۳ آذر ۱۴۰۳ |۲۱ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 23, 2024
ইমাম জাওয়াদ (আঃ)
ইমাম জাওয়াদ (আঃ)

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আঃ) ছিলেন নূর নবী রাসূলুল্লাহ (দঃ) এঁর সদগুণাবলি ও ইমাম আলী (আঃ) এঁর জ্ঞানের প্রতীক।

হাওজা নিউজ এজেন্সি বাংলাঃ পর্ব ২- ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ) ছিলেন নূর নবী রাসূলুল্লাহ (দঃ) এঁর সদগুণাবলি ও ইমাম আলী (আঃ) এঁর জ্ঞানের প্রতীক। সাহসিকতা, বলিষ্ঠতা, দানশীলতা, জ্ঞানচর্চা, ক্ষমাশীলতা ও সহনশীলতা ছিল তাঁর উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গুণ।

আব্বাসী শাসক আল-মামুন তার সাম্রাজ্যকে সংহত করার জন্য পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ইরানীদের সমর্থন ও সহায়তা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ঘটনাক্রমে সে বনু আব্বাসের বন্ধুত্ব ছেড়ে বনু ফাতেমার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে এবং সে আনুকূল্য লাভ করে। এক পর্যায়ে সে ইমাম আলী রিদ্বা (আঃ) কে তাঁর উত্তরাধিকার ঘোষণা করে এবং তাঁর বোন উম্মুল হাবীবাকে ইমাম রিদ্বা (আঃ) এঁর সাথে বিবাহ দেন। আল-মামুনের ধারণা ছিল ইমাম আলী রিদ্বা (আঃ) রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্মে তাকে সমর্থন ও সহায়তা দেবেন। কিন্তু যখন সে দেখল যে, রাজনৈতিক বিষয়াবলিতে ইমাম পাকের আগ্রহ কম এবং জনসাধারণও তাঁর আধ্যাত্মিক মহত্ত্বের কারণে তাঁর প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে এবং আনুগত্য পোষণ করছে তখন প্রতিহিংসাবশত আল-মামুন ইমাম আলী রিদ্বা (আঃ)-কে বিষ প্রয়োগ করে। কিন্তু যে সংকটের কারণে ইমাম আলী রিদ্বা (আঃ) কে তাঁর উত্তরাধিকারী ও স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করেছিল তা থেকেই গেল। এ সময় সে তাঁর কন্যা উম্মুল ফাজলকে ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ আত-তাকীর সাথে বিবাহ দেয়ার জন্য মনস্থির করে। এই লক্ষ্যে সে ইমাম আত-তাকী (আঃ) কে ডেকে পাঠায়।

বনু আব্বাসের লোকেরা যখন জানতে পারল যে, আল-মামুন তার কন্যাকে ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ) এঁর সাথে বিবাহ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তখন তারা তা ব্যর্থ করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। তারা শীর্ষ স্থানীয় লোকদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় মামুনের কাছে যেন তার সিদ্ধান্ত বাতিল করে কিন্তু মামুন ইমাম জাওয়াদের শিক্ষা ও গুণের প্রশংসা করতেই থাকে। সে বলে যে, ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদ বয়সে তরুণ হলেও জ্ঞানগত গভীরতার দিক দিয়ে তাঁর পিতার সত্যিকার উত্তরাধিকারী। ইসলামী বিশ্বে কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারবে না। ইমামের শিক্ষা ও জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি আল-মামুনের এই প্রশংসার কথা জানতে পেরে আব্বাসীরা ইমামের মোকাবিলায় বাগদাদের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও আইনজ্ঞ ইয়াহিয়া ইবনে আকসামকে বাছাই করে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আল-মামুন প্রতিযোগিতার জন্য এক মহা সমাবেশের আয়োজন করে। তাতে যোগ দেয় দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। এছাড়াও ঐ সমাবেশে জ্ঞানী ও পণ্ডিতদের জন্য নয়শ’ চেয়ার সংরক্ষণ করা হয়েছিল। গোটা বিশ্ব যেন তখন বিস্ময়ের সাথে প্রতীক্ষা করছিল যে, একজন তরুণ কিভাবে ইরাকের ধর্মীয় ও বিচার বিভাগীয় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে প্রতিযোগিতা করবেন।

একদিন ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ (আঃ) মামুনের সিংহাসনের পাশে ইয়াহিয়া ইবনে আকসামের মুখোমুখী বসেছিলেন। ইয়াহিয়া ইমামকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আপনি কি আমাকে একটি প্রশ্ন করার অনুমতি দেবেন?’

ইমাম উত্তরে তাঁর প্রৌঢ় প্রতিপক্ষকে বললেন, ‘আপনার যা ইচ্ছা তাই জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’

এই বাহাসে ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ (আঃ) তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়াহিয়া ইবনে আকসামের সকল প্রশ্নের জবাব দেন। কিন্তু ইমামের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি ইয়াহিয়া; বরং ইয়াহিয়াকে করা ইমাম পাকের প্রশ্নের জবাবও ইমাম পাক দিয়ে দেন।

তখন মামুন সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় বলে, ‘আমি কি আগেই বলিনি যে, ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ (আঃ) এমন এক পরিবার থেকে এসেছেন, যাকে জ্ঞান ও শিক্ষার ভাণ্ডার হিসাবে মহান আল্লাহ পাক বাছাই করেছেন। এই পরিবারের শিশুদের সাথেই পেরে উঠতে পারে, এই পৃথিবীতে এমন কেউ আছে কি?’ সমবেত সকলেই সমস্বরে বলে উঠল, ‘না, না, মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ) এঁর সমকক্ষ কেউ নেই।

একই সমাবেশে আল-মামুন তার কন্যা উম্মুল ফাজলকে ইমাম পাকের সাথে বিবাহ দেন এবং আনন্দের নিদর্শন হিসাবে তার অধীনদের মধ্যে উদার হস্তে দান ও উপহার বিলাতে থাকে। শাদী মোবারকের এক বছর পর ইমাম সস্ত্রীক বাগদাদ থেকে মদীনায় ফিরে যান এবং মহান আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকাম প্রচারের কাজ শুরু করেন।

আল-মামুনের ইন্তেকালের পর আল-মুতাসিম সিংহাসনে আরোহণ করে। এতে সে ইমামের উপর অত্যাচার চালানোর সুযোগ পায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করে। আল-মুতাসিম ইমাম পাককে বাগদাদে তলব করে। ২২০ হিজরির ৯ মুহররম ইমাম বাগদাদে পৌঁছান। আল-মুতাসিম ঐ বছরই ইমাম জাওয়াদ (আঃ) কে বিষ প্রয়োগ করে। তিনি ৩০ জিলক্বদ শাহাদত বরণ করেন। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-জাওয়াদ আত-তাকী (আঃ)-কে বাগদাদের উপকণ্ঠে আল-কাযিমিয়াতে তাঁর পিতামহ সপ্তম ইমাম মূসা কাযিম (আঃ) এঁর মাজার পাকের পাশে দাফন করা হয়। সমাপ্ত

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَی مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলে-মুহাম্মাদ।

লেখাঃ মাওলানা মুহাম্মাদ রুকুন উদ্দীন ক্বাদরী

تبصرہ ارسال

You are replying to: .