۱۸ آذر ۱۴۰۳ |۶ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 8, 2024
ইসরাইল-আমেরিকাসহ ইরান ও প্রতিরোধ ফ্রন্টের শত্রুরা দাঁতভাঙ্গা জবাব পাবে
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী

হাওজা / মার্কিন সরকার ও ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ আমাদের শত্রুরা জেনে রাখুক ইরান ও প্রতিরোধ ফ্রন্টের মোকাবেলায় তারা যা করছে সুনিশ্চিতভাবে সেসবের দাঁতভাঙ্গা জবাব পাবে। 

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, মার্কিন সরকার ও ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ আমাদের শত্রুরা জেনে রাখুক ইরান ও প্রতিরোধ ফ্রন্টের মোকাবেলায় তারা যা করছে সুনিশ্চিতভাবে সেসবের দাঁতভাঙ্গা জবাব পাবে।

বিশ্বের দাম্ভিক-সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামের দিবস তথা ঐতিহাসিক ৪ নভেম্বর বা ফার্সি ১৩ অবনের প্রাক্কালে আজ সকালে রাজধানী তেহরানে সারা দেশ থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্রদের এক সমাবেশে তিনি এই কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

হাজার হাজার ছাত্রের ওই সমাবেশে সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে ইরানি জাতির সংগ্রাম আমাদের প্রিয় জাতি আর দেশের ওপর মার্কিন সরকারের অবিচারপূর্ণ ও নির্লজ্জ আধিপত্যকামিতা থেকেই উদ্ভূত।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, কোনো কোনো লেখক ইতিহাস লিখতে গিয়ে যখন এ কথা বলেন যে ইরান ও মার্কিন সরকারের বিরোধ শুরু হয়েছে ১৯৭৯ সালের চার নভেম্বর বা ফার্সি ১৩৫৮ সনের ১৩ অবন তারিখ থেকে!- তাদের এই বক্তব্য বাস্তবতা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর। মার্কিন সরকারের নেতৃবৃন্দ ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রথম থেকে ও এ বিপ্লবের আগে ও এর বহু বছর আগ থেকেই ইরানি জাতির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে এবং তারা যতটা সম্ভব ইরানি জাতির বিরুদ্ধে সব শক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করেছে।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, ১৯৫৩ সালের ১৯ আগস্ট তথা ফার্সি ১৩৩২ সালের ২৮ মোরদাদ তারিখের আগেও ইরানে মার্কিন উপস্থিতি ও তাদের প্রচেষ্টাগুলোর কাহিনী বেশ দীর্ঘ; কিন্তু ওই ১৯ আগস্টে যা ঘটেছিল তা সবার চোখের সামনে স্পষ্ট। ওই দিনে মার্কিন সরকার ইরানের এক জনপ্রিয় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে (পালিয়ে যাওয়া) শাহের নিপীড়নকামী সরকারকে ক্ষমতায় বসায় বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ হস্তক্ষেপের আশ্রয় নিয়ে। অথচ অত্যন্ত সরলমনে ওই জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী সরকার (ডক্টর মোসাদ্দেকের নেতৃত্বাধীন) মার্কিন সরকারের প্রতি বিশ্বাসী বা আস্থাশীল হয়েছিল। এভাবে ইরানি জাতি বহু বছর ধরে মার্কিন শত্রুতা অনুভব করেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মার্কিন আধিপত্যকামিতার মোকাবেলায় ইরানি জাতির বিগত প্রায় ৭০ বছরের জুলুম-বিরোধী সংগ্রামের ইসলামী, জাতীয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রজ্ঞাপূর্ণ দিকের কথা তুলে ধরে বলেন, এই সংগ্রাম মানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং যৌক্তিকতা, নৈতিকতা ও ধর্ম আর ইসলামী আইনসিদ্ধ এই সংগ্রাম সঠিক রোড-ম্যাপ অনুযায়ী ইরানি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদাসীনতা ও বিলম্ব ছাড়াই অব্যাহত থাকবে। 'আর বিজয়-মত্ততার এই পথে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মার্কিন সরকার ইরানি জাতির বিরোধী প্রত্যেক পদক্ষেপের দাঁতভাঙ্গা জবাব পাবে সুনিশ্চিতভাবে'।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দাম্ভিক শক্তিগুলোকে মোকাবেলার উপায় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের প্রস্তাবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, সবাই জেনে রাখুক যে এই সংগ্রামের জন্য জরুরি সব সামরিক, অস্ত্র-সম্পর্কিত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া হবে ইরানি জাতির প্রস্তুতি হিসেবে এবং ইরানের দায়িত্বশীল তথা কর্মকর্তারা এখন এই কাজেই ব্যস্ত রয়েছেন।

তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী ইরানি জাতির প্রতিরোধকে একটি স্থায়ী ও জাতীয় জীবনের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, একটি দিবসের নামকরণ বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় দিবস করার বিষয়টি আসলে এই ঐতিহাসিক সংগ্রামকে ভুলে না যাওয়ার লক্ষ্যেই করা হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তেহরানে বিপ্লবী ছাত্রদের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তির আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত মার্কিন দূতাবাস দখলের ঘটনার যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলেছেন, ওই দূতাবাসে পাওয়া দলিল-পত্র ও নানা সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, ইসলামী বিপ্লব বানচালের লক্ষ্যে প্রতি-বিপ্লব উস্কে দেয়া, মতবিরোধ ও গোত্রীয় বিভেদ উস্কে দেয়া, ক্যু বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামী সরকারের পতন ঘটানো, ইমাম খোমেনী (র.)'র জীবন বিপন্ন করার মত নানা ষড়যন্ত্রের সূতিকাগার ছিল ওই দূতাবাস।

তিনি ইরানি জাতির বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের নানা শত্রুতার অংশ হিসেবে ইরানে সভাক নামক গোয়েন্দা সংস্থা গঠন ও এর সদস্যদেরকে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নানা ধরনের ভয়াবহ নির্যাতন চালানোর পদ্ধতি শিক্ষাদান, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ও সরকারের মধ্যে হস্তক্ষেপ, অনুপ্রবেশ ও গুপ্তচরবৃত্তির লক্ষ্যে প্রায় অর্ধ-লক্ষ মার্কিন উপদেষ্টা নামক পরজীবী প্রতিপালনের কথা তুলে ধরে বলেন, এইসব পদক্ষেপ ছিল ইরানি জাতির প্রতি অবমাননাকর ও এই মহান জাতির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি স্বৈরাচারী শাহের সহায়তাগুলোর ইতিহাস তুলে ধরে বলেছেন, পাহলভি সরকার মার্কিন সরকারের ইশারায় জ্বালানি সহায়তা দেয়াসহ নানা ধরনের মদদ যুগিয়ে দখলদার ইসরাইলকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছিল যা ছিল অবিস্মরণীয় বিশ্বাসঘাতকতা এবং তা এমন সময় করেছিল যখন এ অঞ্চলের সব সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, দুঃখজনকভাবে বর্তমানেও এ অঞ্চলের অনেক সরকার গাজা ও লেবাননে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী অপরাধগুলোকে উপেক্ষা করে এই রক্ত-পিপাসু শত্রুকে অর্থনৈতিক ও এমনকি সামরিক সাহায্যও দিয়ে যাচ্ছে!

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ইরানি জাতির প্রতিরোধকে ইসলামের শিক্ষা থেকে উৎসারিত বলে বর্ণনা করে বলেছেন, এই প্রতিরোধ একটি অবশ্য-পালনীয় কর্তব্য তথা ফরজ। তিনি অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে ও বিশ্বের বলদর্পি শক্তিগুলোর অবমাননাকর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত শক্তিশালী ও উন্নত দেশের মোকাবেলায় প্রতিরোধের সাফল্য সম্পর্কে কোনো কোনো সন্দেহ পোষণকারীদের ধারণাকে ভুল হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ইরানি জাতি গত ৪৬ বছরে মার্কিন বিরোধী সংগ্রামে অবশ্যই সফল হয়েছে এবং এর একটি প্রমাণ হল এখন ইরান মার্কিন শক্তিকে দুর্বল করতে সক্ষম, মার্কিন সরকার তার প্রতাপ ও দুষ্কৃতির ভয় দেখিয়ে জাতিগুলোকে পিছু হটতে বাধ্য করত।

তিনি পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতি এবং মার্কিন পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ছাত্র সমিতি বা সংস্থার বহু বিবৃতি ও মজলুম দেশ আর জাতিগুলোর প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণাকে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামের অগ্রযাত্রা ও সাফল্যের আরও একটি প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এই সংগ্রাম দিনকে দিন তীব্র ও জোরালো হবে এবং ইরানি জাতি ও মজলুম জাতিগুলোসহ প্রতিরোধ অক্ষও অবশ্যই অগ্রগতি অর্জন করবে।

সূত্র: পার্সটুডে

تبصرہ ارسال

You are replying to: .