রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, " গোয়ায় চার বছরের ছেলেকে খুনের অভিযোগে বেঙ্গালুরুর একটি স্টার্টআপের কর্ণধার তথা সিইও সূচনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছেলেকে ব্যাগে ভরে বেঙ্গালুরু ফিরছিলেন সূচনা। পথেই গ্রেফতার। " (বিশ্বজুড়ে ক্যারিয়ারিযমের ভূত!!)
এটাই পাশ্চাত্য বস্তুবাদ ও ক্যারিয়ারিজম যা দেশে দেশে চালু হয়েছে ও প্রসার লাভ করেছে এবং যারা ক্যারিয়ারিযমের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়েছে তাদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক মনস্তাত্ত্বিক বিকৃতি ঘটতে পারে । আর উপরিউক্ত ঘটনাটা ক্যারিয়ারিযমের চরম মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিকৃতির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ যার ফলে একজন মা যে কিনা একজন স্টার্টআপ সিইও সে নিজের শিশু সন্তানকে হত্যা করেছে !! যখন ক্যারিয়ারিযমের ভূত যার মধ্যে তৈরি হবে ঠিক তখনই এ ধরনের এবং বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। ক্যারিয়ারিযম যখন ঘটে তখন ক্যারিয়ার হয়ে যায় পূজনীয় এবং সবকিছু। নিকটাত্মীয় স্বজন , পরিবার , সমাজ , পারিবারিক, সামাজিক, আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্থাৎ সব কিছুর চাইতেও তা ( ক্যারিয়ার ) হয়ে যায় বেশি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত । ক্যারিয়ার ইলাহ বা উপাস্যে পরিণত হয় । ক্যারিয়ারিযমের প্রভাবে বা ক্যারিয়ার গড়ার তীব্র আসক্তির কারণে মানুষ ক্যারিয়ার পূজারী হয়ে যাচ্ছে এবং ক্যারিয়ারিযম মানুষকে এমনভাবে মোহান্ধ করে দিচ্ছে যে এর জন্য সে সব কিছু বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে এমনকি নিজের ছোট্ট শিশু সন্তানকেও হত্যা করতে কুণ্ঠা বোধ করছে না যেমন : দক্ষিণ ভারতীয় এই স্টার্টআপ সিইও ক্যারিয়ার বাদী মহিলাটি । আর ক্যারিয়ারিযমের সাথে বস্তুবাদী ভোগবাদী ধন - সম্পদের আধিক্যের ( তাকাসুর ٌتَکَاثُر ) প্রতি লালসা ও মোহও ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এর নিবিড় সম্পর্ক ও যোগসূত্র রয়েছে।
পবিত্র কুরআনে : সূরা -ই তাকাসুরে :
তোমাদেরকে ( ধন ও সন্তানের ) আধিক্যের প্রতিযোগিতা ( লালসা ) অমনোযোগী ( মোহান্ধ) করে রেখেছে যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা কবরের ( মৃত্যুর) সম্মুখীন ও মুখোমুখি হও ।
أَلْهَاکُمُ التَّکَاثُرُ حَتَّیٰ زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ .
ক্যারিয়ার পাগলদের চরম মনোবিকৃতি ঘটে বলেই তাদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও পাপ সংঘটিত হতে পারে। আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা যা অক্টোপাসের মতো সমগ্র পৃথিবীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে তা বিশ্ববাসীর মন - মগজ - মস্তিষ্কে বস্তুবাদী ক্যারিয়ারিযমের ভূত প্রবিষ্ট করে দিয়েছে। ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তোলা দোষনীয় তো নয়ই বরং তা কাম্য । ব্যক্তিগত, পারিবারিক , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য তা অপরিহার্য। কিন্তু এটা যখন স্বাভাবিক যৌক্তিক সীমা পরিসীমা অতিক্রম করে চরমে পৌঁছায় তখন তা ভীষণ মারাত্মক মানসিক বিকৃতি ও ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় যা ঐ স্টার্টআপ সিইও তরুণী মায়ের ক্ষেত্রে ঘটেছে। এ অবস্থা জাপানসহ তথাকথিত উন্নত দেশগুলোতে অনেকের ক্ষেত্রে বিরাজমান। জাপানীদের ক্যারিয়ারিযম ও মাত্রাতিরিক্ত কাজ করার প্রবণতা ( কাজকর্মকে খোদা মনে করা অর্থাৎ কাজকর্ম ও ক্যারিয়ার পূজা ) গোটা জাপানী জনগণকে পেয়ে বসেছে যার ফলে জাপানীদের মধ্যে বিয়ে শাদী ও সন্তান গ্রহণের প্রবণতা ও আগ্রহ চরম ভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং এর ফলে জাপানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে। একদিকে যেমন জাপানের জনসংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে ঠিক তেমনি অন্য দিকে জাপানে বৃদ্ধ বৃদ্ধার সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এখন জাপানী বর্ষিয়ান ও বৃদ্ধদের সংখ্যা পৃথিবীর যে কোন দেশের বর্ষিয়ান ও বৃদ্ধদের সংখ্যার চেয়ে বেশি। অনেকে জাপানকে বৃদ্ধ বা বুড়িয়ে যাওয়া জাতি বলে এ কারণে যে জাপানে শিশু , কিশোর ও তরুণদের সংখ্যা অতি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। আর এটা অদূর ভবিষ্যতে জাপানকে কর্মক্ষম জনশক্তির তীব্র ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন করবে !!
এর কারণ কী ? এর এক অন্যতম প্রধান কারণ এই বস্তুবাদী ক্যারিয়ারিযম ( অর্থাৎ ক্যারিয়ার উন্মাদনা ও পাগলামি ) । জাপানে অত্যাধিক কাজ করতে করতে কর্ম স্থলেই অনেকের মৃত্যু হয় যা কারোশি নামে প্রসিদ্ধ। এ ছাড়া এই ক্যারিয়ারিযমের কারণে জাপান ও কোরিয়ায় আত্মহত্যাও অনেক ঘটে থাকে । সম্পদের আধিক্যের প্রতিযোগিতা ( লালসা) ও পশ্চিমা ক্যারিয়ারিযমের নেতিবাচক প্রভাবে মানুষ পরিশেষে দুনিয়া ও আখেরাত হারায় যেমন : সন্তান হত্যা কারিনী এই ক্যারিয়ার পাগল স্টার্টআপ সিইও মহিলাটি ।
خَسِرَ الدُّنْیَا وَ الْآخِرَةَ .
ক্যারিয়ারিযম এখন বিশ্বজুড়ে উম্মাদনার ( পাগলামি ) রূপ পরিগ্রহ করেছে।
যেমন আগে উল্লেখ করা হয়েছে ঠিক তেমনি উন্নত ভালো পেশা নির্বাচন ও তাতে নিয়োজিত হওয়া ভালো ও কল্যাণকর বলেই তা কাম্য ও পছন্দনীয় যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের উন্নতিও আনয়ন করে।
যা হোক , মহান আল্লাহ মানব জাতিকে এই বস্তুবাদী ক্যারিয়ারিযম ( ক্যারিয়ার পূজা ) থেকে রেহাই দিন ।
দ্রষ্টব্য: হাওজা নিউজে প্রকাশিত সমস্ত লেখা লেখকদের ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে এবং এর নীতি কলামিস্টের মতামতের সাথে একমত হওয়া জরুরী নয়।