۲۰ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 9, 2024
মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান
ইমাম হুসাইন ( আ ) সাফীনাতুন্ নাজাত ( নাজাতের তরী ) ও মিসবাহুল হুদা ( হিদায়তের প্রদীপ)

হাওজা / মহানবীর ( সা ) হাদীস সমূহ থেকে প্রতীয়মান ও প্রমাণিত হয় যে তাঁর দৌহিত্র ও বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইন ( আ )কে অত্যাচারী পথভ্রষ্ট গাদ্দার ( (বিশ্বাসঘাতক) উম্মত হত্যা করবে এবং বাস্তবেও ঠিক সেটাই ঘটেছিল ।

মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান (৩ শাবান , ১৪৪৪ হি.)

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২য় অংশঃ মহানবীর ( সা ) হাদীস সমূহ থেকে প্রতীয়মান ও প্রমাণিত হয় যে তাঁর দৌহিত্র ও বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইন ( আ )কে অত্যাচারী পথভ্রষ্ট গাদ্দার ( (বিশ্বাসঘাতক) উম্মত হত্যা করবে এবং বাস্তবেও ঠিক সেটাই ঘটেছিল । যে উম্মত বেহেশতের যুবকদের নেতাকে হত্যা করে তারা কিভাবে সেই বেহেশতের প্রত্যাশা করে যে বেহেশতবাসী যুবকদের নেতৃদ্বয় হচ্ছেন ইমাম হাসান ( আ ) ও ইমাম হুসাইন ( আ ) ? আর এমন বেহেশত কি আছে যেখানে বেহেশতবাসী যুবকদের নেতা ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন না হয়ে বরং নেতা হবেন অন্য কেউ ? অথচ বেহেশতবাসীরা সবাই হবে যুবক । সেখানে কেউ বৃদ্ধ ও প্রৌঢ় থাকবে না ।

দুনিয়ায় যে কেউ যুবক বা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যু বরণ করুক না কেন সে যদি বেহেশতবাসী হয় তাহলে সে যুবক হয়েই বেহেশতে প্রবেশ করবে । আমরা সবাই জানি যে সকল উম্মত নয় বনী উমাইয়া এবং তাদের অনুসারীরাই ইমাম হুসাইনকে ( আ ) কারবালায় শহীদ করেছিল । কিন্তু মহান আল্লাহ ও মহানবী ( সা ) এ হত্যাকাণ্ডকে সমগ্র উম্মতের সাথে সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কিত করেছেন। কারণ , উম্মতের উচিত ছিল বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইনের ( আ ) সমর্থক , অনুসারী ও সহগামী হওয়া , তাঁকে সাহায্য করা এবং রাসূলুল্লাহর ( সা ) পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ ) শত্রুদের [ বনী উমাইয়া , পলীদ ( পাপাত্মা ) ইয়াযীদ ] হাত থেকে তাঁকে রক্ষা করা । অথচ মুসলিম উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সেদিন নির্বিকার ও চুপচাপ বসে থেকে ইমাম হুসাইন ও তাঁর মুষ্টিমেয় গুটিকতক অনুসারীকে কারবালায় ইয়াযীদের সেনাবাহিনী ও সমর্থকদের হাতে নৃশংস ভাবে শুধু নিহত ও শহীদ হতে দেখেছে এবং এ ক্ষেত্রে উম্মাতের এক বিরাট অংশ সন্তুষ্টি প্রকাশ এবং বনী উমাইয়ার দৃষ্টিভঙ্গীই গ্রহণ করেছে । সুতরাং উম্মতের সংখ্য়াগরিষ্ঠ অংশ সেদিন বিচ্যুত ছিল বলেই ইমাম হুসাইনকে (আ) সাহায্য করা থেকে তারা বিরত ছিল এবং বনী উমাইয়ার এ জঘন্য অন্য়ায় ও অপরাধের বরাবরে নিশ্চুপ ও নির্বিকার বসে ছিল । তাই মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দৃষ্টিতে তারাও ( উম্মত ) অপরাধী হত্যাকারীদের সাথে এ হত্যাকাণ্ডে অংশীদার বলেই উম্মতকে ইমাম হুসাইনের হত্যাকারী বলেছেন রাসূলুল্লাহ ( সা ) এবং মহান আল্লাহও হযরত জিব্রাঈলের ( আ ) মাধ্যমে রাসূলুল্লাহকে ( সা ) জানিয়েছিলেন যে তাঁর উম্মত তাঁর পরে তাঁর দৌহিত্র হুসাইনকে (আ) কারবালায় হত্যা ও শহীদ করবে এবং হযরত জিব্রাঈল ( আ ) কারবালায় ইমাম হুসাইনের ( আ ) শাহাদত বরণের স্থানের লাল রক্তিম বর্ণের মাটি এনে রাসূলুল্লাহকে ( সা ) দিয়েছিলেন । আর রাসূলুল্লাহ ( সা ) তখন ক্রন্দন করেছিলেন এবং সেই মাটি উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্ম-ই সালামাহর ( রা ) কাছে আমানত রেখেছিলেন এবং তাঁকে বলেছিলেন যে যে দিন এ মাটি রক্তে পরিণত হবে সে দিন জানবে যে হুসাইনকে হত্যা ও শহীদ করেছে বিপথগামীরা । আর এ থেকে প্রমাণিত হয় যে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা ) ইমাম হুসাইনের (আ) শাহাদত বরণের বহু বছর আগেই তাঁর ( আ ) শাহাদত বরণের কথা শোনার পর শোক প্রকাশ ও ক্রন্দন করেছেন । আর আমরাও মহানবীর ( সা ) অনুসরণ করে কারবালায় আশুরার দিবসে ( ১০ মুহাররম ) ইমাম হুসাইনের ( আ ) শাহাদত বরণের কথা যখনই স্মরণ করব তখনই কাঁদব এবং শোক প্রকাশ করব । তাই যারা বলে যে ইমাম হুসাইনের ( আ ) শাহাদতে ক্রন্দন ও শোক প্রকাশ বিদআত তারা আসলেই হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা ) পবিত্র সুন্নাহ ভুলে গিয়ে বনী উমাইয়ার প্রবর্তিত কুপ্রথা ও বিদআতেরই অনুসারী হয়ে ইসলাম , পবিত্র কুরআনের শিক্ষা ও মহানবীর সুন্নাহ বিরোধী এ সব আজে বাজে ভিত্তিহীন কথা বলছে । কারণ , হযরত ইউসুফকে ( আ ) হিংস্র প্রাণী হত্যা করে খেয়ে ফেলার মিথ্যা খবর দেওয়া হলে হযরত ইয়াকূব ( আ ) ইউসুফের ( আ ) শোকে বছরের পর বছর ও বহু যুগ ধরে ক্রন্দন ও শোক প্রকাশ করতে করতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং মহান আল্লাহ এ জন্য হযরত ইয়াকূবকে ( আ ) ইউসুফের ( আ ) জন্য শোক প্রকাশের কারণে বিন্দুমাত্র তিরষ্কার তো করেন নি বরং তাঁকে বিন্দুমাত্র অভিযুক্ত এবং তাঁর কোনো সমালোচনাও করেন নি যে [[ তিনি ( ইয়াকূব ) আল্লাহ পাকের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন , ঐশী ক্বাযা , ক্বদর ও ফয়সালায়ে তাঁর ঈমান নেই !! মানুষ আপন জন হারানোর জন্য অল্প কিছুদিন শোক পালন করে । আর হযরত ইয়াকূব ( আ ) পু্ত্র বিয়োগে বছরের পর বছর যুগের পর যুগ ধরে শোক করেই যাচ্ছেন এমনকি এ কাজ করতে করতে নিজের শারীরিক ক্ষতিও করে ফেলেছেন অর্থাৎ ইউসুফের শোকে কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেছেন । সাধারণ মানুষের জন্যই এ কাজ নিন্দনীয় ও ন্যাক্কারজনক । অথচ হযরত ইয়াকূবের ( আ ) মতো পয়গম্বরের ক্ষেত্রে এটা তো একদম বেমানান এবং অনুচিৎ !!! কারণ নবীরা ( আ ) মানব জাতির আদর্শ এবং তাদের অস্থির ও অধৈর্য্যশীল হওয়া মোটেও শোভনীয় নয় । তাঁদের জন্য হারাম ও বিদআত সম্পূর্ণ অকল্পনীয় এবং তা সবচেয়ে জঘন্য ও সবচেয়ে বড় পাপ বলেই গণ্য হবে ।]]

আর এ সব বক ধার্মিক ও কাঠখোট্টারা ইমাম হুসাইনের ( আ ) চরম মযলূম অবস্থায় ইয়াযীদীদের হাতে নৃশংসভাবে সংগী সাথী , সন্তান ও আত্মীয় স্বজন সহ কারবালায় শাহাদত বরণের উপলক্ষ্যে ও স্মরণে হযরত ইয়াকূব ( আ ) ও মহানবীর ( সা ) মতো ক্রন্দন ও শোক প্রকাশকে কিভাবে হারাম ও বিদআত বলে ? বাস্তবে এরাই হচ্ছে নিজেদের প্রভু বনী উমাইয়ার মতোই বিদআতপন্থী , বিচ্যুত ও পথভ্রষ্ট । আসলে বনী উমাইয়া , ইয়াযীদ , উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ ইবনে আবীহ্ , শিমার , উমর ইবনে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস এবং কাযী শুরাইহের মতো বনী উমাইয়া খিলাফতের পোষ্য দরবারী আলেমরাই উমাইয়া বংশীয়দের জঘন্য অপকর্ম ঢাকার জন্য এবং জনগণ যেন তাদের ঘৃণা না করে সে জন্য তারা অত্যাচরিত মযলূম শহীদ ইমাম হুসাইন ( আ ) এবং রাসূলুল্লাহর ( সা ) আহলুল বাইতের ( আ ) শাহাদতের জন্য ক্রন্দন ও শোক প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার জন্য় এ ধরণের মনগড়া ফতওয়া দিয়েছে এবং এভাবে সাকালাইন অর্থাৎ পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের ( আ ) পথ যা হচ্ছে সিরাত -ই মুস্তাকীম তা থেকে বিচ্যুত করে উম্মতকে বনী উমাইয়া ফিতনা ও ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে যার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা ) নিজেই । যেমনঃ আমর ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ ইবনে আমর ইবনে সাঈদ বলেছেনঃ আমার দাদা আমাকে জানিয়েছেন ও বলেছেনঃ আমি মদীনায় মসজিদে নববীতে হযরত আবূ হুরাইরার ( রা ) সাথে বসা ছিলাম এবং আমাদের সাথে মারওয়ানও ছিল । তখন আবূ হুরাইরা বললেনঃ আমি সাদিক মাসদূককে ( সা ) বলতে শুনেছিঃ কুরাইশ গোত্রের কতিপয় অল্প বয়স্ক তরুণের হাতে আমার উম্মতের ধ্বংস । অতঃপর মারওয়ান বললঃ ঐ সব অল্প বয়স্ক তরুণদের ওপর আল্লাহর লানত ( অভিশাপ ) । তখন হযরত আবূ হুরাইরা বললেনঃ যদি তুমি ( হে মারওয়ান ) ইচ্ছা করতে যে আমি বলে দেই যে তারা হচ্ছে অমুক বংশীয় এবং অমুক বংশীয় তাহলে আমি তা করতাম ( বলতাম ) । অতঃপর শামে যখন বনী মারওয়ান ( মারওয়ানের সন্তানগণ ) রাজত্ব ও বাদশাহী করায়ত্ব করে তখন আমি ( আমর ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ ) আমার দাদার ( সাঈদ ইবনে আমর ইবনে সাঈদ ) সাথে তাদের কাছে গমন করি । তিনি ( সাঈদ ) তাদেরকে ( বনী মারওয়ান ) অল্প বয়স্ক তরুণ যুবক দেখতে পেলে আমাদেরকে বললেনঃ খুব সম্ভবতঃ এরাই হতে পারে ( সেই সব অল্প বয়স্ক যুবক যাদের হাতে উম্মতের ধ্বংস হবে ) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত । আমরা বললামঃ আপনি অধিক অবগত আছেন ।

هلکة أمَّتي علی يدي غلمَة من قريش

( দ্রঃ সহীহ বুখারী , কিতাবুল ফিতান , হাদীস নং ৭০৫৮ , পৃঃ ১৭৭৪ – ১৭৭৫ , প্রথম সংস্করণ , ২০০৮ , দারুল ফিকর , বৈরুত , লেবানন )

যে উম্মত রাসূলুল্লাহর ( সা ) পরে হযরত আলীর ( আ ) সাথে গাদ্দারী ( বিশ্বাসঘাতকতা ) করবে এবং তাকে শহীদ করবে অথচ আলী থাকবেন রাসূলুল্লাহর মিল্লাত ( ধর্ম ) , সুন্নাত ও সীরাতের ওপর বহাল ও প্রতিষ্ঠিত , যে উম্মত মহানবীর ( সা ) পরে তাঁর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র বেহেশতের যুবকদের নেতা হযরত ইমাম হুসাইনকে ( আ ) হত্যা ও শহীদ করবে এবং মহানবীর ( সাঃ ) পবিত্র আমানত সাকালাইন ( দুটো অতি ভারী মূল্যবান জিনিস ) : কিতাবুল্লাহ ও তাঁর ( সাঃ ) অতিনিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর (ইতরাত ) আহলুল বাইতের ( আঃ) পথ অর্থাৎ সিরাত-ই মুস্তাকীম ছেড়ে কুলাঙ্গার অল্প বয়স্ক যুবক বনী উমাইয়া , বনী আবী সুফিয়ান ও বনী মারওয়ানের আনুগত্য ও অনুসরণ করবে তখন সেই উম্মতের পরিণতি ধ্বংস হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে কি ? আর প্রতিষ্ঠিত সহীহ মুতাওয়াতির হাদীস অনুযায়ী মুয়াবিয়া হচ্ছে জাহান্নামের দিকে আহবানকারী এবং জলীলুল কদর সাহাবী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে ( রা ) হত্যাকারী বিদ্রোহী যালিম গোষ্ঠীর নেতা অর্থাৎ সে হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী ( বাঘী ) ও যালিম এবং জাহান্নামের আগুনের দিকে সবচেয়ে বড় আহবায়ক । এটা কি সম্ভব যে জাহান্নামের দিকে আহবানকারী বিদ্রোহী জালিম গোষ্ঠীর নেতা ও সর্দার যে নিজে এই বিদ্রোহী ও জালেম গোষ্ঠীটি গঠন করেছে সে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী , জালেম ও জাহান্নামের দিকে সবচেয়ে বড় আহবানকারী বলে গণ্য হবে না ? মহানবী ( সা ) আম্মারের ( রা ) ব্য়াপারে বলেছিলেনঃ আম্মারের জন্য দুঃখ ও শোক ! তাকে বিদ্রোহী যালিম গোষ্ঠীটি হত্য়া করবে , সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করবে এবং তারা তাকে ( জাহান্নামের ) আগুণের দিকে আহবান করবে ।( ঐ অবস্থায় ) আম্মার মহানবীর এ কথা শুনে বলছিলেনঃ আমি মহান আল্লাহর কাছে ফিতনা সমূহ থেকে পানাহ ( আশ্রয় ) চাচ্ছি ।

وقال ( ص ) : ويحَ عمّار! تقتله الفئة الباغية يدعوهم إلَی الجنّة ويدعونه إلَی النّارِ قال: يقول عمّار : أعوذ بالله من الفِتَنِ .

( দ্রঃ সহীহ বুখারী , কিতাবুস সালাত , হাদীসনং ৪৪৭ , পৃঃ ১২১ )

এখানে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে , হযরত আলীর ( আ ) বিরুদ্ধে মুয়াবিয়ার বিদ্রোহ , বাইআত ও আনুগত্য না করা , বিদ্রোহ , যুদ্ধ , হযরত আলীর খিলাফত শাসিত এলাকা ও অঞ্চল সমূহে আক্রমণ চালিয়ে নিরীহ জনগণ এবং হযরত আলীর অনুসারী ও ভক্তদের হত্যা ও তাদের সর্বস্ব লুন্ঠন , তাদের ঘর বাড়ী এবং শস্যক্ষেত্র , খেতখামার ও পশুপাখী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া অর্থাৎ জনগণ ও প্রজাদের মাঝে ভয়ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করা এবং উৎকোচ ,অবৈধ সুযোগ – সুবিধা , উচ্চ সরকারী পদ ও সামাজিক পদমর্য্যাদার লোভ অথবা ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের লোকজনকে নিজের পক্ষে আনা বা অন্ততঃ হযরত আলীর (আ ) ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় ও নিস্পৃহ করা এবং বাইতুল মাল তছরুপ ও তা ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করাকে অনেকেই মুয়াবিয়ার ইজতিহাদ ( ? ) বলে অভিহিত করে থাকেন এবং মুয়াবিয়াকেও মুজতাহিদ বলে থাকেন । অর্থাৎ এদের মতে হযরত আলী যেমন মুজতাহিদ ছিলেন ঠিক তেমনি মুয়াবিয়াও নাকি মুজতাহিদ ছিলেন এবং আলী যেমন ইজতিহাদ করেছিলেন এবং তার ইজতিহাদ সঠিক ছিল বিধায় পরকালে তিনি (আ ) পাবেন দুটো পুরস্কার এবং মুয়াবিয়া ইজতিহাদে ভুল করায় কেবল একটি পুরস্কার পাবেন শুধু ইজতিহাদ করার জন্য ! আসলে মুয়াবিয়ার ভক্ত ও প্রেমিক এ সব ব্যক্তিরা সুস্থ মন ও বিবেক নিয়ে ভেবেও দেখেন না যে এগুলো আসলে ইজতিহাদের ক্ষেত্র ও বিযয়ই ছিল না । মুয়াবিয়া ও মুআবিয়ার মতো ব্যক্তিদের এ সব ইজতিহাদ ছিল সুস্পষ্ট শরয়ী নস্সের ( আয়াত , হাদীস ও সুন্নাহ্ ) পরিপন্থী ইজতিহাদ যা হচ্ছে সম্পূর্ণ অবৈধ , নিষিদ্ধ ও নাজায়েয । বিদ্রোহ , জুলুম , বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি , সম্মানিত পূণ্যবান ব্যক্তিদের হত্যা , রাষ্ট্রীয় অর্থ তহবিল ও বাইতুল মালে অবৈধ হস্তক্ষেপ , তছরুপ এবং তা অবৈধ ভোগদখল ও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করা , লুন্ঠন ইত্যাদির কোনটি বৈধ শরয়ী ইজতিহাদ বলে গণ্য হবে ? বিদ্রোহী জালিম মুফসিদ ফিল আর্দ্ব ( পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ) , অপরাধী , পাপী ,দুর্নীতি পরায়ণ , সম্মানিত প্রাণের হত্যাকারী ঘাতক ( কাতিলুন নাফসিল মুহতারামাহ্ ) কি মুজতাহিদ হতে পারে সেখানে যেখানে পবিত্র কুরআন এবং মহানবীর ( সা ) সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন নস্স ( আয়াত ও নির্ভর যোগ্য় শক্তিশালী প্রতিষ্ঠিত হাদীস ও রেওয়ায়ত অর্থাৎ সুন্নাহ ) বিদ্যমান ? মুয়াবিয়া এবং তার মতো ব্য়ক্তিদের এ ধরণের অবৈধ ইজতিহাদের কারণে উম্মাতের মধ্যে অনৈক্য , অশান্তি , গোলযোগ ও গৃহযুদ্ধ বেঁধে লক্ষাধিক মুসলমানের প্রাণহানি হয়েছিল তখন যার চরম নেতিবাচক জের ও প্রভাব আজও বিদ্যমান ও অব্যাহত আছে । এ সব ইজতিহাদ যে পথভ্রষ্টতা , শয়তানের প্রক্ষেপ ও জাহান্নামী ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে মহানবীর দ্ব্যর্থহীন এ উক্তি ঃ আম্মারের জন্য দুঃখ ও শোক ! বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি তাকে হত্যা করবে সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করবে এবং তারা তাকে আহবান করবে আগুনের দিকে । আসলে মহানবী ( সা ) স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর উম্মতকে যে যে দল আম্মারকে হত্যা করবে তারা হবে নির্দিষ্ট বিদ্রোহী জালেম গোষ্ঠী ও জাহান্নামী । আর মুয়াবিয়ার অবৈধ ইজতিহাদের কারণেই এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির উদ্ভব ও উৎপত্তি ( মুয়াবিয়াই ছিল এ বিদ্রোহী জালেম গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা )। তাই এতগুলো মানুষকে মুয়াবিয়া তাঁর জাহান্নামী ইজতিহাদ দিয়ে বিপথগামী ও জাহান্নামী করেছে এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য নষ্ট করেছে এবং উম্মাহকে মহানবীর ( সা ) রেখে যাওয়া মীরাস ( ঐতিহ্য ) সাকালাইনের [ পবিত্র কুরআন ও তাঁর ( সা ) আহলুল বাইত – আ – ] পথ অর্থাৎ সিরাত-ই মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত করে ধ্বংসের অতল গহবরে নিক্ষেপ করেছে যার থেকে মুক্তি পাওয়া আজও অত্যন্ত দুঃসাধ্যই রয়ে গেছে । কিন্তু আজও বিদ্রোহী জালিম গোষ্ঠীর সর্দার ও নেতার স্তুতি ও প্রশস্তি কম গাওয়া হচ্ছে না । অথচ যারা মুআবিয়ার স্তুতি গাচ্ছে তারা কস্মিনকালে ভেবেও দেখে না যে বিদ্রোহী জালিম গোষ্ঠীর নেতা মুয়াবিয়া হবে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী , জালেম ও অপরাধী !! তাই ইজতিহাদের দোহাই দিয়ে সুস্পষ্ট জঘন্য অপরাধ , পাপ , অধর্ম ও অন্যায়কে ঢাকা ও ধামাচাপা দেওায় যায় না । মহান আল্লাহ সবচেয়ে বড় ন্যায় বিচারক । অতএব ফাঁকি ও গোজামিল দিয়ে পার পাওয়ার উপায় নেই মহান আল্লাহর আদালতে ।

আর এই জাহান্নামী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সর্দার মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ানের কুলাঙ্গার বদমাইশ পুত্র ইয়াযীদ হচ্ছে ইমাম হুসাইনে্র ( আ ) হত্যার আদেশদানকারী এবং তার আদেশেই উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ উমর ইবনে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ও শিমারের নেতৃত্বে সেনা বাহিনী পাঠিয়ে কারবালায় ইমাম হুসাইনকে নিষ্ঠুরভাবে বধ ও শহীদ করেছিল এবং কারবালার মর্মন্তুদ হত্য়াযজ্ঞ ও ট্র্যাজেডি ঘটিয়েছিল। ইয়ায়ীদ ও উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ , উমর ইবনে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস অর্থাৎ কারবালার মহা সর্বনাশা মর্মন্তুদ ট্র্যাজেডির এ সব খল নায়ক ছিল বিবেকহীন ঈমানহীন চরিত্রহীন ন্যায়নীতিহীন অল্প বয়স্ক যুবক । ইয়াযীদ তার শাসনামলের ২য় বর্ষে সেনা বাহিনী পাঠিয়ে মদীনা নগরী আক্রমণ করে ১০০০০ অধিবাসীকে হত্যা ও শহর লুন্ঠন করিয়েছিল এবং তার পাপীষ্ঠ সেনাবাহিনী তিনদিনের জন্য মদীনার নারীদের ধর্ষণ করছিল যার ফলে ১০০০ কুমারী অবৈধ জারজ সন্তান প্রসব করেছিল । আর তৃতীয় বর্ষে ইয়াযীদের নির্দেশে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের বিদ্রোহ দমন করার জন্য জাহান্নামী ইয়াযীদী সেনাবাহিনী পবিত্র মক্কা নগরীতে আক্রমণ চালিয়ে পবিত্র কাবা শরীফ অগ্নিদগ্ধ করেছিল । এই ছিল জাহান্নামী অভিশপ্ত খবীস বিষবৃক্ষ বনী উমাইয়া খিলাফত ( বনী আবূ সুফিয়ান ও বনী মারওয়ানের খিলাফত ) যা আসলে উম্মতের ধবংস সাধন করেছে এবং আজও অশুভ খবীস বিষবৃক্ষ বনী উমাইয়ার শিকর ও অপবিত্র প্রেতাত্মা বেশ কিছু বকধার্মিক বিদআত পন্থীদের মধ্যে রয়েই গেছে বলে ইমাম হুসাইন ( আ ) ও আহলুল বাইতের ( আ ) শাহাদতে ক্রন্দন ও শোক প্রকাশকে বিদআত ও হারামের মনগড়া ফতওয়া ঠুকছে।

হযরত ফাতিমা (আ) , হযরত আলী (আ) , ইমাম হাসান ( আ ) ও ইমাম হুসাইন ( আ ) কিয়ামত দিবসে রাসূলুল্লাহর ( সা ) সাথে থাকবেনঃ

৬. হযরত আবূ সাঈদ আল – খুদরী ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত আছে যে মহানবী ( সা ) ফাতিমার কাছে প্রবেশ করে বললেনঃ আমি , তুমি , এই ঘুমন্ত ব্যক্তি অর্থাৎ আলী এবং এরা দুজন ( হাসান ও হুসাইন ) কিয়ামত দিবসে একই স্থানে থাকব ।

( হাকিম নিশাপুরী বলেনঃ ) এটা সহীহুল ইসনাদ হাদীস এবং তারা ( বুখারী , মুসলিম ) তা ইখরাজ করেন নি । আর যাহাবী তাঁর সাথে একমত পোষণ করে বলেছেনঃ ( এ হাদীসটি ) সহীহ । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , খঃ ৩ , পৃঃ ৩৪৮ )

ইমাম হুসাইনের ( আ ) প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী দোযখের আগুনে প্রবেশ করবেঃ

৭. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সা ) বলেছেনঃ হে বনী আব্দুল মুত্তালিব ! আমি তোমাদের জন্য তিন বার মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যে তিনি যেন তোমাদের দণ্ডায়মান ( সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ) ব্যক্তিকে দৃঢপদ করে দেন এবং তোমাদের পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ ব্যক্তিকে হিদায়ত এবং তোমাদের জাহিল ( মুর্খ ) ব্যক্তিকে শিক্ষা ও জ্ঞান দান করেন । আমি মহান আল্লাাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যে তিনি তোমাদেরকে উদার দানশীল , সাহসী বীর এবং দয়ালু করে দেন । অতঃপর কোনো ব্যক্তি যদি কাবার রুকন ও মাকামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থেকে নামায পড়ে ও রোযা রাখে এবং সে মুহাম্মাদের ( সা ) আহলুল বাইতের ( আ ) প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ কারী হয়ে মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তাহলে সে ( অবশ্যই জাহান্নামের ) আগুনে প্রবেশ করবে । ( হাকিম নিশাপুরী বলেনঃ ) এটা মুসলিমের শর্তে হাসান সহীহ হাদীস এবং তারা ( বুখারী ও মুসলিম ) তা ইখরাজ ( পূর্ণসনদসহ নিজেদের গ্রন্থে তা বর্ণনা ) করেন নি । ( আর যাহাবী তাঁর ( হাকিম নিশাপুরী ) সাথে একমত পোষণ করে বলেছেনঃ ( এ হাদীস ) মুসলিমের শর্তে সহীহ । ( দ্রঃ আল – মুস্তাদ্রাক , খঃ ৩ , পৃঃ ৩৫৯ , হাদীস নং ৪৭৭০ )

মহানবীর আহলুল বাইতের অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন ইমাম হুসাইন ( আ ) । সুতরাং ইমাম হুসাইনের (আ) প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ কারী অবশ্যই দোযখে প্রবেশ করবে ।

ইমাম হুসাইন ( আ ) রাসূলুল্লাহর ( সা ) পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ ) অন্তর্ভূক্তঃ

৮. আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত । উম্ম-ই সালামাহ্ বলেনঃ ‘’ আমার ঘরেই নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ চান তোমাদের থেকে রিজস ( কলুষ , পাপপঙ্কিলতা ও নাপাকী ) দূর করতে হে আহলুল বাইত এবং তোমাদেরকে পবিত্র করার মতো ( সম্পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করতে ।‘’ ---- এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল । উম্মে সালামাহ্ বলেনঃ ‘’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সা) আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনের কাছে (পয়গাম) পাঠালেন ( অর্থাৎ তাদেরকে ডেকে আনলেন) এবং এরপর বললেনঃ’’ এরাই আমার আহলুল বাইত ।‘’

هؤلاء أهل بیتي .

( হাকিম বলেনঃ) এটা বুখারীর শর্তে সহীহ হাদীস এবং তারা ( বুখারী ও মুসলিম তাদের গ্রন্থে ) তা ইখরাজ করেন নি । যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করে বলেছেনঃ (এ হাদীস) বুখারীর শর্তে ( সহীহ ) । ( দ্রঃ আল – মুস্তাদ্রাক , খঃ ৩ , পৃঃ ৩৫৭ , হাদীস নং ৪৭৬৩ )

৯. ওয়াসীলা ইবনে আস্কা’ বলেছেনঃ আমি হযরত আলীর কাছে আসলাম এবং তাঁকে পেলাম না ( অর্থাৎ তিনি ঘরে ছিলেন না ) । আর হযরত ফাতিমা আমাকে বললেনঃ তিনি ( আলী ) রাসূলুল্লাহর ( সা ) কাছে গেছেন তাকে ডেকে আনতে । অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহকে সাথে নিয়ে ফিরে আসলেন ; অতঃপর তারা দুজন ( রাসূলুল্লাহ ও আলী ঘরে ) প্রবেশ করলেন এবং আমিও তাদের সাথে প্রবেশ করলাম । এরপর রাসূলুল্লাহ ( সা ) হাসান ও হুসাইনকে ডাকলেন এবং তাদের দুজনকে তার দুই উরুর ওপর বসালেন এবং ফাতিমা ও তার স্বামীকে তার বক্ষদেশের কাছে এনে তাদের সবার ওপর একটি বস্ত্র ( চাদর ) টেনে দিলেন এবং তিলাওয়াৎ করলেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ চান তোমাদের থেকে রিজস ( কলুষ , পাপপঙ্কিলতা ও নাপাকী ) দূর করতে হে আহলুল বাইত এবং তোমাদেরকে পবিত্র করার মতো ( সম্পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করতে । ( আহযাব ৩৩ঃ ৩৩ ) অতঃপর তিনি ( সা) বললেনঃ এরাই আমার আহলুল বাইত । হে আল্লাহ ! আমার আহলুল বাইতই আহাক্ক ( সবচেয়ে সত্যপন্থী , হকদার ও সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ) ।

هؤلاء أهل بيتي اللهمّ أهل بيتي أحقّ

( হাকিম নিশাপুরী বলেনঃ ) এটা শাইখাইনের শর্তে সহীহ হাদীস এবং তারা তা ইখরাজ করেন নি । যাহাবী আত – তালখীস গ্রন্থে বলেছেনঃ ( এ হাদীস ) মুসলিমের শর্তে সহীহ । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , খঃ ৩ , পৃঃ ৩৫৭ , হাদীস নং ৪৭৬৪ )

১০. হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেনঃ এক প্রত্যুষে রাসূলুল্লাহ ( সা ) বের হলেন এবং তাঁর ওপর ছিল কালো পশম নির্মিত নকশা অঙ্কিত একটি সেলাই বিহীন চাদর বা জামা । অতঃপর হাসান ও হুসাইন ( আ ) আসলে তিনি তাদের দুজনকে তার সাথে জামার ভিতরে ঢুকালেন , এরপর ফাতিমা আসলে তাকেও তিনি ( সা ) তাদের দুজনের সাথে ( জামার ভিতরে ) ঢুকালেন , এরপর আলী আসলে তাঁকেও তিনি ( সা ) তাঁদের সাথে জামার তলে ঢুকিয়ে তিলাওয়াত করলেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ চান তোমাদের থেকে রিজস ( কলুষ , পাপপঙ্কিলতা ও নাপাকী ) দূর করতে হে আহলুল বাইত এবং তোমাদেরকে পবিত্র করার মতো ( সম্পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করতে । ( সূরা – ই আহযাবঃ ৩৩ )

( হাকিম নিশাপূরী বলেনঃ ) এ হাদীসটি শাইখাইনের শর্তে সহীহ হাদীস এবং তারা তা ইখরাজ করেন নি । যাহাবী তার আত – তালখীস গ্রন্থে তার সাথে একমত পোষণ করে বলেছেনঃ ( এ হাদীস ) বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ( সহীহ ) । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , খঃ ৩ , পৃঃ ৩৫৭ – ৩৫৮ , হাদীস নং ৪৭৬৫ )

সূরা – ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতের শানে নুযূল এবং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে রাসূলুল্লাহ ( সা ) তাঁর নিজের পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ) পরিচয় তুলে ধরেছেন

যারা হচ্ছেন হযরত আলী , হযরত ফাতিমা , ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ( আঃ ) ।

সূরা – ই আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতের শানে নুযূলে বর্ণিত হাদীস সমূহে ইমাম ভ্রাতৃদ্বয় ( হাসান ও হুসাইন – আ - ) রাসূলুল্লাহর দুই পুত্রসন্তান ( দৌহিত্র )

১১. আমর ইবনে সাদ স্বীয় পিতা ( সাদ ) থেকে । তিনি ( সাদ ) বললেনঃ অতঃপর তোমার কাছে জ্ঞান ( কুরআন ) এসে যাওয়ার পর যদি কেউ ( নজরানের খ্রিস্টানগণ ) তোমার সাথে তার ( ঈসার ) ব্যাপারে তর্ক বিতর্ক করে তবে বল ( আচ্ছা ময়দানে ) এস ,আমরা ডাকি আমাদের পুত্রসন্তানদেরকে এবং ( তোমরা ডাক ) তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে , ( আমরা ডাকি ) আমাদের নারীদেরকে এবং ( তোমরা ডাক ) তোমাদের নারীদেরকে , ( আমরা ডাকি ) আমাদের নিজ সত্তাদেরকে এবং ( তোমরা ডাক ) তোমাদের নিজ সত্তাদেরকে , অতঃপর সকলে মিলে (আল্লাহর দরবারে ) নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লানত ( অভিসম্পাত ) বর্ষণ করি । ( সূরা – ই আলে ইমরানঃ ৬১ ) । --- এ আয়াতটি নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনকে ( রাঃ ) ডেকে বললেনঃ এরাই আমার আহল ( আহলুল বাইত ) ।

( হাকিম নিশাপুরী বলেনঃ ) শাইখাইনের ( বুখারী ও মুসলিম ) শর্তে এ টি সহীহ হাদীস এবং তারা তা ইখরাজ করেন নি । আর যাহাবী আত - তালখীস গ্রন্থে তার সাথে একমত পোষণ করে বলেছেনঃ ( হাদীসটি ) বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ( সহীহ ) । ( প্রাগুক্ত , পৃঃ ৩৬০ – ৩৬১ হাদীস নং ৪৭৭৭ )

১২.স্বীয় পিতা সাদ থেকে জাবির ইবনে সাদঃ সাদ বলেনঃ আমরা ডাকি আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে ( তোমরা ডাক ) তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে ..... এ আয়াত যখন নাযিল হয় তখন রাসূলুল্লাহ ( সা) আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনকে ডেকে বললেনঃ হে আল্লাহ ! এরাই আমার আললুল বাইত । এ হাদীসের ইসনাদের বিশুদ্ধতার ওপর শাইখাইন ( বুখারী ও মুসলিম ) একমত পোষণ করেছেন এবং এ ইসনাদের ভিত্তিতে ইহতিজাজ ( প্রমাণ ও যুক্তি পেশ ) করেছেন । তবে এ ইসনাদের ভিত্তিতে এ হাদীসটি ইখরাজ করেন নি । কিন্তু তারা এ ইসনাদের ভিত্তিতে আবূ তুরাবের কাহিনী বর্ণনা ( ইখরাজ ) করেছেন ( নিজ নিজ হাদীস গ্রন্থে ) । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৭৭৯ , পৃঃ ৩৬১ )

এ আয়াত ( সূরা – ই আলে ইমরানঃ ৬১ ) মুবাহালার আয়াত নামে প্রসিদ্ধ । এ আয়াতের শানে নুযুলের হাদীস সমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে মহানবীর ( সাঃ ) পবিত্র মাসূম আহলুল বাইত ( আঃ ) তাঁর জীবদ্দশায় কেবল হযরত আলী , হযরত ফাতিমা , ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ( আ ) যাঁদেরকে তিনি ( সা) মুবাহালার দিবসে নাজরানের খ্রীষ্টানদের সাথে তাঁর নুবুওয়াত ও ইসলামের সত্যতা প্রমাণের মুবাহালায় নিজের সাথে এনেছিলেন । যেহেতু আহলুল বাইত ( আঃ ) মাসূম ছিলেন সেহেতু কেবল তাঁরাই হয়েছিলেন রাসূলুল্লাহর নুবুওয়াত ও ইসলামের সত্যতার সাক্ষী এবং মুবাহালায় তাঁর ( সাঃ ) সঙ্গী । আর এই কারণে তাঁরা ব্যতীত উম্মতের অন্য কোনো ব্যক্তিকে সাথে নেন নি রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) । কারণ , রাসূলুল্লাহর ( সাঃ ) জীবদ্দশায় কেবল তাঁর আহলুল বাইত ( আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইন – আঃ – যারা ছিলেন আসহাব-ই কিসা তাঁরা ) ব্যতীত উম্মতের আর কোনো ব্যক্তি মাসূম ছিলেন না ।

হযরত ইমাম হাসান ( আ ) ও ইমাম হুসাইন ( আ ) ছিলেন সবচেয়ে সত্য়বাদিনী নারীর ( হযরত ফাতিমার – আ - ) সন্তান । আর ফাতিমা ছিলেন মহানবীর ( সাঃ ) পরে সবচেয়ে সত্যবাদিনী ( পরম সত্যবাদিনী ) অর্থাৎ সিদ্দীকা বরং সিদ্দীকা হযরত মারয়াম বিনতে ইমরানের ( আ ) চেয়েও অধিক পরম সত্যবাদিনী ( অধিক সিদ্দীকা ) এবং এ কারণে তিনি ( নবীদুহিতা হযরত ফাতিমা ) হচ্ছেন সিদ্দীকা -ই কুবরা এবং বেহেশতের নারীদের নেত্রী এমনকি হযরত মারয়ামের ( আ )ও নেত্রী । কারণ , মহানবী ( সা ) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল । মহানবী ( সা ) কর্তৃক আনয়নকৃত ইসলাম , ঐশী জ্ঞান , মারেফাত , আখলাক , শরিয়ত , পবিত্র আসমানী গ্রন্থ কুরআন এবং তাঁর সুন্নাহ হচ্ছে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ এবং সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধর্ম , জ্ঞান - মারেফাত , আখলাক ( চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট ) , শরিয়ত , আসমানী গ্রন্থ ও সুন্নাহ্ । আর সমগ্র সৃষ্টিকুলের মধ্যে মহানবীর ( সা ) পরে তাঁর পবিত্র আহলুল বাইতই ( আ ) সর্বশ্রেষ্ঠ । কারণ এই উম্মত সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত এবং আহলুল বাইত ( আ ) হচ্ছেন এই উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং উম্মতের নেতা ( মাওলা ও ওয়ালী ) এবং তাঁরা ( আহলুল বাইত ) রাসূলুল্লাহর ( সা ) অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তাঁরা ( আহলুল বাইত ) এই সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন ( ধর্ম ) , জ্ঞান – মারেফাত , আখলাক , শরিয়েত , আসমানী ঐশী গ্রন্থ ( পবিত্র কুরআন ) ও মহানবীর ( সা ) সুন্নাহর ধারক ও বাহক যা মুতাওয়াতির হাদীস -ই সাকালাইন থেকে প্রমাণিত । সুতরাং আহলুল বাইত এ কারণেই পূর্ববর্তী সকল নবী – রাসূল , উম্মতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং পূর্ববর্তী কোনো নবী – রাসূলের সময় দ্বীন ( ধর্ম ) ,ঐশী ইলাহী জ্ঞান – মারেফাত , আখলাক , শরিয়ত , আসমানী ঐশী কিতাব ও সুন্নাহ্ পূর্ণতা লাভ করে নি। তাই নিঃসন্দেহে হযরত ফাতিমা ( আ ) মারয়াম ও আসিয়া সহ সকল নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ , সিদ্দীকা -ই কুবরা এবং সকল নারীর নেত্রী । এমন মায়ের সন্তান হচ্ছেন ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন এবং নিঃসন্দেহ এটা তাঁদের অতুলনীয় মর্য্যাদা ও শান ।

১৩.হযরত আয়েশা ( রাঃ ) থেকে । যখনই তাঁর কাছে হযরত ফাতিমা বিনতুন নবীকে স্মরণ করা হত তখনই তিনি বলতেনঃ আমি ফাতিমার চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কোনো ব্যক্তিকে দেখি নাই একমাত্র তাঁকে যিনি জন্ম দিয়েছেন কেবল তিনি ( রাসূলুল্লাহ – সা - ) ব্যতীত ।

ما رأیت أحدا کان أصدق لهجة منها إلّا الّذي ولدها

( হাকিম নিশাপুরী বলেনঃ ) এটি মুসলিমের শর্তে সহীহ হাদীস এবং তারা ( বুখারী ও মুসলিম ) তা ইখরাজ করেন নি । আর যাহাবী আত – তালখীস গ্রন্থে তার সাথে একমত পোষণ করে বলেছেনঃ মুসলিমের শর্তে ( এ হাদীসটি সহীহ ) । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ৩৭১ , হাদীস নং ৪৮১৭ )

পবিত্র কুরআন ও মহানবীর ( সাঃ ) আহলুল বাইত ( আ ) মহানবীর (সা) রেখে যাওয়া দুটো ভারী আমানত এবং এ দুভয় কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না ।

১৪ . হযরত যাইদ ইবনে আরকাম ( রা ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সা ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি দুটো অতি ভারী জিনিস ( সাকালাইন )ঃ মহান আল্লাহর গ্রন্থ ( পবিত্র কুরআন ) এবং আমার আহলুল বাইত এবং এ দুটো আমার কাছে হাউযে উপনীত হওয়া পর্যন্ত কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না ।

( হাকিম নিশাপুরী বলেনঃ ) এটা শাইখাইনের শর্তে সহীহুল ইসনাদ হাদীস এবং তারা ( বুখারী ও মুসলিম ) তা ইখরাজ ( তাদের গ্রন্থে পূর্ণ সনদ সহ রিওয়ায়ত ) করেন নি । আর যাহাবী আত – তালখীস গ্রন্থে তার সাথে একমত পোষণ করে বলেছেনঃ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ( এ হাদীস সহীহ ) । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৭৬৯ , পৃঃ ৩৫৯ )

সাকালাইনের হাদীস মুতাওয়াতির । এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে মহানবীর ( সা ) আহলুল বাইত ( আ ) যাদের পরিচিতি আয়াত-ই তাতহীর ( সূরা-ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াত ) এবং মুবাহালার আয়াতের ( সূরা-ই আলে ইমরানঃ ৬১ ) শানে নুযুলে মহানবী ( সা ) থেকে বর্ণিত সহীহ প্রতিষ্ঠিত মুতাওয়াতির হাদীস সমূহে তুলে ধরা হয়েছে তাঁরা সবাই পবিত্র কুরআনের সাথে এবং পবিত্র কুরআনও তাঁদের সাথে চিরকাল বিদ্যমান থাকবে এবং তারা (আহলুল বাইত ) এ গ্রন্থের প্রকৃত ব্যাখ্যাকারী ( মুফাস্সির , ইসলাম ও সুন্নাহর ধারক বাহক এবং উম্মাহর মারজা ( অর্থাৎ দ্বীনী জ্ঞান ও মারেফাত , শরিয়তের বিধিবিধান এবং আখলাক (নীতি নৈতিকতা শিষ্ঠাচার) সবকিছুর জন্য় উম্মতকে তাদের কাছে রুজু করতেই হবে অন্যের কাছে নয় এবং তাদেরকে আকড়ে ধরার অর্থ হচ্ছে পবিত্র কুরআনকেই আকড়ে ধরা । সুতরাং আহলুল বাইত উম্মাহর আদর্শ ( উসওয়াহ ) এবং হাদী ( পথপ্রদর্শক ) । পবিত্র কুরআন যেমন মাসূম ( পবিত্র ও বিশুদ্ধ ) ঠিক তেমনি আহলুল বাইতও সকল পাপ , ভুল – ভ্রান্তি এবং বিস্মৃতি থেকে মাসূম ( পবিত্র , বিশুদ্ধ ও নিষ্পাপ )। তা না হলে পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের এ সহবিদ্যমানতা ( তালাযুম ) , অবিচ্ছিন্নতা ও অবিচ্ছেদ্যতার কোনো মানেই হয় না । স্মর্তব্য যে আহলুল বাইতের অপরাপর সদস্যের মতোই ইমাম হুসাইন (আ)ও পবিত্র কুরআনের সাথে আছেন এবং কখনোই এ গ্রন্থে থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না । আর এ কারণেই আহলুল বাইত ( আ ) মুসলিম উম্মাহর একমাত্র বৈধ কর্তৃপক্ষ । এতদর্থে আহলুল বাইত ( আ ) কি শুধু এই পাঁচ জনের মাঝেই সীমাবদ্ধ নাকি আহলুল বাইতের ( আ ) আরো সদস্য আছেন ? সাকালাইনের হাদীসে কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগে পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের মধ্যকার সহবিদ্যমানতা এবং অবিচ্ছেদ্যতা ও অবিচ্ছিন্নতা থেকে প্রমাণিত হয় যে প্রতিটি যুগে এই ইহলোকে পবিত্র কুরআনের সাথে পবিত্র মাসূম আহলুল বাইতের অন্ততঃ এক জন সদস্য বিদ্যমান থাকবেনই যিনি অবশ্যই হবেন যুগের ইমাম ও মহান আল্লাহর হুজ্জাত । প্রতিটি যুগেই মাসূম হুজ্জাত ইমাম বিদ্যমান থাকতেই হবে যাকে না চিনলে এবং আনুগত্য না করলে মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু । আর সহীহ প্রতিষ্ঠিত প্রমাণিত হাদীসে এ উম্মাতের বারো ইমাম , খলীফা , আমীরের কথা বলা হয়েছে যারা মহানবীর পরে কিয়ামত পর্যন্ত একের পর এক আগমন করবেন । তাহলে সমগ্র উম্মতের কাছে সহীহ প্রতিষ্ঠিত নির্ভরযোগ্য মুতাওয়াতির অকাট্য হাদীস সমূহের আলোকে পবিত্র কুরআনের সমকক্ষ ( ইদল عدل) মাসূম আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত এ বারো ইমাম যারা মহানবীর পরে কিয়ামত পর্যন্ত হবেন যুগের ইমাম । প্রতিটি যুগেই তাঁরা বিদ্যমান থাকবেন এবং সৃষ্টি জগতের ওপর তাঁরা হচ্ছেন মহান স্রষ্টার হুজ্জাত ( দলীল ) এবং মহানবীর ( সা ) সময় আহলুল বাইতের ( আ ) তিনজন মাসূম ইমামঃ ইমাম আলী (আ) , ইমাম হাসান ( আ ) এবং ইমাম হুসাইন ( আ ) বিদ্যমান ছিলেন এবং ইমাম হুসাইনের শাহাদতের পরে তাঁর বংশধারায় আরো ৯ মাসূম ইমাম একের পর এক এসেছেন এবং সর্বশেষ অর্থাৎ দ্বাদশ ইমাম যিনি হচ্ছেন একাদশ মাসূম ইমাম হাসান আল্ – আস্কারীর ( আ ) পুত্র ইমাম মাহদী ( আ ) তিনি দীর্ঘকালীন গাইবতে ( অন্তর্ধান ) আছেন এবং মহান যখন ইচ্ছা করবেন তখন তিনি গাইবত থেকে আবির্ভূত হয়ে সমগ্র বিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন এবং তখন ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহ্ সকল ধর্ম ও জাতিসমূহের ওপর জয়যুক্ত হবে । এতদ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন যা এই ক্ষুদ্র পরিসরে সম্ভব নয় ।

১৫. হযরত আবূ হুরাইরা ( রাঃ ) বলেনঃ মহানবী ( সাঃ ) আলী , ফাতিমা , হাসান এবং হুসাইনের ( আ ) দিকে তাকিয়ে বললেনঃ আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত যে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং তার সাথে শান্তি ও সন্ধিরত যে তোমাদের সাথে সন্ধি করে এবং শান্তি স্থাপন করে ।

( হাকিম নিশাপুরী বলেনঃ ) এটা হাসান হাদীস তালীদ ইবনে সুলাইমান থেকে আবূ আব্দিল্লাহ আহমাদ ইবনে হান্বালের হাদীসের কারণে । কারণ আমি এ রিওয়ায়ত ছাড়া তার আর কোনো রিওয়ায়ত পাই নি ।

যাহাবী তার আত – তালখীস গ্রন্থে এ হাদীস সনদ ও মতন সহ এনেছেন কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করা থেকে চুপ থেকেছেন । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৭৭১ , পৃঃ ৩৫৯ )

১৬. যাইদ ইবনে আরকাম বলেনঃ মহানবী ( সা ) আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনকে বললেনঃ আমি যুদ্ধরত তার বিরুদ্ধে যার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর এবং আমি তার সাথে সন্ধি ও শান্তি স্থাপন করি যার সাথে তোমরা সন্ধি ও শান্তি স্থাপন কর । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ৩৫৯ , হাদীস নং ৪৭৭২ )

উপরিউক্ত হাদীস সমূহের আলোকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ইমাম হুসাইনই (আ) হচ্ছেন নাজাতের তরী এবং হিদায়তের প্রদীপ এবং এই মহাসত্য কারবালায় স্পষ্ট প্রতিভাত হয়েছিল । আর এতদসংক্রান্ত হাদীসও বিদ্যমান আছে । যেমনঃ

১৭.একদা মহানবী ( সা ) সাহাবী উবাই ইবনে কাবের ( রা ) সাথে আলাপ কালে ইমাম হুসাইনের ( আ ) সিফাত ( গুণ ) ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বললেনঃ মহান আল্লাহর আরশের ডান পাশে লিখিত আছেঃ (হুসাইন) পথপ্রদর্শনকারী প্রদীপ এবং নাজাতের তরী ((দ্রঃ শেখ সাদূক সংকলিত কামালুদ্দীন এবং উয়ূনু আখবারির রিযা ( আ ) ))

مکتوب عن يمين عرش الله عزّ و جلّ : مصباح هاد و سفينة نجاة .

আল্লামাহ তাবার্সী সংকলিত গ্রন্থ ইলামুল ওয়ারায় এ হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ মহান আল্লাহর আরশের ডান পাশে অবশ্যই লিখিত আছঃ ( হুসাইন) পথপ্রদর্শনকারী প্রদীপ এবং নাজাতের তরী ।

আস-সিরাতুল মুস্তাকীম গ্রন্থে এ হাদীসটি এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ আরশের ডানপাশে লিখিত আছেঃ আর নিশ্চয়ই তিনি ( হুসাইন) হিদায়তের প্রদীপ এবং নাজাতের ( মুক্তি ) তরী ।

ইমাম হুসাইন ( আ ) কারবালায় স্বীয় জীবন এবং সঙ্গী – সাথী , সন্তান – সন্ততি , পরিবার – পরিজন ও আত্মীয় – স্বজনদেরকে মহান আল্লাহর পথে এবং মহান আল্লাহর ধর্ম ইসলামকে রক্ষার জন্য কুরবানী করেছিলেন এবং তাঁর আহলুল বাইতের ( আ ) নারী ও শিশুরা বন্দী হয়েছিলেন পাপীষ্ঠ নরাধম ইয়াযীদীদের হাতে । এ ভাবে খোদার দ্বীনকে রক্ষা করার নযীর মানব জাতির ইতিহাসে বিদ্যমান নেই । ইমাম হুসাইন নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ইসলাম , পবিত্র কুরআন , রাসূলুল্লাহর পবিত্র সুন্নাহ এবং পথহারা উম্মতকে কারবালায় তাঁর নিজের শাহাদত বরণের মাধ্যমে রক্ষা করেছিলেন বলেই মহানবী ( সা ) যথার্থই বলেছেনঃ হুসাইন হিদায়তের প্রদীপ ও নাজাতের তরী । তাই ইমাম হুসাইন ( আ ) এবং মহানবীর ( সা ) আহলুল বাইতের ( আ ) পথ ও আদর্শই হচ্ছে পবিত্র কুরআনের পথ , সাকালাইনের পথ অর্থাৎ সিরাত – ই মুস্তাকীম ( সরল সোজা সঠিক পথ ) । আর এ পথে চললেই কেবল মুক্তি ও নাজত পাওয়া সম্ভব । অন্য কোনো পথে নয় । কারণ অন্য সকল পথে বক্রতা , বিচ্যুতি ও ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই নেই । তাই মুসলমানদের উচিৎ ইমাম হাসানকে , ইমাম হুসাইনকে এবং তাঁদের মাতামহ রাসূলুল্লাহ ( সা ) এবং তাঁদের পিতামাতাকে ভালোবাসা এবং তাঁদের পথ ও আদর্শ অনুসরণ করা । হযরত আলী ইবনে আবী তালিব ( আ ) বর্ণনা করেছেনঃ মহানবী ( সাঃ ) হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে , এই দুজনকে , এদুজনের পিতাকে এবং এদুজনের মাতাকে ভালোবাসে সে কিয়ামত দিবসে আমার সাথে আমার স্থানে আছে (থাকবে ) ।

عن علي بن أبي طالب أنّ رسول الله – ص – أخذ بيد حسن و حسين فقال : مَن أحبَّني و أحبّ هذين و أباهما و أمّهما کان معي في درجتي يومَ القیامة .

আবূ ঈসা তির্মিযী বলেছেনঃ এটা হাসান গরীব হাদীস । কেবল এ সনদের মাধ্যমেই আমরা হযরত জাফার ইবনে মুহাম্মাদ ( আ ) থেকে এ হাদীসটি জেনেছি এবং এর সাথে পরিচিত আছি । ( দ্রঃ সুনানুত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৭৪২ , পৃঃ ৯৮২ , ১ম সংস্করণ , দার ইহয়ায়িত তুরাস আল-আরাবী , বৈরুত , লেবানন ) ।

সাফীনাতুন্নাজাত ও মিসবাহুল হুদা ইমাম হুসাইনের ( আ ) শুভ জন্মদিবসে আমরা ইমাম হুসাইনকে (আ) স্মরণ করব এবং মহান আল্লাহর কাছে একান্ত বিনীত প্রার্থনা যে তিনি আমাদেরকে ইমাম হুসাইনের (আ) ফাযায়ল থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁর নাজাতের তরীতে আরোহন করে তাঁর হিদায়তের প্রদীপের আলোয় সিরাত-ই মুস্তাকীমে পথ চলার তৌফিক দেন ।

সমাপ্ত

تبصرہ ارسال

You are replying to: .