হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করা হতে পারে বলে প্রত্যাশা করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। বৈরুতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমোস হোচস্টেইনের সঙ্গে বৈঠকের পর নাজিব মিকাতি এ মন্তব্য করেন।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির খসড়া চুক্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করছে। মিকাতি লেবাননের আল জাদেদ টিভি স্টেশনকে বলেছেন, ‘মার্কিন দূত আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে; আমরা মাসের শেষের দিকে এবং ৫ নভেম্বরের আগে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারি’।
মিকাতি বলেন, ‘আমরা যা করতে পারি তার সবকিছুই করছি এবং আমাদের আশাবাদী থাকা উচিত যে আগামী কয়েক ঘণ্টা বা দিনে আমাদের যুদ্ধবিরতি হবে’।
এদিকে ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির ফাঁস হওয়া প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা। সেখানে বলা হয়েছে, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই লেবানন থেকে নিজেদের বাহিনী সরিয়ে নেবে ইসরায়েল।
অবশ্য ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ কোনো পক্ষই তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
আর ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র শন স্যাভেট বলেছেন, ‘অনেক প্রতিবেদন এবং খসড়া প্রচারিত হয়েছে যা আলোচনার বর্তমান অবস্থাকে প্রতিফলিত করে না’।
ইসরায়েল গত সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করলে হিজবুল্লাহর চরম প্রতিরোধের মুখে পড়ে কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা রাজধানী বৈরুতসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েল দাবি করে আসছে, গত বছর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর হিজবুল্লাহর হামলার ভয়ে ৬০ হাজার বাসিন্দাদের সীমান্তের বসতি থেকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে। ওই সব বাসিন্দাদের ঘরে ফেরাতে লেবাননে স্থল হামলা চালানো হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহর ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রতিদিনই দখলদার বাহিনীরকে নিজেদের সেনা ও সমরাস্ত্র হারানোর বিবৃতি প্রকাশ করতে হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছেন যে, যুদ্ধের বিভিন্ন ফ্রন্টে শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত হয়ে অন্তত ৬২ হাজার সেনা চিকিৎসা নিচ্ছে এবং এই মুহূর্তে ইসরায়েল মারাত্মক সেনা ঘাটতিতে পড়েছে।
বিরোধী দলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেছেন, নিহত ও আহত সৈনিকের সংখ্যা গোপন করেছে নেতানিয়াহুর সরকার। তার মতে, গাজা ও লেবানন যুদ্ধে প্রকাশিত আহত ও নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা আরও বহুগুণ। অথচ ইসরায়েলি সরকার বলেছে, চলমান যুদ্ধে ৭৭২ জন সেনা নিহত হয়েছে এবং প্রায় ৫ হাজার ১০০ সেনা আহত হয়েছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হিজবুল্লাহ প্রায় প্রায় প্রতিদিন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় পরে যখন দখলদার বাহিনী বিপর্যস্থ তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে যাতে লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলকে রক্ষা করা যায়।
নেটিজেনরা বলছেন যে, ইহুদিবাদী দখলদার বাহিনী গাজা ও লেবাননে ব্যাপক গণহত্যা চালালেও হামাস ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধে মারাত্মকভাবে প্রতিহত হয়েছে। ইসরায়েলের পক্ষে আর দীর্ঘদিন যুদ্ধে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাদের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির তোরজোড় মূলত সে কারণেই।
এদিকে বুধবার এক টেলিভিশন ভাষণে হিজবুল্লাহর নতুন প্রধান নাঈম কাসেম দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে পাশাপাশি তিনি এও জানিয়ে দেন, যদি ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায় তাহলে তারা পুরো প্রস্তুত আছেন।