۸ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱۸ شوال ۱۴۴۵ | Apr 27, 2024
রমজান মাসের ৮ম দিনের দুআ অনুবাদসহ ও দুআর বিশেষ বাক্যগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ
রমজান মাসের ৮ম দিনের দুআ অনুবাদসহ ও দুআর বিশেষ বাক্যগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

হাওজা / হে আল্লাহ! তোমার উদারতার উসিলায় এ দিনে আমাকে এতিমদের প্রতি দয়া করার, ক্ষুধার্তদের খাদ্য দান করার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও সৎ ব্যক্তিদের সাহায্য লাভ করার তৌফিক দাও।

মজিদুল ইসলাম শাহ

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ৮ম রমজানের দুআ

اَللّـهُمَّ ارْزُقْني فيهِ رَحْمَةَ الاَيْتامِ، وَاِطْعامَ اَلطَّعامِ، وَاِفْشاءَ السَّلامِ، وَصُحْبَةَ الْكِرامِ، بِطَولِكَ يا مَلْجَاَ الاْمِلين.

হে আল্লাহ! তোমার উদারতার উসিলায় এ দিনে আমাকে এতিমদের প্রতি দয়া করার, ক্ষুধার্তদের খাদ্য দান করার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও সৎ ব্যক্তিদের সাহায্য লাভ করার তৌফিক দাও। হে আকাঙ্খাকারীদের আশ্রকারী।

গুরুত্বপূর্ণ দিক

এই দুআটি কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে:

(১) এতিম ও অসহায়দের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ (২) খাবার খাওয়ানোর দস্তরখান পাতা (৩) ইসলামী শিষ্টাচার মেনে চলা এবং আগে সালাম করা (৪) বন্ধু এবং সহযোগীর সমাধান করা।

দুআর বিশেষ বাক্য গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

১– أَللّـهُمَّ ارْزُقْنى فيهِ رَحْمَةَ الاَيْتامِ

ইসলাম এতিম, দরিদ্র, বিধবা, অসহায় ও দরিদ্রদের সহায়তা করা, তাদের ভালবাসা এবং তাদের খাদ্য সরবরাহ করা, তাদেরকে সম্পদ সরবরাহ করার জন্য এবং এটি কেবল তাদের আরাম দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে না এটি সমাজের অসহায়, বঞ্চিত, নিঃস্ব শ্রেণি এবং সমাজের অভাবী, অসহায় ও নিরীহ বাচ্চাদের দেখাশোনা করারও নির্দেশ দেয়। যারা সমাজের এই বিভাগ থেকে বঞ্চিত তাদের কাছে ইসলাম দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং বলা হয়ে থাকে যে যারা ইসলাম ধর্মকে অস্বীকার করে তারাই এতিমদেরকে ধাক্কা দেয়। তারা তাদের ভালবাসে না, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে না এবং তাদের আরাম দেওয়ার জন্য নিজের সম্পদ ব্যয় করে না।

তারা এতিমদের যেমন নিজের সন্তানের জন্য সরবরাহ করে তেমন সরবরাহ করে না। যারা তাদের নামাযের যত্ন করে কিন্তু সমাজের বঞ্চিত ও দরিদ্র শিশুদের প্রতি ছায়া দেয় না তাদেরকে জাহান্নামের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের প্রার্থনা সম্পর্কে খুব উদ্বিগ্ন তবে তারা অভাবী, এতিমদের যত্ন করে না। এমন উপাসকরা পবিত্র কোরআনে ভণ্ডামি (রেয়াকার) বলা হয়। যারা সংযম রেখে নামাজ আদায় করেন তবে তারা নামাজের আসল চেতনা সম্পর্কে অবহেলিত। আসলে এই নামাজগুলি দরিদ্র ও অসহায়দের একটি শিক্ষা দেয়। যাঁরা অতি অভাবীদের অতি ক্ষুদ্র জিনিসও দেয় না বরং সেই অভাবীদেরকে তাড়িয়ে দেয়, এই ধরনের মানুষকে কৃপণ বলা হয়েছে। সূরা আল ফজরে বলা হয়েছে, "কিছু লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।"

