মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান (১৫ রমযান , ১৪৪৪ হিজরী)
হাওজা নিউজ রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ রমযান মহানবীর জৈষ্ঠ্য দৌহিত্র ( সিবতে আকবর ) , হযরত রাসূলুল্লাহর (সা) আহলুল বাইতের ( আ ) বারো মাসূম ইমামের ২য় মাসূম ইমাম এবং বেহেশতের যুবকদের নেতৃদ্বয়ের ১ম নেতা হযরত হাসান ইবনে আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ ) শুভ জন্মদিন। ২ হিজরী সালের ১৫ রমযান তিনি ( আ ) মদীনা নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন ( দ্র: মাফাতীহুল জিনান, পৃ: ৪০৫ ) । তবে আহলে সুন্নাতের কিছু কিছু সূত্রে ( যেমন: আল- ইস্তিয়াব , খ : ১ , পৃ : ২২৯ ; তাহযীবুত তাহযীব খ:২ , পৃ : ২৯৬ ; শেখ মুমিন আল - শাব্লাঞ্জী প্রণীত নূরুল আবসার, পৃ : ২৩৯ ইত্যাদি ) তাঁর জন্ম তারিখ বলা হয়েছে : ৩ হিজরীর ১৫ রমযান । তাঁর ( আ ) জন্মদিন যে ১৫ রমযান সে ব্যাপারে শিয়া - সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে মোটামুটি ঐকমত্য রয়েছে যদিও জন্ম সনের ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে । ইমাম হাসানের (আ) পিতা-মাতা হযরত আলী ( আ ) এবং হযরত ফাতিমা ( আ ) নবজাতক শিশু সন্তানের নামকরণের বিষয় মাতামহ মহানবীর (সা) ওপর ন্যস্ত করেছিলেন এবং তিনি ( সা ) মহান আল্লাহর নির্দেশে তাঁর নবজাতক দৌহিত্রের নাম রাখেন হাসান । আসমা বিনতে উমাইস ( রা ) বলেন : ফাতিমা যখন ইমাম হাসানের জন্ম দেন তখন আমি তাঁর ধাত্রী ছিলাম। " হে রাসূলুল্লাহ ( সা ) ! আমি তাঁর ( ফাতিমা ) নিফাসের রক্ত ( সন্তান প্রসবের পর মহিলাদের যে রক্ত বের হয় তা নিফাস বলা হয় ) নি:সরণ হতে দেখি নি । " এরপর আমি আরও বললাম : "হে রাসূলুল্লাহ (সা) আমি কখনো ফাতিমার ( আ ) হায়য ও নিফাস হতে দেখি নি । " তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আসমাকে বললেন: তুমি কি জান না যে আমার মেয়ে ( ফাতিমা ) তাহিরা মুতাহহারাহ ( পবিত্র নিষ্পাপ মাসূমাহ্ নারী এমনকি সব ধরণের মেয়েলি অপবিত্রতা অর্থাৎ হায়য ও নিফাস হতেও পবিত্র)?!! তাই তার যেমন ঋতুস্রাব হয় না ঠিক তেমনি তাঁর নিফাসও হয় না । আর এ হাদীসটি হযরত ইমাম আলী ইবনে মূসা রিযা (আ) বর্ণনা করেছেন ( দ্র: আল্লামা শাবলাঞ্জী প্রণীত নূরুল আবসার , পৃ : ২৩৯ ) ।
সবাইকে ১৫ রমযান ইমাম হাসানের ( আ ) শুভ জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা , অভিনন্দন ( তাবরীক ও তাহনিয়াত ) এবং মুবারক বাদ।
আর নি:সন্দেহে ইমাম হাসান (আ) মহান আল্লাহর ( দ্বীনের ) শ্রেষ্ঠ নিদর্শন সমূহের অন্যতম । আর তাঁর জন্মদিন পালন এবং তাকে স্মরণ করা হচ্ছে মহান আল্লাহর নিদর্শনাদির তাযীমের ( সম্মান প্রদর্শন) বাস্তব নমুনা এবং এ তাযীম ও সম্মান প্রদর্শন হচ্ছে অন্তর সমূহের তাকওয়া সঞ্জাত । পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে : এবং যে মহান আল্লাহর নিদর্শনাদির সম্মান প্রদর্শন ( তাযীম) করে তাহলে তা ( তাযীম অর্থাৎ সম্মান প্রদর্শন ) হচ্ছে অন্তরসমূহের তাকওয়া সঞ্জাত ( দ্র: সূরা -ই হজ্জ : ৩২ )।
و من یعظِّمْ شعایر الله فإنّها من تقوی القلوب .
