মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩ আবান ( ৪ নভেম্বর) বিশ্ব লুটেরা সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দিবস: প্রতিবার যখনই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ইসরাইল সফরে আসছে তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেতে ইসরাইল গাযায় নির্বিচারে নির্বিঘ্নে গণ হত্যা চালাচ্ছে।
২য় বার ব্লিংকেন যখন ইসরাইলে এসেছিল তখন গাযার ব্যাপ্তিস্ত ( আল - মা'মাদানী ) হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করলে এক হাজার ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছিলেন যাদের অধিকাংশ ছিলেন শিশু ও নারী। আর এ বার যখন ব্লিংকেন ইসরাইলে এল তখন গতকাল ( ৩ নভেম্বর ২০২৩ ) ইসরাইল গাযার তিন হাসপাতালে ( আল - কুদস , আশ - শিফা এবং ইন্দোনেশিয়া হাসপাতাল ) এবং এক স্কুলে বোমাবর্ষণ করে বহু অগণিত ফিলিস্তিনিকে হতাহত করেছে যারফলে গাযায় শহীদ ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১০০০০ এর নিকটবর্তী হয়েছে।
আজ ১৩ আবান ( ৪ নভেম্বর) ইরানে স্কুল ছাত্র এবং বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দিবস । এ দিন ইরানে তিনটা ঐতিহাসিক মহা ঘটনা ঘটেছিল । ১ম ঘটনা : এ দিন ইমাম খোমেইনীকে ১৯৬৪ সালের ৪ নভেম্বর ( ১৩ আবান ১৩৪৩ ফার্সী ) তদানীন্তন পাহলভী শাহ সরকারের পার্লামেন্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ক্যাপিচুয়ালেশন ( capitulation ) বিল পাস করে আইনে পরিণত করার প্রতিবাদ করলে শাহ তাঁকে তুরস্কে নির্বাসিত করেছিল ।
২য় ঘটনা : ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর ( ১৩ আবান ,১৩৫৭ ) শাহের বিরুদ্ধে বিপ্লব চলাকালে শাহের নিরাপত্তা ও সশস্ত্র বাহিনী তেহরানে স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের বিক্ষোভ মিছিলে গুলি বর্ষণ করলে বেশ কিছু স্কুল ছাত্র ছাত্রী শহীদ হয় । আর তৃতীয় ঘটনাটি ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর ( ১৩ আবান ফার্সী ১৩৫৮ ) ইমাম খোমেইনীর পথ ও মতের অনুসারী ছাত্র ও জনতা তেহরানে গোয়েন্দা বৃত্তি ও ষড়যন্ত্রের আখড়া মার্কিন দূতাবাস দখল করে রাষ্ট্রদূত সহ
দূতাবাসের সকল মার্কিন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিম্মী হিসেবে আটকায় । কারণ ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল ও বিজয়ী হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিপ্লব ও নয়া ইরানী প্রশাসন ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি না দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় ইরানের বিরুদ্ধে যেমন :ইরানে বিচ্ছিন্নতাবাদ উস্কে দেওয়া , বিপ্লবোত্তর ইরানের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ ও গোলযোগ সৃষ্টি করা এবং গৃহযুদ্ধ লাগানো ও সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টা ইত্যাদি ।
ইমাম খোমেইনী বিপ্লবী ছাত্র ও জনতার এ পদক্ষেপকে ২য় বিপ্লব এবং ১ম বিপ্লবের ( ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ) চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছিলেন। কারণ ১ম বিপ্লব ছিল সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ ভৃত্য শাহ সরকারের পতন ঘটানো এবং ২য় বিপ্লব ছিল ইরানে বিদ্যমান স্বয়ং সাম্রাজ্যবাদী প্রভু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেষ চিহ্ন ও খুঁটি গোয়েন্দা বৃত্তি ও ষড়যন্ত্রের আড্ডাখানা মার্কিন দূতাবাস দখল যার মাধ্যমে ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব , প্রতিপত্তি ও প্রাধান্য বিস্তারের পথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে যায়।
আজ বর্তমান প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শয়তানী এবং এ দেশটি যে সবচেয়ে বড় শয়তান ( শয়তানে বোযোর্গ ) ও সবচেয়ে বড় জঘন্য সাম্রাজ্যবাদী তার প্রমাণ হলো এ দেশটির সর্বাত্মক সাহায্য , সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় গাযায় নিরীহ নিরপরাধ জনগণের ওপর প্রায় গত এক মাস ধরে ইসরাইল কর্তৃক নির্বিচারে নৃশংস নির্মম নিষ্ঠুর ও পাশবিক বোমাবর্ষণ যার ফলে ১০০০০ ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন যাদের মধ্যে ৪০০০ এর অধিক শিশুই রয়েছে। উল্লেখ্য যে গাযায় ব্যবহৃত বোমার ৮০% মার্কিন নির্মিত। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে গোলাবারুদ, বোমা , ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধাস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং ব্যাপক অর্থ সাহায্য করছে।
এ ছাড়াও পুরো বিশ্ব ব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ, গণহত্যা, আগ্রাসন , লুটপাট, যুদ্ধবিগ্রহের ভুরি নজির ও প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। আর অপরাধী এ দেশটির গোড়াপত্তনই হয়েছে আমেরিকান ভূখণ্ড জবরদখল এবং দেশটির আসল অধিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের সন্ত্রাসী কায়দায় গণহত্যা ও প্রজন্ম হত্যার মধ্য দিয়ে। ইসরাইলের মতোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জবরদখলকারী সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র । কৃত্রিম মেকি ইসরাইল রাষ্ট্রটিও ফিলিস্তীনীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ , গণহত্যা , প্রজন্ম হত্যা ও বলপূর্বক উচ্ছেদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে । ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তীনের আসল অধিবাসীরা বহিরাগত যায়নবাদী ইহুদীদের হাতে নিজেদের পৈতৃক ভিটা মাটি, বাড়ীঘর , ভূমি, দেশ , শহর নগর ও গ্রাম থেকে বলপূর্বক উচ্ছেদ হয়ে গাযা, জর্দান নদীর পশ্চিম তীর এবং প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশে শরণার্থী শিবির সমূহে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। আর এই অপরাধী সন্ত্রাসী আগ্রাসী গণহত্যাকারী মানবাধিকার লঙ্ঘন কারী রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও রক্ষক হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শয়তান হওয়ার ব্যাপারে আর কোনো কথাই থাকে না। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের মূল হোতা ।
তাই " ধ্বংস হোক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ; ধ্বংস হোক ইসরাইল । " - বৈপ্লবিক ধ্বনিতে সকল স্থানের আকাশ বাতাস মুখরিত করা উচিত ।