মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান
পর্ব ৭- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ফাতিমা আমার ( দেহ বা অস্তিত্বের ) টুকরা বা অংশ ( অবিচ্ছেদ্য অংশ ) ; অতএব , যে তাঁকে রাগায় সে আমাকেই রাগায় ।
فَاطِمَةُ بِضْعَةٌ مِنِّيْ ، فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِيْ
( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহুল বুখারী , হাদীস নং ৩৭১৪ , পৃ : ৯১০ )
রাসূলুল্লাহ ( সা.) বলেছেন : ফাতিমা আমার ( দেহ বা অস্তিত্বের ) টুকরা বা অংশ ; অতএব , যে তাঁকে রাগায় সে আমাকেই রাগায় ।
فَاطِمَةُ بِضْعَةٌ مِنِّيْ فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِيْ
( দ্র: প্রাগুক্ত সহীহুল বুখারী , হাদীস নং ৩৭৬৭ , পৃ : ৯১৯ )
হযরত আলী ( আ.) বলেন : মহানবী ( সা.) হযরত ফাতিমা কে ( আ.) বলেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন ।
إِنَّ اللٌٰهَ يَغْضَبُ لِغَضَبِكِ وَ يَرْضَىٰ لِرِضَاكِ .
( দ্র : উসদুল গাবাহ্ , খ : ৬ , পৃ: ২২৭ )
হযরত আলী (আ.) বলেছেন : রাসূলুল্লাহ ( সা.) হযরত ফাতিমাকে ( আ.) বললেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তোমার সন্তুষ্টিতে ( রিযা ) সন্তুষ্ট হন এবং তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন ।
إِنَّ اللّٰهَ يَغْضَبُ لِغَضَبِكِ وَ يَرْضَىٰ لِرِضَاكِ
( দ্র : তাহযীবুত্ তাহযীব্ , খ : ১২ , পৃ : ৪৪১-৪৪২ )
তাব্রানী হাসান সনদ সহকারে হযরত আলী ( আ ) থেকে বর্ণনা করেছেন । হযরত আলী (আ.) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে (আ.) বললেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট এবং তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন ।
إِنَّ اللّٰهَ یَرْضَیٰ لِرِضَاکِ وَ یَغْضَبُ لِغَضَبِکِ.
আর এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে আমাদের সাইয়েদা ও মাওলাত্ হযরত ফাতিমা ( আ.) বিনতে রাসূলিল্লাহ্ ( সা .) স্বীয় পিতা রাসূলুল্লাহ ( সা .) এবং স্বামী আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীর ( আ.) পরে মহান আল্লাহর সকল সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ সর্বোত্তম সৃষ্টি। কারণ তিনি ( আ. ) রাসূলুল্লাহর দেহ সত্ত্বা ও অস্তিত্বের মূল সার বত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ । এ ছাড়াও তিনি ( আ.) আরও নানাবিধ কারণেও অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । আহলুস সুন্নাহর প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা আল-আলূসী আশ-শাফিঈ আল - বাগদাদী এ বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন : " আমি যে অভিমত পোষণ করি তা হল যে , মহানবীর ( সা.) অবিচ্ছেদ্য অংশ ( বিয্'আতু রাসূলিল্লাহ ِبِضْعَةُ رَسُوْل اللّٰه ) হওয়ার দিক থেকে বরং আরো নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে হযরত ফাতিমা বাতূল্ হচ্ছেন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । আর যে সকল রিওয়ায়তে কিছু দিক এবং কোন এক বিশেষ দৃষ্টি কোণ থেকে তাঁর ওপর অন্য কোনো নারীর শ্রেষ্ঠ হওয়া সম্ভবপর হওয়ার প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে সে সব রিওয়ায়তও সকল নারীর ওপর তাঁর ( ফাতিমা ) শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করতে ও বিঘ্ন ঘটাতে সক্ষম নয় এবং এভাবে ( এতদসংক্রান্ত ) সকল হাদীসের ( আসার ) মাঝে সমন্বয় সাধন ( জাম্') সম্ভব । আর এ বিষয়টি এমনকি হযরত মারিয়ামের নুবুওয়ত সংক্রান্ত অভিমতের বরাবরেও বৈধ ( অর্থাৎ এমনকি যদি হযরত মারয়ামকে নবীয়াহ্ বা নারী নবীও বলা হয় তবুও সকল নারী এমনকি হযরত মারয়ামের চেয়েও হযরত ফাতিমা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হবেন ) । কারণ , (হযরত ফাতিমার ) অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া অর্থাৎ বিয্'ঈয়াহ্ ( اَلْبِضْعِيَّةُ ) [মহানবীর (সা) বা মুহাম্মাদী ] অস্তিত্বের মূল সারবত্তা ও নির্যাস ( রূহ ) এবং প্রত্যেক অস্তিত্ববান সৃষ্টির নেতা স্বরূপ [ অর্থাৎ যেহেতু ফাতিমা (আ.) হাকীকাত ও অজূদে মুহাম্মাদীর মূল নির্যাস ও সারবত্তা ( রূহ ) স্বরূপ সেহেতু তিনি প্রতিটি অস্তিত্ববান সত্ত্বারও নেত্রী ] । আর আমি মনে করি না যে জগতের কোনো কিছুই হযরত ফাতিমা যাহরার (আ ) এ বৈশিষ্ট্য ( মুহাম্মদী হাকীকত ও অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার বিষয়টি ) মোকাবেলা করতে ও এর সমকক্ষ হতে সক্ষম ।
আর কোথায় সুরাইয়া তারকা যা ( মর্ত্যবাসীর ) হাতের নাগালের বাইরে ( পৃথিবীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে ) !!! । আর এখান থেকেই হযরত আয়েশার ওপর তাঁর (ফাতিমা) শ্রেষ্ঠত্ব মা'লূম ( স্পষ্ট বিদিত ) হয়ে যায় । " ( দ্র : আল - আলূসী আশ-শাফিঈ আল্ - বাগদাদী , আবুল ফাযল শিহাবুদ্দীন আস্- সাইয়েদ মাহমূদ্ , রূহুল মা'আলী ফী তাফসীরিল্ কুরআন ওয়াস সাব'ইল্ মাসানী , খ: ৩ , পৃ : ২০৬ , প্রকাশক : দার ইহয়াতিত তুরাস আল - আরাবী , মুআসসাতুত তারীখ আল্ - আরাবী , বৈরুত লেবানন , প্রথম সংস্করণ , সংস্করণকাল : ১৪২০ হি.)
বরং বলা যায় : আর এখান থেকেও একই ভাবে তাঁর মা উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা এবং ফের'আওন পত্নী হযরত আসিয়া বিনতে মুযাহিমের ওপর হযরত ফাতিমার শ্রেষ্ঠত্বও পুরোপুরি মা'লূম ( স্পষ্ট বিদিত ) হয়ে যায় ।
যখন হযরত ফাতিমার (আ) সন্তুষ্টি ও ক্রোধ মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি ও ক্রোধ তখন হযরত আবূ বকর হযরত ফাতিমাকে তাঁর বৈধ ন্যায্য উত্তরাধিকার থেকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করলে তিনি ( ফাতিমা ) আবূ বকরের ওপর রাগান্বিত ও ক্রুদ্ধ হন এবং তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেন । আর সেই সাথে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও হযরত আবুবকরের ওপর অসন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হয়েছেন । এ ক্ষেত্রে হযরত আবু বকর ও হযরত ফাতিমা উভয়েই যে সঠিক ( হক ) অথবা উভয়েই বেঠিক হবেন তা হতে পারে না । হয় ফাতিমা না হয় আবূ বকর সঠিক ও অপর ব্যক্তি বাতিল হবেনই । আর স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে হযরত ফাতিমা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত , মাসূম (নিষ্পাপ ) , বেহেশতের নারীদের নেত্রী , পবিত্র কুরআনের সাথে রয়েছে তাঁর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক । তাই তিনি (ফাতিমা) সত্যের মাপকাঠি এবং কোনো অবস্থায় তিনি বাতিল নীতি অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন না । অথচ হযরত আবূ বকরের এ সব ফযীলত নেই বিধায় তিনি সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন না । আর এ কারণেই হযরত ফাতিমার নীতি অবস্থানই কেবল সঠিক । আর এ কারণেই হযরত ফাতিমা (আ) ছিলেন পরম ( সবচেয়ে ) সত্যবাদিনী নারী।...চলবে...