۱۰ فروردین ۱۴۰۳ |۱۹ رمضان ۱۴۴۵ | Mar 29, 2024
মাওলামা মাসুম আলী গাজী নাজাফী
মাওলামা মাসুম আলী গাজী নাজাফী

হাওজা / কারবালার ঘটনা থেকে মানবতাকে অনেক শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে এটাই হল মানবজাতির মুক্তির আসল পথ।

হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলামা মাসুম আলী গাজী নাজাফী

কারবালার ঘটনা থেকে মানবতাকে অনেক শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে এটাই হল মানবজাতির মুক্তির আসল পথ।

১) অপমান মেনে নেবেন না।

শহীদ সম্রাট ইমাম হোসায়েন (আঃ) তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, কুফার কর্তৃপক্ষ তাঁকে কেবল দুটি বিকল্প দিয়েছিল : অপমান বা মৃত্যু। কিন্তু তিনি অপমানকর জীবন গ্রহণ করলেন না।

ইমাম জাফর সাদিক্ব (আঃ)-এর একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, অপমান না মেনে নেওয়া ব্যতীত মহান আল্লাহ তায়ালা মোমিনদেরকে সব বিষয়ে পছন্দের সুযোগ দিয়েছেন।

২) সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসুন।

স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করুন এবং আপনার নিজস্ব মতামত গঠন করুন। অন্যের অন্ধ অনুকরণে নিজের বিবেক ও চোখ বন্ধ করবেন না।

৩) মৃত্যুকে গভীরভাবে বুঝুন।

ইমাম হোসায়েন (আঃ) নিম্নলিখিত তিনটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মৃত্যু সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও প্রসার করে দিয়েছেন :

"মৃত্যু সবার জন্য নির্ধারিত আছে এবং কোন আত্মা তা থেকে রক্ষা পাবে না।"

"অসম্মানে বেঁচে থাকার চেয়ে সম্মানের মৃত্যু অনেক ভালো।"

"ইসলামের জন্য মৃত্যুবরণ করা শাহাদাত এবং এটি একটি মহান সম্মান।"

পবিত্র মদিনা শরীফে নিজের আত্মীয়দের বিদায় জানানোর সময় তিনি বলেছিলেন : "যে আমাদের সাথে যোগ দেবে সে শহীদ হবে, যারা পিছনে থাকবে তারা বিজয় থেকে বঞ্চিত হবে।"

৪) সত্যকে সমর্থন করুন।

ইমাম হোসায়েন (আঃ) ঘোষণা করলেন : "আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না যে, সত্যকে মিথ্যা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে? সত্যের সমর্থনে ওই সমস্ত কুরবানী দেওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত, যা অতি মূল্যবান।"

৫) তওবা করতে কখনোই বিলম্ব করবেন না।

হযরত হুর (আঃ), প্রথম কমান্ডার ছিলেন যিনি ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর সেনাবাহিনীকে ঘেরাও করে এবং ফোরাত নদের পানি পর্যন্ত তাঁদের প্রবেশে বাধা দেন। তিনিই অনুতাপের একটি চমৎকার উদাহরণ তৈরি করেন, তাঁর কাজের জন্য অনুতপ্ত হলেন। তিনি ইমাম হোসায়েন (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার তওবা কবুল হবে কি না? ইমাম বললেন, তাওবা কবুল হতে দেরি হয় না। হযরত হুর ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর শিবিরে যোগ দিলেন এবং প্রথম শহীদদের একজন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।

৬) সত্যের প্রতি আনুগত্য।

আশুরার দিন ইমাম হোসায়েন (আঃ) হযরত আবুযার (রহঃ)-এর খাদেম জওন 'কে বললেন, তুমি আমাদের সঙ্গে অনেক পথ অতিক্রম করেছো, তাই এবার তুমি যেতে পারো। জওন উত্তর দিয়েছিলেন : "এটা ঠিক নয় যে, আমি আপনার সঙ্গ এবং আতিথেয়তা থেকে উপকৃত হব তবে মসিবতের সময় আপনাকে ছেড়ে দেব।"

৭) নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।

এতে কোন দ্বিমত নেই যে, কারবালায় হযরত যয়নাব (সাঃআঃ)-এর অংশগ্রহণ ছাড়া ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর মিশন সম্পন্ন হতে পারত না।

৮) প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সম্পাদন করুন।

রসূল দোহিত্র ইমাম হোসাইন (আঃ) তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, মহানবী (সাঃ)-এর পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য হল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। তাই যখনই তিনি পরিবারের কোন সদস্যকে শহীদ হতে দেখতেন, তখন বলতেন : "এটি সহ্য করা হচ্ছে, শুধুমাত্র আল্লাহ এর সাক্ষী।"

৯) অন্যের চাহিদাকে প্রাধান্য দিন।

আশুরার দিনে হযরত আব্বাস (আঃ)-এর পদক্ষেপ এক অতুলনীয় আত্মত্যাগের উদাহরণ তৈরি করে। তিনি ফোরাতের পানি পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য বীরত্বের সাথে লড়াই করেছিলেন কিন্তু তিনি তৃষ্ণার্ত হওয়ার পরেও পানি পান করার প্রতি মনোযোগ দিলেন না। তবে তৃষ্ণার্ত মহিলা ও শিশুদের জন্য তাঁবুতে পানি আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

১০) মসিবতে ধৈর্য ধরুন।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, কেবল ধৈর্যশীলদেরই প্রতিদান দেয়া হবে। কুরআনের শিক্ষার একটি জীবন্ত উদাহরণ হল ইমাম হোসায়েন (আঃ) তাঁর রবের পুরস্কারের অপেক্ষায় সবচেয়ে কঠিন সময়ে খুশি ও সন্তুষ্ট ছিলেন। পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তির উদাহরণ পাওয়া যাবে না যে, যার চোখের সামনে আত্মীয়-স্বজন ও সন্তানদের জবাই করা হয়েছে, অথচ সে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হয়েছে।

১১) নেক কাজের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ করার গুরুত্ব ও ফজিলত বুঝুন।

ইমাম হোসায়েন (আঃ) নিজের পদক্ষেপে নেক ও কল্যাণের নির্দেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের মাধ্যমে কুরআনের ওই আয়াতগুলোর গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের উদাহরণ হয়ে ওঠেন।

ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর শাহাদাত হল মহানবী (সাঃ)-এর জীবনীর এক উজ্জ্বল অধ্যায়। সত্যের পতাকা সমুন্নত রাখতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে মহানবী (সাঃ )-এর পরিবার কিয়ামত পর্যন্ত সত্য-মিথ্যার মধ্যে রূপরেখা টেনে লুটেরা ও দখলদারদের চেহারা উন্মোচিত করেছেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কুরবানী ও সংগ্রাম করা হল হোসায়নী জীবন ব্যবস্থা। অর নির্যাতিতদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা, তাদের সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার করা এবং ক্ষমতা অর্জনের স্বার্থে জীবন নেওয়া হল ইয়াজিদী চিন্তাধারা, শাসন ও রাজনীতি।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে কারবালার শহীদদের মাহাত্ম্য ও মহিমা বোঝার তৌফিক দান করুন। আর সেই সাথে আমাদেরকে আহলেবায়েত এর সাথে সম্পর্কের বাস্তবতা বোঝার এবং তারপর তার উপর আমল করার তৌফিক দান করুন।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আ'লে মুহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ওয়াহ শুরনা মাআহুম ওয়াল আন আদুওয়াহুম।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .