মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, যিল ক্বদ মাসের শেষ দিন মহানবী ( সা ) - এর পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ ) এর বারো মাসূম ইমামের নবম মাসূম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আত - তাকী আল - জাওয়াদের ( আ ) শাহাদাত দিবস । তিনি ১০ রজব মতান্তরে ১৫ , ১৭ , ১৮ বা ১৯ রমযান মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন ।
আব্বাসীয় খলীফা মু'তাসেম ( খলীফা মামূনের ভাই ) এবং মামূনের পুত্র জাফার , উম্মুল ফযল যে ছিল খলীফা মামূনেরই কন্যা এবং ইমাম জাওয়াদের স্ত্রী তাকে ইমামকে ( আ) বিষ প্রয়োগে হত্যা করার জন্য প্ররোচিত করে এবং সে ( উম্মুল ফযল ) রাযিক্বী আঙ্গুরের সাথে বিষ মিশিয়ে তা ইমামকে ( আ)খেতে দেয় । ইমাম জাওয়াদ ( আ ) রাযিক্বী আঙ্গুর পছন্দ করতেন এবং ঐ বিষ মিশ্রিত আঙ্গুর খেলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যিলক্বদ মাসের শেষ দিবসে মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। ইমাম জাওয়াদের শাহাদাত উপলক্ষ্যে সবাইকে আন্তরিক শোক ও তাসলিয়াত জানাই ।
ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কিছু অমিয় বাণী :
১. যে ব্যক্তি কোন বক্তার কথা শোনে ( এবং ঐ কথা মত কাজ করে ) সে আসলে ঐ বক্তারই ইবাদত করে । অত:পর ঐ বক্তা যদি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় ( যেমন: নবী - রসূল বা নবী- রসূলের ওয়াসী ও স্থলাভিষিক্ত ইমাম বা তাঁর প্রতিনিধি সঠিক যোগ্যতা সম্পন্ন ফকীহ আলেম ) (এবং সে যদি মহান আল্লাহর নিযুক্ত বক্তার কথা ও বক্তব্য শ্রবণ করে অর্থাৎ সে মোতাবেক কাজ করে ) তাহলে সে মহান আল্লাহরই ইবাদত করে ; আর বক্তা যদি শয়তানের ভাষায় কথা বলে ( অর্থাৎ খোদার পক্ষ থেকে না হয়ে শয়তানের প্রতিনিধি ও মুখপাত্র হয় এবং শয়তানী কথা বলে এবং শ্রবণকারী
তা শোনে ও সেই মোতাবেক কাজ করে ) তাহলে সে ( শ্রবণকারী ব্যক্তি আসলে ) ইবলীসের ই ইবাদত করে ।
مَنْ أَصْغَیٰ إِلَیٰ نَاطِقٍ فَقَدْ عَبَدَهُ ، فَإِنْ کَانَ النَّاطِقُ عَنِ اللّٰهِ فَقَدْ عَبَدَ اللّٰهَ ، وَ إِنْ کَانَ النَّاطِقُ یَنْطِقُ عَنْ لِسَانِ إِبْلِیْسَ فَقَدْ عَبَدَ إِبْلِیْسَ .
দ্র: তুহাফুল উকূল, পৃ: ৫৩৬
২. মুমিন তিন জিনিসের মুখাপেক্ষী। যথা: ১. মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত তৌফিক ( সামর্থ্য ) , ২. তাঁর নিজের ভিতরের উপদেশ দাতা ( অর্থাৎ তার বিবেক বোধ ) এবং ৩. যে ব্যক্তি তাকে হিতোপদেশ দেয় তার উপদেশ মেনে চলার মনোবৃত্তি ।
اَلْمُؤْمِنُ یَحْتَاجُ إِلَیٰ تَوْفِیْقٍ مِنَ اللٌٰهِ ، وَ وَاعِظٍ مِنْ نَفْسِهِ ، وَ قَبُوْلٍ مِّمَّنْ یَنْصَحُهُ
দ্র : তুহাফুল উকূল , পৃ : ৫৩৭
৩. যে ব্যক্তি ( জনগণের সাথে ) সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার ( অর্থাৎ মুদারা করা ) বর্জন ও ত্যাগ করবে দু:খ - কষ্ট ও দুরাবস্থা তার নিকটবর্তী (ও নিত্য সঙ্গী ) হবে ।
مَنْ هَجَرَ الْمُدَارَاةَ قَارَبَهُ الْمَکْرُوْهُ
দ্র: বিহারুল আন্ওয়ার্ ,খ : ৭৮ , পৃ : ৩৬৪ )
দ্র: শেখ আব্বাস কুম্মী প্রণীত নেগহী বেযেন্দেগীয়ে চাহরদাহ্ মাসূম
ইমাম জাওয়াদের ( আ ) এ তিন বাণীর অশেষ সামাজিক নৈতিক চারিত্রিক গুরুত্ব রয়েছে। এ ধরণের বাণী মোতাবেক আমল করলে আমাদের ব্যক্তিগত , পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সুখ - শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জিত হবে এবং আমরাও জীবনের সকল ক্ষেত্রে সঠিক নীতি অবস্থান গ্রহণ করতে পারব । ১ম হাদীস বা বাণীতে ইমাম ( আ ) স্পষ্ট করেছেন : আমাদের উচিত কাদের কথা শোনা এবং কাদের কথা না শোনা । আমাদের অর্থাৎ মুসলমানদের উচিত জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নিযুক্ত ব্যক্তির ( নবী ও ইমাম এবং তাদের প্রতিনিধি হক্কানী রব্বানী ফকীহ আলেম অর্থাৎ বর্তমান কালে ওয়ালীয়ে ফকীহ ) কথা ও আদেশ - নিষেধ শোনা ও তদানুসারে আমল করা এবং শয়তানের প্রতিনিধি ও বক্তারা যে বর্তমানে সকল ইসলাম বিরোধী শক্তি যেমন: পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , তার চেলা চামুণ্ডারা অর্থাৎ পাশ্চাত্য পূজারীরা এবং পশ্চিমা সংবাদ ও প্রচার মাধ্যম সমূহ : সিএনএন , বিবিসি , ফেসবুক, টুইটার, নিউ ইয়র্ক টাইমস ইত্যাদি । এগুলো সবই হচ্ছে ইবলীসের মুখপাত্র এবং ইবলীসের পক্ষে বক্তা। মহান আল্লাহর সঠিক ইবাদত কারী বান্দা হতে হলে আমাদের উচিত মহান আল্লাহর প্রতিনিধির বক্তব্য ও কথা শোনা ও তদানুসারে আমল করা। আর তা না হলে ইবলীস শয়তানের উপাসকে পরিণত হতে হবে !! আজকের দুনিয়ায় ইবলীসের মুখপাত্র বক্তারা সর্বত্র প্রচার চালাচ্ছে এবং বক্তব্য বক্তৃতা দিচ্ছে । সুতরাং আমাদেরকে ইবলীসের মুখপাত্রদের সঠিক ভাবে চিনতে হবে । মানুষের সাথে সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার ( মুদারা ) আমাদেরকে জীবনে সুখী করবে । আর মহান আল্লাহর তৌফিক, বিবেকবোধ এবং হিতোপদেশ শোনার মনোবৃত্তি মুমিনের উন্নতি ও সাফল্যের সোপান স্বরূপ । ইমাম ( আ ) আমাদেরকে তাঁর এ সব বাণী দিয়ে সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দিয়েছেন।