মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান (মুহররম, ১৪৪৪ হি.)
পর্ব ১০- হযরত আলীকে (আ:) গালি দেয়া
রাসূলুল্লাহকে (সা:) গালি দেয়া :
সহীহ রিওয়ায়তে আবূ আব্দিল্লাহ আল জাদালী থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : আমি হযরত উম্মে সালামাহর কাছে গেলে তিনি আমাকে বললেন : তোমাদের মধ্যে কি রাসূলুল্লাহকে(সা:) গালি দেয়া হয় ? তখন আমি বললাম : আল্লাহ পাকের কাছে আশ্রয় নিচ্ছি অথবা সুবহানাল্লাহ অথবা এ ধরনের কোনো বাক্য । অত:পর তিনি বললেন : আমি রাসূলুল্লাহকে ( সা:) বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আলীকে গালি দেয় সে আমাকেই গালি দেয় ।
আল - হাকিম বলেন : এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম তা রিওয়ায়ত করেন নি । আর আল্লামা যাহাবীও আত - তালখীস গ্রন্থে তাঁর ( আল - হাকিম ) একমত পোষণ করে বলেছেন : সহীহ ।
( দ্র: প্রাগুক্ত আল্ মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ : 3 , পৃ : ৩৩৪ , হাদীস নং ৪৬৭৩ )
আবূ মুলাইকা বলেন : ইবনে আব্বাসের কাছে শামদেশের এক ব্যক্তি এসে হরযত আলীকে ( আ:) গালমন্দ করল । তখন ইবনে আব্বাস তার সাথে ঝগড়া করলেন এবং বললেন : হে আল্লাহর দুশমন , তুমি রাসূলুল্লাহকে ( সা:) কষ্ট দিয়েছ এবং তাঁকে জ্বালাতন করেছ । " নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট ও যাতনা দেয় তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে লানৎ দেন এবং তাদের জন্য অত্যন্ত লাঞ্ছনাকর ( অপমানজনক ) শাস্তির ব্যবস্থা করেন । " যদি রাসূলুল্লাহ ( সা: ) জীবিত থাকতেন তাহলে তুমি তাঁকে অবশ্যই কষ্ট দিয়ে থাকতে ।
আল - হাকিম বলেন : এই হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম তা রিওয়ায়ত করেন নি । আর আল্লামা যাহাবী আত - তালখীস গ্রন্থে আল -হাকিমের সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন : ( এ হাদীসটি )
সহীহ ।
( দ্র : প্রাগুক্ত আল্ মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ:৩ , পৃ : ৩৩৪ , হাদীস নং ৪৬৭৬ )
হযরত আলীকে (আ:) গালি দেয়া আসলে মহান আল্লাহকে গালি দেয়া :
তাব্রানী সহীহ সনদে সূত্রে নবীপত্নি হযরত উম্মে সালামাহ ( রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি ( রা:) বলেছেন : রাসূলুল্লাহ ( সা:) বলেন :
যে আলীকে ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসে এবং যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে সে মহান আল্লাহকেই ভালবাসে ; আর যে আলীকে ঘৃণা করে সে আমাকেই ঘৃণা করে এবং যে আমাকে ঘৃণা করে সে মহান আল্লাহকেই ঘৃণা করে ।
و أخرج الطبرانيّ بسند صحيح عن أمّ سلمة عن رسول الله - ص- ، قال : (( مَنْ أَحَبَّ عَلِیَّاً فَقَدْ أَحَبَّنِيْ ، وَ مَنْ أَحَبَّنِيْ فَقَدْ أَحَبَّ اللّٰهَ ، وَ مَنْ أَبْغَضَ عَلِیَّاً فَقَدْ أَبْغَضَنِيْ وَ مَنْ أَبْغَضَنِيْ فَقَدْ أَبْغَضَ اللّٰهَ . ))
( দ্র : আল্লামা সুয়ূতী প্রণীত তারীখুল খুলাফা , পৃ : ১৭৩ , প্রকাশক : আশ শরীফ আর রাযী প্রকাশনী , ইরান , ১ম সংস্করণ , প্রকাশ কাল : ১৪১১ হি: )
পবিত্র কুরআনের আয়াত ও উল্লেখিত হাদীসসমূহের আলোকে প্রমাণিত হয় যে
হযরত আলীকে ( আ ) যারা ঐ সময় গালি দিত তারা ছিল নি:সন্দেহে নরকের কীট । আর মুয়াবিয়া থেকে শুরু করে সকল উমাইয়া খলীফা হযরত আলীকে ( আ:) গালিগালাজ করত । কেবল খলীফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয ছিলেন এর ব্যতিক্রম । আর অল্প কিছু ব্যক্তি ব্যতীত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এই জঘন্য অপরাধের সামনে নীরব থেকে ও এর প্রতিবাদ না করে এই ধরনের অন্যায় , পাপ ও অপকর্মে যালেম বনী উমাইয়া খলীফা দের দোসর ও অনুসারী এবং সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে । আর এভাবেই উম্মত তখন হযরত আলীর ( আ:) সাথে গাদ্দারী করেছে ।
তাই এখান থেকে খুব ভালো ভাবেই বোধগম্য যে , এই বিচ্যুত উম্মতের একদল ইমাম হুসাইনকে পত্র লিখে দাওয়াত করে সাহায্য করা থেকে বিরত থেকেছে এবং উম্মতের অবশিষ্ট অংশ চুপচাপ বসে বসে ইমাম হুসাইনের (আ:) শহীদ হওয়া প্রত্যক্ষ করেছে । তাই অতি অল্প মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি ব্যতীত তদানীন্তন গোটা মুসলিম উম্মাহ ইমাম হুসাইনের (আ:) সাথে গাদ্দারী করেছে । কেবল মহানবীর ( সা:) আহলুল বাইতের ( আ:) অতি মুষ্টিমেয় খাঁটি মুখলিস অনুসারী যারা ছিলেন অত্যন্ত সংখ্যালঘু তাঁদেরই একটা অংশ ইমাম হুসাইনের (আ:) সাথে কারবালায় নিজেদেরকে ইসলাম ও ইমামের জন্য উৎসর্গ ও এ পথে শাহাদাত বরণ করেছেন । প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে হুর ইবনে ইয়াযীদ এবং আরও ৩০ ব্যক্তি ইমাম হুসাইন ( আ:) ও তার সঙ্গী সাথীদের মযলূম অবস্থা ও বাণী বক্তব্যের দ্বারা প্রকৃত সত্য ( হক ) বুঝতে পেরে ইয়াযীদী বাহিনী ও শিবির ত্যাগ করে ইমাম হুসাইনের (আ:) যোগ দিয়ে এবং ইমাম হুসাইনের ( আ:) পথে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করে বাকি সব ইয়াযীদী বাহিনী ও হাত পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকা উম্মতের চোখের সামনে ইতমাম - ই হুজ্জত ( দলিল প্রমাণ পূর্ণ ) করেছেন এবং তাদের যে কোনো ধরনের অজুহাত দেখানো ও ওজর পেশ করার পথ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দিয়েছেন । এখানে থেকে বোঝা যায় যে তখন উম্মতের মাঝে সত্য পন্থী ও সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তির সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য ও মুষ্টিমেয় । ( কেন এ অবস্থার উদ্ভব হল ? এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য স্বতন্ত্র , বিস্তারিত বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার প্রয়োজন । )…চলবে…