হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমা সরকারগুলো সব সময় জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যস্ত ও সচেষ্ট । ঐ সব দেশে নাগরিক অধিকার সমূহের সুষ্ঠু সংরক্ষণ হয় ! কোনো স্বৈরাচার , অত্যাচার ও নির্যাতন নেই । সংখ্যা লঘুরা নিগৃহীত নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হয় না ।
এ ধরণের নানা স্তুতি বাক্য আওড়িয়ে থাকে এ সব পশ্চিমা ভক্ত । এদের মতে কানাডা , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , স্ক্যান্ডিনাভিয়ান ( Scandinavian ) দেশ সমূহ আদর্শ জনকল্যাণমূলক দেশ ও রাষ্ট্রের উৎকৃষ্ট নমুনা ও উদাহরণ । কারণ এ সব দেশ এক দিকে যেমন শিল্পোন্নত , ধনী ও সম্পদশালী ঠিক তেমনি এ সব দেশ সকল ধরণের দুর্নীতি ( corruption ) থেকে মুক্ত ও স্বচ্ছ হওয়া এবং সকল ধরনের নাগরিক অধিকার , সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কারণে যেন ধরার বুকে স্বর্গ রাজ্য ( বেহেশতে বারীন বার রূয়ে যামীন ) !!
অথচ কানাডা যা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী , সম্পদশালী ও উন্নত দেশগুলোর একটি সে দেশের সংখ্যালঘু আদিবাসীদের কি করুণ দশা ! বিশ্বে পানীয় জলের সর্ববৃহৎ রিজার্ভ রয়েছে এ দেশটিতে । কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস যে দেশটির আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিশুদ্ধ নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত বহু দশক ধরেই ! নিরাপদ পানি সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার সকল মানুষের বৈধ ন্যায্য অধিকার । কিন্তু সংখ্যালঘু এ সব আদিবাসী জনগোষ্ঠী কানাডার মতো সভ্য , উন্নত , ধনী সম্পদশালী দেশের নাগরিক হয়েও এ অধিকার থেকে বঞ্চিত । এ দেশের সরকার ইচ্ছা করেই এদেরকে বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত রাখছে বহু দশক ধরে ।
কানাডার মতো দেশের জন্য এ অবস্থা সত্যিই লজ্জাকর এবং অত্যন্ত নিন্দনীয় ! তাহলে কোথায় গেল নাগরিক অধিকার , সুযোগ-সুবিধা , জনকল্যাণ ও জনস্বার্থ সংরক্ষণ যা পাশ্চাত্য পূজারীরা অহরহ বলে বেড়ায় ? স্ক্যান্ডিনাভিয়ান দেশ ফিনল্যান্ডেও আদিবাসী অঞ্চলে গ্যাস ও তেল উত্তোলনের ফলে মারাত্মক প্রাকৃতিক দূষণের শিকার ও অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা কানাডার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো নিরাপদ বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত ।
একটি কানাডীয় তেল - গ্যাস অনুসন্ধান কারী কোম্পানি বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে এক মহা পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়েছিল গত শতাব্দীর নব্বই এর দশকে । এ সব পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাজই হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশের অনিষ্ঠ , ক্ষতি ও ধ্বংস সাধন । এরা তথাকথিত শিল্পায়ন এবং কাঁচামাল ও খনিজ সম্পদ আহরণের নামে সমগ্র বিশ্বকে বিষাক্ত ও বসবাসের অনুপযোগী ও অনুপযুক্ত করে তুলছে যারফলে মানব জাতি সহ পৃথিবীর তাবৎ জীবজগৎ ( উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ ) মহা বিলুপ্তির পানে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে । প্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিভেন হকিংসের মতে মানুষ বা মানব জাতি পরিবেশ দূষণের মতো বিভিন্ন ধরণের দুষ্কর্মের জন্য আগামী ১০০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে !!! কী সাংঘাতিক কথা !!! পৃথিবীর পানীয় জল বা পানি সম্পদ ( পানির অপর নাম জীবন ) , মাটি ও বাতাস যদি শিল্পোন্নত পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বল্গাহীন লাগামহীন ও অনিয়ন্ত্রিত মাত্রাতিরিক্ত শিল্পায়নের কারণে দূষিত ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায় তাহলে মানব জাতি বিলুপ্ত হবেই । ৩০০ বছর আগে এই শিল্প বিপ্লব ও শিল্পায়নের শুভ বা অশুভ যাত্রা শুরু হয় ইংল্যান্ড ও ইউরোপ থেকে এবং তা কালক্রমে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । সবাই বিশেষ করে ইউরোপ এ শিল্পায়নের মজা , স্বাদ ও সুবিধা ভোগে বিভোর থাকায় এর যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে ব্যাপারে সব সময় অমনোযোগী থেকেছে ও থাকছেই বা তা ইচ্ছা করে উপেক্ষা করছে ।
কানাডার আদিবাসী জনগোষ্ঠী কে নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত রাখার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিষাক্ত ও দূষিত পানি ব্যবহার করে তারা যেন বিভিন্ন রোগের শিকার হয়ে ধ্বংস ও বিলুপ্ত হয়ে যায় । কারণ কানাডা সরকারের প্রযুক্তি ও টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই । তাহলে কেন আদিবাসী জনগোষ্ঠী কে নিরাপদ বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত রেখেছে কানাডা সরকার এমনকি এ সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েও ? এখন পাশ্চাত্য প্রেমিক ও পূজারীরা কি এরপরও বলবে : " ((পাশ্চাত্যে জনস্বার্থ ও অধিকারের সুষ্ঠু সংরক্ষণ হয় । কানাডা বা পশ্চিমা দেশগুলো হচ্ছে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র , সেখানে জনগণ নির্যাতিত হয়না । সেখানে গঞ্জনা বঞ্চনা নেই , শোষণ বৈষম্য হত্যা জেল জুলুম নির্যাতন নেই । )) " কারণ গত তিন দশকে কানাডা সরকার হাজার হাজার আদিবাসী নারী ও শিশু মেয়েকে অপহরণ করে গুম করেছে যাদের হদিস আজ ও জানা ও পাওয়া যায় নি !
এ ছাড়া সভ্য কানাডার বিদ্যালয় গুলো হাজার হাজার আদিবাসী শিশুর জন্য বিদ্যাপীঠ না হয়ে বধ্যভূমি , মৃত্যুপুরী ও যমালয়ে পরিণত হয়েছিল যার প্রমাণ গত বছরের মে মাস থেকে এই গতকাল ( ২৬/১/২০২২ ) পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে নিহত আদিবাসী স্কুল শিক্ষার্থী ছাত্র ছাত্রীদের শত শত গোপন গণ কবরের আবিস্কার । আবার কানাডার মতো এ সব পশ্চিমা ও প্রাচ্য দেশে আমাদের দেশের মত দেশসমূহের দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তিরা কালো টাকা ও অবৈধ অর্থ সম্পদ পাচার করছে কিভাবে ? যদি ঐ সব পশ্চিমা ও প্রাচ্য দেশের সরকার ও কর্মকর্তা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থ সম্পদ যে কিভাবে পাচার হয়ে আসছে তাদের দেশে আসছে সে ব্যাপারে অবহিত নয় ? এটা কি সম্ভব ? কানাডার বেগম পাড়ার কথা কে না জানে ? আর এই বেগম পাড়ার অস্তিত্বই জানান দিচ্ছে যে কানাডা ও পশ্চিমা দেশগুলো কী পরিমাণ দুর্নীতি পরায়ণ ও দুর্নীতি গ্রস্ত !! আর কানাডার বেগম পাড়ার মতো আরো আরো বেগম পাড়া ভিন্ন ভিন্ন নামে ও রূপে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে পাওয়া যাবে । বিশ্বে মানি লন্ডারিং ও অর্থ পাচারের রাজধানী হিসেবে লন্ডনের খ্যাতি রয়েছে । আর সুইস ব্যাংক গুলোতো বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি বাজ কর্মকর্তা , ব্যবসায়ী ও স্বৈরাচারী শোষক শাসকদের অবৈধ অর্থ সম্পদ জমা নেওয়ার জন্য বহু আগে থেকেই বিখ্যাত । পাশ্চাত্যের বড় বড় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী মনি লন্ডারিং প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত । তাই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শ্বেতশুভ্র সাধু ভদ্র চেহারার অন্তরালে কালো কুৎসিত ভয়ঙ্কর অভদ্র চেহারাটা আজ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে !
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান