হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ইসলামের মহান মহিয়সী নারী হযরত জয়নাব (সা.)-এর ব্যক্তিত্বের কিছু দিক তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাঁর বিচক্ষণতা, সাহসিকতা ও অসাধারণ ধৈর্যের কথা স্মরণ করে তাঁকে নারীর সম্মান ও মহত্ত্বের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ঐতিহাসিক সূত্রে উল্লেখ- হযরত জয়নাব (সা.) ছিলেন হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা (সা.)-এর কন্যা এবং ইসলামের নবী (সা.)-এর নাতনি। তিনি এমন একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন যা ছিল ঈমান, সাহসিকতা ও তাকওয়ার আদর্শ স্থান। আশুরার ঘটনায় হযরত জয়নাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন; তিনি শুধু যে কারবালায় তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সাথে উপস্থিত ছিলেন এবং নারী ও শিশুদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন তাই নয় একইসাথে ইমাম হোসেন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের শাহাদাতের পর আশুরার বাণীকে বাঁচিয়ে রাখার কঠিন দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন। বন্দী অবস্থায় এবং ইয়াজিদ ও ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের মতো শত্রুদের সামনে হযরত জয়নাব (সা.আ.) তার সমস্ত সাহস ও শক্তি নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং কারবালার ঘটনার সত্যতা তাদের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। 'কারবালার ঘটনাকে তিনি কীভাবে দেখেছিলেন'- এমন এক প্রশ্নের জবাবে হযরত জয়নাব বলেছিলেন: "মা র’আইতু ইল্লা জামিলা" (অর্থাৎ আমি সৌন্দর্য ছাড়া আর কিছুই দেখিনি)। হযরত জয়নাবের এই বক্তব্য থেকেই তার জ্ঞানের উচ্চতা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সত্য প্রকাশে তার দৃঢ়তার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
হযরত জয়নাব (সা.) সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিভঙ্গি তুলপ ধরছি:
হযরত জয়নাব সম্পর্কে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি: মানুষের জন্য একটি মডেল
সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তাঁর বক্তব্যে বারবার হযরত জয়নাব (সা.আ.)-এর বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে তাঁকে নারীদের জন্য এক অতুলনীয় আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বিপ্লবের নেতার মতে, আশুরার দিনে অসামান্য ভূমিকা পালন এবং শত্রুদের সামনে শক্ত অবস্থান ও জ্বালাময়ী বক্তব্যের কারণে হযরত জয়নাব একজন মুসলিম ও মুমিন নারীর জন্য অনেক বড় একটি দৃষ্টান্ত। সর্বোচ্চ নেতা বলেন: “আশুরার দিনে কারবালার ঘটনা ছিল, তরবারির ওপর রক্তের বিজয়। এই বিজয়ের কারণ ছিলেন হযরত জয়নাব। কারবালায় রক্ত শুকিয়ে গেছে... কিন্তু এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে নারীরাও ইতিহাসের অংশ হতে পারে।
বিপ্লবের নেতা তার বক্তব্যে হযরত জয়নাবের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর বিচক্ষণতা, সাহসিকতা এবং অসাধারণ ধৈর্যের কথা স্মরণ করে তাঁকে নারীর সম্মান ও মহত্ত্বের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সর্বোচ্চ নেতা হযরত জয়নাবকে "নারীদের জন্য ইসলামী আচরণবিধির শিক্ষক" হিসাবে বর্ণনা দিয়ে জীবনের সকল পর্যায়ে নারীদের জন্য একটি বাস্তব মডেল হিসাবে তার ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন: "জয়নাব একজন স্ত্রী, একজন মাতার ভূমিকা পালন করেছেন। একই সাথে তিনি মদীনায় সর্বোত্তম নবী পরিবারের একজন বিশিষ্ট নারী হিসাবেও পরিচিতি পান। ধার্মিকতা, শালীনতা ও পবিত্রতার দিক থেকে হযরত জয়নাবকে একজন শিক্ষক, আধ্যাত্মিকতার শিক্ষক, নীতিশাস্ত্রের শিক্ষক এবং নারীদের জন্য ইসলামী আচরণের শিক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা হযরত জয়নাবের উচ্চমাত্রার আধ্যাত্মিক অবস্থানের কথাও উল্লেখ করে তাকে সকল নারীর জন্য ইসলামি আদর্শ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেনঃ “ইসলামী সমাজ যদি নারীদেরকে ইসলামী মডেল অনুযায়ী শিক্ষিত করতে পারে- অর্থাৎ ফাতেমার আদর্শ, জয়নাবের আদর্শ তাহলে নারীরা বিশ্ব ও ইতিহাসকে প্রভাবিত করতে পারে'।