অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত করন : মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
১লা শাওয়ালের রাতের ( রমযানের শেষ দিন ২৯ বা ৩০ রমযানের দিবাগত রাত ) আমল সমূহ :
এ রাত হচ্ছে বছরের সবচেয়ে সম্মানিত ও ফযীলতের রাত সমূহের অন্তর্গত । এ রাতের ইবাদত বন্দেগী ও রাত্রিজাগরণ ( ইহয়া ) সংক্রান্ত বহু রেওয়ায়াত ও হাদীস বিদ্যমান আছে । আর বর্ণিত হয়েছে যে এ রাতের গুরুত্ব ও মর্তবা কদরের রাতের চেয়ে কম নয় । এ রাতের বেশ কিছু আমল আছে । সেগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি উল্লেখ করা হল :
১. গোসল : রমযানের শেষ দিবসের সূর্যাস্তের সাথে সাথে গোসল করা ।
২. নামায, ইস্তিগফার এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে ১লা শাওয়ালের রাত ( ঈদুল ফিতরের রাত ) জাগরণ এবং মসজিদে রাত্রিযাপন ( বাইতূতাহ্ ) ।
৩. মাগরিব , এশা , ফজর এবং ঈদের নামাযের পর নিম্নোক্ত দুআ পাঠ :
اَللّٰهُ أَکْبَرُ اللّٰهُ أَکْبَرُ لَا إِلٰهَ إِلّا اللّٰهُ وَ اللّٰهُ أَکْبَرُ اللّٰهُ أَکْبَرُ وَ لِلٌٰهِ الْحَمْدُ ، الْحَمْدُ للّٰهِ عَلَیٰ مَا هَدَانَا وَ لَهُ الشُّکْرُ عَلَیٰ مَا أَوْلَانَا
আল্লাহ সবচেয়ে মহান , আল্লাহ সবচেয়ে মহান , মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ ( উপাস্য ) নেই , আল্লাহ সবচেয়ে মহান , আল্লাহ সবচেয়ে মহান , প্রশংসা কেবল মহান আল্লাহরই ; আমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করার জন্য সকল প্রশংসা আল্লাহর এবং আমাদেরকে ( জীবন ধারণ ও হিদায়তের যাবতীয় উপায় উপকরণ ও মাধ্যম ) দান করেছেন বলে তাঁরই জন্য সকল কৃতজ্ঞতা ( প্রকাশ করছি )।
৪. মাগরিবের ফরয ও নফল নামায পড়ার পর পর আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করা :
یَا ذَا الْمَنِّ وَ الطَّوْلِ یَا ذَا الْجُوْدِ یَا مُصْطَفِيَ مُحَمَّدٍ وَ نَاصِرَهُ صَلِّ عَلَیٰ مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ اغْفِرْ لِيْ کُلَّ ذَنْبٍ أَحْصَيْتَهُ وَ هُوَ عِنْدَکَ فِيْ کِتَابٍ مُبِیْنٍ .
এরপর সিজদায় গিয়ে ১০০ বার সিজদায় বলা : " أَتُوْبُ إِلَی اللّٰهِ আমি আল্লাহর কাছে তওবা করছি । "
এরপর যে হাজত ( মনস্কামনা ও প্রয়োজন ) থাকলে তা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ ঐ হাজত পূরণ ও প্রয়োজন মিটিয়ে দেবেন । শেখের রিওয়াতে আছে : মাগরিবের ফরয নামাযের পর সিজদায় গিয়ে বলা :
یَا ذَا الْحَوْلِ یَا ذَا الطَّوْلِ یَا مُصْطَفِیَاً مُحَمَّدًا وَ نَاصِرَهُ صَلِّ عَلَیٰ مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ اغْفِرْ لِيْ کُلَّ ذَنْبٍ أَذْنَبْتُهُ وَ نَسِيْتُهُ أَنَا وَ هُوَ عِنْدَکَ فِيْ کِتَابٍ مُبِیْنٍ.
হে শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হে দানশীল , হে হযরত মুহাম্মদকে ( সা ) মনোনীত কারী এবং তাঁর সাহায্য কারী , আপনি হযরত মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের আলের ( অতিনিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর গণ অর্থাৎ আহলুল বাইত ) উপর দরূদ প্রেরণ করুন এবং প্রতিটি গুনাহ যা আমি করেছি এবং যা আমি ভুলে গিয়েছি অথচ আপনার কাছে স্পষ্ট বিবরণ সহ একটি গ্রন্থে লিপিবদ্ধ ও বিদ্যমান আছে তা আমাকে মাফ ( ক্ষমা) করে দিন । এরপর ১০০ বার বলা : أَتُوْبُ إِلَی اللّٰهِ আমি মহান আল্লাহর কাছে তওবা করছি ।
৫. ইমাম হুসাইনের (আ) যিয়ারত করা যার অত্যন্ত ফযীলত ও সওয়াব আছে এবং যিয়ারত অধ্যায়ে এ রাতে ইমাম হুসাইনের (আ) বিশেষ যিয়ারত ও দুআ বর্ণিত হয়েছে ।
৬. ১০ বার یَا دَائِمَ الْفَضْلِ عَلَی الْبَرِیَّةِ ... এ দুআ পাঠ করা যা জুমার রাতের আমলসমূহে বর্ণিত হয়েছে ।
৭. ১০ রাকাত নামায পড়া যা রমযান মাসের শেষ রাতের আমলসমূহে বর্ণিত হয়েছে ।
৮. দু রাকাত নামায পড়া তার প্রথম রাকাতে সূরা-ই ফাতিহার পর সূরা-ই ইখলাস ১০০০ বার এবং ২য় রাকাতে সূরা-ই ফাতিহার পর ১বার সূরা -ই ইখলাস পড়া এবং নামায শেষ করার পর সিজদায় মাথা রেখে ১০০ বার أَتُوْبُ إِلَی اللّٰهِ (আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করছি ) বলা ; এরপর বলা :
یَا ذَا الْمَنِّ وَ الْجُوْدِ یَا ذَا الْمَنِّ وَ الطَّوْلِ یَا مُصْطَفِیَ مْحَمَّدٍ صَلَّی اللّٰهُ غَلَیْهِ وَ آلِهِ صَلِّ عَلَیٰ مُحَمَّدٍ وَ آلِهِ وَ افْعَلْ بِيْ کَذَا وَ کَذَا
হে মঙ্গল কারী ও দানশীল হে মঙ্গলকারী ও দয়াকারী , হে মুহাম্মাদকে( সা : মহান আল্লাহ তাঁর ও তাঁর আলের ওপর দরূদ প্রেরণ করুন ) মনোনীত কারী , হযরত মুহাম্মদ এবং তাঁর আলের ওপর দরূদ প্রেরণ করুন এবং আমার ব্যাপারে অমুক অমুক প্রয়োজন পূরণ করে দিন । " আর অমুক অমুক প্রয়োজন পূরণ করে দিন " এ বাক্যের স্থলে নিজের হাজত ( মনস্কামনা ও প্রয়োজন)পূরণ করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা .....
৯. ১০ রাকাত নামায যার প্রতি রাকাতে সূরা-ই ফাতিহা , আয়াতুল কুরসি এবং তিন বার সূরা -ই ইখলাস পাঠ করা । উল্লেখ্য এই নামায আদায় কারী প্রতি রাকাতের জন্য ৪০ বছর ইবাদতের সওয়াব এবং ঐ মাসে যে কেউ রোযা রেখেছে ও নামায পড়েছে তার ইবাদতের
সওয়াব পাবে ।
১০. এ রাতের শেষে গোসল করে জায়নামাযে ফজরের ওয়াক্ত
হওয়া পর্যন্ত বসে থাকা ।
সূত্র : মাফাতীহুল জিনান