অনুবাদ : মোহাম্মাদ মুনীর হোসেইন খান
পর্ব ১- যদিও পবিত্র কুরআন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চিরন্তন মুজিযা এবং সব যুগে সকল প্রজন্মের জন্য তা নতুন, এতদসত্ত্বেও ইসলাম ধর্মের চির জীবন্ত মুজিযাসমূহের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে মহানবী (সা.) কর্তৃক বর্ণিত ঐ সব হাদীস ও রেওয়ায়াত (বর্ণনা) যা ইসলাম ধর্মের (প্রতিশ্রুত) পুনর্জাগরণ পর্যন্ত মানব জাতির ভবিষ্যৎ জীবন এবং ইসলাম ধর্মের ভবিষ্যৎ গতিধারা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। আর এটি হবে ঐ সময় যখন মহান আল্লাহ্ তাঁর ধর্মকে কাফির ও মুশরিকদের আশা-আকাঙক্ষার বিপরীতে পৃথিবীর সকল ধর্ম ও মতাদর্শের ওপর বিজয়ী করবেন।
ইসলাম ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বিজয়ের এ যুগই হচ্ছে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগ যা এ গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়। আর সাহাবী, তাবেয়ী ও সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহের রচয়িতাগণের মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর নিকট হতে বর্ণিত সুসংবাদ প্রদানকারী শত শত রেওয়ায়াতেও এ দুই যুগ ও মহাঘটনা (ইসলামের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাব) সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। আসলে এ দুই মহাঘটনার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই যদিও এ সব রেওয়ায়াতে (বর্ণনার ক্ষেত্রে) পদ্ধতিগত পার্থক্য বিদ্যমান। যদি আহ্লে বাইতের ইমামদের রেওয়ায়াতসমূহ এ সব রেওয়ায়াতের সাথে যোগ করা হয়, তাহলে এতদসংক্রান্ত রেওয়ায়াতসমূহের সংখ্যা ১০০০-এরও অধিক হবে। যদিও ইমামগণ তাঁদের হাদীসগুলো সবসময় মহানবী (সা.)-এর সাথে সম্পর্কিত করেননি, তবে তাঁরা অসংখ্যবার তাগিদ দিয়েছেন যে, তাঁরা যা বর্ণনা করেছেন তা তাঁদের পবিত্র পূর্বপুরুষগণ এবং তাঁদের শ্রদ্ধেয় প্রপিতামহ মহানবী (সা.) থেকেই তাঁরা লাভ করেছেন।
এ সব রেওয়ায়াতে আবির্ভাবের যুগে পৃথিবী, বিশেষ করে যে অঞ্চলে ইমাম মাহ্দী (আ.) আবির্ভূত হবেন সেই অঞ্চল, যেমন ইয়েমেন, হিজায, ইরান, ইরাক, শাম (সিরিয়া, লেবানন ও জর্দান), ফিলিস্তিন, মিসর ও মাগরিবের (মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও লিবিয়া) যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা ছোট-বড় অনেক ঘটনা এবং বহু ব্যক্তি ও স্থানের নামকে শামিল করে।
আমি অগণিত রেওয়ায়াত ও হাদীসের মধ্য থেকে এ সব রেওয়ায়াত ও হাদীস বাছাই করে যতটা সম্ভব সূক্ষ্ম ও স্পষ্ট করে এবং ধারাবাহিকতা সহকারে সাধারণ মুসলিম পাঠকবর্গের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
এ সব রেওয়ায়াত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে এ অধ্যায়ে এগুলোর একটি সার সংক্ষেপ উল্লেখ করব যাতে করে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব কালের একটি সাধারণ চিত্র বা ধারণা আমরা পেতে পারি। বেশ কিছু সংখ্যক রেওয়ায়াত ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রস্ত্ততি সম্পন্ন হওয়ার পরপরই পবিত্র মক্কা নগরী থেকে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের বিপ্লব ও আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।
এ সব রেওয়ায়াত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোমানদের (পাশ্চাত্য) সাথে তুর্কী এবং তাদের সমর্থকদের (রুশ) বাহ্যত একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সংঘটিত হবে- যা বিশ্বযুদ্ধে রূপান্তরিত হবে।
কিন্তু আঞ্চলিক পর্যায়ে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমর্থক দু’টি সরকার ও প্রশাসন ইরান ও ইয়েমেনে প্রতিষ্ঠিত হবে। মাহ্দী (আ.)-এর ইরানী সঙ্গী-সাথীরা তাঁর আবির্ভাবের বেশ কিছুকাল আগে নিজেদের জন্য একটি সরকার গঠন করে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। অবশেষে তারা ঐ যুদ্ধে বিজয়ী হবে।...চলবে...