সুতরাং আমরা ইমাম হাসানের (আ) জন্ম বার্ষিকী খুব ভালো ভাবে পালন এবং তার নীতি , শিক্ষা ও আদর্শ আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে তার খাঁটি অনুসারী হওয়ার চেষ্টা করব । যারা ইসলামের সুমহান ব্যক্তিত্বদের জন্ম , মৃত্যু ও শাহাদাত বার্ষিকী পালন নিষেধ এবং তা বিদআত বলে প্রচার ও বাধা দান করে এবং সেই সাথে এ সব ব্যক্তিত্বদের মাযার , বুক্আহ্ , কুব্বাহ্ ( গম্বুজ ) ও মাশহাদ সমূহ শিরক , বিদাত , হারাম ও কবর পূজার নামে ধ্বংস করে তারা আসলেই বেআদব , অসভ্য এবং তাদের অন্তর সমূহ তাকওয়াশূন্য ও বক্র । কারণ , খোদার দ্বীন - ধর্ম ইসলামের নিদর্শন এ সব মনীষী ও ব্যক্তিত্বের কবরের ওপর মাযার , মাশহাদ , বুক'আহ্ , কুব্বাহ্ ( গম্বুজ ) ও ইমারত ( সমাধি সৌধ ) নির্মাণ এবং সেগুলো সংস্কার , মেরামত ও সংরক্ষণ আসলে মহান আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি ভক্তি , শ্রদ্ধা , সম্মান ও তাযীমের বাস্তব নমুনা ও বহি:প্রকাশ যা সম্মানকারীদের অন্তরের তাকওয়া - পরহেযগারী সঞ্জাত ।
আর সমাধিসৌধ নির্মাণ এবং তা সংরক্ষণ কিভাবে শিরক হয় ? বরং যে বিশেষ কিছু গৃহ উন্নীত ( রফ ' ) ও সেগুলোয় মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেগুলোরই অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এ সব মাযার, মাশহাদ , বুকআহ্ , সমাধি সৌধ ও ইমারত ইত্যাদি যেখানে যিয়ারতকারীরা মহান আল্লাহর কাছে দুআ , তাঁর নাম স্মরণ , যিকর , দরূদ পাঠ , কুরআন তিলাওয়াত করে থাকে । আর কবরে শায়িত নবী , ওয়ালী , ওয়াসী , ইমাম , শহীদ , আলেম , নেক সালেহ বান্দাদের ভক্তি শ্রদ্ধাকারী কোনো মুসলমানই তাদেরকে ইলাহ ( মাবূদ , উপাস্য ) , রব ( প্রতিপালক প্রভু ) , মহান আল্লাহর প্রতি অমুখাপেক্ষী (বেনিয়ায ) এবং মহান আল্লাহ থেকে স্বাধীন সার্বভৌম সত্ত্বা বলে বিশ্বাস করে না এবং তাদের ইবাদত - বন্দেগীও করে না । বরং যায়ের ও সম্মানকারীরা তাঁদেরকে মহান আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত এবং মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল বান্দা বলে বিশ্বাস করে এবং তাঁদের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরও কেবল মহান আল্লাহর অনুমতি নিয়েই যে তাঁরা শাফায়াত এবং মহান আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও ক্ষমতা নিয়েই যে তাঁরা সাহায্য করে থাকেন ঠিক এ বিশ্বাস পোষণ কারীকে কিভাবে মুশরিক বলে অভিহিত করা যায় ?!!! অথচ তাদের আধ্যাত্মিক অলৌকিক ক্ষমতা ও শক্তি তাদের জড় দেহের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বরং তাদের আত্মার সাথেই একান্ত সংশ্লিষ্ট ও জড়িত এবং আত্মা অমর । তাই মহান আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত নবী - ওয়ালীদের দুনিয়ায় জীবিত থাকা ও বারযাখে জীবিত বা কবরে জীবিত থাকার মধ্যে পার্থক্য নেই । তাদের এ সব ক্ষমতা ও শক্তি আসলে মহান আল্লাহই দিয়েছেন এবং তাঁর অনুমতি ক্রমেই তারা তা ব্যবহার করেন নিজের খেয়াল খুশি ও মর্জি মাফিক তাঁরা তা অপব্যবহার করেন না । মদীনার জান্নাতুল বাকীতে
ইমাম হাসান, ইমাম সাজ্জাদ, ইমাম বাকের এবং ইমাম সাদেকের - আলাইহিমুস সালাম - পবিত্র মাযার ও সমাধি ভেঙে ফেলে ওয়াহাবীরা আজ থেকে ঠিক একশো বছর আগে ( ১৩৪৪ হিজরীর ৮ শাওয়াল) শিরক বিদাতের অজুহাতে । অথচ এগুলো শিরক বিদাতের সংজ্ঞায় পড়ে না। কিন্তু ওয়াহাবীরা নিজেদের সংকীর্ণ মাযহাবী দৃষ্টি ভঙ্গি অন্য সকল ইসলামী মাযহাবের অনুসারীদের ওপর বলপূর্বক চাপিয়ে দিয়েছে যাদের কাছে এ সব বিষয় শিরক ও বিদআত নয় । আর শিরক বিদআত হলে কেন ইসলামী মাযহাবসমূহের ইমাম , আলেম ও ফকীহ গণ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ সব মাযার , মাশহাদ , সমাধি সৌধ , বুকআহ নির্মাণ, সংরক্ষণ ও মেরামতের ব্যাপারে নিষেধ ও আপত্তি করেন নি এবং সেগুলো ধ্বংস করা ওয়াজিব ও ফরয বলে ফতোয়াও দেন নি ?!!
মহান আল্লাহ এ সব সংকীর্ণ মনা কূপমন্ডুক ওয়াহাবী সালাফীদের হেদায়েত করুন ও সুপথের সন্ধান দিন ।