۱ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱۱ شوال ۱۴۴۵ | Apr 20, 2024
News ID: 381389
12 جون 2022 - 21:35
হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়েদ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী
হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়েদ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী

হাওজা / শিরকের আভিধানিক অর্থ “অংশিদার” বা দু’জন শিরক কোন কাজে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

লেখকঃ হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়েদ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী

(আল্লাহর সত্তা ও গুণের সাথে কাউকে শিরক করা)

মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন সম্প্রদায় আছে যে, অন্যান্য ইসলামী সম্প্রদায়ের উপর কথায় কথায় শিরক ও বিদ’আতের অপবাদ আরোপ করে থাকে। অকাট্য দলিল প্রমাণ ব্যতিরকে অন্য সম্প্রদায়ের উপর এ ধরণের অপবাদ আরোপ করা অথবা নিজের চিন্তা ও ধ্যান ধারণাকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফেৎনা সৃষ্টি করা ছাড়া আর কি হতে পারে? উচিৎ ছিল যে, শিরক ও বিদ’আত শব্দের ভুল ব্যবহার ও প্রয়োগ না করে দলিল ভিত্তিক আলোচনা করা, যাতে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক সুদৃঢ় হতো এবং মুসলিম উম্মাহ কুফর ও শিরক এর মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু সামাজিকতার সৃষ্টিতে এ ধরণের বেমানান শব্দ ব্যবহার করে কুফর ও দাম্ভিক শক্তির কর্মসূচীকে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষ যাতে শিরক ও বিদা’আতের রাজনৈতিক অপবাদের ধোকায় না পড়ে তাই এ দু’টি শব্দের পারিভাষিক ও পরিভাষাগত অর্থ জানা খুবই জুরুরী। বিদ’আত শব্দের ব্যাখ্যা পৃথক শিরনামে করা হবে যা স্বতন্ত্র একটি বাহাস এবং বিষয়।

শিরক শুব্দ দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থে ও শরয়ী পরিভাষাগত অর্থে। শিরক ‘উরফী’ বা প্রচলিত অর্থেও ব্যবহৃত হয়, যার কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আলোচনার প্রয়োজন নেই।

শিরকের আভিধানিক অর্থ “অংশিদার” বা দু’জন শিরক কোন কাজে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শিরকের শরয়ী পরিভাষাগত অর্থে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শরীক করাকে বোঝায়। পবিত্র কুরআনে এই শরয়ী পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে অর্থাৎ., “(তুমি) বল, আমাকে আমার প্রতিপালক সরল পথের দিক নির্দেশ করেছেন, যা এক প্রতিষ্ঠিত ধর্ম এবং সত্যপন্থী ইব্রাহীমের ধর্মপথ, আর তিনি অংশীবাদীদের অর্ন্তভুক্ত ছিলেন না” (সূরা আনআমঃ ১৬১)

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, অর্থাৎ “(তুমি) বল, আমার নামায, আমার ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সেই আল্লাহর জন্য যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক; তাঁর কোন অংশী নেই এবং আমি এ ব্যাপারেই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম” (সূরা আনআমঃ ১৬২-১৬৩)

ইরশাদ হচ্ছে - অর্থাৎ “এবং (আমাকে বলা হয়েছে) তুমি সত্যনিষ্ঠ ধর্মের দিকে তোমার মুখমন্ডলকে (সমগ্র অস্তিত্বকে) প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং কখনও অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (সূরা ইউনুসঃ ১০৫)

সূরা ইউনুসের উপরোক্ত আয়াত অনুসারে শিরক সত্যনিষ্ঠ ধর্মের (দ্বীনে হানিফ) বিপরীতে একটি বিষয়। সুতরাং শিরক সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে সত্যনিষ্ঠ ধর্ম বা দ্বীনে হানিফ বোঝা অত্যন্ত জরুরী। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী যে, শিরকের অবস্থান তাওহীদ বা একত্ববাদের বিপরীতে।

যেভাবে তাওহীদের প্রকারভেদ আছে তেমনি শিরক-এরও প্রকারভেদ আছে। প্রাথমিকভাবে শিরককে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- আক্বীদাগত শিরক ও আমলগত শিরক।

আক্বীদাগত শিরকঃ

আক্বীদাগত শিরককে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

১)‘শিরক দার উলুহীরা ও ওয়াহদানীয়াত’ এর ক্ষেত্রে শিরক। অর্থাৎ যদি কেউ এমন আক্বীদা পোষণ করে যে, আল্লাহ ছাড়াও অপর কোন স্থায়ী অস্তিত্ব বিরাজমান যার মধ্যে আল্লাহর সকল গুণাবলী বিদ্যমান, তাহলে এটি হবে শিরক এবং কুফর। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনঃ অর্থাৎ, “যারা বলে, নিশ্চয়ই মারইয়াম তনয় মসীহ-ই আল্লাহ’, নিঃসন্দেহে তারা অবিশ্বাসী হয়ে গেছে...” (সূরা মায়েদাহঃ ১৭০)

২) ‘শিরক দার খালেক্বীয়াতঃ

মানুষ যখন দু’টি সূচনা বা উৎসের বিশ্বাসী হয়; যেমন সে বিশ্বাস করে যে, এক্ষেত্রে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এ ধরণের শিরক এর প্রতি মনোযোগ অকর্ষণ করেছেন। সে সময় কিছু শক্তি নক্ষত্রের পূজা করতো। তারা মনে করতো এ নক্ষত্র রাজীই পৃথিবীর প্রতিপালক আবার কেউ কেউ চন্দ্র ও সূর্যের উপাসনা করতো। (সূরা আন্আমের ৭৬,৭৭ও৭৮ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে অর্থাৎ - “অনন্তর যখন রজনীর অন্ধকার তার উপর সমাচ্ছন্ন হল, তখন সে একটি তারকা দেখতে পেল। বললঃ এটি আমার প্রতিপালক। অতঃপর যখন তা অস্তমিত হল, তখন বললঃ আমি অস্তগামীদেরকে ভালবাসি না। অতঃপর যখন চন্দ্রকে, ঝলমল করতে দেখল, বললঃ এটি আমার প্রতিপালক। অনন্তর যখন তা অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন বললঃ যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পথ প্রদর্শন না করেন তবে অবশ্যই আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাব। অতঃপর যখন সূর্যকে চকচক করতে দেখল, বললঃ এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতঃপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বললঃ হে আমার সম্প্রদায় তোমরা যেসব বিষয়কে শরীক কর; আমি ওসব থেকে মুক্ত”।

৩) আমলের ক্ষেত্রে শিরকঃ

আনুগত্য ও উপসনার ক্ষেত্রে শিরক শব্দটি এমন অর্থে ব্যবহৃত হয় যে, উপাসনা আল্লাহর ব্যতীত অন্য কারোর করে। ইবাদতের অভিপ্রায়ে বিনয় ও শিষ্টতা অন্যের প্রতি প্রদর্শন করে।

আমরা ইবাদতের নিয়তকে শর্ত মনে করি এবং ওই আমল যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোর ইবাদতের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাকে বৈধ মনে করিনা। কিন্তু পবিত্র কোন বাস্তব বা তাবারককে শুধু চুম্বন বা সম্মান প্রদর্শন করা কখনই শিরক নয় এবং তা গায়রুল্লাহর ইবাদতের শ্রেণিভুক্ত হবে না। এখন প্রশ্ন হল, পবিত্র কুরআনে কী এ ধরণের সম্মান প্রদর্শনকে বিদ্আত বা শিরক আখ্যায়িত করেছে?

যখন আমরা কুরআনের বাঁধাইয়ের উপর চুম্বন দিই এই ভেবে যে, এর ভিতরে কুরআন আছে, এ কর্মটি প্রেমাস্পদকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সুতরাং আলম বা পতাকাকে সকল মাযহাব ও গোষ্ঠীতে পবিত্র জ্ঞান করা হয় এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। সাধারণ কাপড় ভেবে কেউ চুম্বন করেনা বরং একটি মাযহাব বা গোষ্ঠীর প্রতীক বা স্মারক মনে করে এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। পবিত্র কুরআনে যে, মানদন্ড বা উৎসের ভিত্তিতে শিরক এর পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে তা ব্যতীত অন্য কোন মানদন্ড বা উৎস গ্রহণযোগ্য নয় যা অন্য মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি অপবাদ আরোপ করার উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়েছে। যে, মানদন্ড অপরকে অপবাদ দেয়ার জন্য অথবা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে; তা কোন ক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তার মানদন্ড পবিত্র কুরআন, নবী করিম (সাঃ) এর সীরাত ও তাঁর (সাঃ) স্থলবর্তী অর্থাৎ ইমাম (আঃ) গণের সীরাত অনুযায়ী নয়। তৈরী বা উদ্ভাবন করা মানদন্ড শিরক বলে বিবেচিত।

১) তারা বলে থাকেন যে, কেউ নবী (সাঃ) অথবা ইমাম (আঃ) অথবা আউলিয়া কেরামের নিকট লাভপ্রাপ্তি অথবা সাহায্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন এ ভেবে যে, তারা সবকিছু সম্পর্কে অবহিত ও শ্রবণকারী এবং তাদের প্রয়োজন পুরো করে থাকেন, তা হবে শিরক।

২) মৃত ব্যক্তির নিকট কিছু চাওয়াও শিরকের অর্ন্তভুক্ত। কেননা যার কাছে চাওয়া হয় তার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করতে হয়।

৩) দোয়া-এ-তাওয়াস্সুল ও এক ধরণের শিরক। কেননা ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। যেহেতু, দোয়াও এক ধরনের ইবাদত তাই দোয়া ও তাওয়াসুল (মাধ্যম) গায়রুল্লাহর সাথে শরিক হবে।

৪) কবর জিয়ারত শিরক।

৫) আম্বিয়া ও আউলিয়া কোরামের সাথে সম্পৃক্ত নিদর্শনসমূহকে পবিত্র মনে করা শিরকের অর্ন্তভুক্ত।

৬) মীলাদ মজলিস-মাহফিলও শিরক।

৭) কবরের উপর গুম্বজ কিংবা স্থাপনা নির্মাণ করা শিরক।

মনগড়া উপরোক্ত মানদন্ড সম্পর্কে ব্যাখ্যাঃ

স্বউদ্ভাবিত মনগড়া এ মানদন্ডসমুহকে দু’টি অংশে ভাগ করা যেতে পারে।

১) যদি এ মাপকাঠিকে আমল বা আক্বীদাগত শিরক মনে করা হয় তাহলে এ প্রসঙ্গে এটাই যথেষ্ট যে, রাসূল (সাঃ) ও ইমাম গণের (আঃ) অদৃশ্য জ্ঞানের আক্বীদা পোষণ করা, তাদের পক্ষ থেকে সুস্থতা লাভ, প্রয়োজন পূর্ণ হওয়া-এ সবকিছুই আল্লাহর সাথে সম্বন্ধযুক্ত এবং তারই পক্ষ থেকে। রাসূল (সাঃ) ও ইমামগণ (আঃ) যে ক্ষমতাই রাখেন না কেন তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে দানকৃত। আক্বীদা বা বিশ্বাস যদি এমন হয় তাহলে শিরক বলা যাবে না। কেননা রাসূল (সাঃ) ও ইমামকে (আঃ) বা স্বতন্ত্র বা স্বাধীন হিসেবে সৃষ্টি করা হয়নি।

যদি বলা হয় যে, এ ক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত তাহলে শিরক হবে না। ধরুন আমাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন। কেউ যদি আমার কাছে চায় আর আমি তাকে দিয়ে দিই তা শিরক বলে গণ্য হবে না। কেননা এ সম্পদ তো আল্লাহ কর্তৃক দানকৃত। যারাই নবীপাক (সাঃ) অথবা তাঁর স্থলবর্তীগণকে উসিলা জ্ঞান করেন এই বিশ্বাস বা আক্বীদা অনুযায়ী যে, তাঁদের এ ক্ষমতা স্থান বা মর্যাদা স্বাধীন নয় বরং তা আল্লাহর দানকৃত এ সেফাতের (গুণ) সাথে কোন শিরক হবে না।

২) যদি এ উদ্দেশ্যে ও মীলাদকে ইবাদত মনে করা হয় এবং সমাধি চুম্বন করা হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে ইসলামে ইবাদতের বিশিষ্টে বলা হয়েছে যে, তা হতে হবে-আল্লাহর উদ্দেশ্যে । এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে যদি সমাধিকে চুম্বন করা হয় যে, এ সম্মান প্রদর্শন এ কারণে যে, আল্লাহ তাঁদেরকে (সামাধিস্থ ব্যক্তি) সম্মানিত করেছেন তাহলে একে শিরক বলা যাবে না। প্রমাণস্বরূপ বলা যায় সূরা ইউসুফে হযরত ইউসুফ (আঃ)এর ভ্রাতাগণের সেজদাকে ইউসুফ (আঃ) এর বিপরীতে শীরকে বলে গণ্য করা হয়নি। যেহেতু তাঁর ভ্রাতাগণ কখনই ইউসুফ (আঃ) এর ঈশ্বরত্বে বিশ্বাসী ছিল না।#

تبصرہ ارسال

You are replying to: .