۲۱ آذر ۱۴۰۳ |۹ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 11, 2024
ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ:)
ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ:)

হাওজা / ইমাম বাকের (আ:)বংশীয় ভাবে পিতা ও মাতা উভয়ের দিক দিয়েই নবী (সা.),আলী (আ:)ও ফাতেমা (সা.)-এর সাথে সম্পৃক্ততা রাখেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ১- ইসলামের পঞ্চম পথ প্রদর্শক,আধ্যাত্মিকতার অন্যতম পুরোধা, ইমাম আবু জা’ফর, ৫৭ হিজরীর রজব মাসের ১ তারিখে শুক্রবার মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। ১ তাঁর নাম মুহাম্মদ, কুনিয়া আবু জা’ফর ও উপাধি বাকেরুল উলুম (জ্ঞানের বিকাশদানকারী)।

চাঁদের চতুর্দিকে অনেক সময় যে আলোকবৃত্ত পরিদৃষ্ট হয় এই শিশুর জন্মের সময় তাঁর নুরের ছটাও তদ্রুপ তার পরিবারের সকলকে বেষ্টন করেছিল এবং অন্যান্য ইমামগণের ন্যায় তিনিও পাক-পবিত্র অবস্থায় দুনিয়ায় আসেন।

ইমাম বাকের (আ:)বংশীয় ভাবে পিতা ও মাতা উভয়ের দিক দিয়েই নবী (সা.),আলী (আ:)ও ফাতেমা (সা.)-এর সাথে সম্পৃক্ততা রাখেন। কেননা তাঁর পিতা ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ:)ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সন্তান এবং তাঁর মাতা সম্মানিতা নারী ‘উম্মে আবদুল্লাহ্’২ ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.)-এর কন্যা।

ইমাম বাকের (আ.)-এর মহত্ব ও ব্যক্তিত্বের কথা সকল স্তরের মানুষের মুখে মুখে ছিল,যেখানেই হাশেমী,ফাতেমী ও আলী বংশের মান-মর্যাদা নিয়ে কথা উঠতো সেখানেই তাঁকে ঐ সকল পবিত্রতার,সাহসিকতার ও মহানুভবতার একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে স্মরণ করতো এবং হাশেমী,আলাভী ও ফাতেমী হিসেবে চিনতো। সত্যবাদিতা,চেহারায় আকর্ষণ ও অধিক উদারতা তার বৈশিষ্ট্যগুলির অন্যতম।

এখানে আমরা তাঁর মহান ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার ব্যাপারে কিছু জানবো :

মহানবী (সা.) তাঁর এক মহান সাহাবীকে (জাবির বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী) বলেছিলেন : হে জাবির! তুমি আমার সন্তান ‘মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবি তালিব’ যার নাম তৌরাতে ‘বাকের’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে তাকে দেখা পর্যন্ত জীবিত থাকবে। যখন তোমার সাথে তাঁর দেখা হবে তাকে আমার সালাম পৌঁছে দিও।

নবী (সা.)-এর ওফাতের পর তার ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী জাবির অনেক দিন জীবিত ছিলেন। একদিন ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.)-এর বাড়ীতে এসে শিশু অবস্থায় ইমাম বাকেরকে দেখে বললেন : কাছে এসো... ইমাম বাকের (আ:)তার কাছে এলে তিনি তাঁকে ফিরে যেতে বললেন. ইমাম ফিরে গেলেন। জাবির তাঁর পবিত্র দেহ ও পথ চলাকে লক্ষ্য করে বললেন : কাবার প্রভূর কসম! অবিকল নবী (সা.)-এর মত দেখতে হয়েছে। তারপর তিনি ইমাম সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসা করলেন,এই শিশু কে?

ইমাম বললেন : আমার সন্তান ‘মুহাম্মদ বাকের’' যে আমার পরে ইমাম।

জাবির উঠে দাঁড়ালেন এবং ইমাম বাকের (আ.)-এর পায়ে চুম্বন দিয়ে বললেন : হে নবী (সা.)-এর সন্তান,আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক। আপনার প্রপিতা নবী (সা.)-এর সালাম ও দরুদ গ্রহণ করুন কেননা তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন।

ইমাম বাকের (আ.)-এর দৃষ্টি মোবারক পানিতে ভরে গেল। তিনি বললেন : সালাম ও দরুদ আমার পিতা নবী (সা.)-এর উপর,যতদিন এই আকাশ মণ্ডলী ও জমিন অবশিষ্ট থাকবে। আর আপনার উপরেও সালাম ও দরুদ হে জাবির। যেহেতু আপনি তাঁর সালামকে আমার কাছে পৌঁছিয়েছেন।৩

ইমামের জ্ঞান

ইমাম বাকের (আ.)-এর জ্ঞানও অন্যান্য ইমামগণের ন্যায় আল্লাহ্ প্রদত্ত ছিল। তাঁদের কোন শিক্ষক ছিল না বা অন্য মানুষদের মত কারো নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেন নি। জাবির বিন আবদুল্লাহ্ প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে এসে শিক্ষা লাভ করতেন আর প্রায়ই তাঁকে বলতেন : হে দীন ও দুনিয়ার জ্ঞানের বিকাশ দানকারী! সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি শৈশব থেকেই আল্লাহর দেয়া জ্ঞানে জ্ঞানী। ৪

আবদুল্লাহ্ বিন আতা মাক্কী বলেন : কখনও কোন মনীষীকে কারো কাছে এমন ছোট হতে দেখিনি যতটা ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে তাদেরকে হতে দেখেছি। হাকাম বিন উতাইবাহ্ যিনি সকলের কাছে জ্ঞানের দিক দিয়ে অতি সম্মানের পর্যায়ে ছিলেন,তাকেও ইমামের সামনে শিশুর মত বসে থাকতে দেখেছি। ঠিক একজন বিজ্ঞ শিক্ষকের সামনে ছাত্রের বসে থাকার মত।৫

ইমাম বাকের (আ.)-এর ঐশী ব্যক্তিত্ব এতটা আকর্ষণীয় ছিল যে,জাবির বিন ইয়াযিদ জোফি তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস উল্লেখ করতে গিয়ে এমন বলেন : নবিগণের স্থলাভিষিক্ত এবং নবিগণের জ্ঞানের উত্তরসূরী মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন আমাকে এমন বলেছেন...।৬

আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের কাছে এক লোক একটি বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে ইমামকে দেখিয়ে দিল এবং বলল এই শিশুর কাছে জিজ্ঞেস কর,আর তার দেয়া উত্তরটি আমাকে অবহিত কর। ঐ লোক ইমামের কাছে প্রশ্ন করল এবং তার উপযুক্ত জবাবও পেল। সে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরকে এই জবাব সমন্ধে অবহিত করলে আবদুল্লাহ্ বলেন : তাঁরা এমন বংশের যাদের জ্ঞান আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত।৭

আবু বাসির বলেন : ইমাম বাকের (আ.)-এর সাথে মদীনার মসজিদে প্রবেশ করলাম। লোকজন যাওয়া-আসার মধ্যে ছিল। ইমাম আমাকে বললেন : সবার কাছে জিজ্ঞেস কর আমাকে কি তারা দেখতে পাচ্ছে? যার কাছেই জিজ্ঞেস করলাম,তার কাছ থেকেই না সূচক জবাব পেলাম। কিন্তু ইমাম আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঠিক ঐ সময় ইমামের এক ঘনিষ্ঠ সাহাবী (আবু হারুন) যে কিনা অন্ধ ছিল মসজিদে প্রবেশ করল। ইমাম বললেন : তার কাছেও জিজ্ঞেস কর।

আবু হারুনের কাছেও জিজ্ঞাসা করলাম : তুমি কি আবু জা’ফারকে দেখেছো?

সে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল : তবে তিনি কি তোমার পাশে দাঁড়িয়ে নেই?

বললাম : কিভাবে বুঝলে?

বলল : কেন বুঝতে পারব না,তিনি তো দীপ্তমান নুরের শিখা। সূর্যের আলোর ন্যায় উজ্জ্বল।৮

আবু বাসির আরও বলেন : ইমাম বাকের (আ:)তাঁর এক আফ্রিকান অনুসারী রাশেদের এর ব্যাপারে জানতে চাইলেন। কেউ তার জবাবে বলল ভাল আছে এবং আপনাকে সালাম দিয়েছে।

ইমাম : তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

সে আশ্চর্য হয়ে বলল : তবে কি সে মারা গেছে?

ইমাম : হ্যাঁ।

ঐ ব্যক্তি : কখন মারা গেছে?

ইমাম : তুমি তার কাছ থেকে চলে আসার দুই দিন পর।

ঐ ব্যক্তি : আল্লাহর কসম! সে অসুস্থ ছিলনা...।

ইমাম : তবে কি যারা মারা যায় সবাই অসুস্থতার কারণে?

তখন আবু বাসির ইমামের কাছে তার মৃত্যুর ব্যাপারে প্রশ্ন করল।

ইমাম : সে আমাদের বন্ধু ও অনুসারী ছিল। তোমরা ভেবে নিয়েছো যে তোমাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি বা মনোযোগ নেই,এটা ঠিক নয়। আল্লাহর কসম! তোমাদের কোন কিছুই আমাদের কাছে গোপন নয়। সুতরাং আমাদেরকে তোমাদের কাছে উপস্থিত মনে করবে। তোমরা নিজেরা ভাল কাজ করার অভ্যাস করবে ও ভালদের সারিতে শামিল হবে। আর যেন ভাল হিসাবেই পরিচিত হও এটাই আমার কাম্য। আমি আমার সন্তানদের ও অনুসারীদেরকে এই কর্মসূচীর প্রতি নির্দেশ দিচ্ছি।৯

একজন হাদীস বর্ণনাকারী বলেন,কুফাতে এক মহিলাকে কোরআন শিক্ষা দিতাম। একদিন তার সাথে রসিকতা করেছিলাম। পরে ইমাম বাকেরকে দেখতে গেলে তিনি বললেন :

যে কেউ (যদিও সে) গোপনে পাপ কাজে লিপ্ত হয় আল্লাহ্ তায়ালা তার দিকে আর কোন খেয়াল রাখেন না। ঐ মহিলাকে কি বলেছো?

এ কথা শুনতেই লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। ইমামের সামনে তওবা করলাম। তিনি বললেন : পুনরাবৃত্তি করো না।১০

ইমামের নৈতিক গুণাবলী

শামের এক অধিবাসী মদীনায় বসবাস করত এবং ইমামের বাড়ীতে প্রায়ই আসা-যাওয়া করত। সে প্রায়ই ইমামকে বলত : পৃথিবীতে তোমার মত আর কারো প্রতি আমার এত বেশি ঘৃণা,বিদ্বেষ বা আক্রোশ নেই। আর তুমি ও তোমার বংশের সাথে ছাড়া অন্য কোন বংশের লোকের সাথে এত শত্রুতা করিনা। আমার বিশ্বাস এটাই যে তোমার সাথে শত্রুতাই হচ্ছে আল্লাহ্,নবী ও মুমিনদের নেতার অনুসরণ। তোমার বাড়ীতে আসা-যাওয়া করি শুধুমাত্র এ কারণেই যে তুমি একজন উত্তম বক্তা,সাহিত্যিক ও মিষ্টভাষী।

এত কিছু বলার পরও ইমাম তার সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে কোমল ভাষায় কথা বলতেন। কিছু দিন না যেতেই শামের ঐ অধিবাসী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মৃত্যুকে অনুভব করতে পেরে সে জীবনের আশা ছেড়ে দিল। এমতাবস্থায় সে তার শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করল যে,মৃত্যুর পর যেন আবু জা’ফর (ইমাম বাকের) তার জানাযার নামাজ পড়ান।

মধ্যরাতে তার পরিবারের লোকেরা তাকে মৃত অবস্থায় পেল। ফজরের নামাজের সময় তার উকিল মসজিদে এসে ইমামকে নামাজ শেষ করে দোয়ায় বসে থাকতে দেখল। তিনি সর্বদা নামাজের পরে দোয়া ও আল্লাহর জিকির করতেন।

সে বলল : শামের ঐ অধিবাসী মারা গেছে এবং সে তার শেষ ইচ্ছাতে এটাই চেয়েছে যে আপনি যেন তার জানাযার নামাজ পড়ান।

ইমাম : সে মারা গেছে... আমি না আসা পর্যন্ত তাড়াহুড়া করো না।

তিনি দ্বিতীয় বারের মত অজু করে পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে হাত তুলে দোয়া করলেন। তারপর সেজদায় গেলেন এবং সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত সেজদায় রত থাকলেন। তারপর ঐ লোকের বাড়ীতে আসলেন। তার মাথার কাছে বসে তাকে ডাকলেন আর সে ইমামের ডাকে সাড়াও দিল। ইমাম তাকে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে শরবত আনতে বললেন। তার পরিবারের কেউ একজন শরবত আনলে ইমাম ঐ শরবত তার মুখে ঢেলে দিলেন। তার পরিবারের লোকদেরকে তাকে ঠাণ্ডা খাবার দিতে বলে তিনি ফিরে গেলেন।

অল্প সময় পরই সে আরোগ্য লাভ করল এবং ইমামের কাছে এসে বলল : সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি মানুষের জন্য আল্লাহর প্রতিনিধি।১১

মুহাম্মদ বিন মুনকাদের (ঐ সময়কার সুফি) বলেন : এক প্রচণ্ড গরমের দিনে মদীনার বাইরে গিয়েছিলাম। ইমামকে ঐ গরমের ভিতরে কাজ করতে দেখলাম। তার শরীর দিয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছিল। তাকে অপমানিত করার উদ্দেশ্যে বললাম : আল্লাহ্ তোমাকে সুস্থ রাখুন। তোমার মতো ব্যক্তিত্ব এই সময়,এই অবস্থায় দুনিয়ার চিন্তায় মগ্ন! যদি এই অবস্থায় তোমার মৃত্যু আসে কি করবে?

ইমাম : আল্লাহর কসম! যদি এ অবস্থায় মৃত্যু আসে তবে তা তাঁর আনুগত্যের মধ্যেই হবে। কারণ আমি এই কাজের মাধ্যমে তোমার ও অন্যদের থেকে অমুখাপেক্ষী রয়েছি। মৃত্যু ঐ সময় ভয়ানক কেউ যখন পাপ কাজে ব্যস্ত থাকবে।

বললাম : আল্লাহর রহমত হোক আপনার উপর। চেয়েছিলাম যে আপনাকে লজ্জিত করব কিন্তু আপনি এই কথা বলে আমাকে লজ্জিত ও সতর্ক করলেন।১২ ….(চলবে)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .