হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৫- ১৮. মহানবী ( সা:) বলেছেন:
কিয়ামত দিবসের ময়দানে তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে ..…... যে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং জনগণের সবচেয়ে নিকটবর্তী । ( বিহারুল আনোয়ার , খ: ৭৭ , পৃ: ১৫০ , হাদীস নং ৮৩)
১৯. মহানবী (সা:) বলেছেন:
যারা অনাহারে থাকার জন্য মনস্থির করেছে , ক্ষুধার্ত থেকেছে এবং ধৈর্য্য ধারণ করেছে তাদের জন্য শুভ সংবাদ ; কারণ কিয়ামত দিবসে এরাই পরিতৃপ্ত থাকবে । ( দ্র: আল-ওয়াসাইল , খ:৭, পৃ: ২৯৯ , হাদীস নং ২)
২০. মহানবী সা বলেছেন:
যার আহার কম ( পরকালে) তার হিসাব নিকাশও কম ( হবে) । ( দ্র্ঃ আল-মুসতাদরাক আলাল ওয়াসায়িল , ১৬/ ২২১/১৯৬৫১)
২১. মহানবী ( সা ) বলেছেন:
যার খাওয়া দাওয়া কম ( অর্থাৎ পরিমিত ও পর্যাপ্ত ) হবে তার পেট ভালো থাকবে এবং তার অন্তর ( হৃদয় ও ক্বলব ) হবে স্বচ্ছ ও নির্মল । আর যার খাওয়া দাওয়া বেশি তার পেট হবে অসুস্থ এবং তার হৃদয় হবে পাষাণ ও কঠিন ।
( দ্র: তান্বীহুল খাওয়াতির , ১/ ৪৬)
২২. তাফসীরে নূরুস সাকালাইন হযরত আয়েশা ( রা: ) থেকে :
মহানবী ( সা:) এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া ( মৃত্যু বরণ করা) পর্যন্ত কখনোই পরপর তিন দিন
পরিতৃপ্তির সাথে আহার করেন নি । যদি তিনি চাইতেন তাহলে খেয়ে দেয়ে পরিতৃপ্ত হতে পারতেন । কিন্তু তিনি অন্যদেরকে নিজের উপর প্রাধান্য দিতেন ( আর এ কারণে তিনি অল্প পানাহার করতেন ) ।
[ এ হাদীস থেকে স্বৈরাচারী অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী ও রাজা - বাদশাহের সাথে ন্যায়পরায়ণ ( আদিল ) ধর্মীয় ঐশ্বরিক নেতৃবৃন্দ ও শাসন কর্তাদের মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায় । মহান আল্লাহর নবী - রাসূল , ইমাম , ওয়ালী ও খলীফা গণ অথবা তাঁদের নিযুক্ত শাসন কর্তা গণ দেশ ও সমাজে ন্যায় ও সুবিচার ( আদল ও ক্বিস্ত্ ) এবং তৌহীদ ( সত্য ধর্ম ) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন এবং এ জন্য তাঁরা ও তাদের অনুসারীরা সব সময় প্রাণান্তকর সংগ্রাম করেছেন । সমাজ ও দেশের জনগণের সার্বিক আর্থিক অবস্থা উন্নতি হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সমাজ ও জাতির সবচেয়ে দুর্বল দরিদ্র ব্যক্তি ও শ্রেণীর ন্যায় জীবন যাপন করতেন । আর অবস্থার উন্নতি হলেও তাঁরা জীবন যাত্রায় কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ তো করতেন না বরং সবসময় ন্যূনতম খরচ দিয়ে জীবন যাপন করতেন । কারণ পার্থিব ধন - সম্পদের মোহ ও লিপ্সা এবং ভোগবাদিতা তাঁদের মধ্যে ছিল না । তাঁরা কঠোর ত্যাগ , তপস্যা , সাধনা ( যুহ্দ ) এবং নিজের উপর অন্যদের প্রাধান্য দিতেন । মহানবী ( সা.) এদের সবার নেতা ও প্রধান । তাই তাঁর জীবন তো এমন কৃচ্ছতা সাধনা পূর্ণ এবং জনগণের জন্য উৎসর্গিত হবেই। মুসলিম দেশগুলোর রাজাবাদশাহ ও শাসকচক্র কি রাসূলুল্লাহর (সা) এই জীবনাদর্শ মেনে চলে ? একটা বিষয় স্পষ্ট
হওয়া দরকার । আর তা হলো যে হযরত আলী ও হযরত ইমাম হাসানের পর আমীর মুয়াবিয়া কর্তৃক খিলাফত ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জবর দখলের পর মুসলিম বিশ্ব ও উম্মার উপর পারস্যের শাহান শাহী ও রোমক রাজতন্ত্রের আদলে খিলাফত শিরোনামে বনী উমাইয়ার ( উমাভী ) রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত এবং মহানবীর ( সা.) আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয় । অত্যাচারী উমাভী খলীফাদের ( আসলে তাদেরকে রাজা বাদশাহ ও সম্রাট বলাই শ্রেয় ) সাথে নমরূদ , শাদ্দাদ , ফিরআওন ও হামানদের কোনো পার্থক্য ছিল । উমাভী সাম্রাজ্যের পতনের পর আব্বাসীয় খিলাফত ( আসলে রাজতন্ত্র ) প্রতিষ্ঠিত হলেও আব্বাসীয় খলিফারাও উমাভী খলিফাদের স্বভাব , রীতিনীতি ও রাজনীতি অব্যাহত রাখে । আর এ অবস্থা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে যদিও ইতিহাসে কিছু কিছু প্রজাবৎস্যল রাজা - বাদশাহও ক্ষমতা গ্রহণ করেছে । আর ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয় ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি রাসূলুল্লাহ ( সা ) , হযরত আলী ( আ.) ও ইমাম হাসানের ( আ.) শাসন আদর্শ
অনুসরণ করেছেন এবং তাঁর ওফাতের পর আয়াতুল্লাহ খামেনেঈ তা অব্যাহত রেখেছেন ।]
...চলবে...( তান্বীহুল খাওয়াতির ১/ ১৭২ ও ১৭৩)
( মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান)