۳ آذر ۱۴۰۳ |۲۱ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 23, 2024
সুন্নি মনীষীদের দৃষ্টিতেও কেন ইয়াজিদ চরম ঘৃণার পাত্র?
সুন্নি মনীষীদের দৃষ্টিতেও কেন ইয়াজিদ চরম ঘৃণার পাত্র?

হাওজা / মহাশয়তান অভিশপ্ত ইয়াজিদ ও তার দলবল সব সময়ই ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পর্কে নানা ধৃষ্টতাপূর্ণ, অশালীন ও অযৌক্তিক মন্তব্য করেছে।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৪ -কাজি সানাউল্লাহ পানিপথি:

তিনি সুরা ইব্রাহিমের ২৮ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন, বনি উমাইয়ারা সব সময়ই কুফুরির মধ্যে ডুবে থেকে এ নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করত। ইয়াজিদ ও তার সঙ্গীরা আল্লাহর নেয়ামতের কুফরি করেছে এবং রাসূলের আহলে বাইতের বিরুদ্ধে শত্রুতার পতাকা তুলে শেষ পর্যন্ত পৈশাচিকভাবে ইমাম হুসাইন (আ.)-কে শহীদ করেছে। সে এতটা শত্রুতা করেছে যে মুহাম্মাদ (সা.)’র ধর্মকেই অস্বীকার করেছে।   

(তুমি কি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।

দোযখের? তারা তাতে প্রবেশ করবে সেটা কতই না মন্দ আবাস।  সুরা ইব্রাহিম-২৮)

মাতাল ইয়াজিদ সম্পর্কে ইবনে জাওজির সাক্ষ্য:

তিনি লিখেছেন, ইয়াজিদ তার চাচাতো ভাই ওসমান বিন মুহাম্মাদ বিন আবু সুফিয়ানকে মদীনার গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়। ওসমান মদিনাবাসীর একটি প্রতিনিধিকে ইয়াজিদের কাছে পাঠান। ইয়াজিদ নানা উপহার নিয়ে অপেক্ষা করছিল যাতে ওই প্রতিনিধিদলের আনুগত্য আদায় করা যায়।  প্রতিনিধিদল ফিরে এসে মদিনাবাসীকে ও সাহাবিদের জানান: আমরা এমন একজন লোকের কাছে গিয়েছিলাম যার কোনো ধর্ম নেই, সে মদ পান করে, বাদ্যযন্ত্র বাজায়, গায়িকাদের সঙ্গে থাকে ও কুকুরের সঙ্গে (সঙ্গম) থাকে। আমরা তার প্রতি আনুগত্য করার শপথ পরিহার করলাম বলে ঘোষণা করছি। আবদুল্লাহ বিন আবি আমরো বিন হাফস ইয়াজিদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া সত্ত্বেও তাকে আল্লাহর শত্রু  ও মাতাল বলে উল্লেখ করে এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার শপথ নেয়।

ইয়াজিদ সম্পর্কে ইবনে কাসির:  নানা হাদিস থেকে জানা যায়, ইয়াজিদ ছিল নানা পাপে আসক্ত। সে মদপান করত, গান শুনত, বালকদের সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হত, ঢোল বাজাত, কুকুরের সঙ্গে সঙ্গম করত। ইয়াজিদ ব্যাঙ, ভালুক ও বানরের মধ্যে যুদ্ধ বাধাত। প্রত্যেক সকালে সে মাতাল হত এবং ঘোড়ার লাগামের মধ্যে বানর বেধে ঘোড়াকে দৌড়াতে বাধ্য করত। (বিদায়া ও নিহায়া, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-১১৬৯)

সুন্নি ঐতিহাসিক ও মনীষীরা ইয়াজিদ তো দূরের কথা মুয়াবিয়াকেও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি ও শাসক বলে মনে করতেন না, যেমনটি তা মনে করতেন না আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)।

মুয়াবিয়া মুসলিম ইতিহাসের সর্বপ্রথম বাদশাহ বা রাজা

‘তারিখুল খোলাফা’ নামক বইয়ে মুয়াবিয়াকে ‘সর্বপ্রথম বাদশাহ’ বলা হয়েছে। (এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন ভারতবর্ষের বিখ্যাত সুন্নি আলেম শাহ আবদুল আজিজ দেহলাভি।) একই বইয়ে মুয়াবিয়ার মাধ্যমে প্রচলিত নানা বিদাআত হিসেবে মসজিদে লোকজনের সামনে বসে খুতবা দেয়া, ঈদের জামাতে বিদাআতী পন্থায় খুতবা দেয়া, ঈদের জামাতের জন্য আযান চালুর বিদাআত ও ঈদের নামাজের তাকবিরের সংখ্যা কমিয়ে দেয়াকে মুয়াবিয়ার অপকীর্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মুয়াবিয়া সম্পর্কে শাহ আবদুল আজিজ দেহলাভির উদ্ধৃত তথ্য:

শাহ আবদুল আজিজ দেহলাভি তার বিখ্যাত বই তোহফায়ে ইসনা আশারিয়া বইয়ে লিখেছেন: ইমাম তিরমিজি বলেছেন, বনু উমাইয়াদের খলিফা হওয়ার দাবি মিথ্যা। তারাতো বাদশাহ মাত্র এবং তাও জঘন্য ধরনের বাদশাহ।

মিশকাত শরিফের হাদিসে সাহাবি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে: রাসূল (সা.) বলেছেন, খিলাফত মদিনায় আর রাজতন্ত্র সিরিয়ায়। (মিশকাতুল মাসাবিহ, ৫৮৩, দিল্লি থেকে প্রকাশিত) অর্থাৎ রাসূল (সা.) সিরিয়া থেকে রাজতন্ত্র শুরু হবে বলে উল্লেখ করে গেছেন। হযরত আলী (আ.) মদিনাতেই খলিফা হয়েছিলেন এবং সেখানেই জনগণ তার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছেন। অবশ্য পরে তিনি তার রাজধানী মদীনা থেকে কুফায় স্থানান্তর করেন। অন্যদিকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মুয়াবিয়ার রাজধানী ছিল সিরিয়ায়।

আল্লামা বুরহানুদ্দিন:

সুন্নি হানাফি ফিকাহর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হিদায়ায় আল্লামা বুরহানুদ্দিন মুয়াবিয়াকে ‘জালিম বাদশাহদের সারিতে’ স্থান দিয়েছেন এবং আলী (আ.) ন্যায় বা হকের পক্ষে ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। (হিদায়া, খণ্ড-৩, পৃ-১৩৩, বিচারকার্য অধ্যায়) 

সুন্নি মাজহাবের ফাতহুল কাদির গ্রন্থে এসেছে: “সত্য সেযুগে আলীর সঙ্গেই ছিল। কারণ, তাঁর (নেতৃত্বের প্রতি জনগণের) বায়আত (আনুগত্যের শপথ) বিশুদ্ধ ছিল ও তা গৃহীত হয়। তাই তিনি জামাল যুদ্ধে ন্যায়ের পথে ছিলেন ও মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধের সময়ও ন্যায়ের পথে ছিলেন। এ ছাড়াও আলী (আ.)’র ন্যায় পথে থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় আম্মারের প্রতি রাসূলের (সা.) উক্তির আলোকে। রাসূল (সা.) আম্মারকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, তোমাকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হত্যা করবে। আর তাঁকে হত্যা করেছিল মুয়াবিয়ার সঙ্গীরা। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে মুয়াবিয়ার ও তার সঙ্গীরা (আমর ইবনে আসসহ) বিদ্রোহী ছিল। ”

উল্লেখ্য আম্মার (রা.)-কে হত্যার ঘটনার পরও মুয়াবিয়া ও তার দল অন্যায্য পথে থাকার ব্যাপারে তাদের ভুল স্বীকার করেনি। ইমাম বুখারির বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারিতে (বুখারি, খণ্ড-১, পৃ-৩৯৪)এসেছে: .... হায়রে আম্মার! বিদ্রোহী গোষ্ঠী তোমাকে হত্যা করবে। আম্মার তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকবে আর তারা (বিদ্রোহীরা) তাকে দোযখের আগুনের দিকে ডাকবে।(অর্থাৎ মুয়াবিয়ার দল জাহান্নামের দিকে আহ্বান জানাত। আর আম্মার ডাকতেন আলীর-আ. পথের দিকে তথা বেহেশতের দিকে।)

এমন স্পষ্ট হাদিসের পরও মুয়াবিয়া ইজতিহাদি (বা ইসলামী মূল নীতির ভিত্তিতে নতুন বা স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা আবিষ্কার) ভুল করেছেন বলে সাফাই দেয়ার কোনো উপায় নেই। অন্যদিকে বুখারির হাদিসে (আম্মারের মানাকিব বা মর্যাদা অধ্যায়ে, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠ-৫৩০) এসেছে, (রাসুল-সা. বলেছেন,) ‘শয়তান কখনও আম্মারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারবে না।’ আম্মার আগাগোড়াই ছিলেন আলীর (আ. পক্ষে।  মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস তা জানা সত্ত্বেও আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অব্যাহত রেখেছিল এবং তারা আম্মারকে হত্যা করার পরও সঠিক পথ ধরেননি।

মুয়াবিয়ার নানা অপকীর্তির মধ্যে হযরত আলী (আ.)’র সঙ্গে নানা অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া, ইমাম হাসান (আ.)-কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা এবং এই মহান ইমামের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো লঙ্ঘনের কথা (যেমন, ইয়াজিদকে যুবরাজ নিয়োগ করা) বলা যায়। মুয়াবিয়া তৃতীয় খলিফা ওসমান হত্যার বদলা নেয়ার নাম করে ও সব কিছুর আগে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তুলে আলী (আ.)'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল। তার এইসব দাবি যে প্রতারণা ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় যখন সে আলী (আ.)'র শাহাদতের পর থেকে নিজের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বহু বছরের মধ্যেও কখনও আর তৃতীয় খলিফাকে হত্যার বিচার প্রসঙ্গে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। 

এবারে অভিশপ্ত ইয়াজিদ ও তার অভিশপ্ত নানা আচরণ সম্পর্কে  আরো কয়েকজন প্রখ্যাত সুন্নি মনীষীর মন্তব্য বা মতামত এ নিবন্ধে তুলে ধরছি:

সুন্নি আকিদা বা বিশ্বাসের বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘আকায়েদে নাসাফী’-তে এসেছে:

“কোনো কোনো আলেম ইয়াজিদের প্রতি লানত বা অভিশাপ দিয়েছেন। কারণ, ইয়াজিদ হুসাইনকে হত্যা করে কাফেরের কাজ করেছে। এই হত্যা ও হত্যার নির্দেশের জন্য এবং হুসাইনকে হত্যা করা  বৈধ বা হালাল মনে করা ও এইসব কাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশের জন্য এমন লোকদের প্রতি লানত বা অভিশাপ দেয়াকে সবাই বৈধ মনে করেন।... ইয়াজিদ ইমাম হুসাইনের শাহাদতে উল্লাস প্রকাশ করে এবং নবী-পরিবারকে অপমান করে আনন্দিত হয়। এইসব তথ্য নির্ভুল ও ব্যাপকভাবে সমর্থিত। তাই আমরা আহলে সুন্নাত আল জামায়াত ইয়াজিদের ব্যাপারে এতটুকু দ্বিধা বোধ করব না ও এমনকি তার ঈমানের প্রশ্নেও না- ইয়াজিদের ওপর অভিশাপ ও তার সাহায্যকারীদের ওপরও অভিশাপ। ইয়াজিদের পক্ষ সমর্থনকারীদের প্রতিও অভিশাপ।” (পৃ-১৬২)

আল্লামা সুয়ুতি:

ইয়াজিদের পিতা (মুয়াবিয়া) ইয়াজিদকে যুবরাজ নিযুক্ত করেন, আর তা মেনে নেয়ার জন্য জনগণের ওপর বলপ্রয়োগ করেন।

আল্লামা আলুসি: ইয়াজিদ কাফির ছিল

তিনি লিখেছেন খবিসটি (ইয়াজিদ) নবী (সা.)-কে রাসূল বা নবী বলেই বিশ্বাস করতো না, অর্থাৎ সে কাফির ছিল। মক্কা ও মদিনার জনগণের সঙ্গে এবং নবীর (সা.) পরিবারের সঙ্গে সে যা করেছে তাতে প্রমাণিত হয় যে সে কাফির ছিল।  (তাফসিরে রুহুল মাআনি)

প্রখ্যাত  এই সুন্নি তাফসিরকারক পবিত্র কুরআনের ‘রুহুল মাআনি’ নামক তাফসির গ্রন্থে লিখেছেন: “আমি আমার এ বিশ্বাসকেই বেশি গুরুত্ব দেই যে, খবিসটি (ইয়াজিদ) নবী (সা.)-কে রাসূল বা নবী বলেই বিশ্বাস করতো না, অর্থাৎ সে কাফির ছিল। সে কখনও অনুতপ্ত হয়নি দৃশ্যত। তার অনুতপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা ইমানদার হওয়ার সম্ভাবনার চেয়েও দুর্বল। আমি মনে করি বেশিরভাগ মুসলমানের কাছেই ইয়াজিদের কার্যকলাপ অজানা ছিল না। কিন্তু মুসলমানরা তখন অসহায়ভাবে বশীভূত ছিল।

আর যদি ধরে নেই খবিসটি (অপবিত্র) মুসলমান ছিল, তাহলেও বলতে হবে সে যাবতীয় বড় পাপ একত্রে করেছে যা বর্ণনা করার ভাষা নেই। আমি মনে করি তার মত ব্যক্তির প্রতি অভিশাপ দেয়া বৈধ। তার মত বড় পাপী কেউ আছে বলেও ধারণা করা যায় না।

ইয়াজিদ ছাড়াও (তার গভর্নর) ইবনে জিয়াদ, ওমর সাদ ও তাদের দলবলও অভিশাপ পাওয়ার উপযুক্ত।  তাদের সবার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।  তাদের সাহায্যকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাঙ্গপাঙ্গদের ওপরও লানত তথা অভিশাপ। আর যারা তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে তাদের ওপরও অভিশাপ কিয়ামতের দিন পর্যন্ত এবং ততদিন যতদিন ইমাম হুসাইন (আ.)’র জন্য একটি মাত্র চোখ থেকেও অশ্রু ঝরবে। আর শিয়াদেরকে হেয় করার জন্য ইয়াজিদের পক্ষ নেয়াও মূর্খতার নিদর্শন।” (রুহুল মায়ানি, খণ্ড-২৫, পৃ-৭৩)

মাওলানা আশরাফ আলী থানবী:

ইয়াজিদ ছিল জালিম, ফাসিক ও নালায়েক (অযোগ্য)। আর ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন মজলুম ও শহীদ। ইয়াজিদ বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী। আর এ ধরনের কাজ অবৈধ বা নাজায়েজ।

ইয়াজিদকে বড় করে তুলে ধরার জন্য যুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো কোনো হাদিস বিকৃত করা হয়েছে বা বানানো হয়েছে। এইসব বিকৃত হাদিসের সঙ্গে আসলে ইয়াজিদের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন: মুসলমানদের মধ্যে যারা প্রথম নৌ অভিযান চালাবে তাদের বেহেশত দেয়া হবে এবং মুসলমানদের মধ্যে যারা রোমান সম্রাট সিজারের শহরে প্রথম হামলা চালাবে তাদের সব গোনাহ মাফ করা হবে বলে রাসূল (সা.)’র একটি হাদিসের কথা বলা হয়।

এইসব হাদিস যদি সত্য হয়েও থাকে তাহলেও বাস্তবতা হল সিজারের শহরে হামলাকারী প্রথম সেনাদলের মধ্যে ইয়াজিদ ছিল না বলে হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়েছে। মুয়াবিয়ার শাসনামলে সেখানে মুসলমানদের প্রথম হামলা হয়েছিল ৪২ হিজরিতে। ৪২ থেকে ৪৯ হিজরিতে সেখানে ছয়টি অভিযান চালায় মুসলিম যোদ্ধারা। আর ইয়াজিদকে কথিত অভিযানে পাঠানো হয় ৫০ হিজরিতে এবং তা ছিল সপ্তম অভিযান। তাকে পরবর্তীতে শাস্তি হিসেবে এক যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল মাত্র। ইয়াজিদ মুসলিম বাহিনীকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ করেছিল বলে শাস্তি হিসেবে মুয়াবিয়া তাকে যুদ্ধে পাঠায়। অর্থাৎ যুদ্ধ করার জন্য তাকে পাঠানো হয়নি বরং শাস্তি হিসেবে সাময়িক নির্বাসনের মধ্যে সময় কাটানোর জন্য।

ইমাম বদরুদ্দিন আইনি বলেছেন:

মুয়াবিয়া ইয়াজিদকে কোনো এক অভিযানের সেনাপতি করতে চাইলে বেশিরভাগ সাহাবিরা  বেঁকে বসেন এবং একজন সাহাবির (সুফিয়ান বিন আওফ) নেতৃত্বে যুদ্ধে যোগ দেন তারা। অর্থাৎ তারা এমন অযোগ্য ও অথর্ব এবং চরিত্রহীন লোকের অধীনে যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত ছিলেন না।

বলা হয় ইতিহাসে মাত্র একবারই ইয়াজিদের যুদ্ধ যাত্রার কথা এসেছে। মুয়াবিয়া তাকে নাকি নৌ-সেনাপতিও করেছিলেন। হয়তো ইয়াজিদকে বীর হিসেবে তুলে ধরার অপকৌশলের অংশ হিসেবেই সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বিষয়টা সত্য হলে বা ইয়াজিদ যদি সত্যিই বীর হত তাকে নানা স্থল যুদ্ধেও সেনাপতি করা হত। কিন্তু ইতিহাস বা হাদিস তা বলে না। ওই ঘটনা সত্য হলে ইয়াজিদ ও তার সঙ্গীরা নানা সময়ে গর্বভরে তা অবশ্যই উল্লেখ করত এবং এই ঘটনাকে তার যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে অবশ্যই তুলে ধরত। তথ্য-প্রমাণে দেখা গেছে মুয়াবিয়ার যুগ থেকেই হাজার হাজার নানা মিথ্যা ও বানোয়াট হাদিস প্রচার করা হয়েছে উমাইয়াদের স্বার্থে। এ ছাড়াও এটা মনে রাখা দরকার মানুষের অতীত অবস্থার চেয়ে শেষ অবস্থাই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সারা জীবন ভালো থাকলেও শেষ মুহূর্তে যদি ঈমান হারায় বা আল্লাহর নাফরমানি করে তাহলে তার অতীতের সব ভালো কাজও মূল্যহীন হয়ে পড়ে।  ইবলিস বা শয়তান ছিল একজন ভালো জিন। সে ৬ হাজার বছর আল্লাহর ইবাদত করে ফেরেশতার সম্মান অর্জন করেছিল। বলা হয় পৃথিবীর এমন স্থান খুব কমই ছিল যেখানে শয়তান আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করেনি। কিন্তু আদমকে সিজদা করার নির্দেশ অমান্য করে সে অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়। আল্লাহর এই নির্দেশ অমান্য করার যুক্তি হিসেবে সে বলেছিল, আদম হল মাটির তৈরি কিন্তু সে হল আগুনের তৈরি। এই অহংকার তাকে অভিশপ্ত করে দেয়। সে বুঝতে পারেনি যে আদম বা মানুষের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর নিজ থেকে ফুকে দেয়া রুহ বা খোদায়ী আধ্যাত্মিক সত্তা।

ইয়াজিদ যদি অতীতে কোনো একটি ভালো কাজ করেও থাকে তবুও তা মূল্যহীন হয়ে গেছে তার পরবর্তী মহাপাপগুলোর কারণে। সে  মুসলিম সমাজের সবচেয়ে অযোগ্য ও নিকৃষ্টতম পাপী হওয়া সত্ত্বেও জোর করে ওই সমাজের শাসক হয়েছে এবং মুসলমানদের প্রকৃত ইমাম বা নেতা ও বেহেশতি যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইন (আ.)-কে শহীদ করে অভিশপ্ত হয়ে গেছে। সে কখনও তওবা বা অনুশোচনা করেছে বলেও প্রমাণ নেই। বরং সে ইমাম ও নবী পরিবারের অবমাননার ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করেছে।

ইসলামী বর্ণনায় এসেছে, কোনো এক সময় মহানবী (সা.) স্বপ্নে দেখেন যে, বনী উমাইয়্যা তাঁর মিম্বরে বানরের মত নাচানাচি করছে। এ স্বপ্ন দেখে তিনি এমনই শোকাহত হলেন যে, এরপর যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি আর হাসেননি। তাঁর এই স্বপ্ন দেখার পর পবিত্র কুরআনের সুরা বনি ইসরাইলের ৬০ নম্বর আয়াত নাজেল হয়েছিল। ওই আয়াতে বলা হয়েছে:

“এবং (স্মরণ কর) যখন আমরা তোমাকে বলেছিলাম যে, নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন এবং আমরা তোমাকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম  তা কেবল মানুষের জন্য পরীক্ষার মাধ্যম ছিল এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষটিও। আমরা মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করতে থাকি, কিন্তু তা তাদের চরম ঔদ্ধত্যকেই কেবল বৃদ্ধি করে।”

তাফসিরে তাবারিসহ কয়েকটি সুন্নি সূত্রমতে, কুরআনে উল্লিখিত ওই “অভিশপ্ত বৃক্ষ” বলতে আবু সুফিয়ানের বংশধর তথা উমাইয়াদের বোঝানো হয়েছে এবং রাসূল (সা.) স্বপ্নে তাঁর মিম্বরে বানরদের নাচানাচির যে ঘটনাটি দেখেছিলেন তার অর্থ উমাইয়াদের মাধ্যমে খেলাফত দখল করা হবে। সমাপ্ত

লেখা: রাসেল আমেদ রিজভী

تبصرہ ارسال

You are replying to: .