۸ آذر ۱۴۰۳ |۲۶ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 28, 2024
হাদীস - ই নূর
হাদীস - ই নূর

হাওজা / মহানবী ( সা ) : হে আম্মার ! যদি তুমি দেখ আলীকে একটি উপত্যকায় ( একা ) পথ চলতে এবং অন্য সকল মানুষকে আরেকটি ভিন্ন উপত্যকায় পথ চলতে দেখ , তাহলে তুমি আলীর সাথে পথ চলবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মহানবী ( সা ) : হে আম্মার ! যদি তুমি দেখ আলীকে একটি উপত্যকায় ( একা ) পথ চলতে এবং অন্য সকল মানুষকে আরেকটি ভিন্ন উপত্যকায় পথ চলতে দেখ , তাহলে তুমি আলীর সাথে পথ চলবে ( ও থাকবে ) [ তোমার কর্তব্য ও দায়িত্ব হচ্ছে আলীর সাথে পথ চলা ( সুলূক ) ও থাকা ]। কারণ , সে অবশ্যই তোমাকে মন্দের মাঝে আপতিত করবে না ( নিকৃষ্ট পথ প্রদর্শন করবে না অর্থাৎ নিকৃষ্ট মন্দ পথে নিয়ে যাবে না ও পরিচালিত করবে না) এবং হিদায়াতের পথ ( সুপথ অর্থাৎ সিরাত - ই মুস্তাকীম ) থেকে কখনোই তোমাকে বের করে দিবে না ।

يا عَمَّارُ! إِنْ رَأَيْتَ عَلِيّاً قَدْ سَلَكَ وَادِياً وَ سَلَكَ النَّاسُ كُلُّهُمْ وَادِياً فَاسْلُكْ مَعَ عَلِيٍّ فَإِنَّهُ لَنْ يُدْلِيَكَ فِي رَدًى وَ لَنْ يُخْرِجَكَ مِنْ هُدًى

সূত্র : বিহারুল আনওয়ার , খ : ৩৮ , পৃ : ৩৮

পর্ব : ১

এ হাদীসের আলোকে কিছু আলোচনা :

হযরত আলীর ( আ ) পথই একমাত্র হিদায়াতের পথ সরল সঠিক পথ ( সিরাত - ই মুস্তাকীম )

মুখ্য শব্দ সমূহ ( Key words ) : হযরত আলী ( আ ) , আম্মার ইবনে ইয়াসির , হিদায়াত ( পথ প্রদর্শন‌ ) , সিরাত - ই মুস্তাকীম, সুলূক ( পথ চলা , পথ পরিক্রম ) , আলীর পথ ।

মহানবী (সা) স্বীয় উম্মতকে হিদায়াতের পথ ও সিরাত - ই মুস্তাকীম বাতলে দিয়েছেন এ হাদীস শরীফে। আর তা হচ্ছে আলীর ( আ ) পথ এবং আলীর ( আ ) সাথে পথ চলা ( সুলূক ) , আলীর পথে দণ্ডায়মান ও প্রতিষ্ঠিত থাকা এমনকি দুনিয়ার সকল মানুষের পথ আলীর ( আ ) পথ থেকে তা ভিন্ন হলেও । কারণ , আলী রাসূলুল্লাহর ( সা ) আদর্শ , সুন্নাত ও মিল্লাত ( ধর্মমত ) অর্থাৎ খোদায়ী ঐশী হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত বিধায় কখনোই মানুষকে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট করবেন না । এতদ প্রসঙ্গে হযরত আলীর ( আ ) ফাযায়েলের কিছু হাদীস নীচে উল্লেখ করছি যেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে হয়রত আলীর পথই হচ্ছে সত্য পথ , সুপথ প্রাপ্তি ও হেদায়তের পথ অর্থাৎ সিরাত - ই মুস্তাকীম ( সরল সঠিক পথ ) ।

হযরত রাসূলুল্লাহর (সা) মতো হযরত আলী মুসলিম উম্মাহর মাওলা ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক , অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক ) :

মহানবী ( সা ) গাদীর - ই খুমের মহা সমাবেশে ১৮ যিল হজ্জে ঘোষণা দেন :

আমি যার মাওলা ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক অভিভাবক , পথপ্রদর্শক নেতা ও ওয়ালী ) এই আলী তার মাওলা ।

مَنْ کُنْتُ مَوْلَاهُ فَهٰذَا عَلِيٌّ مَوْلَاهُ

হাফেয জালালুদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর আস - সুয়ূতী ( মৃ : ৯১১ হি . ) তারীখুল খুলাফা গ্রন্থে লিখেছেন : হযরত আলী , আবূ আইয়ূব আল - আনসারী , যাইদ ইবনে আরক্বাম ও আমর ইবনে যীমুর থেকে আহমাদ এই হাদীস - ই গাদীর ইখরাজ ( পূর্ণ সনদসহ ) রেওয়ায়ত করেছেন। আবূ হুরায়রা থেকে আবূ ইয়ালা এ হাদীস ইখরাজ করেছেন। আর আত - তাবরানী ইবনে উমর , মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস , হুবশী ইবনে জুনাদাহ , জারীর , সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস , আবূ সাঈদ আল - খুদরী এবং আনাস থেকে এ হাদীস ইখরাজ করেছেন। আল - বাযযায এ হাদীস ইবনে আব্বাস , আম্মারা ও বুরাইদাহ থেকে রেওয়ায়ত করেছেন। আর এ সব রেওয়ায়তের অধিকাংশেই '' হে আল্লাহ ! আপনি তাকে ভালবাসেন যে তাকে ভালবাসে এবং যে তার সাথে শত্রুতা করে তার সাথে আপনি শত্রুতা করুন ( ُاَللّٰهُمَّ وَالِ مَنْ وَالاَهُ وَ عَادِ مَنْ عَادَاه ) । " - এ বর্ধিত অংশ ( যিয়াদাহ ) বিদ্যমান আছে। ( দ্রঃ : তারীখুল খুলাফা , পৃ : ১৬৯ )

এটা হাদীস - ই গাদীর যা মুতাওয়াতির ও অকাট্য সূত্রে বর্ণিত ও প্রতিষ্ঠিত সহীহ বিশুদ্ধ হাদীস । স্মর্তব্য যে , মহানবী (সা) যে অর্থে মুসলিম উম্মাহর মাওলা ঠিক সেই অর্থেই হযরত আলীও ( আ ) মুসলিম উম্মাহর মাওলা । আর মহানবীর (সাঃ) মাওলাভিয়তের ( বেলায়েত ) ওপর হযরত আলীর ( আ ) মাওলাভিয়ত ( বেলায়ত ) প্রতিষ্ঠিত । আর এ বিষয়টি অকাট্য সূত্রে প্রতিষ্ঠিত অভ্রান্ত মুতাওয়াতির হাদীস - ই মানযিলাত থেকেও স্পষ্ট হয়ে যায় ।

হাদীস - ই মানযিলাত :

عن مصعب بن سعد عن أبیه أن رسول الله ( ص) خرج إلی تبوک و استخلف علیاّ فقال : أتخلِّفني في الصبیان و النساء ؟ قال : ألَا تَرْضَیٰ أَنْ تَکُوْنَ مِنِّيْ بِمَنْزِلَتِ هَارُوْنَ مِنْ مُوْسَیٰ إِلَّا أَنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ .

সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস বর্ণনা করেছেন যে হয়রত রাসূলুল্লাহ (সা) তাবূকের রণাঙ্গনে বের হলেন এবং আলীকে স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে মদীনায় রেখে যান । অত:পর আলী বললেন : আপনি কি আমাকে শিশু ও নারীদের মাঝে রেখে যাচ্ছেন ?!! তিনি ( সা ) বললেন : তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে মূসার কাছে হারূনের মানযিলাত ( মাকাম , পদ , মর্যাদা , অবস্থান ও স্ট্যাটাস) যেমন ঠিক তেমনি আমার কাছে তুমিও ( তোমার মান , মর্যাদা , শা'ন , মাকাম ও অবস্থান )। তবে আমার পরে কোনো নবী নেই । ( দ্রঃ সহীহুল বুখারী , কিতাবুল

মাগাযী , হাদীস নং ৪৪১৬ , পৃ : ১০৭৬ এবং কিতাবু ফাযায়িলিস সাহাবা , হাদীস নং ৩৭০৬ , পৃ : ৯০৮ )

আল্লামা আবূ উমর ইউসুফ ইবনে আব্দিল বার আন্নামিরী আল - কুর্তুবী ( মৃ : ৪৬৩ হি . ) এ হাদীস প্রসঙ্গে আল ইস্তী'আব ফী আসমাইল আসহাব গ্রন্থে বলেছেন:

" মূসার কাছে হারূন যে অবস্থান , শান ও মাকামের ( মানযিলাত ) অধিকারী ছিলেন ঠিক সেরূপ তুমি আমার কাছে ( أنت مني بمنزلة هارون من موسیٰ ) । " --- এ হাদীসটি একদল সাহাবা বর্ণনা করেছেন। আর এ হাদীসটি সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও সবচেয়ে সহীহ হাদীস সমূহের অন্তর্ভুক্ত। মহানবী ( সা ) থেকে সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে সাদের বর্ণিত হাদীসের সনদ সমূহ ( তুরুক্ব طرق) অত্যন্ত বেশী যেগুলো ইবনে আবী খাইসুমাহ ও অন্যরা উল্লেখ করেছেন। আর ইবনে আব্বাস , আবূ সাঈদ আল - খুদরী , উম্মে সালামা , আসমা বিনতে উমাইস , জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ এবং ( সাহাবাদের মধ্য থেকে) এমন এক গোষ্ঠী বা জামায়াত ( দল ) যাদের উল্লেখ করলে বর্ণনা দীর্ঘায়িত হবে তারা এই হাদীস - ই মানযিলাত বর্ণনা করেছেন। ( দ্রঃ আল - ইস্তী'আব ফী আসমাইল আসহাব , খ : ২ , পৃ : ৪৬ , দারুল ফিকর , বৈরুত , লেবানন , মুদ্রণ কাল : ১৪২৬ - ১৪২৭ হি )

হাফেয জালালুদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর আস - সুয়ূতী ( মৃ : ৯১১ হি ) তারীখুল খুলাফা গ্রন্থে লিখেছেন : শাইখাইন ( বুখারী ও মূসলিম ) সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস থেকে , আহমাদ ও আল - বাযযায এই হাদীস - ই মানযিলাত পূর্ণ সনদ সহকারে আবূ সাঈদ আল - খুদরী থেকে এবং আত - তাবরানী আসমা বিনতে উমাইস, উম্মে সালামা, হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ , ইবনে উমর , ইবনে আব্বাস, জাবির ইবনে সামুরাহ , বার্রা ইবনে আযিব ও যাইদ ইবনে আরক্বাম থেকে এ হাদীস পূর্ণ সনদসহ বর্ণনা ( ইখরাজ ) করেছেন। ( দ্রঃ তারীখুল খুলাফা , পৃ : ১৬৮ , শরীফ দায়ী প্রকাশনী , কোম , ইরান , ১ম সংস্করণ , প্রকাশকাল : ১৪১১ হি )

‌‌মহানবীর [ সাঃ ] মাধ্যমে নুবুওয়ত ও রিসালাতের পরিসমাপ্তি (অর্থাৎ খতম - ই নুবুওয়ত ও রিসালত হয়ে গেছে ) বিধায় নতুন কোনো নবী ও রসূল আসবেন না অর্থাৎ মাব'ঊস্ ( مبعوث প্রেরিত ) হবেন না । তবে মহানবীর ( সা ) পূর্বের নবী - রসূলগণ আসতে পারেন তাঁর উম্মত হয়ে । স্মর্তব্য যে সকল নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদের ( সা ) উম্মত এবং তিনি সকল নবীও রসূলগণের নবী , রসূল , নেতা ও সর্দার । সকল নবী - রসূল হযরত মুহাম্মদের ( সা ) নুবূওয়ত ও রিসালাত এবং হযরত আমীরুল মু'মিনীন আলীর ( আ ) এর ইমামত ও বেলায়তের সাক্ষ্য ও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং স্বীয় উম্মতদেরকে তাঁর ( সা ) ও তাঁর আহলুল বাইতের [ আ ] সাথে পরিচিত করে দিয়েছেন । যেমন : আখেরি যামানায় মহানবীর ( সাঃ) আহলুল বাইয়ের ( আ ) বারো মাসূম ইমামের সর্বশেষ অর্থাৎ দ্বাদশ মাসূম ইমাম হযরত মাহদীকে ( আ ) সাহায্য করার জন্য হযরত ঈসা নবী ( আ ) আসবেন যা মুতাওয়াতির হাদীস ও খবরে প্রতিষ্ঠিত ) এবং তিনি অর্থাৎ হযরত ঈসা ( আ ) মহানবীর (সাঃ) আগমনের সুসংবাদ ( বেশারত ) দিয়েছিলেন স্বীয় উম্মতকে যা পবিত্র কুরআনেও উল্লেখিত হয়েছে ।

সুতরাং হাদীস - ই মানযিলাতের আলোকে যেমন : হযরত হারূন ( আ ) হযরত মূসার ( আ ) অবর্তমানে জনগণের কর্তৃপক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ঠিক তেমনি

মহানবীর (সাঃ) পরে মুসলিম উম্মাহর মাওলা ( পথপ্রদর্শক ওয়ালী , নেতা , ইমাম , তত্ত্বাবধায়ক অভিভাবক ও কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ ) হযরত আলী ( আ ) । আর এ কারণেই মহানবী ( সা ) স্বীয় সাহাবী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে ( রা ) হযরত আলীর সাথে থাকতে ও পথ চলতে বলেছেন।

আর উপরোক্ত হাদীস - ই মানযিলাত থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে মহানবী (সা) ও হযরত আলী (আ) পরস্পর হতে অর্থাৎ তাঁরা দুজন পরস্পর অবিচ্ছেদ্য অভিন্ন সত্তা :

আর মহানবী ( সা ) হযরত আলীকে ( আ ) বলেছেন : * " তুমি আমা হতে এবং আমিও তোমা হতে ( তুমি আমার থেকে এবং আমিও তোমার থেকে। " *

وَ قَالَ النَّبِيُّ ( ص) لِعَلِيٍّ : « أَنْتَ مِنٌّیْ وَ أَنَا مِنْکَ . »

দ্রঃ সহীহুল বুখারী ( এক খণ্ড বা জিল্দে প্রকাশিত ) , কিতাবু ফাযায়িলিস সাহাবাহ , বাবু মানাক্বিবি আলী ইবনে আবী তালিব আল - ক্বুরাশী আল - হাশিমী আবিল্ হাসান ( রা : ) , পৃ : ৯০৭ , দারুল ফিকর , বৈরুত , লেবানন , ১ম সংস্করণ , ১৪২৮ - ১৪২৯ হি )

এ হাদীসটি এতটাই শক্তিশালী , প্রতিষ্ঠিত , প্রসিদ্ধ ও অকাট্য বিধায় ইমাম বুখারী এ হাদীসটি স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করার সময় এর সনদ সূত্র উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেন নি এবং হযরত আলীর ফাযায়েলের অধ্যায়ের একদম শীর্ষে অর্থাৎ শুরুতেই তা উল্লেখ করেছেন। শুধু একই বংশীয় ( বনি হাশিম ভুক্ত ) , সমগোত্রীয় ও রক্ত সম্পর্কীয় অতি পরম নিকটাত্মীয় হওয়ার জন্য তিনি ( সা ) এ কথা বলেন নি । বরং তাঁর (সাঃ) নিজের ও হযরত আলীর (আ) মাঝে অবিচ্ছেদ্য , অবিচ্ছিন্ন , অভিন্ন , অটুট নিবিড় ঘনিষ্ঠ সত্তাগত , আত্মিক , মানসিক , আদর্শিক ও ঈমানী বন্ধন থাকার কারণেই মহানবী ( সা ) হযরত আলীকে (আ ) এ কথা বলেছিলেন ।

হযরত আলী মহানবীর (সাঃ) নফস ( আত্মা ও সত্তা ) অর্থাৎ তাঁরা ( মহানবী ও হযরত আলী ) পরম সত্তা , আত্মীয় ও অভিন্ন‌ :

আর উক্ত হাদীসে বর্ণিত " মহানবী (সা) থেকে হযরত আলী ( আ ) এবং হযরত আলী ( আ ) থেকে মহানবী ( সা) " - এ অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের জন্যই পবিত্র কুরআনে হযরত আলীকে ( আ ) মুবাহালার আয়াতে ( আল - ই ইমরান : ৬১) মহানবীর নফস ( আত্মা ও সত্তা ) বলা হয়েছে । এরশাদ হচ্ছে :

فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءكُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةَ اللّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ

" অতঃপর তোমার নিকট জ্ঞান ( কুর'আন ) আসার পর যে ব্যক্তি বা যারা ( খ্রীষ্টানগণ ) তোমার সাথে তাঁর ( হযরত ঈসা - আ - ) ব্যাপারে তর্ক - বিতর্ক করে তাহলে বল : ( ময়দানে ) এস তোমরা , আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে এবং ( তোমরা আহ্বান কর ) তোমাদের পুত্রদেরকে ; আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে , আমাদের সত্তাদেরকে এবং তোমাদের সত্তাদেরকে ; অত:পর আমরা সকলে মিলে ( আল্লাহর দরবারে ) নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লা'নত ( অভিসম্পাত ) বর্ষণ করি । "

এ আয়াতের শা'নে নুযূলে বিদ্যমান সহীহ ( বিশুদ্ধ ) অকাট্য ও প্রতিষ্ঠিত রেওয়ায়ত সমূহের মধ্যে থেকে একটি উল্লেখ করা হল :

সা'দ বলেছেন : " বল : ( ময়দানে ) এস তোমরা , আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে এবং ( তোমরা আহ্বান কর ) তোমাদের পুত্রদেরকে ; আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে , আমাদের সত্তাদেরকে এবং তোমাদের সত্তাদেরকে ; অত:পর আমরা সকলে মিলে ( আল্লাহর দরবারে ) নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লা'নত ( অভিসম্পাত ) বর্ষণ করি । " --- এই আয়াত ( আল - ই ইমরান : ৬১ ) যখন নাযিল হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনকে ডাকলেন ও বললেন : " হে আল্লাহ!এরাই আমার আহল ( আহলুল বাইত ) । " হাকিম নিশাপুরী বলেছেন : এটি শাইখাইনের শর্তে সহীহ হাদীস এবং তারা দুজন তা ইখরাজ ( বর্ণনা) করেন নি । আত - তালখীস গ্রন্থে তাঁর সাথে আল্লামাহ্ যাহাবী একমত পোষণ করে বলেছেন :" বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ( এ হাদীস সহীহ )। "

[ দ্রঃ আল - মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩৬০ - ৩৬১ , দারুল ফিকর , বৈরুত , লেবানন , প্রকাশকাল : ২০০২ ( ১৪২২ হি ) ]

এ হাদীস এবং পবিত্র কুরআনের সূরা -ই আল - ই ইমরানের ৬১ নং আয়াতের আলোকে হযরত আলী ( আ ) হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা ) সত্তা ( নফস نفس ) যা উক্ত আয়াতে বিদ্যমান আনফুসানা ( আমাদের সত্তাদেরকে) থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়।

মহানবীর ( সা ) পবিত্র মাসূম আহলুল বাইতের ( আ ) অন্তর্ভুক্ত হযরত আলী ( আ ) । আর এ কারণে তিনিও ( আ ) পবিত্র , নিষ্পাপ ও মাসূম ।

ওয়াসিলাহ ইবনুল আসক্বা' বলেছেন : আমি আলীর ( আ ) কাছে আসলাম কিন্তু তাঁকে ঘরে পেলাম না । অত :পর ফাতিমা ( আ ) আমাকে বললেন : " মহানবী ( সা ) তাঁকে ডাকার কারণে তিনি রাসূলুল্লাহর ( সা ) কাছে গেছেন । " অতঃপর তিনি ( আ ) রাসূলুল্লাহর ( সা ) সাথে বাড়ীতে আসলেন। তাঁরা দুজন প্রবেশ করলে আমিও তাঁদের দুজনের সাথে প্রবেশ করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ ( সা ) হাসান ও হুসাইনকে ডেকে এনে তাদের দুজনকে স্বীয় ঊরুর ওপর বসালেন , ফাতিমা ও তাঁর স্বামীকে বক্ষদেশের কাছে এনে তাদের ওপর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে বললেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের থেকে হে আহলুল বাইত ! সকল পাপ পঙ্কিলতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে ( সূরা -ই আহযাব : ৩৩ ) । এরপর তিনি ( সা ) বললেন : " এরাই আমার আহলুল বাইত ; হে আল্লাহ ! আমার আহলুল বাইত সবচেয়ে যোগ্য , অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ও হকদার ( هؤلاء أهل بیتي اللهم اهل بیتي أحق ) । হাকিম বলেন : শাইখাইনের শর্তে এটি সহীহ হাদীস এবং তারা দুজন তা উল্লেখ ( ইখরাজ ) করেন নি । যাহাবী আত - তালখীস গ্রন্থে বলেছেন : হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ। ( আল মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন্ , খ :৩ , পৃ : ৩৫৭ , হাদীস নং ৪৭৬৪ )

এতদসংক্রান্ত হাদীস ( হাদীস - ই কিসা বা চাদরের হাদীস) অনেক এবং মুতাওয়াতির। এ সব হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে মহানবীর ( সা ) আহলুল বাইত যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র করার কথা পবিত্র কুরআনের সূরা -ই আহযাবের উক্ত ( ৩৩ নং ) আয়াতে ঘোষণা করেছেন তাঁরা কেবল হযরত আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইন এবং অন্য কোন সাহাবা , নবী পত্নী , বনী হাশিমের কেউ এমনকি হযরত ফাতিমা ও হযরত আলীর কন্যাসন্তানগণ ( হযরত যাইনাব বিনতে আলী ও উম্মু কুলসূম বিনতে আলী ) এবং হযরত আলীর অন্যান্য সন্তানগণ যেমন : হযরত আবুল ফাযল আব্বাসও অন্তর্ভুক্ত নন । মহানবী (সা) সহ এই চারজনকে বলা হয় পাক পাঞ্জতন ( পবিত্র মাসূম ৫ জন ) । এরাই ( পাক পাঞ্জতন ) মহানবীর (সাঃ) জীবদ্দশায় বিদ্যমান তাঁর প্রকৃত পবিত্র মাসূম আহলুল বাইত । আর সূরা -ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত আহলুল বাইত এবং মুতাওয়াতির হাদীস - ই কিসায় উল্লেখিত এই আহলুল বাইত পরিভাষাটি হচ্ছে বিশেষ কুরআনী পরিভাষা এবং তা শাব্দিক, আভিধানিক, প্রচলিত এমনকি ফিক্বহী পারিভাষিক অর্থে আহলুল বাইত হতেও সম্পূর্ণ ভিন্ন‌ । আর মুতাওয়াতির হাদীস - ই কিসায় হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা) সূরা -ই আহযাবের উক্ত ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত আহলুল বাইত যে কারা তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং এ ক্ষেত্রে মহানবী (সা) আহলুল বাইতের ( আ ) যে অর্থ ব্যক্ত করেছেন তা বাদ দিয়ে ভিন্ন কোনো অর্থ সর্বৈব অগ্রহণযোগ্য। উক্ত আয়াত ও হাদীসের কিসায় আহলুল বাইতকে ( আ ) পবিত্র নিষ্পাপ ও মাসূম বলা হয়েছে।

হযরত আলী ( আ ) উম্মতের মাঝে মহানবীর ( সা ) রেখে যাওয়া ঐতিহ্য ও আমানত সাকালাইনের ( পবিত্র কুরআন ও মহানবীর ইতরাৎ আহলুল বাইত ) অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে আঁকড়ে ধরতে মহানবী ( সা ) মুতাওয়াতির হাদীস - ই সাকালাইনে আদেশ দিয়েছেন যাতে উম্মত যেন তাঁর পরে কখনো গুমরাহ না হয় । কারণ এই সাকালাইন ( দুটো অতি ভারী ও মূল্যবান ঐতিহ্য : পবিত্র মাসূম কুরআন ও পবিত্র মাসূম আহলুল বাইত) কিয়ামত পর্যন্ত কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও পৃথক হবে না মুতাওয়াতির হাদীস -ই সাকালাইনের কিছু নমূনা হাদীস নীচে বর্ণিত হল :

যাইদ ইবনে আরক্বাম বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আমি তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি দুটো অতি ভারী অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস : মহান আল্লাহর কিতাব ( পবিত্র কুরআন ) এবং আমার আহলুল বাইত এবং এ দুটো আমার কাছে হাউযে উপনীত হওয়া পর্যন্ত কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না ।

( হাকিম নিশাপুরী বলেছেন : ) এটা শাইখাইনের শর্তে সহীহুল ইসনাদ হাদীস এবং তারা দুজন ( শাইখাইন : ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম ) তা ইখরাজ ( পূর্ণ সনদ সহ স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা) করেন নি । আর আত - তালখীস গ্রন্থে যাহাবী তাঁর সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন : বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ( এ হাদীসটি সহীহ ) ।

( দ্রঃ আল - মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ: ৩ , পৃ : ৩৫৯ , হাদীস নং ৪৭৬৯ )

পর্ব: ১ এর শেষাংশ দ্রঃ......

অনুবাদ: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

تبصرہ ارسال

You are replying to: .