হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব : ১ এর শেষাংশ :
যাইদ ইবনে আরক্বাম বলেন : যখন রাসূলুল্লাহ (সা) বিদায় হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং গাদীরে খুমে নেমে ( যাত্রা বিরতি করলেন এবং ) আদেশ দিলেন : বিশাল বৃক্ষ সমূহের তলদেশ ঝাড়ু দিতে এবং সেগুলো ঝাড়ু দেওয়া হল । অতঃপর তিনি বললেন : " আমাকে যেন ডাকা হয়েছে এবং আমিও সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছি ( অর্থাৎ আমার এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার সময় নিকটবর্তী হয়েছে ) । আমি তোমাদের মাঝে রেখে গেলাম দুটো অতি ভারী ও মূল্যবান জিনিস যেগুলোর একটি আরেকটির চেয়ে বড় : আল্লাহর কিতাব ( পবিত্র কুরআন ) এবং আমার ইতরাত ( অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর যারা ) আমার আহলুল বাইত। অতএব তোমরা দেখো ( সতর্ক ও সাবধান থেকো ) যে এতদুভয়ের ক্ষেত্রে তোমরা আমার কেমন উত্তরাধিকারী ও স্থলাভিসিক্ত হও ( কেমন তোমরা আমানতদার হও ) ?! কেননা এ দুটো আমার কাছে হাওযে কাওসারে উপনীত হওয়া পর্যন্ত কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না । " এরপর তিনি বললেন : " নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার মাওলা ( প্রভু ) এবং আমি প্রত্যেক মুমিনের ওয়ালী ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবক ) ।" এরপর তিনি আলীর হাত ধরে বললেন : " আমি যার ওয়ালী ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক অভিভাবক ) এই ( আলী ) তার ওয়ালী । হে আল্লাহ ! যে তাঁকে ভালবাসে তাকে আপনি ভালবাসুন এবং যে তার সাথে শত্রুতা করে আপনি তার সাথে শত্রুতা করুন । " আবুত তুফাইল বলেন : অত:পর আমি যাইদ ইবনে আরক্বাম কে বললাম : " আপনি কি এটা রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে শুনেছেন ? " তিনি বললেন : ঐ বৃক্ষ সমূহের স্থানে যে কেউ উপস্থিত ছিল সে অবশ্যই তা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছে এবং নিজ কানে শুনেছে । "
দ্রঃ ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসু আমীরিল মু'মিনীন আলী ইবনে আবী তালিব , পৃ : ৭২ এবং হাদীস নং ৭৯ । এই গ্রন্থের হাদীস সমূহের সনদ সংক্রান্ত গবেষক দানী ইবনে মুনীর আয - যাহভী এ হাদীসের পাদটীকায় লিখেছেন : এ হাদীসের ইসনাদ মুতাবেআতের ( এ হাদীসের অনুরূপ মুতাবে হাদীস সমূহের ) মাধ্যমে সহীহ ( إسناده صحیح بالمتابعات ) ।
হাকিম নিশাপুরী বলেছেন : এ হাদীসটি শাইখাইনের শর্তে সহীহ এবং তারা দুজন তা ইখরাজ ( বর্ণনা ) করেন নি । ( দ্রঃ আল - মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩২৩ , হাদীস নং ৪৬৩৪ )
এ হাদীসের একটি শাহেদ ( নমূনা সাক্ষ্যী ) হাদীস : মুহাম্মদ ইবনে সালামাহ ইবনে কুহাইল স্বীয় পিতা থেকে , (সালামাহ ইবনে কুহাইল ) আবুত তুফাইল থেকে , (আবুত তুফাইল) ইবনে ওয়াসিলাহ থেকে : ইবনে ওয়াসিলাহ বলেন যে তিনি যাইদ ইবনে আরক্বাম কে বলতে শুনেছেন : রাসূলুল্লাহ ( সা ) মক্কা ও মদীনার মাঝখানে পাঁচটি প্রকাণ্ড বড় বৃক্ষের কাছে থামলে ঐ সব বৃক্ষের তলদেশ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে এরপর রাসূলুল্লাহ ( সাঃ) অপরাহ্নে নামায পড়ে ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন । তিনি মহান আল্লাহর প্রশংশা ও গুণকীর্তন ও ওয়াস নসীহত করলেন এবং স্মরণ করিয়ে দিলেন ; তিনি আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছিলেন যে তিনি ( সা ) তা বলবেন তা তিনি ( সা ) বললেন। এরপর তিনি ( সা ) বললেন : " হে লোকসকল ! আমি তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি দুটো বিষয় ( জিনিস ) যদি তোমরা ঐ দুটোর অনুসরণ কর তাহলে তোমরা কখনোই গুমরাহ ( পথভ্রষ্ট ) হবে না ; আর ঐ দুটো বিষয় হচ্ছে : মহান আল্লাহর কিতাব (পবিত্র কুরআন) এবং আমার আহলুল বাইত , আমার ইতরাত। " এরপর তিনি বললেন : " তোমরা কি জানো যে আমি মুমিনদের থেকে মুমিনদের নিকট অধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত অধিক নিকটবর্তী ( আওলা أوْلیٰ ) ? " এ কথা তিনি তিন বার বললেন । উপস্থিত জনতা বলল : "জী হ্যাঁ ।" অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সা ) বললেন : " আমি যার মাওলা আলীর তার মাওলা। " হাকিম নিশাপুরী বলেছেন : এ হাদীসটিও শাইখাইনের শর্তে সহীহ।
( দ্রঃ আল মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন খ : ৩ , পৃ : ৩২৪ , হাদীস নং ৪৬৩৫ )
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন : বিদায় হজ্জে আরাফার দিবসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ )কে তাঁর কাসওয়া উষ্ট্রীর ওপর বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলতে শুনেছি : হে লোকসকল ! আমি তোমাদের মাঝে যা রেখে গেলাম তা যদি তোমরা আঁকড়ে ধর তাহলে কখনোই গুমরাহ হবে না : আল্লাহর কিতাব ( পবিত্র কুরআন ) এবং আমার ইতরাত ( অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ) আমার আহলুল বাইত । আর এই ক্ষেত্রে আবূ যর , আবূ সাঈদ , যাইদ ইবনে আরক্বাম এবং হুযাইফা ইবনে উসাইদ থেকেও ( অনুরূপ হাদীস) বর্ণিত হয়েছে। তিরমিযী বলেন : এই সনদ সূত্রে এটা হাসান গরীব হাদীস ।
( দ্রঃ সুনানুত তিরমিযী , কিতাবুল মানাকিব , মহানবীর ( সাঃ)আহলুল বাইতের (আ) মানাকিব অধ্যায় , পৃ : ৯৯১ , হাদীস নং ৩৭৯৪ , দার ইহয়াইত তুরাস আল - আরাবী , বৈরুত লেবানন , ১ম সংস্করণ )
তবে এই মুতাওয়াতির হাদীস -ই সাকালাইনে পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের (আ) সহ অবস্থান , চিরবিদ্যমানত্ব , অটুট বন্ধন এবং পরস্পর অবিচ্ছেদ্য
হওয়া থেকে স্পষ্ট হয় যে মানবজাতির হেনদায়তের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি যুগেই পবিত্র কুরআনের সাথে মহানবীর ( সাঃ ) মাসূম আহলুল বাইত ( আ ) অবশ্যই এ বিশ্বে বিদ্যমান থাকবেন । আর কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এই মাসূম আহলুল বাইত কয়জন ? তাঁরা মহানবী (সা) , হযরত ফাতিমা এবং বারো মাসূম ইমাম অর্থাৎ মোট ১৪ জন ( ১৪ মাসূম ) । তাই মহানবীর ( সাঃ) তিরোধানের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত ইমাম ও খলীফাদের সংখ্যা যে মাত্র ১২ জন এবং প্রতিটি যুগেই ইমাম বিদ্যমান থাকবেন এবং যে কেউ যদি তার যুগের ইমামকে না চিনে ও তাঁর আনুগত্য ( বাইয়াত ) না করে মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে যে জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করবে এতদ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠিত সহীহ নিশ্চিত হাদীস সমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে উক্ত বারো ইমাম অবশ্যই মহানবীর ( সাঃ ) পবিত্র নিষ্পাপ, মাসূম আহলুল বাইতেরই ( আ) অন্তর্ভুক্ত এবং কিয়ামত পর্যন্ত আহলুল বাইতের ঐ পাঁচজন সদস্যের ( রাসূলুল্লাহ সা: , ফাতিমা, আলী , হাসান ও হুসাইন) পর আরো ৯ জন সদস্য আছেন যারা ইমাম হুসাইনের ( আ ) ঔরসজাত বংশধর যারা উক্ত বারো মাসূম ইমামের বাকি ৯ জন মাসূম ইমাম যাদের সর্বশেষ ( দ্বাদশ ) ইমাম হচ্ছেন হযরত মাহদী ( আ ) । উলূল আমরের আনুগত্যের আয়াতের ব্যাখ্যায় মহানবী ( সা ) ও তাঁর আহলুল বাইত ( আ ) থেকে বারো ইমামের পরিচিতিমূলক হাদীস সমূহ বর্ণিত হয়েছে যেগুলো থেকে জানা যায় যে হযরত আলী প্রথম ইমাম, হযরত হাসান ২য় ইমাম , হযরত হুসাইন তৃতীয় ইমাম , হযরত আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীন ৪র্থ ইমাম , হযরত মুহাম্মদ ইবনে আলী আল - বাক্বির ৫ম ইমাম , হযরত জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস - সাদিক্ব ৬ষ্ঠ ইমাম, হযরত মূসা ইবনে জাফার আল - কায়িম ৭ম ইমাম , হযরত আলী ইবনে মূসা আর রিযা ৮ম ইমাম , হযরত মুহাম্মদ ইবনে আলী আত - তাকী আল - জাওয়াদ ৯ম ইমাম , হযরত আলী ইবনে মুহাম্মাদ আল - হাদী আন - নাকী ১০ মং ইমাম , হযরত হাসান ইবনে আলী আল - আসকারী একাদশ ইমাম এবং হযরত মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আল - হুজ্জাহ , আল - মাহদী আল - মুন্তাযার দ্বাদশ অর্থাৎ সর্বশেষ ইমাম যিনি গাইবতে ( অন্তর্ধানে ) আছেন এবং আখিরুয যামানে আবির্ভূত হয়ে বিশ্বকে আদল ( ন্যায় ও সুবিচার) দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিবেন । আর এতদসংক্রান্ত আরো বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন যা এ প্রবন্ধে সম্ভব নয় ।
অতএব মুতাওয়াতির হাদীস - ই সাকালাইনের আলোকে প্রমাণিত হয় যে হয়রত আলী ( আ ) সাকালাইনের অন্তর্ভুক্ত। কারণ তিনি আহলুল বাইতের একজন সদস্য । অতএব তাঁকে আঁকড়ে ধরে কেবল তাঁর অনুসরণ করতে ও তাঁর পথে চলতে হবে ।
পর্ব : ১ সমাপ্ত
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
চলবে ( এরপর পর্ব : ২ )