মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান (মুহররম, ১৪৪৪ হি.)
পর্ব ২- আরেক সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :
হযরত আলী (আ:) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা:) যে সব বিষয় আমাকে বলেছেন তন্মধ্যে এ বিষয়টিও আছে যে তাঁর ( সা :) পরে উম্মত আমার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা ও খিয়ানত ( গাদ্দারী ) করবে । (আল - হাকিমের মতে) এ হাদীস সহীহুল ইসনাদ অথচ বুখারী ও মুসলিম তা
বর্ণনা করেন নি । আর আল্লামা যাহাবী আত তালখীস গ্রন্থে তাঁর ( আল - হাকিম ) সাথে একমত পোষণ করেছেন : হাদীসটি সহীহ ।
( দ্র : আল - মুসতাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩৫০ , হাদীস নং ৪৭৩৪ )
۴۷۳۴ . عن علي - ع - قال : إِنَّ مِمَّا عَهِدَ إِلَيَّ النَّبِيُّ - ص - أَنَّ الْأُمَّةَ سَتَغْدُرُ بِيْ بَعْدَهُ .
هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحُ الْإِسْنَادِ وَ لَمْ يُخْرِجَاهُ .
(۴۷۳۴) . وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِيْصِ : صَحِيْحٌ .
৪৭৩৫ . ইবনে আব্বাস ( রা:) থেকে বর্ণিত : তিনি ( ইবনে আব্বাস ) বলেন : হযরত আলীকে রাসূলুল্লাহ সা:) বলেছেন : তবে তুমি আমার পরে পরিশ্রম , ক্লান্তি , কষ্ট ও যাতনার সম্মুখীন হবে । তখন আলী বললেন : এতে করে কি আমার দ্বীনের ( ধর্ম ) ক্ষেত্রে আমি নিরাপদ থাকব ? তখন তিনি ( সা: ) বললেন : তুমি তোমার দ্বীনের ( ধর্ম ) ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকবে ।
এই হাদীসটি শাইখাইনের ( বুখারী ও মুসলিম ) শর্তে সহীহ হাদীস এবং তাঁরা দুজন তা সনদ সহ বর্ণনা করেন নি ।
( ৪৭৩৫ ) আল্লামা যাহাবী আত - তালখীস গ্রন্থে তাঁর ( আল - হাকিম নিশাপুরী ) সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন : বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ( হাদীসটি সহীহ ) ।
( দ্র : আল - মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন , খ :৩ , পৃ : ৩৫০ - ৩৫১ )
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ - رض - قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ - ص - لِعَلِيٍّ - ع - : (( أَمَّا أَنَّکَ سَتَلْقَیٰ بَعْدِيْ جَُهْدَاً )) ، قَالَ : (( فِيْ سَلَامَةٍ مِنْ دِيْنِيْ ؟ )) ، قَالَ : (( فِيْ سَلَامَةٍ مِنْ دِيْنِکَ . )) . هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ عَلَیٰ شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ وَ لَمْ يُخْرِجَاهُ .
(۴۷۳۵) . وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِيْصِ : عَلَیٰ شَرْطِ الْبُخَارِيِّ وَ مُسْلِمٍ .
তাই মহানবীর ভাষায় যে উম্মত গাদ্দারি ও বিশ্বাসঘাতকতা করবে তাঁর ( সা:) পরে হযরত আলীর ( আ:) সাথে , সেই গাদ্দার উম্মতই তো তাঁর দৌহিত্র হযরত হুসাইনকে ( আ:) কতল ও তাঁর আহলুল বাইত (আ:) কে বন্দী করবে যার ভবিষ্যদ্বাণীও তিনি ( সা:) করেছিলেন । কারণ মহান আল্লাহ পাকই তাঁকে ( সা:) তাঁর পথভ্রষ্ট গাদ্দার উম্মতের হাতে কারবালা প্রান্তরে ইমাম হুসাইনের ( আ:) শাহাদাতের সংবাদ দিয়েছিলেন এবং হযরত জিবরাঈল ( আ:) ইমাম হুসাইনের (আ:) বধ্যভূমির মাটিও এনে দিয়েছিলেন তাঁর:( সা:) হাতে । ( মহানবী ( সা:) তখন ইমাম হুসাইনের ( আ:) শাহাদাতের সংবাদ শুনে ক্রন্দন করেছিলেন । ইমাম হুসাইনের (আ:) পিতা মাতা হযরত আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী ( আ:) ও বেহেশতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা যাহরা ( আ:)ও ইমাম হুসাইনের ( আ: ) শাহাদাতের সংবাদ শুনে কেঁদেছিলেন । )
আমরা নীচে এতদ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস পেশ করছি :
১ম. হাদীস :
নবীপত্নি উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামাহ ( রা: ) বলেন : আমার ঘরে রাসূলুল্লাহর ( সা:) সামনে হাসান ও হুসাইন - আলাইহিমাস সালাম - খেলছিলেন । তখন জিবরাঈল ( আ: ) অবতীর্ণ হয়ে হুসাইনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন : " হে মুহাম্মাদ , আপনার উম্মত আপনার পরে আপনার এই সন্তানকে ( দৌহিত্র ) হত্যা করবে । " অত:পর রাসূলুল্লাহ (সা:) হুসাইনকে বুকে টেনে নিয়ে কাঁদলেন । এরপর রাসূলুল্লাহ ( সা:) বললেন : " আমি তোমার ( উম্মে সালামাহ ) কাছে এই মাটিটা রাখলাম । " অত:পর রাসূলুল্লাহ সা:) ঐ মাটিটার ঘ্রাণ নিলেন এবং বললেন : " ( কারবালা অথবা ) কার্ব ( কষ্ট ) ও বালার ( বিপদাপদ ) ঘ্রাণ । " এবং বললেন : " হে উম্মে সালামাহ , যখন এই মাটি রক্তে পরিণত হবে তখন জানবে যে আমার সন্তান ( দৌহিত্র হুসাইন ) নিহত হয়েছে । "
হযরত উম্মে সালামাহ ঐ মাটিটা একটা কাঁচের পাত্রে রেখে দিলেন এবং প্রতিদিন ঐ মাটির দিকে তাকিয়ে বলতেন :
" (হে মাটি ) এক মহাবিপদের দিবসে ( ইমাম হুসাইন / আ : /যেদিন শাহাদাত বরণ করবেন সেদিন অর্থাৎ ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম ) তুমি রক্তে পরিণত হবে ।" আর এতদসংক্রান্ত এ অনুচ্ছেদে হযরত আয়েশা ( রা:) , হযরত যাইনব বিনতে জাহ্শ্ ( রা:) , হযলত উম্মে ফয্ল্ ( রা:) বিনতুল হারিস ( রা:) , হযরত আবূ উমামাহ ( রা:) , হযরত
আনাস ইবনুল হারিস ( রা:) এবং আরো অন্যান্যের থেকে ( অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ও ) বিদ্যমান আছে ( দ্র : ইবনে হাজর আল আস্কালানী প্রণীত তাহযীবুত তাহযীব , খ :২ , পৃ : ৩৪৭ ) ।
عَنْ عُمَر َبْنِ ثَابِتٍ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ شَقِيْقٍ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ : كَانَ الْحَسن و الحسين يلعبان بين يدي رسول الله صلّى الله عليه و آله و سلّم في بيتي فنزل جبريلُ فقال : يَا مُحَمَّدُ ، إِنَّ أُمَّتَكَ تَقْتُلُ ابْنَكَ هٰذَا مِنْ بَعْدِكَ وَ أَوْمَىٰ بِيَدِهٖ إِلَى الْحُسَيْنِ فَبَكَىٰ رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص) (وَ أَخَذَ التُّرَابَ عَنْ جَبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ) وَضَعْتُ عِنْدَكِ هٰذِهِ التُّرَابَ فَشَمَّهَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص ) وَ قَالَ : رِيْحُ كَرْبٍ وَ بَلَاءٍ وَ قَالَ : يَا أُمَّ سَلَمَةَ إِذَا تَحَوَّلَتْ هٰذِهِ التُّرْبَةُ دَمَاً فَاعْلَمِيْ أَنَّ ابْنِيْ قَدْ قُتِلَ فَجَعَلَتْهَا أُمُّ سَلَمَةَ فِيْ قَارُوْرَةٍ ثُمَّ جَعَلَتْ تَنْظُرُ إِلَيْهَا كُلَّ يَوْمٍ وَ تَقُوْلُ : إِنَّ يَوْمَاً تَحُوْلِيْنَ دَمَاً لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ .
وَ فِي الْبَابِ عَنْ عَائِشَةَ وَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ وَ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ وَ أَبِيْ أُمَامَةَ وَ أَنَسِ بْنِ الْحَارِثِ وَ غَيْرِهِمْ .
সুতরাং এ হাদীসটি মুতাওয়াতির , শক্তিশালী , নির্ভরযোগ্য সহীহ হাদীস । কারণ , এ হাদীসটি উম্মুল মু'মিনীন হযরত উম্মে সালামাহ ( রা :) সহ ছয়ের অধিক সংখ্যক সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে । আর কোনো হাদীস মাত্র চার জন সাহাবা কর্তৃক বর্ণিত হলেই আহলুস সুন্নাহর অনেকেই তা মুতাওয়াতির বলে গণ্য করেন ।…চলবে…