۲۵ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۶ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 14, 2024
ইমাম বাকের (আ:)
ইমাম বাকের (আ:)

হাওজা / রাসূলে কারিমের পবিত্র আহলে বাইতের মহান ইমাম হযরত বাকের (আ:) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো প্রাণঢালা অভিনন্দন ও মোবারকবাদ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ২- জ্ঞান ও বিজ্ঞানের উন্নতি এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যে ইমাম বাকের (আ:) শিক্ষা ও সংস্কৃতির বহু কেন্দ্র স্থাপন করেন। তাঁর পরে তাঁরি উত্তরসূরি স্বীয় সন্তান ইমাম সাদেক (আ:) বিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

হিজরী প্রথম শতাব্দির শেষের দিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইমাম বাকের (আ:) এর চেষ্টা-প্রচেষ্টা সত্যিকার অর্থেই জনগণের মাঝে ইসলামী চিন্তা ও মূল্যবোধের প্রাণ সঞ্চারের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। জাবের ইবনে ইয়াযিদ যোড়ফি ইমাম বাকের (আ:) এর একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি ইমামের কাছ থেকে অন্তত সত্তুর হাজার হাদিস বর্ণনা করেছেন। জাবের বলেছেন-আঠারো বছর ইমাম বাকের (আ:) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। যখন তাঁর কাছ থেকে চলে আসতে চেয়েছি,তাঁকে বলেছি, হে রাসূলের সন্তান! আমাকে জ্ঞানে পরিতৃপ্ত করুন! ইমাম বাকের (আ:) বললেন-'হে জাবের! আঠারো বছর পরও কি তুমি জ্ঞানে পরিতৃপ্ত হও নি? বললাম-আপনি হলেন অসীম এক ঝর্ণাধারা, এই ঝর্ণাধারার তো শেষ নেই।'

ইমাম বাকের (আ:) এর অস্তিত্ব ঝর্ণার জলের মতো ইসলামী চিন্তাবিদদের এমনকি ধর্মের অনুসারীদেরও আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মেটাতো। জ্ঞানের ভাণ্ডার হবার কারণে বহু অজানা বিষয়ে জানার জন্যে ইমামের কাছে ভিড় করতো জ্ঞান অন্বেষীগণ। যারা তাঁর কাছে আসতো তারা ইমামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলো। মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনে হাজার হিসামি ইমাম বাকের (আ:) এর জ্ঞান,চরিত্র , অন্তরের পবিত্রতা এবং আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগির ক্ষেত্রে তাঁর একাগ্রতার উল্লেখ করে বলেন- তিনি যতোটা উচ্চ মর্যাদার ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাঁর সেই ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করা এবং তাঁর প্রশংসা করার যোগ্যতা অনেকেরই নেই।

অত্যাচারী এবং তাদের অনুসারীদের প্রসঙ্গে ইমামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী ছিল এ রকম-জুলুম-নির্যাতনকারী নেতৃবৃন্দ এবং তাদের অনুসারীরা আল্লাহর দ্বীনের বাইরে অবস্থান করে।

ইমাম বাকের (আ:) এর জীবনের শেষ এগারোটি বছরে উমাইয়া শাসক হিশাম বিন আব্দুল মালেকের শাসন চলছিল। হিশাম ছিল বখিল,রূঢ় এবং নির্যাতনকারী শাসক। তার শাসনকালে মানুষের জীবন একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। সেজন্যে জনগণ আগের তুলনায় আরো বেশি ইমামের শরণাপন্ন হতে লাগলো। হিশাম এমনিতেই ইমামের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে সবসময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতো। তাই চেষ্টা করতো তাঁর আধ্যাত্মিক প্রভাব বিস্তারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে। একবার হজ্জ্বের সময় ইমাম বাকের (আ:) এবং তাঁর সন্তান ইমাম সাদেক (আ:) এর প্রতি জনগণের ব্যাপক আকর্ষণ ও শ্রদ্ধাবোধ দেখে হিশাম উদ্বিগ্ন ও রুষ্ট হয়ে পড়ে। তাই হজ্জ্ব থেকে ফেরার পর তাঁদের দু'জনকেই মদীনা থেকে সিরিয়ায় তলব করা হয়। কিন্তু এই ঘটনায় জনগণের কাছে তাঁদের জনপ্রিয়তা তো কমেই নি বরং মুসলমানদের মাঝে বিশেষ করে সিরিয়াবাসীদের কাছে নবীজীর সন্তান হিসেবে তাঁদের পরিচিতি আরো বৃদ্ধি পায়। উপায়ন্তর না দেখে হিশাম তাঁদেরকে পুনরায় মদীনায় ফেরৎ পাঠায়।

ইমাম বাকের (আ:) ছিলেন একজন দানবীর ও পরোপকারী। তিনি নিজের জমিজমাতে নিজেই চাষবাস করতেন এবং উৎপাদিত পণ্য সামগ্রি দিয়ে গরীবদের সাহায্য করতেন। আসওয়াদ ইবনে কাসির নামে এক ব্যক্তি বলেছেন-আমি আমার অভাব-অনটন এবং আমার ভাইয়ের নির্দয়তার কথা ইমামকে জানাই। ইমাম তখন বলেন-সক্ষমতা এবং ধন-সম্পদ থাকাকালে যে তোমার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রাখে অথচ অভাব-অনটনের সময় তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়,এই ভ্রাতৃত্ব একেবারেই হীন ও মন্দ। এটা বলে তিনি আমাকে সাতশ দিরহাম দেওয়ার আদেশ দিয়ে বললেন-এটা তুমি খরচ করো এবং যখনি প্রয়োজন পড়বে আমাকে তোমার অবস্থা সম্পর্কে জানাবে।

আজকের আলোচনা শেষ করার আগে ইমামের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাণীর উদ্ধৃতি দিচ্ছি।

ইমাম বাকের (আ:) বলেছেন, সর্বোৎকৃষ্ট পুঁজি হলো আল্লাহর ওপর বিশ্বাস।

তিনি আরো বলেছেন,সর্বোৎকৃষ্ট পূর্ণতা হলো দ্বীন সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া,দুঃসময়ে ধৈর্য ধারণ করা এবং জীবন যাপনে শৃঙ্খলা বিধান করা।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .