রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে শকুনের সংখ্যা কমার ফলে মানুষের মৃত্যুর হারও বেড়েছে বলে দাবি গবেষকদের। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে বিবেচিত এই পাখি না থাকায় মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ২০০০-২০০৫ সালের মধ্যে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছেন। তাই উপকারী এ পাখিগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা।
ভারতে একসময় ৫০ মিলিয়ন শকুন ছিল। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি এ সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। এর কারণ গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডাইক্লোফেনাক নামে ব্যথানাশক একটি ওষুধ। সস্তা এই ওষুধ শকুনের জন্য প্রাণনাশক ছিল। এ ওষুধ খাওয়ানো গবাদিপশুর মৃতদেহ খেয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে বহু শকুন মারা যায়। (শকুন)
এ খবর সংক্রান্ত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ :
ডাইক্লোফেনাক ব্যাথানাশক হিসেবে গবাদি পশু ছাড়াও মানুষও ব্যবহার করে। অথচ এই ওষুধের মারাত্মক আওয়ারিয ( পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও নেতিবাচক প্রভাব ) রয়েছে যেমন : এ ওষুধ কিডনির ক্ষতি সাধন করে ও তা নষ্ট ও অকেজো করে দিতে পারে এবং এর কার্ডিওভাসকুলার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। আর এই ওষুধ গবাদি পশুদের খাওয়ানোর ফলে ওগুলোর দেহে তা জমা হওয়ায় এ সব পশুর মরদেহ ভক্ষণ করে কিডনি নষ্ট হয়ে শকুন সব মারা গেছে ও যাচ্ছে। এক সময় ভারতে ৫০ মিলিয়ন শকুন ছিল; কিন্তু ১৯৯০ দশকে প্রায় এদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। আর শকুন শূন্য হয়ে যাওয়ায় পশুর মরদেহ পচে গলে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও রোগজীবাণু দিয়ে দূষিত করলে ভারতে আরো বেশি ( বছরে আরো ১০০০০০ বেশি করে ) লোক মারা গেছে ও যাচ্ছে। কারণ এখন শোকুন সংখ্যা মারাত্মক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭৩ সালে জার্মানিতে উদ্ভাবিত এই কৃত্রিম রাসায়নিক ওষুধ ( ডাইক্লোফেনাক ) এত মারাত্মক প্রাকৃতিক ও পরিবেশ দুষণ ঘটাচ্ছে এবং শকুনদের মেরে ফেলে রোগজীবাণু ও সংক্রমক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটিয়ে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা বছরে আরো এক লাখ বাড়িয়ে দিয়েছে ! শুধু ডাইক্লোফেনাক নয় এ ধরনের এবং এমন বহু ধরনের কৃত্রিম রাসায়নিক ওষুধ ও পদার্থ রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক প্রাকৃতিক ও পরিবেশ দূষণ ও রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে। আসলে এ সব কৃত্রিম রাসায়নিক ওষুধ ও পদার্থ উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে যা বুঝতে ও উপলব্ধি করতে বহু দীর্ঘ সময় এমনকি বহু দশক লেগে যাচ্ছে যেমন : প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর এই ডাইক্লোফেনাকের মারাত্মক আওয়ারিয (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:সমূহ ) বুঝতে ও টের পেতে ৫ দশক বা ৫১ বছর লেগে গেছে !! আসলে পৃথিবীর সকল জিনিস, বস্তু ও জীব জগত পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। (শকুন)
যে কোনো একটায় ব্যত্যয় ঘটলে বাকি সবকিছুতেই ব্যত্যয় ঘটে । কিন্তু আধুনিক বস্তুবাদী প্রকৃতি বৈরী পাশ্চাত্য যান্ত্রিক শিল্প ও প্রাযুক্তিক সভ্যতা এ মহাসত্য উপলব্ধি করতে পারে নি এবং এখন খানিকটা উপলব্ধি করতে পারলেও পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ভোগবাদী নাস্তিক্যবাদী ও আধিপত্যকামী মানসিকতার কারণে প্রকৃতি বৈরী ও পরিবেশ বিরোধী শিল্পোন্নত ধনতান্ত্রিক বা সমাজ তান্ত্রিক ( যেটাই হোক না কেন পার্থক্য নেই) পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য এ সব সত্য উপেক্ষা ও অবহেলা করেই যাচ্ছে এবং এ দুই প্রকৃতি ও পরিবেশ বৈরী অক্ষ ( পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য) সমূলে উৎপাটিত হওয়া পর্যন্ত তথাকথিত প্রগতি , উন্নয়ন ও অগ্রগতির নামে এদের প্রকৃতি পরিবেশ বিধ্বংসী ও ধ্বংসাত্মক অপতৎপরতা থামবে না ও বন্ধ হবে না । যা কিছু এই গত ১০০ বছরে তৈরী করা হয়েছে সেগুলো সব বালায়ে জান ( মানবজাতির জান-প্রাণ ও জীবনের বালা মুসীবতে পরিণত হয়েছে বা হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর এত সব আওয়ারিয (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) ও বিরূপ নেতিবাচক প্রভাব সাথে সাথে বের ও নির্ণয় করা যায় না বরং এগুলো প্রকাশ পেতে বহু দীর্ঘ সময় যেমন : ৫০ বছর ,৮০ - ৯০ বছর বা এর বেশিও লেগে যেতে পারে । তাই আজকের নবোদ্ভাবিত কোন রাসায়নিক বা ওষুধের আওয়ারিয (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) ও কুপ্রভাব চট করে প্রতিভাত ও প্রকাশিত নাও হতে পারে বরং এর জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের পূঁজিপতিদের ও ধনকুবেরদের এত সময় অপেক্ষা করার ধৈর্য নেই। তারা নিত্য নতুন গবেষণায় প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে যে সব নিত্য নতুন রাসায়নিক পদার্থ, জিনিস ও ওষুধ উদ্ভাবন ও তৈরি করছে তা ব্যাপক শিল্পোৎপাদন করে গবেষণায় বিনিয়োগ কৃত অর্থ ও পূঁজির চেয়ে লক্ষ গুণ বেশি লাভ ও মুনাফা হাসিল করছে। অতএব সময় কোথায় ? আর আধুনিক অর্থনীতি উৎপাদন , মুনাফা , লাভ ও ভোগ ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। তাই আধুনিক বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিদ্যা , শিল্প , প্রযুক্তি ও অর্থনীতি প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ ও তা ধ্বংস সাধন করে মানব জাতিকে বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তের দিকে নিয়ে গেছে !