অনুবাদক: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
মহানবী ( সা:) এবং তাঁর আহলুল বাইতের ( আ:) ইমামদের ( আ:) হাদীসসমূহে নিরাপত্তার গুরুত্বের উপর জোরালো তাগিদ দেয়া হয়েছে ।
مقوله امنیت و اهمیت آن در احادیث امامان معصوم(ع) فراوان مورد تأکید قرار گرفته است.
از دیدگاه پیامبر(ص) امنیت یکی از چهار نعمتی است که با آن نعمتهای الهی، کامل میشود.
মহানবীর ( সা:) দৃষ্টিতে নিরাপত্তা হচ্ছে ঐ চার নেয়ামতের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে মহান আল্লাহর নেয়ামত সমূহ পূর্ণতা লাভ করে ।
মহানবী ( সা:) বলেন :
কোনো ব্যক্তি যদি তার দিন রাত অতিবাহিত করে এমন অবস্থায় যে সে তিন বিষয়ের অধিকারী , তাহলে সে হবে যাবতীয় পার্থিব ( দুনিয়াবী ) নেয়ামতেরই অধিকারী : ( আর উক্ত তিন নেয়ামত হচ্ছে ) যে সে তার সকাল ও সন্ধ্যা ( দিন ও রাত ) সুস্থাবস্থায় এবং নিরাপদ ভাবে দুশ্চিন্তা ছাড়াই অতিবাহিত করে এবং দৈনিক খাদ্য ও খাবারও তার কাছে মজুদ ও বিদ্যমান আছে । আর সে যদি ( এ তিন নেয়ামতের সাথে ) ৪র্থ নেয়ামতটিও লাভ করে তাহলে তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের সকল নেয়ামতই পূর্ণ হয়ে যাবে । আর এই ৪র্থ নেয়ামতটি হচ্ছে দ্বীন -ই ইসলাম ( ইসলাম ধর্ম ) । ( দ্র : আল - কাফী , খ: ৮ , পৃ : ১৪৮ , হাদীস নং ১২৭ )
ایشان میفرماید: هر کس شب و روز خود را سپری کند و از سه چیز، برخوردار باشد، نعمت دنیا را کامل دارد: کسی که بام و شامش را در تندرستی و امنیت و آسایش خاطر بگذراند و خوراک روزانه خود را داشته باشد. حال اگر چهارمین نعمت را هم داشته باشد، نعمت دنیا و آخرت بر او کامل شده است و آن نعمت، اسلام
است. (الکافی: ج 8 ص 148 ح 127).
হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা:) দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার গুরুত্ব কেউ জানে না ( বা সঠিক উপলব্ধি করে না ) । তিনি ( সা:) বলেন :
দুটো নেয়ামত আছে যেগুলোর গুরুত্ব অস্বীকৃত ও অজানাই থেকে যায় : ১. নিরাপত্তা এবং ২. স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ( রোগ থেকে মুক্ত থাকা এবং রোগাক্রান্ত হলে আরোগ্য ও শিফা লাভ করা ) ।
( দ্র : আল - খিসাল : ১৫ , হাদীস নং ৫ ; বিহারুল আনওয়ার :খ:৮১, পৃ:১৭০, হাদীস নং ১ )
از نظر پیامبر(ص) قدر عافیت و
امنیت را کسی نمیداند. ایشان میفرماید: نِعمَتانِ مَكفورَتان؛ الأَمنُ وَالعافِيَهًُْ؛ دو نعمت قدرشان ناشناخته است: امنيّت و سلامت.( الخصال:ص۳۴ ح۵، بحار الأنوار: ج ۸۱ ص ۱۷۰ ح۱.)
মহানবীর ( সা:) এ দুই হাদীসের গুরুত্ব কি আমরা মুসলিম উম্মাহ যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরেছি ? স্বাস্থ্য , নিরাপত্তা ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ( খাদ্যাভাব না থাকা ) এমন তিনটি বিষয় যা পার্থিব জাগতিক ( দুনিয়াবি ) সকল সুখ ও নেয়ামতের মূল । এ তিন নেয়ামত না থাকার অর্থ হচ্ছে এ জগতে মানুষের কোনো কিছুই নেই ; তাঁর কোনো সুখ স্বাচ্ছন্দই নেই । সে তখন প্রকৃতার্থে ফকীর দরিদ্র কপর্দকহীন অর্থাৎ অভাবী বলেই গণ্য হবে । আবার এ তিন বিষয় যে কোনো কল্যাণ কামী রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার ভিতমূলও বটে । আসলে সমাজনীতি , রাষ্ট্রনীতি , রাজনীতি , প্রশাসন , অর্থনীতি , সমরনীতি সব কিছুই এ তিন বিষয় কেন্দ্রিক । ব্যক্তি , পরিবার ও সমাজের ভিতও হচ্ছে এ তিন জিনিস : স্বাস্থ্য ( রোগমুক্ত থাকা : আফিয়াত ও সালামত) , নিরাপত্তা ( মানুষের জান , মাল , ইজ্জত আব্রুর [ মান -সম্মান ] নিরাপত্তা ) এবং ( পর্যাপ্ত পরিমাণ ) খাদ্য । যদি এই তিনটির যে কোনো একটি বিদ্যমান না থাকে তাহলে পার্থিব জীবন জাহান্নামে পর্যবসিত হবেই । এই তিন নেয়ামতের সাথে ইসলাম যুক্ত হলে মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক নেয়ামত সমূহ পূর্ণ হয়ে যাবে । পাশ্চাত্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ এই তিন বিষয়ের কোনো একটিও ঠিক ভাবে বিদ্যমান নেই । করোনা ভাইরাস ও এর আগে প্রকাশিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিভ্রাট প্রমাণ করে পাশ্চাত্য বাসীদের স্বাস্থ্যহীনতার বিষয় । আর নিরাপত্তা সেটাও সুদূর পরাহত । খাদ্যাভাব : পাশ্চাত্য সমাজের এক বিরাট অংশ ঠিক মতো খাবার ও পুষ্টি পাচ্ছে না । ফুড স্ট্যাম্প ও লংগর খানার উপর অনেকেই সেখানে নির্ভর শীল । অনেকে অভুক্তও থাকছে সেখানে । তাই সত্যিকার অর্থে এ তিন নেয়ামত সেখানে অনুপস্থিত । বাদ বাকি বিশ্বের অবস্থা আর উল্লেখ করাই নিষ্প্রয়োজন । কেবল গুটিকতক স্ক্যান্ডিনাভিয়ান ( Scandinavian ) দেশে - আর এ সব স্ক্যান্ডিনাভিয়ান দেশের লোক সংখ্যাও খুব কম - এ তিন বিষয়ে তুলনামূলক কিছু কাজ করা হয়েছে বলে এ দেশগুলোর অবস্থা অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে ভালো । তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কতকাল ঐ সব দেশের অবস্থা ঠিক থাকবে সেটাও দেখার বিষয় । তাই যে দেশে জনগণের জন্য এ তিন বিষয় : নিরাপত্তা , স্বাস্থ্য ও খাদ্য বিদ্যমান সে দেশের জনগণের জন্য যাবতীয় পার্থিব নেয়ামতই পূর্ণ হয়েছে ।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সা:) ছিলেন জামিউল কালিম ( জামিউল কালিম : ঐ ব্যক্তি যার কথা ও বাণী এতটা পূর্ণাঙ্গ ও তাৎপর্যপূর্ণ যে কেউ কোনো আপত্তি ও অজুহাত তো পেশ করতেই পারে না বরং তা মেনে নিতে বাধ্য হয় )। তাই তাঁর এ বাণী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ , ছোট অথচ গভীর সারবত্তা ও তাৎপর্যপূর্ণ এ বাণীতে আসলে সফল ও সার্থক সরকার ও প্রশাসন ( হুসনে মুদীরীয়াত ও হুকূমতদারী ) অর্থাৎ সুশাসনের প্রকৃত ও মৌলিক বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে । কারণ সুশাসন ও ভালো যোগ্য প্রজা বৎস্যল সরকারের অধীনে জনগণ ও প্রজাকুলের নিরাপত্তা , স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুনিশ্চিত হয় । আর বুদ্ধি বৃত্তিক ভাবে এবং সামাজিক ও লৌকিক অভিজ্ঞতার আলোকেও ( আক্বলী ,উরফী ও উকালাঈ عقلي ، عرفي و عقلائي ) প্রমাণিত যে এ তিন বিষয়ের সমাহারে পার্থিব দুনিয়াবী জীবনের যাবতীয় সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও নেয়ামত পূর্ণতা লাভ করে । মহানবীর ( সা.) মতো কেউ কি সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ ভাবে বলতে পেরেছে : জনকল্যাণমূলক সরকার ও প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য কী ?!! আর এ তিন বৈশিষ্ট্য নিঃসন্দেহে একটি প্রগতিশীল সমাজেরও পরিচায়ক ।
আজ পর্যন্ত দুনিয়ার কোনো ইজম ও মতবাদ এত সুন্দর , চমৎকার ও সার্থক ভাবে অল্প কথায় এবং সবার বোধগম্য সরল ভাষায় একটি আদর্শ সরকার ও প্রশাসন এবং প্রগতিশীল সমাজের চিত্র ও স্বরূপ উপস্থাপন করতে পারে নি ।
গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানিতে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ গুলোর প্ররোচনায় ইউক্রেন ন্যাটো জোট ভুক্ত হওয়ার পায়তারা করতে থাকলে নিজ সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণে নিরাপত্তাহীনতার আশংকা বোধ করে
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার তীব্র মতবিরোধ কে কেন্দ্র করে রাশিয়া ইউক্রেনে গত পাঁচ দিন ধরে বিশেষ সামরিক ব্যবস্থার অধীনে অনুপ্রবেশ করলে পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ , অশান্তি অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ ও অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে । আর এ অবস্থা ইউরোপের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে ।
গত দু বছরের অধিক কাল ধরে বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো ইউরোপের জন স্বাস্থ্য , নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয় । আর এর সাথে যুক্ত হলো রাশিয়া ইউক্রেন সামরিক সংঘর্ষ ও বিরোধ যা ইউরোপে যুদ্ধ ও সামরিক সংঘর্ষের অশুভ ছায়া বিস্তার করেছে এবং সামনে পরিস্থিতির আরো অবনতি ও ঘোলাটে অবস্থা হতে পারে । রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ( ৩৩•৩৩৩% ) খাদ্য ও শস্যের যোগানদাতা । এখন ইউক্রেনে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পশ্চিমা দেশুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করছে এবং সামনে এ অবরোধের পরিধি আরো বাড়ানো হলে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য ঘাটতি কিভাবে পূরণ করা যাবে । আর এরফলে সমগ্র বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের উদ্ভব হতে পারে । তাহলে সামনে কি বিশ্ববাসীর জন্য ব্যাপক খাদ্য সংকট , অনিশ্চয়তা ও খাদ্য সংক্রান্ত নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হবে এবং করোনা থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলোকে কি আরো অধিক তীব্র করে দিতে পারে ?
তাহলে কোথায় রইল স্বাস্থ্য ( সুস্থতা ) , নিরাপত্তা ও খাদ্যের নিশ্চয়তা!
যেখানে সবার উচিত মানবজাতির জন্য এ তিন বিষয় ( স্বাস্থ্য , নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য ) নিশ্চিত করা সেখানে বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলো নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এ তিন বিষয় তা হচ্ছে পার্থিব সকল নেয়ামত ও সুখ - স্বাচ্ছন্দ্যের মূল তা শেষ করে দিচ্ছে । আর বিশ্বের সকল বা অধিকাংশ সমস্যার মূলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদচারণা লক্ষ্য করা এবং এ পরাশক্তির পদচিহ্ন চোখে পড়ে । আর রাশিয়া - ইউক্রেন বিরোধ ও সংকটের মূলেও রয়েছে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা !
স্বাস্থ্য , খাদ্য ও নিরাপত্তার বহুত বড় কাঙ্গাল এ বিশ্ব । আর যদি বিশ্ববাসী খাঁটি ইসলাম অর্থাৎ পবিত্র কুরআন এবং হযরত রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ ) আদর্শের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তাহলে তাদের সকল পার্থিব ও পারলৌকিক নেয়ামত পূর্ণ হবে ।
৬ -৮ - ২০২১