাইন,১৬তম খণ্ড,পৃ.৪৯৭,হাদীস নং ২২৯০৮; সুয়ূতী,তারিখুল খুলাফা,পৃ. ১৬৯;তাবারানী,আল মোজামুল কাবীর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৬;মাকতাবাতু ইবনে তাইমিয়া প্রকাশনা,কায়রো,দারু ইহয়িয়াউত তুরাসিল আরাবি ছাপাখানা,বৈরুত।
৮. ফাযায়িলুস সাহাবা,পৃ. ১৫।
৯. প্রাগুক্ত।
১০. তিরমিজী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৩০০,গবেষণা ও সম্পাদনা : আবদুর রহমান মুহাম্মাদ উসমান,তৃতীয় সংস্করণ,১৪৫৩ হিজরি,দারুল ফিকর প্রকাশনা,বৈরুত। হাসান,গারীব ও সহীহ-এর সংজ্ঞা হলো যথাক্রমে যে হাদীসের বর্ণনাকারীরা সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত,কিন্তু তাঁদের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তির স্মরণশক্তির ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে,যে হাদীসের সূত্রে প্রত্যেক বা কোন এক স্তরে শুধু একজন বর্ণনাকারী বিদ্যমান থাকায় প্রসিদ্ধ নয় এবং যে হাদীসের বর্ণনাকারীরা সকলেই সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত এবং স্মরণশক্তির ক্ষেত্রেও দুর্বলতা নেই এবং হাদীসটি ত্রুটিমুক্ত ও বিরল বলে গণ্য নয়।
১১. ড. আত-তাহান,তাইসিরু মুসতালা হিল হাদীস,পৃ. ২৮।
১২. ফাইজুল কাদীর বিশারহে জামিউস সাগীর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৪৭০,সম্পাদনা : আহমাদ আবদুস সালাম,প্রথম সংস্করণ,১৪১৫ হিজরি,দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া প্রকাশনা,বৈরুত।
১৩. মুসনাদে আহমাদ,২য় খণ্ড,পৃ. ৩২২,হাদীস নং ১২৯৬;মাজমাউয যাওয়ায়েদ,৭ম খণ্ড,পৃ. ২৯;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৩৩;দুররুল মানসূর,৩য় খণ্ড,পৃ. ২০৯;মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ৫১;আল খাসায়েস,পৃ. ২০।
১৪. আবদুর রহমান আস সোহাইলী,আর-রাউজুল আনিফ ফি শারহিস সিরাতিন্নাবাভীয়া লি ইবনে হিশাম,২য় খণ্ড,পৃ. ২৮৮,গবেষণা ও টীকা সংযোজন : আবদুর রহমান ওয়াকিল,দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া,কায়রো।
১৫. হাকেম নিশাবুরী,আল-মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৩।
১৬. আল-আহাদ ওয়াল মাসানী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৩৬৩,গবেষণা : কাসেম ফাইসাল আহমাদ আল-জাওয়াবেরা,দারুত দারিয়া,আর-রিয়াদ,প্রথম প্রকাশ ১৪১১ হিজরি।
১৭. আল-মোজামুল কাবীর,১ম খণ্ড,পৃ. ১০৮,গবেষণা ও সংকলন : হামদী আবদুল মাজিদ আস-সালাফী,দ্বিতীয় সংস্করণ,দারু ইহয়িয়াউত তুরাসিল আরাবি ছাপাখানা,বৈরুত।
১৮. মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ,৯ম খণ্ড,পৃ. ২০৩,দারুল কুতুব,বৈরুত,দ্বিতীয় সংস্করণ,১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ।
১৯. সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতি খাইরিল ইবাদ,১১তম খণ্ড,পৃ. ৪৪,দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া,বৈরুত।
২০. তাঁর পূর্ণ নাম হলো আবদুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে আহমাদ ইবনে আসবাগ আল-খাসআমি আস-সুহাইলী আল-আন্দালুসী আল-মালিকী,তিনি একজন ঐতিহাসিক,হাদীসবিদ,কুরআনের হাফেয,সাহিত্যিক,ব্যাকরণবিদ ও আভিধানিক ছিলেন,তবে তিনি অন্ধ ছিলেন। তিনি ইবনিল আরাবি মালিকী ও অন্যদের নিকট শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। তাঁর বিরল প্রতিভার খ্যাতি মরক্কো পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তাঁকে শিক্ষাদানের জন্য সেখানে আসতে আহ্বান জানানো হলে তিনি সেখানে হিজরত করেন এবং তারা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে।
২১. আর-রাওজুল আনিফ,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৩২৮।