۱۰ فروردین ۱۴۰۳ |۱۹ رمضان ۱۴۴۵ | Mar 29, 2024
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

হাওজা / হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা.) প্রথম সহধর্মিণী হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ ( আ.) এর শাহাদাত সম ওফাত দিবস ১০ রমযান ।

মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

(১০ রমযান ১৪৪৩ হি.)

পর্ব ১- হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা.) প্রথম সহধর্মিণী হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ ( আ.) এর শাহাদাত সম ওফাত দিবস ১০ রমযান । এ দিন হিজরতের তিন বছর আগে পবিত্র মক্কায় তিনি ( আ . ) মৃত্যু বরণ করেন । মহানবী ( সা .) ও বনি হাশিমের উপর কুরাইশ গোত্রের সার্বিক কঠিন অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধ আরোপ করলে শে'বে আবী তালিবে( আবূ তালিবের গিরি পথ ও উপত্যকা ) তিন বছরের অধিক কাল মহানবী (সা.) , হযরত আবূ তালিব , হযরত আলী (আ .) , হযরত খাদীজা ( আ. ) , হযরত ফাতিমা ( আ.) এবং বনী হাশিম এই শে'বে আবী তালিবে বহির্জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্তরিন ও অবরুদ্ধ জীবন যাপন করতে বাধ্য হন যা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টকর । এ ধরণের তীব্র কষ্টকর পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজার ( আ.) শারীরিক অবস্থার ভয়ানক অবনতি হয় এবং দীর্ঘ তিন বছরের অধিক কাল ধরে কুরাইশদের অবরোধের অবসান হওয়ার পরপর প্রথমে হযরত আবূ তালিব ( আ.) ও তারপরে হযরত খাদীজা (আ.) ইন্তেকাল করেন । এ দুই আপনজন যারা ছিলেন কুরাইশদের সকল অন্যায় , অত্যাচার , অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে মহানবীর ( সা.) একনিষ্ঠ সাহায্য কারী , আশ্রয়স্থল ও পৃষ্ঠপোষক তাদের মৃত্যুতে মহানবী (সা.) , হযরত ফাতিমা (আ.) , হযরত আলী (আ.) ও বনী হাশিম তীব্র শোকাকীভূত হন । আর সেজন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজার ওফাতের বছরের নামকরন করেছিলেন আমুল্ হুয্ন্ ( عام الحزن ) অর্থাৎ শোকের বছর । আর এ থেকে স্পষ্ট হয়ে মহানবীর ( সা.) কাছে ও ইসলামের ইতিহাসে এ দুই ব্যক্তির অপরিসীম গুরুত্ব , অবদান ও খেদমত । হযরত আবূ তালিব ( আ.) সবসময় মহানবীকে ( সা.) কুরাইশদের অনিষ্ট ও ক্ষতিসাধন থেকে রক্ষা করতেন । কুরাইশরা হযরত আবু তালিবের মৃত্যুর আগে মহানবীকে প্রকাশ্যে হত্যার করার উদ্যোগ নেয়ার সাহস করেনি যদিও শে'বে আবী তালিবে অবরুদ্ধ জীবন যাপনের সময় ও তার আগে বেশ কয়েক বার কুরাইশদের মহানবীকে ( সা.) গোপনে হত্যার ষড়যন্ত্র হযরত আবূ তালিব নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন । ঐ তিন বছরের অধিক কাল স্থায়ী শে'বে আবী তালিবে ( আবূ তালিবের গিরি পথ ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধে হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজা তাদের সমুদয় ধন -সম্পদ অবরুদ্ধদের সেবায় ব্যয় করেছিলেন । রিওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে :

وَ أَنْفَقَ أَبُوْ طَالِبٍ وَ خَدِیْجَةُ جَمِیْعَ مَالَیْهِمَا.

হযরত আবূ তালিব ( আ.) ও হযরত খাদীজা ( আ. ) ( ইসলাম এবং অবরুদ্ধদের জন্য ) তাদের সমুদয় সম্পদ ব্যয় করেন । আর এর ফলে হযরত খাদীজার সকল ধন সম্পদ শেষ হয়ে যায় । তিনি ( আ.) বলেছেন : আমার দুটো চামড়ার শিট বা টুকরা ছাড়া আর কিছুই বিদ্যমান ছিল না ; ঐ দুটো চামড়ার টুকরার একটি বিশ্রামের সময় বিছানার চাদর (হিসাবে) এবং অন্যটি কম্বল ( গায়ের চাদর ) হিসাবে আমি ব্যবহার করতাম ।

আলীর তরবারি ও খাদীজার ধন সম্পদ ব্যতীত ইসলাম কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করত না । ( দ্র : সুলাইমানী কিত্তানী , ফাতিমাতুয যাহরা ওয়াতারুন ফী মুহাম্মাদ, পৃ : ১১২ )।

হযরত খাদীজার অধিকাংশ ধন সম্পদ এই তিন চার বছরের অবরোধে ব্যয় ও শেষ হয়ে যায় । কারণ বনী হাশিম ও মহানবীর শেবে আবী তালিবে অবরুদ্ধ থাকা কালে হযরত খাদীজার জামাতা ( তাঁর মেয়ের স্বামী ) আবূল আস ইবনে রবী উট বোঝাই গম ও খেজুর নিয়ে ঐ উপত্যকায় নিয়ে যেতেন এবং অনেক কষ্ট করে ও বিপদের ঝুঁকি নিয়ে খাদ্য অভুক্ত বনী হাশিমের কাছে পৌঁছে দিতেন কুরাইশ কাফির মুশরিকদের অবরোধের কারণে যারা ছিলেন তীব্র খাদ্য সংকটে । এ তিন বছরের অধিক অবরোধ কালে বনী হাশিমের খাদ্য খাবারের ব্যবস্থা করা হত হযরত খাদীজার ধন সম্পদ থেকে । ( দ্র : রায়াহীনুশ শরীআহ , পৃ : ২১১ ) । হযরত খাদীজা ( আ .) এ সময় অপার ত্যাগ তীতিক্ষা প্রদর্শন ( ঈসার ) করেছেন এবং নিজের সমুদয় ধন সম্পদ হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা .) এবং বনী হাশিম যারা ছিলেন মহানবীর ( সা.) হিফাযত কারী তাদের জীবন প্রাণ রক্ষা করেছেন । আর ঠিক একই ভাবে হযরত যুদ্ধের ময়দানে আলীর ( আ.) অতূলনীয় বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ইসলামের প্রসার ও বিস্তৃতির ক্ষেত্রে অনবদ্য অতূলনীয় সমকক্ষহীন ভূমিকা পালন করেছিল । আর এ ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা.) যথার্থ বলেছেন :

ضَرْبَةُ عَلِيٍّ یَوْمَ الْخَنْدَقِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ الثَّقَلَیْنِ .

খন্দকের দিবসে আলীর তরবারির আঘাতটি সাক্বালাইনের ( গোটা জ্বিন ও মানব জাতি ) ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । ( দ্র : ইহকাকুল হক , খ : ৬ , পৃ : ৫৪ ও ৫৫ এবং হযরত খাদীজা ত্যাগ তীতিক্ষা ও প্রতিরোধের মূর্ত প্রতীক , পৃ : ১৭৫ )

উল্লেখ্য যে , খন্দকের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে জঙ্গে আহযাব ( গাযওয়াতুল আহযাব ) বা দলসমূহের যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ । এ যুদ্ধে আরবের সকল কাফির ও মুশরিক গোত্র ও দল ইসলাম , মহানবী ( সা.) এবং মুসলমানদের চূড়ান্ত ধ্বংসের লক্ষ্যে ১০,০০০ যোদ্ধার সম্মিলিত এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করে পবিত্র মদীনা নগরী অবরোধ করে । এ যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ , মুশরিক কাফিররা যদি এ যুদ্ধে সফল হত তাহলে ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিস্তই বিলুপ্ত হয়ে যেত। আমর ইবনে আব্দে ওয়ুদ্দ্ ছিল সম্মিলিত কাফির মুশরিক সেনাবাহিনীর সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা যে একাই সহস্র বীর যোদ্ধা সম বীর বলে খ্যাতি লাভ করেছিল । এই যোদ্ধা মুসলমানদের প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল করে তাদের মনে ভয়ভীতিবোধ সঞ্চার করার জন্য আস্ফালন ও দ্বৈত যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ করতে থাকলে কেবল হযরত আলীই ( আ .) তাঁর সাথে দ্বৈত যুদ্ধে

সাড়া দেন এবং তরবারির এক আঘাতে তাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে ফেললে মহানবী ( সা.) প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক এ উক্তিটি করেছিলেন :

ضَرْبَةُ عَلِيٍّ یَوْمَ الْخَنْدَقِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ الثَّقَلَیْنِ .

" খন্দকের দিবসে আলীর তরবারির আঘাতটি সাক্বালাইনের ( গোটা জ্বিন ও মানব জাতি ) ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । "

এ ছাড়া ইসলামের ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ সমূহে নি:সন্দেহে হযরত আলীর ( আ.) ভূমিকা ছিল ভাগ্য নির্ধারণী ।

আর হযরত খাদীজা ( আ.) সবসময় বিশেষ করে সবচেয়ে বিপদসংকুল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছিলেন মহানবীর ( সা.) খাঁটি নিবেদিত সঙ্গী , পরামর্শ দাতা ও সহচর । ইসলাম প্রচার করার জন্য শত্রুদের প্রতিনিয়ত সকল যাতনা ও দুর্ব্যবহার মুখে রাসূলুল্লাহ ( সা.) যখন বাসায় ফিরে আসতেন তখন হযরত খাদীজার সান্নিধ্য ও তাঁর ভালোবাসা ও মায়ামমতাপূর্ণ স্নিগ্ধ ব্যবহারে তাঁর ( সা.) সকল দু:খ কষ্ট ও বেদনা দূর হয়ে যেত এবং তিনি ( সা.) হযরত খাদীজার সান্নিধ্যে অনাবিল স্বর্গীয় আনন্দ ও শান্তি লাভ করতেন । এই বিপদসংকুল ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহকে ( সা.) হযরত খাদীজার মতো এমন উপযুক্ত পূণ্যবতী সহধর্মিণী ও স্ত্রী দান করেছিলেন । হযরত খাদীজা ( আ.) তাঁর সকল ধন - সম্পদ ও সম্পত্তি ইসলাম প্রচারের জন্য মহানবীর ( সা. ) খেদমতে উৎসর্গ করেন । আর এ কারণেই বলা হয়েছে :

مَا قَامَ الْإِسْلَامُ إِلَّا بِسَیْفِ عَلِيٍّ وَ ثَرْوَةٍ خَدِیْجَةَ.

আলীর তরবারি ও খাদীজার ধন - সম্পদ ব্যতীত ইসলাম কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করত না ।

এখন আমরা মহান আল্লাহ পাকের কাছে , দ্বীনে ইসলামে এবং হযরত মুহাম্মাদের ( সা .) কাছে উম্মুল মুমিনীন ( মুমিনদের মা ) হযরত খাদীজার সুউচ্চ মাকাম ও মর্যাদা সংক্রান্ত মহানবীর ( সা .) কতিপয় হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করব : …চলবে…

تبصرہ ارسال

You are replying to: .