۳۰ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱۱ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 19, 2024
ফাতেমা
ফাতেমা জাহরা (সা:)

হাওজা / ৩ জুমাদাস সানিয়া ১১ হিজরী আহলুল বাইতের (আ.) মশহূর ( প্রসিদ্ধ ) অভিমত অনুসারে এবং অন্য একটি বর্ণনা মতে ১১ হিজরী সালের ১৩ জুমাদাল উলা নবী দুহিতা হযরত ফাতিমা যাহরার ( আ.) শাহাদাত দিবস ।

মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান

পর্ব ৩- ৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) মহানবী ( সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন :

مَنْ مَاتَ وَ لَیْسَ عَلَیٰ إِمَامٍ فَمِیْتَتُهُ جَاهِلِیَّةٌ.

যে ব্যক্তি ইমামের ( আনুগত্যের ) ওপর মৃত্যু বরণ করবে না , তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু ( দ্র : ইতহাফ সাদাতিল মুত্তাকীন্ , ২য় খণ্ড , পৃ: ২৩০ ও ২৩১ ) ।

আর বিশ্বজগৎ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজ্জাত ( হিদায়তের ঐশী দলীল - প্রমাণ সহকারে দণ্ডায়মান ব্যক্তি অর্থাৎ ইমাম ) বিহীন বিদ্যমান ও টিকে থাকতে পারে না ।

হযরত আলী ( আ.) বলেন :

اَللّٰهُمَّ بَلَیٰ، لَا تَخْلُو الْأَرْضُ مِنْ قَائِمٍ لِلّٰهِ بِحُجَّةٍ إِمَّا ظَاهِرَاً وَ إِمَّا خَائِفَاً مَغْمُوْرَاً لِئَلَّا تَبْطُلَ حُجَجُ اللّٰهِ وَ بَیِّنَاتُهُ .

হে আল্লাহ ! হ্যাঁ , অবশ্যই নিখিল বিশ্ব মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজ্জাত ( হিদায়তের ঐশী দলীল- প্রমাণ সহ ) দণ্ডায়মান ব্যক্তি ( কায়েম অর্থাৎ ইমাম )বিহীন বিদ্যমান ও টিকে থাকতে পারে না । হতে পারে তিনি ( ইমাম ) প্রকাশ্যে বিদ্যমান ( যাহির ) ও প্রসিদ্ধ ( মশহূর ) নতুবা ভীত ও গোপন অর্থাৎ লোক চক্ষুর অন্তরালে ( গায়েব ) রয়েছেন যাতে করে যেন মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট ঐশী প্রমাণাদি ( হুজাজ ) বাতিল প্রতিপন্ন না হয় ।

ইবনে হাজার আসকালানী বলেন : শেষ যুগে অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার খুব কাছাকাছি সময়ে এ উম্মার এক ব্যক্তির ( ইমাম মাহদী ) পেছনে হযরত ঈসার ( আ.) নামায আদায় করার মধ্যে সৃষ্টি জগত মহান আল্লাহর পক্ষ হতে হুজ্জাত অর্থাৎ ঐশী দলীল - প্রমাণ সহকারে দণ্ডায়মান কায়েম ব্যক্তি ( মনোনীত ও নিযুক্ত ইমাম নেতা ) বিহীন বিদ্যমান ও টিকে থাকতে পারে না - এ সত্য কথার প্রমাণ মেলে [ দ্র : ফাতহুল বারী ফী শারহি সহীহিল্ বুখারী , খণ্ড : ৬ , পৃ : ৩৮৫ । ] এ হাদীসটি আহলুস সুন্নাহর অন্যান্য গ্রন্থ যেমন : আল্লামা ফাখরুদ্দীন রাযী প্রণীত আত্ - তাফসীর আল - কাবীর , খণ্ড : ২ , পৃ: ১৯২ ; শারহুল মাকাসিদ , খণ্ড : ৫ , পৃ : ৩৮৫ ; তারীখ-ই বাগদাদ , খ : ৬ , পৃ : ৩৮৯ ;

আল - ইকদুল ফরীদ্ , খ: ১, পৃ : ২৬৫ ; তদ্রুপ ইমামীয়াহদের বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন : আল - কাফী , খ: ১ , পৃ : ১৩৬ এবং কামালুদ্দীন ( ধর্মের পূর্ণতা ) , খ : ১ , পৃ : ২৮৭ তেও হাদীসটির উল্লেখ আছে । তাই এ হাদীসটি সকল ফির্কা ও মাযহাব নির্বিশেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে গৃহীত ও প্রতিষ্ঠিত হাদীস।]

[ দ্র : " যুগের ইমাম সংক্রান্ত হাদীসের ওপর একটি পর্যালোচনা " , প্রত্যাশা ( একটি মানব উন্নয়ন বিষয়ক ত্রৈমাসিক ), বর্ষ ১ , সংখ্যা ৪, জানুয়ারি - মার্চ , ২০১১ , পৃ : ৮২-৯৪ ]

হযরত ফাতিমা ( আ .) হযরত আবূ বকরকে মহানবীর ( সা.) খলীফা , যুগের ইমাম ও উলিল আমরের ( মুসলিম উম্মাহর কর্তৃত্ব শীল শাসকগণ ) অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেন নি এবং বাইআত করেন নি । আর বাইআত না করেই তিনি ( আ.) মৃত্যু বরণ করেন । তাহলে প্রশ্ন : নাঊযু বিল্লাহ হযরত ফাতিমা ( আ.) কি জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করেছেন ?! তিনি যে বাইআত না করেই মৃত্যু বরণ করেছেন তার প্রমাণ হচ্ছে সহীহ বুখারীর ৪২৪০-৪২৪১ নং হাদীস । এতে বর্ণিত হয়েছে : " আর ঐ মাসগুলোতে ( যে মাসগুলোয় হযরত ফাতিমা জীবিত ছিলেন সে মাসগুলোতে ) তিনি ( আলী ) বাই'আতও করেন নি ..."

আর খলীফা আবূ বকরকে বাইআত না করে হযরত ফাতিমা (আ.) এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে অবশ্যই তিনি জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করেন নি । কারণ মহানবী (সা.) গাদীরে খুমে ১৮ যিল হজ্জ হযরত আলীকে ( আ ) মুসলিম উম্মাহর মওলা , ওয়ালী ( অভিভাবক , কর্তৃপক্ষ , শাসক ) , ইমাম ( নেতা ) ও হাদী ( পথ প্রদর্শক ) নিযুক্ত এবং তা ঘোষণা করেন এবং সবার কাছ থেকে হযরত আলীর ( আ ) বেলায়তের বাইআতও গ্রহণ করেছিলেন । তাই হযরত ফাতিমা ( আ ) হযরত আলীকেই ( আ.) রাসূলুল্লাহর ( সা.) খলীফা , উম্মাহর বৈধ কর্তৃত্ব শীল কর্তৃপক্ষ , শাসক , পথপ্রদর্শক ও যুগের ইমাম বলে জানতেন ও বিশ্বাস করতেন । আর হযরত ফাতিমার ( আ.) এ নীতি অবস্থান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে হযরত আবু বকর উপরি উল্লেখিত হাদীস সমূহে বর্ণিত যুগের ইমাম ছিলেন না যার আনুগত্য না করে মৃত্যু বরণ করলে মৃত্যু বরণকারীর মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু অর্থাৎ সে হবে জাহান্নামী । আর হযরত ফাতিমার বাইআত না করে মৃত্যু বরণ করা থেকে প্রমাণিত হয় যে হযরত আবূ বকরের খিলাফতের পক্ষে যে দলীল পেশ করা হয় অর্থাৎ উম্মাতের ইজমা ( ঐকমত্য ) সেটার কোনো মূল্য ও গুরুত্ব নেই । কারণ ঐ ইজমায় হযরত ফাতিমার মতো ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান ছিলেন না।

তাই খলীফা আবূ বকর ছিলেন পারস্যের কিসরা , রোমের কায়সার , দুনিয়াবী সম্রাট , সুলতান , রাজা - বাদশাহ এবং প্রেসিডেন্টের ( রাষ্ট্রপতি ) মতো নিছক জাগতিক ( দুনিয়াবী ) শাসন কর্তা মাত্র যার বাই'আত করা আর না করা এক সমান অর্থাৎ এর কোনো ধর্মীয় আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য নেই ! যেহেতু হযরত ফাতিমা (আ) জান্নাতের নারীদের নেত্রী সেহেতু তার বাই'আত না করে মৃত্যু বরণ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে হযরত আবু বকরের খিলাফত ছিল নিছক দুনিয়াবী ( সেক্যুলার ) শাসন যার সাথে দ্বীনের সম্পর্ক নেই । কারণ , হযরত আবূ বকরের খিলাফত ও শাসন যদি বৈধ ধর্মীয় শাসন হত তাহলে খাতূনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (আ) আবূ বকরকে বাইআত করেই মৃত্যু বরণ করতেন । আর যেখানে হযরত আলী হযরত ফাতিমার জীবদ্দশায় হযরত আবু বকরের বাইআত করেন নি সেখানে কিভাবে হযরত ফাতিমা (আ) আবূ বকরকে বাইআত করবেন এবং তাকে বৈধ খলীফা বলে স্বীকৃতি দেবেন ? এটা কস্মিনকালেও কি সম্ভব ? শুধু দুনিয়াবী মাল সম্পদের মোহে হযরত ফাতিমা এ ধরণের আচরণ করেন নি যদিও পিতা রাসূলুল্লাহর ( সা.) রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে পবিত্র কুরআন স্বীকৃত বৈধ মীরাস ও উত্তরাধিকারের ন্যায্য হক থেকে তাঁকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করার তীব্র প্রতিবাদও তিনি করেছিলেন এবং আবূ বকরের উক্তি: "আমরা নবী গণ কোনো উত্তরাধিকার রেখে যাই না । আমরা যা রেখে গেলাম তা সদকা ( দান ) ।" যা মহানবীর হাদীস বলে হযরত আবূ বকর আখ্যায়িত করেছেন অথচ তা হযরত ফাতিমা (আ) মেনে নেন নি অর্থাৎ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এ কারণে তিনি আবূ বকরের ওপর রাগান্বিত হন , তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তার সাথে কথা বলেন নি ।...চলবে...

تبصرہ ارسال

You are replying to: .