তাদেরকে যতবার জিজ্ঞাসা করবে যে কেন তোমাদেরকে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হয়েছে? তারা বলবে আমাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল কারণ: كلَّا بَلْ لَّا تُكْرِمُونَ الْيَتِيمَ (সুরা ফাজর১৭) আমরা এতিমদের জন্য আমাদের সম্পদ সরবরাহ করি নি। তাদেরকে সমাজে সম্মানজনক স্থান দেওয়া হয়নি, তাদের আলিঙ্গন করেনি, আমরা আমাদের সম্পত্তিকে অনেক ভালোবাসতাম, অসহায় দরিদ্রদের ভালোবাসতাম না। হযরত আলী (আ:) আঘাতের পরে এবং শাহাদাতের পূর্বে ওসিয়ত করেছিলেন: "اللّه َ اللّه َ في الأيتامِ، فلا تُغِبُّوا اَفواهَهُم، و لا يَضِيعوا بحَضرَتِكُم " এতিমদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, যেন তাদের অনাহারের সময় না আসে এবং তারা তোমাদের চোখের সামনে যেন বিনষ্ট না হয়ে যায়।

এতিম-প্রেমী ইমাম আলী (আ:) বলেছেন:

"ما مِن مُؤمنٍ و لا مُؤمِنَةٍ يَضَعُ يَدَهُ على رأسِ يَتيمٍ تَرَحُّما لَهُ إلاّ كَتَبَ اللّه ُ لَهُ بكُلِّ شَعرَةٍ مَرَّت يَدُهُ علَيها حَسَنَةً ؛

এমন কোন মোমিন পুরুষ বা মোমিনা মহিলা নেই যারা করুণার সাথে এতিমের মাথায় হাত রাখেন তবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি চুলের বদলে যার উপর হাত রেখেছিল একটি নেকি লিখে দেয়। (সাওয়াবুল আমাল সেক সাদূক খ. ১ পৃ. ১৯৯) আবু আল-তোফায়েল বলেন: একদিন আমি হযরত আলী (আ:) কে দেখলাম এতিমদেরকে নিজের কাছে ডাকলেন, অতঃপর তিনি তাদের প্রতি দয়া করলেন এবং তাদেরকে মধু খাওয়ালেন,এই অবস্থা দেখে কয়েকজন সাহাবী আশা করলেন যে যদি আমরাও অনাথ হতাম। (বেহারুল আনওয়ার খ. ৪১ পৃ. ২৯)

২– وَ اِطْـعـامَ أَلطَّـعـام

রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য হল ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মুসলমানদের আরও ভাল বোধ করাদরিদ্রকে খাওয়ানোও এই মাসের অন্যতম সেরা অনুশীলন যদি কিছু রান্না করা হয় তবে দরিদ্র এবং প্রতিবেশীদের অংশটি আলাদা করে দেওয়া উচিত এবং কোন জিনিস দিলে তাদের সম্মানের খেয়াল রাখা অবশ্যক... যে গরীবকে কিছুই দিতে পারে না সে ভালবাসা ও স্নেহ টুকু দিতে পারে।

আজকাল বড় বড় ইফতার দেওয়া হয় যা সাধারণত অর্থ দেখানোর জন্য করা হয়, যদিও ধনী ব্যক্তি ইফতারের ব্যবস্থা করেন তবুও তারা ধনীদের ভুলেন না। তারা কেবল দরিদ্রদের ভুলে যায়....। এমনকি যদি তারা ধনী ব্যক্তিকে ইফতারের আমন্ত্রণ জানাতে ভুলে যায় তবে এই "পাপ" এর জন্য কতবার ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে তার কোন হিসাব নেই, প্রতিক্রিয়া হিসাবে অন্যান্য ধনী ব্যক্তিরা তার সাথে আরো সঙ্গি দেয়, এমনকি কোনও দরিদ্র ব্যক্তি যদি এই ধরনের আমন্ত্রণে চলেও যায় তবে সে সম্ভবত ক্ষুধার্ত হয়ে ফিরে যেতে পছন্দ করবে।

এর অর্থ এই নয় যে খাওয়া-দাওয়া, প্রিয়জন এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে রোজা ইফতার করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা আছে তবে আসল উদ্দেশ্য হল গরিবদের খাওয়ানো আর গরিবদের খাওয়ানোই হল আসল নেকি, যদি এটি হয়ে থাকে তবে কাউকে খাওয়ানোতে কোনও সমস্যা নেই... তবে আমরা কি কখনও ধনী ব্যক্তিদেরকে রমজান মাসে গরীব ও এতিমদের ঠিকানা জিজ্ঞাসা করতে এবং তাদের বাড়ির সন্ধান করতে দেখেছি ... বা ধনী লোকেরা কি কখনো খাবার নিয়ে দরিদ্রদের বাড়িতে গিয়েছে... এছাড়াও আপনি কতবার ধনী লোককে এক পাত্রের মধ্যে দরিদ্রদের সাথে খেতে দেখেছেন?

হ্যাঁ এটা স্পষ্ট যে মানুষ তার নিজের সমতুল্য লোকেদের সাথে ইফতার করে এটি অনেক বার দেখা গেছে। আজকাল এই ইবাদত ভাল এবং বড় বড় হোটেল গুলিতেও হয়ে থাকে....আশ্চর্যের বিষয় প্রতিটি শ্রেণির লোকেরাও সেই শ্রেণীর পেশনামাজ পেয়ে যায়....তবে আল্লাহর ধন্যবাদ যে খাওয়া দাওয়া করার পরে সব জায়গায় নামাজ জামাতে আদায় হয়...! তবে পবিত্র রমজান মাসে ইফতার করা ও খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে এক বিরাট পুণ্য ও গুরুত্ব রয়েছে ইমাম জয়নুল-আবিদীনের (আ:) জীবনীতে উল্লেখ হয়েছে যে তিনি আব-গোশত (এক ধরনের খাবার) প্রস্তুত করতেন এবং এক এক পাত্র করে প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দিতেন। আর নিজে রুটি ও খেজুর দিয়ে রোজা ইফতার করতেন। (বেহারুল আওয়ার ৯৩/৩১৭) ইমাম কাজিম (আ:) থেকে বর্ণিত: فطرک اخاک الصائم افضل من صیامک ؛ যে ব্যক্তি তার মুসলিম রোজাদার ভাইয়ের জন্য রোজা ইফতারের ব্যবস্থা করে সে তার প্রকৃত রোজার চেয়ে উত্তম আমল করেছে। (মুস্তাদরাক সাফিনাতুল বেহার খ. ৬ পৃ.৪২১)

৩– وَ اِفْشـآءَ السَّــلام

সালাম করা মুস্তাহাব এবং এর জবাব দেওয়া ওয়াজিব তবে সওয়াবের ক্ষেত্রে এই ওয়াজিব নিজের সাথি মুস্তাহাবের চেয়ে অনেক পিছনে থাকে, সালামের নেকির মোট সত্তরটি অংশ রয়েছে, যার মধ্যে ৬৯ অংশ তার যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম করে তবে যে ব্যক্তি সালামের জবাব দেয় তার কেবলমাত্র একটি অংশই পুরস্কৃত হয়। (মিশ্কাতুল-আওয়ার-ফি-গেরারুল-আখবার পৃ.১৯৭)السلام سبعون حسنۃ تسع و ستون للمبتدی و واحدۃ للراد ؛ তেমনিভাবে হাদীসে বর্ণিত আছে যে: যে ব্যক্তি উচ্চস্বরে সালাম দেয়, তার ঘর পুণ্য ও সৎকর্মের কেন্দ্রে পরিণত হয়। (ওসায়েলুশ-শিয়া খ.১ পৃ.৪৮৯)

৪– وَ صُـحْبَـةَ الْكِـرامِ

প্রার্থনার এই অংশে একটি ভাল বন্ধু এবং সহকর্মীর অনুরোধ রয়েছে, তার চারপাশের লোকেরা তাঁর উপর খুব প্রভাবশালী, বিশেষত তাঁর বন্ধুরা, যারা তাঁর উপর বৌদ্ধিক ও আদর্শগতভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে, যার সম্পর্কে আল্লাহর রসূল বলেছেন: ألمَرءُ عَلَی دین خَلیلِهِ فَلیَنظُر أحَدُکُم مَن یُخالِلُ، মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম অনুসরণ করে, তাই তার জন্য দরকার যে সে কাকে নিজের বন্ধু বানাচ্ছে। (বেহারুল আনওয়ার খ.৭১ পৃ. ১৯২) এই রেওয়ায়েতটি মানুষের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা করে, একজন ব্যক্তির উপর বন্ধুর প্রভাব কি ভাবে পড়ে সেটিকে এই ভাবে বর্ণনা যেতে পারে: ঠিক যেমন পেট্রল চিনির কাছে রাখা হয় না কারণ চিনির মধ্যে পেট্রোলের গন্ধ এসে যায় একইভাবে, কোনও ব্যক্তি তার বন্ধু দ্বারা প্রভাবিত হয় এজন্য আমাদের খারাপ বন্ধুদের থেকে নিজেকে রক্ষা করা দরকার এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে থাকুন: الحقنی بالصالحین۔۔۔

৫– بِطَوْلِكَ يا مَلْجَأَ الاْمِلين

এবং এই শেষ বাক্যে আমরা স্বয়ং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যে এই সমস্ত আর্জি আপনার সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ ছাড়া হতেই পারে না তাই আমাদের নিরাপদ রাখুন...

ফলাফল

দুআর বার্তা: ১-এতিমদের খেয়াল রাখা; ২-দরিদ্রদের খাওয়ানো; ৩-সালাম করা; ৪-ভাল লোকের সাথে বন্ধুত্ব এবং সহচরতা।

নির্বাচিত বার্তা: ইফশায়ে সালাম, এর অর্থ উচ্চস্বরে সালাম করা নয় বরং এর অর্থ হল যে ব্যক্তি যার সাথে দেখা করবে তাকে সালাম জানানো উচিত।

ইমাম সাদিক (আ:) বলেছেন: ইফশায়ে সালাম এর অর্থ হচ্ছে যে ব্যক্তির সাথে যার দেখা হয় তাকে সালাম জানাতে কৃপণ হওয়া উচিত নয়। (জাওয়াদ আমলি, আব্দুল্লাহ, আদাব-ফানা-এ-মোকার্রেবান খ. ১ পৃ. ১০৫)

আল্লাহর নবী (স:) বলেছেন: لایُستَکمِلُ عَبدٌ الایمانِ حَتّی یَکوُنَ فیہ ثَلاثُ خُصالٍ، الاِنفَاقُ مِنَ الاِقتَارِ وَالاِنصَافُ مِن نَفسِكَ وَ بَذلُ السَّلامِ لِجَمِيعِ العَالَم؛ মানুষের ঈমান সিদ্ধ হয় না যতক্ষণ না এর মধ্যে তিনটি গুণ থাকে; কষ্ট সত্বেও আল্লাহর পথে ব্যয় করা, নিজের সাথে ন্যায়বিচার করা এবং সবাইকে সালাম করা। (জাজায়েরি, সৈয়দ আব্দুল্লাহ, আত-তাওফা-আস-সানিয়াহ পৃ.৬৫)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .